বৃষ্টির ঘ্রাণ

…কাল রাতে অনেক দিন পর বৃষ্টি দেখছিলাম, আক্ষরিক অর্থে বেশ আগ্রহ নিয়েই দেখছিলাম। কেন জানি বৃষ্টির ছন্দটা অন্যরকম লাগছিল। কোথাও যেন কিছু একটা খাপছাড়া, কিছু একটা থেকেও নেই মনে হচ্ছিল…। কেমন যেন অপরিচিতের এক মোহ ছেয়ে আছে। বৃষ্টির ফোটাগুলো কী আজ একটু বেশি ভারী … না মনে হয়… তবে এতো বিস্মৃত কেন লাগছিল। বোধহয় বুঝতে পেরেছি। তবুও নিশ্চিত না হয়ে নিজের ক্লান্ত ধারনাকে প্রশয় দিতে ইচ্ছে করছিল নাহ। হয়তো একটু ভাল লাগার আশায় ঝরে পড়া ফোটাগুলোর দিকে পরম মমতাই হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। কেমন যেন মোহাচ্ছন্যের মতো হেসে ফেলে, ভেজা হাতটার দিকে তাকিয়ে রইলাম অনেকক্ষণ। না, ….খুব একটা ভুল ভাবিনি তাহলে। আসলেই রিক্ত শ্রাবণ, এ যেন স্বাদহীন। বৃষ্টির ছন্দে যে পুরনো সুর খুজছিলাম,যে অপরিবর্তনীয় ঘ্রানের নেশায়, ষোড়শীর কোমল হাত ছোয়ার অনাদি বাসনায়, বৃষ্টির পানে হাত বাড়িয়েছিলাম তা হাইড্রোজেন এর মত এক স্বাদ-বর্ণ-গন্ধহীন ভালবাসা ফিরিয়ে দিয়েছে।

এ যেন আজ মন খারাপের দিন। আজ কান্নার প্রহর… আকাশ কাদছে, বাস ছাউনির নিচে বসে ঐ ষাটোর্ধ বৃদ্ধের সাদা কুকু্রটা, ঔ যেন আজ তান মিলাচ্ছে। আজ সত্যি মন খারাপের দিন মনে হচ্ছিল। কী একটা গানের আধখানা কলি ভাজতে ভাজতে পাশ দিয়ে মাতাল এক মহামানব চলে গেল। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ওর গানের ভাঙা সুরেও যেন এক বিষণ্ন অ্পরিপূর্ণতা কেদে ফিরছে। যাই হোক, ভাবনার পাগলা ঘোড়াটাকে এবার বোধহয় লাগাম দেয়াই শ্রেয়। ছুটতে ছুটতে আজ যে অনেক দূরে চলে এসেছে।ঘরে ফেরার তাড়া ছিল। তাই ভাবনার ঘোড়ার পিঠ ছেড়ে এবারে যে আমায় বাসের পেটে সওয়ারি হতে হয়… কী আর করা… আজ যাই তবে…. পথে যেতে যদি আবার কখনো মন খারাপের গান কানে আসে… তবে হয়তো ঝরে পড়া শ্রাবণের স্পর্শে আরো একবার ভিজে নেব।
বৃষ্টি ভেজা রাত

২,৮০৬ বার দেখা হয়েছে

৪০ টি মন্তব্য : “বৃষ্টির ঘ্রাণ”

  1. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    ঝিনাইদা'র পোলাপাইন সব এত্তো ভাল লিখে কেমনে :-/ ?

    অই, তোমাদের বাংলা পড়াইতো কোন স্যার x-( ?


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  2. রহমান (৯২-৯৮)
    বৃষ্টির ছন্দে যে পুরনো সুর খুজছিলাম,যে অপরিবর্তনীয় ঘ্রানের নেশায়, ষোড়শীর কোমল হাত ছোয়ার অনাদি বাসনায়, বৃষ্টির পানে হাত বাড়িয়েছিলাম তা হাইড্রোজেন এর মত এক স্বাদ-বর্ণ-গন্ধহীন ভালবাসা ফিরিয়ে দিয়েছে।

    😮 😮 😮 এক বাক্যের ভিতর এতকিছু???

    লেখা ভাল হয়েছে রকিব :thumbup:

    জবাব দিন
  3. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    ষোড়শীর কোমল হাত ছোয়ার অনাদি বাসনায়,

    কী একটা গানের আধখানা কলি ভাজতে ভাজতে পাশ দিয়ে মাতাল এক মহামানব চলে গেল।

    তবে হয়তো ঝরে পড়া শ্রাবণের স্পর্শে আরো একবার ভিজে নেব।

    কথা খুঁজে না পাওয়া গেলে এভাবে ভালো লাগা লাইনগুলো উদ্ধৃতি করা ছাড়া উপায় কি???


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  4. তাইফুর (৯২-৯৮)

    রকিব চ্রম লিখছ।
    আমি নিজে অসম্ভব বৃষ্টি ভালবাসি। প্রকৃ্তির বৃষ্টি এবং আমার বউ বৃষ্টি ... দুইটাকেই 😀


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  5. তৌফিক

    অনেকদিন অপেক্ষায় রাখলা রকিব।

    লেখাটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। এখানে বৃষ্টি হয় ফল-এর শেষে, বরফ পড়ার আগ দিয়ে। একটু বৃষ্টি হলেই "ইটস পোরিং আউট" বলে লোকজনের অভিযোগ শুরু হয়ে যায়। আমি তখন চান্স পেলেই ঠোঁট উল্টাই, বলি, এটা কোন বৃষ্টি হলো? বৃষ্টি হয় আমার দেশে। আকাশ থেকে পানির একটা পর্দা নেমে আসে, রাস্তার অপর পাশ দেখা যায় না। আর তোমাদের মতো ঠান্ডা বৃষ্টিও না সেটা, উষ্ণ। বৃষ্টিতে ভেজাটা সেলিব্রেশনের মতো। আমার কথা শুনে তারা হয়তো আমাকে পাগল ঠাওরায়, আমি কেয়ার করি না।

    জবাব দিন
    • রকিব (০১-০৭)
      আকাশ থেকে পানির একটা পর্দা নেমে আসে, রাস্তার অপর পাশ দেখা যায় না। আর তোমাদের মতো ঠান্ডা বৃষ্টিও না সেটা, উষ্ণ। বৃষ্টিতে ভেজাটা সেলিব্রেশনের মতো। আমার কথা শুনে তারা হয়তো আমাকে পাগল ঠাওরায়, আমি কেয়ার করি না।

      সহমত।


      আমি তবু বলি:
      এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।