আমার দেখা পৃথিবীর সবথেকে কুতসিত কাপল হচ্ছে মিষ্টার হোদল কুঁত কুঁত আর মিসেস ডিম্পল কাপাডিয়া। মিজ কাপাডিয়া কি দেখে যে হোদলটাকে বিয়ে করেছে, এই হিসাব আমি সারা জীবনে মিলাতে পারব বলে মনে হয় না। একসংগে পড়ত এইটা জানি, হোদল খুব মেধাবি, তাও মানি, কিন্তু এই গুলোই কি সব, নাকি তাদের মধ্যে বিয়ের আগেই কোন বোঝাপড়া হয়েছিল। হতে পারে, হলেই ভালো, হিসাব মিলানো সহজ হয়।
হোদলটা আসলেই খুব মেধাবি, বুঝা যায়। যেখানে হাত দিয়েছে, সোনা ফলেছে, বিশেষ করে ব্যবসায়, ১৭/১৮ বছর আগেও, যখন আমার বয়স ছয় কি সাত, আমরা থাকতাম মিরপুর, আর এখন হোদলের গুলশানে একটা ফ্ল্যাট, উত্তরায় সিংগেল ইউনিট বাসা, ধানমন্ডিতে আপার্টমেন্ট, সবার জন্য আলাদা গাড়ি। এর মধ্যে হোদলের গাড়ি দুইটা, একটা জিপ আর একটা কার, কাপাডিয়ার বি এম ডব্লিউ, আর আমার জন্য টয়োটা। এইগুলো আমার জানার মধ্যে, না জানা কি আছে জানি না। হোদলটা মেধা কাজে লাগিয়েছে শুধু মাত্র নিজের উন্নতির জন্য, পয়সা বানানোর ধান্ধায়। তবে মনে হয় না কাপাডিয়ার পয়সা ছাড়া আর কোন চাহিদা আছে হোদলের কাছে।
আর একটা কাজে হোদলটা তার মেধার সর্বচ্চো প্রয়োগ করেছে বলে ধারনা আমার। প্রতি বছর বাংলাদেশের সেরা সুন্দরী একটাকে খুজে বের করে হোদলটা। পারসোনল সেক্রেটারি পোষ্ট নিয়ে কোম্পানিতে জয়েন করে ডানাকাটা এক পরী। দুবছরের কন্ট্রাক্ট থাকে নাকি ওদের। হোদলের মোট সেক্রেটারি তিন জন, এর মধ্যে একজন সবসময় থাকে, বাকি দুজনের মধ্যে প্রতি বছর একজনের চাকুরী বদল হয়, নতুন আর একটা পরী আসে। শীতের শুরুতে হোদলটা নতুন পরীটাকে নিয়ে দেশের বাইরে বিজনেস ট্রিপে যায়। শুনেছি, যে একবার হোদলের সেক্রেটারি হয়েছে, তার সারা জীবন আর কিছু না করলেও চলে।
কাপাডিয়া ব্যাস্ত পার্টি নিয়ে, কোন ক্লান্তি নেই। উরে মারে মা……………।। এত গিলতে পারে এই মহিলা। আর শরীর, মাশাআল্লাহ, মধ্য চল্লিশ, দেখে বুঝার কোন উপায় নাই। আমি যে একটা মেয়ে, পচিশ ছুই ছুই, অই মহিলার পেট থেকে বের হয়েছি, কেউ মানতে চায় না প্রথমে। এখনও মনে পড়ে, আমি যখন প্রথম বুঝতে শিখি ছেলেদের চোখের ভাষা, আমি আর কাপাডিয়া একসংগে বের হলে কেউ বুঝতেই পারত না আমরা মা মেয়ে। একেত আমাদের চেহারার অমিল, কাপাডিয়ার প্রায় কিছুই আমি পাইনি, যত না পেয়েছি হোদল কুঁত কুঁতের, সবাই মায়ের দিকে আড় চোখে তাকাত, অনেক সাহসিরা সরাসরি, আমার