ক্লাস নাইন(কিছু টুকরো স্মৃতি)

ক্লাস নাইনের ২টা পর্ব লেখার পরও কিছু কথা বাকি পরে গেলো,মুস্তো মনে করিয়ে দিল তাই আবার লিখলাম। 🙂
আমাদের একডেমী ভবনের মাঝখানে একটা তাল গাছ ছিল। একদিন প্রেপে আসার পর দেখি ২টা পাকা তাল পরে আছে কেউ দেখেনাই, আমরা তাড়াতাড়ি তাল নিয়ে টয়লেট এ ঢুকলাম।রেখে দিলাম একদিন। পরের দিন একাডেমি গিয়ে দেখি টয়লেট এ তালের বিশাল গন্ধ। কী আর করার সবাই দাত দিয়ে তাল ছিল্লো। কাড়াকাড়ি করে তাল খেলো। এতো তিতা এবং খারাপ তাল কী জন্য জানিনা এতো ভালো লাগলো।

মুস্তাকীম ক্লাস ৯ এর ২য় টার্ম এণ্ড এর আগে বোধহয় ১/২ টা পরীক্ষায় পাশ করসিলো। আর আমি একটায় ও না।আমরা দুইজনেই আর্টস।বাসায় খুব সমস্যা আম্মা খালি ঝাড়ি দেয় কারণ প্রত্যেক টার্ম এ একটা ফেল এর চিঠি সাথে কয়েকটা দুষ্টামির চিঠিও আম্মার হাতে আসতো।তো আমি আর মুস্তো প্ল্যান নিলাম এবার আর ফেল করা যাবেনা। কীভাবে হস্পিটালে পরীক্ষা দেয়া যায় তার প্ল্যান করা শুরু করলাম। চিন্তা করলাম চোখে শ্যাম্পু দিয়ে সিক রিপোর্ট করতে হবে। রাতে করতে গেলাম কিন্তু মুস্তো কে সিক রিপোর্ট করতে দিলোনা কারণ ও ঘন ঘন সিক রিপোর্ট করে।আমি আবার চেষ্টা করেও অসুস্থ হতে পারতাম না আমার অসুখ বলতে গেলে হতোই না। কীন্তু আমিও করলাম না সীক রিপোর্ট। লাইটস অফের পর। হাউস ডিউটি ক্যাডেট কে বললাম সিক রিপোর্ট বই আনতে ও আনার পর আমরা নিজেদের নাম লিখলাম স্যার যেখান থেকে কেটে দিসে তার ২ ঘর নিচ পর্জন্ত এন্টীকাটার দিয়ে দাগ মুছে দিলাম। তারপর সকালে খুব ভালো করে শ্যাম্পু দিলাম চোখে। হাতে লাগালাম। তারপর গ্রাউন্ডে নামলাম একটু পর হস্পিটালে ও গেলাম। তারপর আমাদের ডাক আসলো কী আর করা ডাক্তার স্যার নাই ষ্টাফ দেখে তাড়াতাড়ি আমাদের এডমিট করে ফেললো। আমি আর মুস্তো লাফাইতে লাফাইতে হাউজে গেলাম। বেড সীট, ব্রাশ, পেষ্ট, গল্পের বই, কার্ড নিয়ে গেলাম হস্পিটালে। ব্রেকফাষ্ট করলাম। অন্যান্যদের ক্লাস মেটরা দেখতে আসলে ভালো কথা বলতো আর আমাদের গালি দিত। তো মিল্ক এর আগে ডাক্তার স্যার ডাকলো সাথে সাথে আঙ্গুলে শুকিয়ে থাকা শ্যাম্পু লাগালাম চোখে। চোখ আবার লাল হই গেলো। ডাক্তার স্যার দেখে আমাদের পরীক্ষা হস্পিটালে দিতে বললেন। আম্রাতো পুরা খুশি। অইদিন ট্রায়াল দিলাম কারণ ইংলিশ পরীক্ষা ছিল। সমস্যা হলো fill in the blanks নিয়া। আমিও পারিনা মুস্তো ও পারেনা। আর সারা বই খুজলাম পাইনাই কী আর করা খালি ২০ মার্ক নিজে দিলাম বাকি পুরাটা দেখে দেখে দিলাম essay টাও বাদ দিলাম না। রাতে মুস্তো আমাদের জন্য আই ড্রপ বানাইলো। চোখ ওঠা ভালো হয়ে যাওয়ার জন্য যে ড্রপ দেয়া হতো সেটা খালি করে মুস্তো পানি আর শ্যাম্পু মিশিয়ে একটা দারুণ জিনিস বানালো। ডাক্তার আসার আগেই, চোখে ২ ফোটা। ব্যাস চোখ পুরা লাল। এভাবে বাকি পরীক্ষাও দিলাম। সমস্যা হলো ধর্ম পরীক্ষার আগে। ওইদিন সকালে হাশেম ভাই আসলো তারপর ওই অবস্থায় স্যার এর কাছে নিয়া গেলো, বললো স্যার দেখেন ২টার একটার ও চোখ লাল নাই এগুলা চোখে পেষ্ট সাবান দিয়া এতদিন লাল করে রাখসে। ওইদিন মিল্ক এর আগে আমাদের ডিসচার্জ করে দিল। কীন্তু পরীক্ষা ওতো খারাপ হয়নাই। ওই প্রথম বার এর মতো আমি পরীক্ষায় পাশ করি(কলেজে ঢোকার পরে)।

