খেরোখাতা- সাদা পেখম

ডুল-হাজারা সাফারী পার্কে যাওয়ার আক্ষরিক অর্থেই আমার কোন ইচ্ছে ছিল না।

কক্সবাজারে একটা পুরো টিম নিয়ে যাওয়া, রাতে থাকার আনজাম করা, বীচে ক্রিকেট-ফুটবল খেলা, মেয়েদের দিকে আলাদা কেয়ার, বউকে নিয়ে ঘুরাঘুরি, বার্মিজ মার্কেটের দামাদামি, বিভিন্ন মত আর পথ, ক্লান্ত আমি চাচ্ছিলাম ট্যুর শেষ হোক। ভালয় ভালয় সবাই চট্টগ্রাম ফিরি। বাংলাদেশের চিড়িয়াখানা গুলো নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা ভালো না, সাফারী পার্কের পাহাড়ে পাহাড়ে বিকেল বেলা হাটা, কবিতা মনে হতে পারে, কিন্তু আমি একদমই রাজি ছিলাম না। আর একটা কারন ছিল বাজেট, “সাফারী পার্ক” শুরুর প্ল্যানে ছিল না, বাজেটে টান পড়েছে, নতুন আর একটা আইটেম জোড়া দেয়া মানে বাজেট ঘাটতি থেকে অতি-ঘাটতি দিকে দৌড় দেয়া। দরকার কি রে বাবা?

কিন্তু যেতে হল। গনতন্ত্রের এই এক জ্বালা, পাবলিক যেদিকে নেতা সেইদিকে। বাসের ড্রাইভারকে বলতেই হল “গাড়ি ডানে ঘুরান”।

ভাগ্যিস গাড়ি ঘুরিয়েছিলাম।

ডুল-হাজারায় সাদা ময়ুর আছে এটা আমি জানতামই না। তাও আবার দুই দুইটা সাদা ময়ুর। পয়সা আর সময় পুরোটাই উঠে আসল যখন দেখলাম একটা আবার পেখম মেলেছে।

পৃথিবীর প্রানী কুলের মাঝে পুরুষ জাত গুলোই নাকি সুন্দর। কোকিলের গানের গলা অসাধারন, কোকিলার নয়, পুরুষ টিয়ার লম্বা লেজ, সিংহের কেশর। এগুলো সবই নাকি মেয়ে জাতিকে আকৃষ্ট করার জন্য। হতে পারে। আমি নিশ্চিত নই। কারন “মানুষের” পুরুষ জাতির মাঝে আমি তেমন আকর্ষনীয় কিছু পাইনা, যতখানি পাই নারীদের মাঝে। অবশ্য নারীরা পুরুষের কিসে আকৃষ্ট হয়, আমি জানি না।

এরই ধারাবাহিকতায় ময়ুরের পেখম। ময়ুরীর কিছু নেই। ডুল-হাজরায় যেটা দুঃখজনক, দুটোই পুরুষ, কোন নারী নেই। এর ফলে একজন পেখম খুলে থাকলেও অন্যজন ভ্রুক্ষেপই করল না। পেখমগুলো আবার থির থির করে কাপছিল। অসাধারন দৃশ্য। কি অসাধারন সৃষ্টি। বেঁচে থাকা কত আনন্দের।

অনেকক্ষন পেখম মেলে ছিল ময়ুরটা। কিন্তু কোন লাভ হয় নি। পশু-সমাজে মনে হয় “ব্রোকব্যাক মাউন্টেইন” জাতীয় কোন অনুভুতি নেই।

৭,২৭৭ বার দেখা হয়েছে

৯৪ টি মন্তব্য : “খেরোখাতা- সাদা পেখম”

  1. তানভীর (৯৪-০০)

    ফয়েজ ভাই, সাদা ময়ুরের কথা এই প্রথম শুনলাম আর দেখলাম।

    ময়ুরের ছবিটা অ-সা-ধা-র-ণ হয়েছে।

    অসাধারন দৃশ্য। কি অসাধারন সৃষ্টি। বেচে থাকা কত আনন্দের।

    :thumbup: :thumbup: :thumbup:

    জবাব দিন
  2. কারন “মানুষের” পুরুষ জাতির মাঝে আমি তেমন আকর্ষনীয় কিছু পাইনা, যতখানি পাই নারীদের মাঝে।

    ফয়েজ ভাই ক্যাম্নে যে আমার মনের কথা কইয়া দেন।
    ধুর লজ্জা লাগে। আমি কিছু কমু না। :shy: :shy:

