হালাল এবং হারাম

ইউকে তে আসার আগে হালাল এবং হারাম জিনিসটা আমার কাছে খুব সাধারণ একটা ব্যাপার ছিল। এখানে আসার পর দেখলাম, মুরগীর মাংসের মাঝেও হালাল হারাম আছে। আমাকে বাসা থেকেও বলে দেয় নাই এখানে এসে হারাম মাংস যেন না খাই। তো এটা নিয়ে আমার মাথায় কখনোই খুব বেশি চাপ দেয়নাই যতক্ষণ না পর্যন্ত আমার আশেপাশের লোকজন, সহকর্মী এমনকি যে বিক্রি করতেছে সেও বলতেছে ভাই এটা কিন্তু হালাল না। বুঝলাম হালাল-হারামে বিশাল ফারাক আসে। তারপর থেকে ইস্ট লন্ডনের সবকিছুতেই আমি হালাল সাইন দেখতে পাই। বিশ্বাস নাও হতে পারে, তবে হাস্যকর কিছু হালাল জিনিস আমার চোখে পড়েছে, যেমন: হালাল আচার, হালাল চকলেট এমনকি হালাল কলিং কার্ড। বুঝতে বাকি রইলোনা হালাল এখন একটা ব্রান্ড নেম হয়ে গেছে। ইউকেতে আপনি সব কিছুর হালাল ভার্শন পাবেন, হালাল কে এফ সি, হালাল নান্দোস, হালাল সাবওয়ে। ইহুদি ভাইয়ারা এইদিক থেকে আরো একধাপ এগিয়ে আছে, তাদের খাবার আলাদা প্যাকেট এ থাকতে হয়। একবার ওয়াসাবি নামক এক জাপানিজ দোকান থেকে নুডুলস কিনছিলাম, তো যে সার্ভ করতেসিলো সে এশিয়ান। আমাকে বলতেছে না কেনার জন্য কারণ নুডুলসে যে মুরগী আছে সেটা হালাল না। আমি জিজ্ঞাস করলাম সে মুসলমান কিনা। সে জানালো সে মুসলমান, আমি বললাম, আপনি সার্ভ করতে পারলে আমার খাইতে সমস্যা নাই।

তো যেই কারণে আজকে আমার মাঝে হালাল হারামের ব্যাপারটা উঠে আসলো সে তা হল, কিছুদিন আগে ইউকের বড় চেইন সুপার মার্কেট মার্ক্স এন্ড স্পেনসার (এম এন এস) ঘোষণা দিয়েছিল যে,
“”মুসলিম কর্মী যারা চেক আউটে থাকে, তারা চাইলে কাস্টমারকে মদ এবং শুকর সার্ভ করতে রিফিউজ করতে পারে””।

কিছুদিনের মাঝেই যখন কাস্টমারদের মাঝে ক্ষোভ দেখা শুরু করলো তারা তাদের এই পলিসি খুব দ্রুত চেঞ্জ করে এবং সবার কাছে ক্ষমা চায়। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব হাস্যকর মনে হইসে। যার এই ধরণের কাজে সমস্যা সে কি জন্য এখানে কাজ করতে আসছে। হালাল কোনো দোকানে কাজ করলেই পারে। আর মদ ছুঁইলে সমস্যা কিন্তু, মাস শেষে যখন একাউন্টে বেতন ঢুকে তখন নিশ্চয়ই সেখান থেকে হারাম জিনিস বিক্রয় করার টাকা আলাদা করা হয়না!!

হিসাব করলে দেখা যাবে, ইউকের যত কারী হাউজ(ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট) আছে ৯০% মুসলিম বাঙ্গালীরাই চালায়। এরকম কারী হাউজ খুঁজে পেতে কষ্ট হবে যেখানে মদ বিক্রয় হয়না। কিংফিশার এবং কোবরা বিয়ার টিকে আছে এই কারী হাউজ গুলার জন্য। খেয়াল করলে দেখা যায়, এই রেস্টুরেন্ট গুলার মালিকদের কারণেই বিভিন্ন টাউন কিংবা সিটিতে মসজিদ হচ্ছে। আমি যে টাউন এ থাকি সেখানের ব্যাপারে বলতে পারি, এই ছোট টাউনে ১৩ টা কারী হাউজ আছে, এবং এই কারী হাউজের মালিকরাই মসজিদ কমিটির চেয়ারম্যান, কোষাধ্যক্ষ , মেম্বার ইত্যাদি। তাদের সোর্স অফ ইনকাম কিন্তু রেস্টুরেন্ট, সেখান থেকেই মসজিদ কমিটিতে দান করা হয়, সেই টাকাতে মসজিদ চলে, ইমামের বেতন হয়, হালাল মাংস খাওয়া নামাজি-বেনামাজি কর্মচারীরাও বেতন পায় মদ বিক্রি করা টাকা থেকে। ইউকের মুসলিম-প্রীতি মাঝে মাঝে আমার কাছে মনে হয়, সাধারণ পাবলিককে ক্ষেপানোর জন্য করে। যে কারণে ই ডি এল এর মত বর্ণবাদী গ্রুপ এত সাপোর্টার পাচ্ছে। আমি ই ডিল এল অবশ্যই সমর্থক না, কিন্তু এদের মাঝে যেই ভীতি সেই ভীতি কিন্তু আমাদের মাঝেও আছে। আমরা যেমন ভয় পাই, বাংলা না আফগান হয়ে যায়, বাংলাদেশে যদি শরীয়াহ ল চালু হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি। ই ডি এল গঠন হয় লুটন নামে এক মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ সিটিতে। যেখানে একটু পর পর আপনি মসজিদ পাবেন, আছে মাদ্রাসা, ফিশ এন্ড চিপস এর দোকান গুলোর জায়গায় স্থান পেয়েছে হালাল চিকেন চিপস এর দোকান। কাবলি ড্রেস, লম্বা পাঞ্জাবী পরা পাকি দেখলে আমাদের ভয় লাগে, আর যারা এগুলোর সাথে পরিচিত না তাদের কি অবস্থা ভেবে দেখেন। মুখ ভর্তি দাড়িওয়ালা পাকি!!! ভালো মানুষ অবশ্যই আছে, সেই সাথে আছে বেয়াদব, অভদ্র পাকি-আফগানী, কিছু বাঙ্গালীও আছে সেই দলে।