দিকে প্রায় কেউই তাকাত না। আমার খুব হিংসে হত তখন কাপাডিয়াকে, পরিচিতরা যখন হাত মেলাত কাপাডিয়ার সংগে, পরিচয় দিত, “প্লিজ মিট উইথ মাই ডটার” বলে, সবাই অবাক হত আমাকে দেখে। প্রথম বুঝতাম না কারনটা, সিন্থিয়া বুঝিয়ে না দিলে হয়ত বুঝতামও না। তবে তাদের অবাক চোখ দেখে কাপাডিয়া যে ভীষন গর্ব অনুভব করত তা বুঝতে পারতাম খুব সহজেই। কাপাডিয়া আর হোদলটা একই বাসায় থাকে, পাশাপাশি রুম, কিন্তু কবে শেষ কথা বলেছে ওরা হাসিমুখে, আমার মনে নেই। কাপাডিয়া বরং অনেক সহজ আংকেলদের সংগে, অনেক আংকেল আছে আমার, ছোট কালে অনেক রকম আদরও করতে চেয়েছিল, এক আংকেলকে তো চড়ই মেরেছিলাম, বুদ্ধিটা অবশ্য সিন্থিয়া দিয়েছিল। খুব মজা হয়েছিল, একদিন কাপাডিয়ার সামনে জানতে চেয়েছিলাম, তার গালের ব্যাথা কমেছে কিনা? কাপাডিয়া তো অবাক, “সেকি রাশেদ ভাই, আপনার গালে ব্যাথা, আমি তো জানলামই না” বকের মত মুখ হয়ে গিয়েছিল ব্যাটার, খুব মজা পেয়েছিলাম, এখনো হাসি পায়।
সিন্থিয়াই একদম কাছের বন্ধু, সেই স্কুলে থাকতে পরিচয়, কত কিছু শিখিয়েছে আমাকে। ওর বাসা আবার ভরা ছবি দিয়ে, কত কালেকশন ছিল ওর। ও অবশ্য বলত ওর ভাইয়ার কথা, ও নাকি মেরে দিয়েছে। যাইহোক, জীবনের সবথেকে চ্যালেঞ্জিং ব্যাপারটা ওই শিখিয়েছে, সবচেয়ে মজা লাগত যখন আমরা নিজেদের মধ্যে প্র্যাকটিস করতাম, নিজেদের ভিডিও নিজেরাই দেখতাম। ওর ভাইয়া, ওর ভাইয়ার বন্ধু, ও আর আমি যেবার কক্সবাজার বেড়াতে গেলাম, সেবারের এক্সপেরিয়েন্স তো তুলোনাবিহীন, এগুলোর ভিডিও রাখতে পারলে দারুন হত, কিন্তু সিন্থিয়াই না করেছিল, ছেলেদের নাকি একদম বিশ্বাস করতে নেই, প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে ছুড়ে ফেলতে হয়, দেরি হলে ওরাই ছুড়ে ফেলবে।
সাজ্জাদকে মনে হয় ভালবাসতাম, বাসতাম কি? কি জানি? হয়তো হ্যা, কিংবা না! তবে ওর মধ্যে আগুন ছিল। পুড়তে ভাল লাগত। তাছাড়া সিন্থিয়া আমেরিকায় চলে যাওয়াতে অনেক একা লাগত। ক্যাম্পাসে সবাই সাজ্জাদকে কেন যে এড়িয়ে চলত? হতে পারে, ওর তেজী ভাবটা, কিন্তু আমার আবার ওইটাই সবথেকে ভাল লাগত। ওর আগুনে পুড়ে পুড়ে মনে হত আমি সোনা হচ্ছি। ওকে বললে কি আমরা একসংগে থাকতে পারতাম সারাজীবন? কিন্তু সংসার মানেই তো হোদল কুত কুত আর ডিম্পল কাপাডিয়া। আমি না হয় কাপাডিয়া হলাম, কিন্তু সাজ্জাদ তো হোদল চরিত্রে একদম বেমানান। সাজ্জাদকে ভালবাসা যায়, কাছে টানা যায়, সময় কাটানো যায় কিন্তু ওর সংগে অভিনয় করা যায় না।
