হাইপোথিসিস নম্বর এক। শীত নিদ্রা দেবার আগে কিছু কথা লেখা দরকার, না হলে পাবলিক আমাকে ভুলে যেতে পারে।
হাইপোথিসিস নম্বর দুই। পুজার পুরা তিন দিন ছুটি, কোনো কাম নাই।
মিল্ক ব্রেক এ টের পাওয়া গেল, সেকেন্ড হাই টেবিলের ইসলাম এর সিট টা খালি। তা খালি থাকতেই পারে। প্রিফেক্ট যেহেতু নিশ্চয়ই ব্যাস্ত আছে কোথাও। আগের ক্লাসটাতেও তো প্রেজেন্ট ছিল।
মিল্ক ব্রেকের পর ব্যাবহারিক ক্লাস, কে কই আছে কোন খবর নাই। ইসলাম এর খবর পাওয়া গেল লাঞ্চ এর আগে আগে।
-“কি ব্যাপার দোস্ত তুই কই ছিলি?”
-“দোস্ত, আডজুট্যান্ট আমার পাছায় ব্যাতাইছে”।
-“কিইইইইইই এত্ত বড় সাহস, প্রিফেক্ট এর পাছায় বাড়ি মারছে। তুই কি কছ এইগুলা”?
-“সত্যি”, ইসলাম এর চোখ মুখ লাল।
ডাক মিটিং ডাক, ওই লাঞ্চ এর পর মিটিং, সবাই মঞ্জুর এর রুমে চলে আয়।
-ওকে।
আমারা উত্তেজনায় কাপি, এইবার কিছু একটা করতে হবে হবেই। ছাড়াছাড়ি নাই, প্রিফেক্ট এর পাছায় বাড়ি, মান ইজ্জত কিছু বাকি নাই আর।
এই ফাকে বলি, আডজুট্যান্ট লোকটা খুব একটা জুতের ছিল না আমাদের জন্য। সে নিজেও এক্স ক্যাডেট, মির্জাপুর, বদের হাড্ডি ছিল শুনছিলাম তার ক্যাডেট বেলায়। এয়ারফোর্সে খুব ভাল রেকর্ড, কিন্তূ পরে আর ফ্লাই করতে পারত না, নাক দিয়ে রক্ত পড়ত। এই চিজকে রংপুর ক্যাডেটে আমদানী করেছেন লে কর্নেল এমদাদ। অসম্ভব ডিসিপ্লিইন্ড একজন অফিসার। লে কর্নেল এমদাদকে আবার স্পেসাল এসাইনম্যান্ট দেওয়া হয়েছে ক্যাডেট কলেজ মনিটরিং বোর্ড থেকে, রংপুর ক্যাডেট এর বাদরামির পরিমান একটা সহনীয় মার্তায় আনার জন্য। এইগুলো ঘটে আমরা যখন টেন এর শেষদিকে। বদের হাড্ডি একটা ব্যাচ এডু স্যার বেছে নিলেন, যাদের ধোলাই দিয়ে পুরো কলেজ কে ঠান্ডা করবেন। সুন্দর একটা নাম দিলেন সিস্টেমটার। Example batch আর Example punishment. পুরা ব্যাচ কে শাস্তি দেয়া বড় ঝামেলার। তাই উনি শর্ট-কাট রাস্তা বের করলেন একটা। Example batch থেকে বেছে বেছে কিছু ক্যাডেট বের করলেন। এরা হল Example ক্যাডেট। এর পরের হিসাব তার জন্য খুব সহজ। উলটা পালটা যাই হোক আগে ধরে ধোলাই দাও অই ব্যাচের অই ক্যাডেট গুলারে। দুনিয়া কেমনে ঠান্ডা হয় দেখ। পাক্কা তিন বছর এই চিজ আমাদের পিছনে লেগেছিল। আমাদের পাসিং হবার পর উনি চাকুরি থেকে অবসর নিয়েছিলেন। ………একেই না বলে প্রেম।
সিস্টেমে কাজ হলো। আমরা কিছু করার আগে চোদ্দ বার ভাবি, এমন ভাবে প্ল্যান করি যেন মাহমুদ, মনোয়ার (Example ক্যাডেট) প্রমান করতে পারে তারা অই সময় অন্য কাজে ছিল। স্পটে ছিল না। এহেন চিজ কে সাইজ করার ব্যবস্হা করে দিল এই ক্যাডেট ইসলামের পাছায় বাড়ির ঘটনা। এই সুযোগ কাজে লাগানো দরকার।
মঞ্জুরের রুমে ইসলাম পয়লা একটা জ্বালাময়ী বক্তব্য দিল। শেষটা মনে আছে