আমার লেখা দেখলে মনে হতে পারে আমি হয়তোবা ইসলামোফবিয়াতে ভুগতেসি, আসলে সেরকম কিছুনা। কিন্তু যারা হালাল হারাম নিয়ে এত চিন্তা করে এত কথা বলে আমার সমস্যা তাদের নিয়।কাউন্সিল থেকে বেনিফিট নেয়া ভদ্রলোক যখন হজ্জ্বে যায়, এবং রাতে মদ খাওয়া মুসলমান যখন দুপুরে হালাল খোজে তখন আমার সমস্যা। পোকার খেললে তুমি খারাপ কিন্তু রোলেট খেললে কিংবা লটারি ধরলে কিছু হয়না। “”যমযম”” নামক বাঙ্গালী একটা দোকান আছে, সেখানে বিক্রি হয় কুরআন, হাদিস এবং ট্যাক্স পে না করা বাংলাদেশি সিগারেট। আমাদের এখানে একজন হুজুর আছেন, সিলেটের ভাষায় বলা হয় মেশাব। যার নাম এখন ব্ল্যাক হুজুর, তার চেহারা কালো সে কারণে না। উনি ব্ল্যাকে টাকা পয়সা আনেন সে কারণে। আমি সবসময় মনে করি আমাদের নেয়া সবচেয়ে বড় ভুল ডিসিশন ছিল ইউকে তে আসা। কিন্তু এখানে না আসলে অনেক কিছুই অজানা থাকতো।

১,৬৩৪ বার দেখা হয়েছে

২১ টি মন্তব্য : “হালাল এবং হারাম”

      • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

        ছি নাজমুল; তুমি সহীহ পদ্ধতিতে জবেহ করার বিষয়টি জানতে না!


        এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

        জবাব দিন
        • নাজমুল (০২-০৮)

          ব্যাপারটা হইলো মুরগী কিভাবে জবাই করতেসো সেটার উপর হালাল হারাম ডিপেন্ড করতেসে। মুরগীর মাথা একটু পশ্চিম দিকে মুখ করে আল্লাহু আকবার বলে জবাই করাকে হালাল স্লটার্ড বলে। হালাল জবাই করা মুরগীর মাংশ খাওয়া হালাল, আর ইলেক্ট্রীক শক দিয়ে মেরে ফেলা বা কোপ দিয়ে মাথা ফেলে দেয়া মোরগ খাওয়া হারাম।
          আব্বা আম্মা ভুলে ছোট থাকতে হিন্দু বাড়িতে খাইতে নিষেধ করেনাই 😛
          তুমি যদি নাছারাদের বাড়িতে গিয়া তার্কি খাও কিংবা ল্যাম্ব খাও সেটা হারাম 😀 আর শুকর তো বাই ডিফল্ট হারাম।
          আর ইহুদিরা হালাল জিনিস খায়, ওদেরটা আমার জানামতে খাওয়া যায়, কিন্তু একটা ডাউট আসে, ওরা তো জবাই করার সময় আল্লার মনে কইরা কাটেনা, যাই হোক হালাল মোরগ খাইতে সুস্বাদু।

          জবাব দিন
  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    হালাল হারাম ক্যাচাল আমেরিকাতেও আছে শুনেছি। তবে বিলাতে কাবযাব একটু বেশী হয় বইকি! 🙂 (সম্পাদিত)


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  2. নাফিস (২০০৪-১০)

    শার্লক এর ফার্স্ট এপিসোড দেখতে গিয়ে পাইছি এটা.. ব্যাটা এক হালাল রেস্টুরেন্টে এর সামনে দাড়িয়ে আছে! পিছনে সুন্দর করে লেখা হা লাম আলিফ লাম= হালাল ! ইন্টারনেটে এ নিয়ে অনেক মিমস। শার্লক ও হালাল খায় :khekz: :khekz: =)) :) (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।