সাজ্জাদের একটা গোপন ডাইরী ছিল, লুকিয়ে লুকিয়ে কতবার যে পড়েছি ওইটা।, কিশোর বয়সের অনুভুতি এমন হয় নাকি? ইটস লাইক আ হ্যাভেন……… আই কান্ট বিলিভ।
ডাইরী পড়ে আমার, কেন জানি শম্পাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হত। ঠিক বললাম কি? না মনে হয়। আমার আসলে শম্পা হতে ইচ্ছে করত।
পরিজ নাকি পিয়াজু কি হচ্ছে বুঝছি না।
পোলাপাইন সাহস না দিলে গেছি
চালাইয়া যান। অন্য ধরনের গল্প। ভাল হচ্ছে।
ভাইয়া, খুবই ভালো হচ্ছে। আমি জানি, আমার মত সবাই-ই আপনাকে এই সিরিজ অনেক অনেক দিন চালিয়ে নিয়ে যেতে বলবে। :gulli: :gulli: :gulli:
ফয়েজ ভাই,
এইটা খানিকটা নেশা মতোন ধরিয়ে দিল। চরম থ্রিলিং গল্পের বইয়ের এক চ্যাপ্টারের পর পৃষ্ঠা উল্টে আরেকটা চ্যাপ্টার পড়ার যে আগ্রহ তৈরী হয় ঠিক সেইরকম আগ্রহ তৈরী হয়েছে। কিন্তু পৃষ্ঠা উল্টাতে পারলাম কই 😛 ?
সুখপাঠ্য, :boss: পরবর্তী চ্যাপ্টারের অপেক্ষায় থাকলাম।
Life is Mad.
দারুন! থামলে কইলাম খবর আছে। :chup:
ফারজানা তো দেখি পাকা খেলোয়াড়। আফসোস ইউনিভার্সিটিতে আমার সাথে কোন ফারজানার খাতির হয় নাই। 😉
এই পর্বটা আগেরটার চেয়েও ভালো হইসে। 😉 😉
প্রথম পর্ব পড়ে মনে হয়েছিল 'ফারজানাকে' আপনি কম গুরুত্বপূর্ন রেখে দেবেন...এখন বুঝলাম, ভুল ভেবেছিলাম!
এই পর্বে ফারজানার কথপকথন কি আমেরিকা থেকে বলা? নাকি ও এখনও যায় নাই??
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ধন্যবাদ সবাইকে, যা বলছ বুঝে বলছ তো সবাই?!
আগেই বলেছিলাম এটা একটা এক্সপেরিমেন্ট, ছাত্র রাজনীতি আমার মূল উদ্দেশ্য, ফারজানা পর্বে সেটা থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি, ৮০ এর দশকে কিছু লোক হঠাত আংগুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়, তাদের সংগে একটা দূরত্ব তৈরী হয় তাদের সন্তানদের, মনে হল ফারজানাকে দিয়ে ওটা ফুটানো যায় কিনা দেখি।
ফারজানা মনে হয় আর আসবে না। বরং জোবায়ের, মিনহাজ আর জিসানকে দিয়ে কিছু বলতে চাইব।
ফয়েজ ভাই,
ভাই দারুন কোন ফিনিশিং আশা করতেছি...।
বরাবরের মত জটিল লেখা।
সবকিছু ছাপিয়ে ফারজানার শম্পা না হতে পারার ব্যাথাটাই বড় লাগল আমার কাছে।
ভাই শম্পা কি আসবে না??
জিসান তো সাইকো টাইপ...ওর পার্টটা পড়ার তর সইছে না...