মুস্তো এখন আমার স্বপ্নের BMA তে।ওখানে নাকি কষ্ট!!
দোস্ত বাইরে আসলে বুঝবি কতো সমস্যা। মাত্র কয়দিন কষ্ট কর তারপর ঠিক হয়ে যাবে।
তুই তো তাও এখন আমাদের পোলাপান্ এর সাথে থাকিস ১২ হলেও তো আছে আমি একা।
বাসায় ভাই বোন ও নাই সারাদিন অন্য কলেজের পোলাপান দের সাথে থাকি নিজেদের ও কয়েকজন থাকে কীন্তু কলেজের মতো রাতে ছাদে তো আর উঠতে পারিনা, রিডিং টেবিল এর উপর ফজর পর্জন্ত তো আর গল্প করতে পারিনা। মাগরিবের টাইমে হাইজে দড়ি লাফ কম্পিটিসান তো আর করতে পারিনা, গেমস এর পর জুতার ভিতর এ পেয়ারা তো আনতে পারিনা,
BMA থেকে আয় reunion এ আবার করে আসবো
অন্তত তিন জন মিলে টয়লেট এর সিগেরেট এর মজা তো নিতে হবে বা মাগরিবের সময় ডাব তো পেরে আসতে হবে আর তোর কী মনে আছে হাউজে ননমুসলিম ছোট ভাইরা একবার হাসলো বলে কী মাইর দিলাম??? এবার ওদের নিয়ে একসাথে পারবো তোদের অপেক্ষায় আছি……………………………

১,১৬৬ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “ক্লাস নাইন(কিছু টুকরো স্মৃতি)”

  1. রকিব (০১-০৭)
    তুই তো তাও এখন আমাদের পোলাপান্ এর সাথে থাকিস ১২ হলেও তো আছে আমি একা।

    এই দুঃখে আমি দিন রাত ৫ বার চোখের পানি ফেলি, তোমার সাথে তো তাও অন্য কলেজের কেউ না কেউ আছে, আমি তো পিউর একা :(( :(( ।
    এই পর্বটা কেন জানি একটু বেশি ভালো লাগছে।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)
    এতো তিতা এবং খারাপ তাল কী জন্য জানিনা এতো ভালো লাগলো।

    আমাদের সব ক্লাস নাইনেরই কি এই অভিজ্ঞতা হয়?


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. আশহাব (২০০২-০৮)

    দোস্ত অসাধারন লাগলো...
    :boss: :boss: :boss:
    তবে এই জায়গাটা কেমন জানি হয়ে গেল না

    অন্য কলেজের পোলাপান দের সাথে থাকি

    😡 😡 😡


    "Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
    - A Concerto Is a Conversation

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।