নুরুর আলম নামক এক ব্যক্তি খুব দুষ্ট এবং লোভী একজন পোকো খেলোয়াড়। পোকোমন ধরার সময়, ভাগিনা ভাগ্নির মোবাইল সাথে নিয়ে যায়, যাতে নিজের ব্যাটারি শেষ হলেও তাদের ফোন দিয়ে খেলা যায়। সাধারণত নিজের ফোন পরেই ব্যাবহার করেন তিনি। অন্য যেকোনো অলস সন্ধ্যার মত সেদিন ও তিনি বসে বসে স্মার্ট ফোন ব্যাবহার করছিলেন। স্মার্ট ফোন টিপতে টিপতে রাত ১১ টা বাজিয়ে ফেললেন, এখন বিরক্ত তিনি। কি করবে কি করবে ভাবতে ভাবতে পোকোমন গোতে টিপ দিয়ে দিল।
একটু টিপাটিপি করলেন, কয়টা পোকোমন ধরলেন তা চেক করলেন, ডিম গুলোর কি অবস্থা সেটা দেখলেন। বাসার আশেপাশের পোকো স্টপ চেক করতে গিয়ে তার চোখে একটা পোকোস্টপে আটকে গেল। সেই স্টপে “Lure Module” দেয়া আছে।
নিজের কোনও “Incense” না থাকার কারণে ৩০ মিনিটে অনেকগুলো পোকোমন ধরার ইহাই সুযোগ। সময় নষ্ট করলেন না, ভাগিনার মোবাইলে চার্য নাই শুধু নিজের মোবাইল এবং ওয়ালেট নিয়ে বের হয়ে গেলেন।
এই এলাকার ছিনতাইকারী হিসেবে বেশ নাম ডাক আছে রতনের, লোকে তাকে সাধু রতন নামেই চেনে। তার ছোটভাই আবার খুব ভাল মানুষ হলেও বড় ভাইকে সে কখনো নিষেধ করেনা বরং বিভিন্ন ভাবে বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করে। তার কাছে মনে হয় সে যেন ভাইকে ব্যাবসায়িক বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করে।
এবার বড় ভাই এর জন্য নতুন বুদ্ধি নিয়ে এলো জয়নাল। তাদের বাসার পাশেই একটা পোকোস্টপ। সে রাত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলো। ১১ টার সময় কাছের পোকোস্টপে একখানা Lure Module ইন্সটল করে দিয়ে আসলো। তারপর রতনের কাছে গিয়ে বললও, ”ভাইয়া পর্দার ফাঁক দিয়ে এই জায়গায় লক্ষ রাখো, কিছুক্ষণের মাঝেই লোক আসা শুরু করবে। আর কিছু থাকুক বা না থাকুক একটা দামী মোবাইল সাথে থাকবেই।”
রতন ভাই এর কথা বোঝেনা, কিন্তু তার বিশ্বাস আছে ভাই এর প্রতি। সে জয়নালের কথা মত পর্দার ফাঁক দিয়ে লক্ষ রাখা শুরু করলো।
১০/১২ মিনিট পরেই হেলে-ধুলে একজন স্বাস্থ্যবান লোককে আসতে দেখা গেল। হাতে দামী ফোন বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু দুষ্ট লোকটার ফোনের কোনও সমস্যা আছে কিনা বুঝতে পারেনা রতন। লোকটা ফোনটা ডানে নিচ্ছে একবার বামে নিচ্ছে একবার, উপরে ওঠাচ্ছে আবার। যাইহোক, ফোন নষ্ট হলেও পার্টস বিক্রি করে দিতে পারবে। কিন্তু জয়নাল তাকে আশ্বস্ত করলো। জানালো ফোনের কোনই সমস্যা নাই, এই লোক পোকোমন ধরছে। তুমি একটু পর গিয়ে তারে দুই চড় দিয়ে ফোন আর কিছু থাকলে নিয়ে নিও।
ভাইয়ের কথা মত একটু পর রতন নিচে নেমে গেল মুখ ঢেকে।
আলম সাহেব একমনে পোকোমন ধরছে, কোনও কিছুর খেয়াল নাই তার। তার মনে একবার সন্দেহও হলোনা যে এমন অন্ধকার জায়গায় কে মডিউল ইন্সটল করে যাবে। বরং সে মডিউল ইন্সটল যে করেছে তাকে মনে মনে বলদ, গাধা এসব বলতেছে। একটু পর একটা লোককে আসতে দেখলও সে। বুঝলও এই লোকের কাজই হবে এটা। গাধা ব্যাটা মডিউল লাগাইয়া কই গেছে মরতে।
সাধু রতন সাহেব এসে জয়নালের শেখানো কথাগুলো বললও।
“ভাইয়া, কি পোকোমন খেলছেন? এই মডিউল আমি দিয়ে গেছিলাম এখানে এখন ফোনে চার্য নাই। আপনার কাছে কি কোনও পাওয়ার ব্যাঙ্ক হবে ?
-না ভাই, আমার দুই/তিনটা ফোন আছে। একটার শেষ হইলে আরেকটা দিয়ে খেলি।
রতনের হাতের পেছন থেকে কিছু একটা চকচক করে উঠলো আলমের মোবাইলের আলোতে।
-অনেক খেলছস তুই বদমাশ। আর খেলা লাগবোনা, যদিও তোর স্বাস্থ্যের জন্য এই খেলা খুব প্রয়োজন তবুও তোর ফোনের দরকার নাই। তুই এমনেই হাঁটবি আর অন্য মানুষরে পোকোমন ধরতে দেখবি।
– কে আপনি!! এভাবে কথা বলছেন কেন ?? আমি ফোর্সে ছিলাম জানেন!
রতন নুরুর আলমের দুই গালে টাস টাস দুই থাপ্পড় বসাই দিল।
-ঐসব দিন তোর শেষ বদমাশ, মোবাইল দে হারামি। না হইলে এইটা ঢুকাই দিমু। (ছুরি দেখাইছে অন্য কিছুনা)
আলম সাহেবের পক্ষে আর কিছুই করার নাই ফোন দিয়ে দেয়া ছাড়া। ফোন দিয়ে সে লজ্জায়, আভিমানে চলে গেল। আর কখনো পোকোমন গো তো দূরের কথা। “ট্যাম্পল রান” ও খেলেনি।
উপদেশঃ নিরিবিলি এলাকায় পোকোমন ধরতে গেলে অবশ্যই সাথে একজন হলেও সাথী নিয়ে যাবেন।
:)) :))
:clap:
এমনটা হওয়া সম্ভব।
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
:))