“এতদিন আমরা বলছি, তোরা যা আমি তোদের সংগে আছি। কিন্তু এইবার আমরা বলব আমি যাচ্ছি, তোরা সংগে আয়।“
ফাটায় হাততালি দিলাম আমরা।
ডিসিসান হল, আমরা প্রিফেক্টরা সর্বাত্তক অসহোযোগ আন্দোলনে যাব। কোথাও লিড দিব না। যা করার জুনিয়র প্রিফেক্টরা করবে। ডিসিসান এইরকম নেবার কারন, এডূ স্যার মাহমুদ, মনোয়ার, মাসরুরকে আর ধরতে পারবে না। আরও ডিসিসান হল, প্রিফেক্ট যারা কলেজ ভলিবল আর বাস্কেটবল টিমে আছে তারা প্র্যাকটিসে যাবে না। স্পোর্টস মিট এর খ্যাতা পুড়ি।
তখন গরম, গেমসের আগে একটা প্রেপ আছে। অবশ্য কলেজ ভলিবল আর বাস্কেটবল টিম এই প্রেপে যায় না, তারা অইসময় থেকে প্র্যাকটিস শুরু করে। সবাই প্রেপে যায় আর আমরা যাই খেলতে, অন্যরকম একটা ভাবে থাকি তখন।
যেই কথা সেই কাজ, প্র্যাকটিস ড্রেস না পরে আমরা প্রিফেক্ট কাম প্লেয়াররা গেমস ড্রেস পরে প্রেপে গেলাম। এর মাঝে আমি কলেজ গেমস প্রিফেক্ট ভলিবল টিম এর ক্যাপ্টেন, আর শামস ওমর ফারুক হাউসের হাউস প্রিফেক্ট বাস্কেটবল টিমের ক্যাপ্টেন। গেমস প্রিফেক্ট হিসেবে গেমস প্যারেড আমার কমান্ড করার কথা। ঘটনা তার আগেই ঘটবে তাই অইটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন দরকার নেই।
ঘটনা যে প্যাচ খাচ্ছে বুঝতে পারছিলাম প্রেপ টাইম থেকেই। ডিউটি স্যার যেই দেখেন প্র্যাকটিস বাদ দিয়ে ক্লাসে বসে আছি, একটা খোটা দেন। ষ্টাফ ক্লাসে এসে দেখে গেল, পড়াশুনা করি, খবর আছে বলল, এডু স্যার “বিপ্লব” এর খবর পেয়ে গেছেন। টিমের কোচ দ্বয় একসংগে এডজুট্যান্ট এর কাছে রিপোর্ট করেছেন, টিম ক্যাপ্টেন সহ কিছু প্লেয়ার প্র্যাকটিসে নাই। প্রিন্সিপাল স্যার (লে কর্নেল ওবায়েদ) জানতে চেয়েছেন ঘটনা কি। খেলা তো জমে গেছে মামু।
শামস আর আমি একসংগে প্যারেড গ্রাউন্ডের দিকে যাই প্রেপ এর পর, কান খাড়া, কখন ডাক আসে। বেশিক্ষন লাগে না।
-“ইউ ব্লাডি ক্যাডেটস, শামস, ফয়েজ কাম অন হেয়ার, হ্যারি আপ।“
-“ব্লাডি আই সে ডাবল আপ”।
-“উই ব্লাডি শিট, ব্লাডি প্রিফেক্ট, হ্যান্ডস ডাউন”।
– “আই টোল্ড, হ্যান্ডস ডাউন”।
পুরা গ্রাউন্ড চুপ। পুরা কলেজ, স্যারেরা, প্রিন্সিপাল।
সবার সামনে হ্যান্ডস ডাউন হই।
-“ষ্টাফ ক্যারি অন দ্য প্যারেড”। এডু হুকুম দেয়।
ষ্টাফ প্যারেড হ্যান্ড ওভার করে, অম্প সময় পড়ে ডিসমিসও করে দেয় গেমসের জন্য। এরপর শুরু হয় আমাদের পাংগা। কিছুক্ষনের মধ্যেই এডু বুঝতে পারে আরো প্রিফেক্ট আছে যারা আসতে পারে এই তালিকায়, মানে যারা প্রিফেক্ট এবং কলেজ টিমে আছে। মানে পাংগা খাবার উপযুক্ত। ডাকো রকিবকে, ডাকো ফিরোজকে, ডন, তারিক, ডাকো ডাকো।
৩০/৪০ মিনিট সাইজ হই। মহান কর্ম এডু একা ডিল করে। আমাদের ব্যাচকে শাস্তি দেবার জন্য কখনই স্টাফ নিতে চাইতেন না উনি। ব্যাচের একটা র্মযাদা ছিল। পাংগার পরে শুরু হয় ঝাড়ি। প্রথমে ইংরেজী, তারপর বাংলিশ হয়ে বাংলায় চলে আসে ঝাড়িগুলো।