ফয়েজ ভাই, জলদি দেন... :bash:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
শম্পা আসলে এইখানে ইম্মর্পটেন্ট না, এই গল্পের সংগে শম্পা যায় না, শম্পার দরকার শুধু সাজ্জাদের হতাশা তুলে ধরার জন্য। জিসান আর মিনহাজের দ্বন্দটাই মূল, যদি অতদূর টানতে পারি।
আরিব্বাপরে, ফয়েজ ভাইতো কোপায়া দিছেন B-)
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
ফয়েজ ভাই,একজন একেবারেই সাধারণ পাঠকের দৃষ্টিকোন থেকে বলছি-এই ব্যাপারটি কি একটু বেশি রঙ্গীন মনে হচ্ছে আর কারো কাছে?হতে পারে এটা এক্সট্রিম লেভেলের ক্ষেত্রে সত্যি কিন্তু ডি ইউ এ প্রথম শ্রেণী পাবে যে মেয়েটি তার সাথে কি এই ভয়াবহ মাত্রার উচ্ছৃঙ্খলতা খানিকটা বেমানান লাগেনা?এটা যদি কেউ করেও তার তো বাবার টাকায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র পড়াশোনা করতে আসা কোন ধনীর দুলালী(স্পয়েল্ট ব্র্যাট) হবার কথা।...
ভাইয়া প্লিজ রাগ করবেন না-আপনার একজন গুণমুগ্ধ পাঠক বলেই সে অধিকারে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞাণে যা মনে হল সেটা প্রকাশ করলাম।আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
উপন্যাস হিসাবে ইভলব করতেছে দেখি।
ভালো লাগছে।
চালায়া যান। 🙂
মাসরুফ, যখনকার কথা বলছি, তখন প্রাইভেট ইউনি কিন্তু ছিল না। অপশন ছিল দুইটা, সরকারী ইউনি নতুবা দেশের বাইরে। নসু তো আসল সেইদিন, এরপর একে একে আরও অনেক।
প্রেক্ষাপট ঠিক আছে, বরং প্রশ্ন করতে পার তখন বি, এম ডব্লিউ ছিল কিনা বা হ্যান্ডি ক্যাম ছিল কিনা যা দিয়ে হোম ভিডিও করা যায়?
ফারজানা মেধাবী নয় এইটা কোথাও বলিনি। সাজ্জাদের ধারনা ফারজানা প্রথম শ্রেনীর জন্য তাকে ব্যবহার করছে। সাজ্জাদের এই ধারনা কিন্তু ফারজানার ধারনা থেকে আলাদা। ফারজানা কোথাও বলেনি প্রথম শ্রেনীর জন্য সে সাজ্জাদের কাছে যায়, বরং সে বলছে, সাজ্জাদের তেজী ভাবটা সে উপভোগ করে।
ঠিক মত মনে হয় ফুটাতে পারছি না। 😕
আরেক পর্ব এসেছে দেখে এইবার চেয়ারে পা তুলে টাইট হয়ে বসলাম।
দেখা যাক কতদূর কি হয়।
ধুমায়ে লেখেন, সাথেই আছি।
*
btw: আপনি সচলে লেখেন বলে শুনলাম, জানতাম না। কী নামে লিখেন ওইখানে?
www.tareqnurulhasan.com
:gulli: :gulli:
দুই গল্পে দুইটা আলাদা পাসর্সোনালিটি দুর্দিন্তভাবে ডেভলপ কেরছেন। :salute: জোস
ও বস বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, আগের পর্বে সাজ্জাদের স্কাটার্ড ভাবটা পাঠকের মধ্যেও ছড়াতে পেরেছিলেন
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
তারেক, সচলে লিখতাম, দুইটা পোষ্ট দিয়েছিলাম, আর কিছু কমেন্ট এইতো অল্প কয়েকদিন, এখন শুধু পড়ি, লিখি না।
টিটো, ব্লগে এই একটা মজা, শেয়ার করে করে অনেক কিছু ডেভেলপ করা যায়।
যোবায়ের, জিসান আর মিনহাজ হবে মূল চ্যালেঞ্জ, দেখি কি হয়
ফয়েজ ভাই,
আপনার সিরিজটা পড়তে খুব ভালো লাগছে। আমার মতে আপনি ছাত্র রাজনীতি বেশ ভালোভাবেই তুলে ধরেছেন লিখাটায়। পরের পরবের অপেক্ষায় রইলাম।
ফয়েজ ভাই,
দূর্দান্ত...
চালিয়ে যান...।