গেমস শেষ হয়, বিউগল বাজে, ক্যাডেটরা হাউসে চলে যায়, টি-ব্রেক এর টাইম হয়, চোখের সামনে দিয়ে ক্যাডেটরা টি-ব্রেক এ যায়, এডু স্যার এর ঝাড়ি শেষ হয় না। এডুর ঝাড়ির মুল বক্তব্য, প্রিফেক্টদের জন্য তিনি কলেজটাকে জুতের করতে পারেন নাই। আমরা বড় নন-কোওঅপারেটিভ।
“স্যার, আমরা নন-কোওঅপারেটিভ না, আপনারা নন-কোওঅপারেটিভ, একজন প্রিফেক্টকে যতটুকু সাপোর্ট দেয়া দরকার কলেজকে সাইজে রাখার জন্য আপনারা তা দিতে পারেন না বা দেন না।“রকিব বলে অনেকক্ষন পর।
-“ডু ইউ হাভ এনি এভিডেনন্স”?
-“ইয়া আই হাভ”।
-“ওকে, টেল মি।“
-“নো আই উইল নট টেল ইউ, আনলেস ইউ গিভ গ্যারান্টি, ইউ অনন্ট টেল আনিবডি”।
– “বি শিওর অন ইট, আই উইল নট টেল আনিবডি”।
এরপর শুরু হল রকিব, ফিরোজ, শামস আর আমার স্যারদের নামে কমপ্লেইন আর কমপ্লেইন। কোন স্যার ডিউটিতে থাকার সময় হাউসে আর ডাইনিং হলে পোলাপাইন কে সাইজ করার সময় কি কি ভাবে আমাদের বিরক্ত করেছে, আর এরজন্য কলেজের সুনাম কি কি ভাবে ব্যাহত হয়েছে তার ফিরিস্তি। এর কিছু কিছু অবশ্য একদম জেনুইন।
ফিরিস্তি শুনে এডু কিছুক্ষন ঝিম মেরে থাকে। তারপর ছেড়ে দেয়।
-গো আন্ড এটেন্ড মাগরিব প্রেয়ার।
আমরা হাফ ছাড়ি। ফাড়া মনে হয় কাটলো।
(ব্রেক: খাওয়া, ঘুম, এবং বউ বাচ্চাকে সময় দেবার জন্য)
ফয়েজ ভাই,
আপনার আগের লেখাটা পড়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে অনেকক্ষণ ঝিম মেরে কলেজের দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলাম।
আর এটা পড়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি =)) =)) =)) ।
এক নিঃশ্বাসে পড়ছি। খুব, খুব ভালো লাগছে।
Life is Mad.
পাংগা খাবার কথা মনে হলে এখন হাসি পায় আমারও।
তখন অবশ্য অন্য রকম মনে হত।
খাইস্টা এডজুট্যান্ট পড়লে যা হয় আর কি।
একটা এডজুট্যান্ট ইচ্ছা করলে একটা কলেজের ওভারল কোয়ালিটি অনেক ভালো করে দিতে পারে আবার অনেক নিচে নামিয়ে দিতে পারে।
আপনাদের সময় জানিনা ভাইয়া, তবে আমাদের সময় প্রিফেক্টদের পানিশম্যান্ট দেয়ার মতো সাহস কোন এডজুট্যান্টের ছিলো না। আসলে ট্রেডিশন ছিলো না আর কি। ওদের জন্য থাকতো ড্রেস রেস্ট্রিকশন। সারাদিন খাকি ড্রেস পইরা থাকতে হইতো।
লেখা তো আগের মতোই চমৎকার। :clap: :clap: তবে
এইটা মানতে পারলাম না। বরং এইটা হউয়া উচিত
ব্রেক:খাওয়া, ঘুম,বউ বাচ্চা এবং সিসিবিকে সময় দেবার জন্য 😉 😉
এডু এর ব্যাপারটা একটু অন্য রকম ছিল। ওর উপর আসলে অনেক চাপ ছিল আমাদের সাইজ করতে না পারার কারনে।
বাসায় ল্যাপটপ অন করলেই বউ বাচ্চা চিল্লাপাল্লা করে। ভাবছি এম,বি,এ করব, তখন কিছু বললে বলব পড়াশুনা করি, এসাইনমেন্ট এর কাজ।
তাইলে শুধু এম.বি.এ কেন?
করবেনই যদি পি.এইচ.ডি টাই করেন। সময় বেশি লাগবো। অনেক গবেষান ব্যাপার তো।
😉 😉
রাস্তা আলাদা হয়ে গেছে বাচ্চু।
ড্রেস রেস্ট্রিকশনকে আমরা পাত্তাই দিতাম না। প্রিফেক্ট হিসাবে আমাদের ব্যাচটাই যা কষ্ট করছে, অন্য ব্যাচ এর সংগে এই রকম হয় নি। তবে ১১ ইনটেক এর বেশ কয়েকজন এর প্রিফেক্ট শীপ বাতিল করেছিল এই এডু। কলেজ প্রিফেক্ট সহ। চেঞ্জটা অবশ্য আপুলেট পরানো আগেই হয়েছিল।
ক্যাডেট কলেজে ক্লাস ১২ এর একজন ম্যানেজমেন্টের যেই ট্রেনিং পায়,১০ টা এমবিএ ডিগ্রি সেই নলেজ দিতে পারবেনা বইলা সন্দেহ হয়।আর এইসব ক্ল্যাশ কিন্তু এক দিক দিয়ে পজিটিভ, যদি এই দিকটা আজকে এতদিন পরে চিন্তা করি।
ফয়েজ ভাই জিন্দাবাদ 🙂
পুরাটা ঠিক নয়। ক্যাডেট একটা নির্দিষ্ট এনভায়রমেন্টে কাজ করে। প্রফেশনাল ব্যাপার গুলা অনেকটাই আলাদা। ক্যাডেট এর সবচেয়ে বড় যে গুনটা কাছে লাগে তা হচ্ছে পরিবেশের সংগে মানিয়ে নিতে পারা।ক্যাডেটদের মধ্যো একটা জেদ থাকে, যে উইনিক। এটা অবশ্য আমার একান্ত ব্যাক্তিগত মত।
জিন্দাবাদ দাও কেন? সামনে ইলেকশন জন্য?
কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু এডজুট্যান্ট আর স্যারের কারনে কোন কোন ব্যাচ বা ক্যাডেট খুব সাফার করে। অন্যায় ভাবে। ফলে ওরা ক্যাডেট কলেজের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে।
এমন করা উচিত না। আমাদের সময়ের কথাই বলি। অনেক স্যার বা এডজুট্যান্ট পেয়েছি যাদের কাছে আরো মমতাময় বা সহনশীল আচরন কাম্য ছিলো।
ডিসক্লেইমারঃ
এটা আমার একান্তই নিজের মতামত। অন্য কোন ক্যাডেট বা সিসিবির সাথে কোন ভাবেই সংশ্লিষ্ট নয়।
এটা একটা ফ্যাক্ট।
কামরুল, সাপ এর দুইটা পোষ্ট এর মাঝে অন্য একটা পোষ্ট ছিল। অইটা কই?
কোনটা? কার পোস্ট?
তৌফিক এর একটা পোষ্ট ছিল, কমেন্টও করলাম, অইটা গেল কই
তাইলে লেখক নিজেই মুছে দিয়েছে।
আমি আপাতত কোথাও দেখছি না। হয়তো নতুন করে কিছু সংযোজন বা বিয়োজনের পরে আসবে।
ফয়েজ ভাই আমি ২২ তম ব্যাচের । নাসিমা ম্যাডাম এর সাথে আপনাদের কি কিছু হয়েছিল ? একটু বলা যায় কি? ম্যাডাম আমাদের ফর্ম মিস্ট্রেস ছিলেন ।
পুরা ৬ বছর আমদের ফর্ম মিস্ট্রেস ছিলেন। এস, এস সি এর পর অবশ্য আমার ফর্ম বদল হয়ে যায়। বায়লজিরা সবাই চলে যায় একফর্মে, নাঈমা ম্যাডাম ফর্ম মিস্ট্রেস, আর স্ট্যাট, ইডি অন্য ফর্ম, আমদের লিডার ছিলেন ওয়ান এন্ড ওনলি খেতাব স্যার।
কি জানতে চাও? একটু হিণ্টস দাও।
ম্যাডাম দেখতে কেমন ছিলেন? 😉 😉