    জগতের সকল নারীরাও পুরুষদের আকর্ষনীয় মনে করে কাছে টেনে নিক। আমিন। 😀 😀 😀

    জবাব দিন
  3. ইয়ে মানে এই বেলা একটা কথা কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দের সাথে সবার সাথে ভাগাভাগি করি।এই ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক যখন তৈরি হয় তখন আমি ক্যাডেট কলেজে আর আব্বু চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।ডুলা হাজরা পার্ক তখন আব্বুর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ছিল।এই ডুলা হাজরা পার্ক নিয়ে আব্বুর কতই না স্বপ্ন!সিঙ্গাপুরে সেন্তোসা আইল্যান্ড দেখে আব্বুর মন্তব্য ছিল-এইটা একটা পার্ক হল???দেখে নিও আমি আমার ডুলা হাজরা পার্কে কি করি-ঠিক মত ফান্ডিং পেলে টুরিস্টরা এইসব কৃত্রিমভাবে তৈরি করা সেন্তোসা আইল্যান্ডে যাবে না।ডুলা হাজরা পার্কে আব্বুর স্বপ্নের সাথে ছিলেন আরেকজন তরুন বন কর্মকর্তা-আব্বু আর উনার মাতামাতি যদি কেউ দেখতেন তাহলে "বনের রাজা"র খ্যাতিতে স্বনামধন্য(??)আজকের বন বিভাগ নিয়ে হয়ত ভিন্ন ধারনা হত।আমি অবাক হয়ে দেখতাম আব্বু বলছেন-"আচ্ছা তপন এখানে আমাজন,আফ্রিকা আর যত নাম করা বন আছে সবখানের বিচিত্র পশুদের একটা অভয়ারণ্য করা যায়না?" "কেনিয়ার সাফারি পার্কের চেয়ে আমাদের এই পার্ক কি খুব বেশি পিছিয়ে থাকবে?" ইত্যাদি সম্ভব অসম্ভব নানা রকমের কল্পনা।সেই তরুন অফিসারও দেখতাম দ্বিগুণ আগ্রহে বলছেন-"কেন যাবেনা স্যার,ওই ব্যাটারা কি আমাদের চেয়ে বেশি বুদ্ধি রাখে,দাঁড়ান দেখি আফ্রিকান জেব্রা আর জিরাফ আনা যায় কিনা"ইত্যাদি ইত্যাদি।

    ক্লাস ইলেভেনের এক্সকারশনের সময় পুরো ক্লাস গিয়েছিলাম ডুলাহাজরা পার্কে,আব্বু আম্মু দুজনই তখন ছিলেন আমাদের সাথে।শেষবার গিয়েছি ২০০৭ সালে-জেব্রা আর সিংহের দেখাও পেয়েছি।আব্বু রিটায়ার করেছেন বেশ ক বছর আগে-আমরাও যা যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত।কিন্তু এখনো টিভি বা পত্রিকাতে যখনই ডুলাহাজরা পার্ক দেখায়-আব্বুকে দেখি আনমনা হয়ে যেতে।পুরোদস্তর ব্যবসায়ী আমার আব্বুর মন আমি পড়তে পারি-আমি জানি উনার কল্পনায় ভেসে ঊঠছে সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা আইল্যান্ড,মালয়েশিয়ার লঙ্কাউয়ি অথবা থাইল্যান্ডের পাত্তায়া বীচের চেয়ের বিখ্যাত আমাদের দেশি এক সাফারি পার্ক-ডুলা হাজরা সাফারি পার্ক।নিজ হাতে তিল তিল করে গড়ে তোলা এই পার্ক নিয়ে তাঁর স্বপ্ন একদিন সত্যি হবে-আব্বুর সাথে এই স্বপ্নটা আমার চোখেও খেলা করতে থাকে অজান্তেই।

    প্রিয় পাঠক,সময় পেলে আসুন না ঘুরে আসি ডুলাহাজরা পার্কে??সিসিবির কোন এক পিকনিক করে ফেলিনা কেন ওখানে???

    আমি জানি,হবে।আজ না হোক,কাল।

    জবাব দিন
  4. এহসান (৮৯-৯৫)
    ফয়েজ ভাই, সাদা ময়ুরের কথা এই প্রথম শুনলাম আর দেখলাম।

    আমারও একই দশা! এইগুলা কি আমদের দেশী? কোথায় পাওয়া যায়? এই যে আমার মত অলস রে এখন আবার গুগল করতে হবে? একটু তথ্য জুড়ে দিবেন না!!!

    ফয়েজ ভাই, আপনি 'ব্রোকবেক মাউন্টেন' কে সমকামী অনুভুতির প্রতিশব্দ বানিয়ে ফেলছেন। যদিও writing or adapted screen play এর জন্য সিনেমাটা অস্কার পাইসে কিন্তু এছাড়াও সিনেমাটা আরো দুইটা অস্কার জিতেছে; এবং আরও ৫টা বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিলো। আর screen play কে হিসাবে নিলে সিনেমার দ্বিতীয়ভাগটাই শক্তিশালী এবং প্রতিটি ফ্রেম সুবিন্যস্ত। শুধু কাহিনী না দূর্দান্ত পরিচালনায় সর্বোপরি একটা ভাল সিনেমা। আমার খুব ভাল লেগেছে।

    আপনার মত আমিও

    “মানুষের” পুরুষ জাতির মাঝে আমি তেমন আকর্ষনীয় কিছু পাইনা, যতখানি পাই নারীদের মাঝে।

    🙂

    জবাব দিন
  5. তাইফুর (৯২-৯৮)

    খেরোখাতা সিরিজের 'প্রেমে' পড়ছি সেই কবেই। ভালবাসা বাড়তিছে ... সাদা ময়ূরের জন্য ধণ্যবাদ বস।
    এইবারের খেরোখাতা'র শিক্ষণীয় বিষয় হইল ... ময়ূর হোমোসাপিয়েন্স না। 😀


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  6. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    ফয়েজ ভাই,
    সাদা ময়ুরের ছবিটা অসাধারণ...পুরা টাশকি খায়া গেসি...
    শুধু চিরঅনুসন্ধিৎসু এই মানবমন জানতে চায় যে, এত সুন্দর এই ময়ূর দুইটা বংশবৃদ্ধি করবে কিভাবে? :dreamy:


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  7. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
    পৃথিবীর প্রানী কুলের মাঝে পুরুষ জাত গুলোই নাকি সুন্দর

    বস, এই স্টেটমেন্টের শুরুতে সব সময় 'মানুষ ব্যতীত' দেখে এসেছি বা শুনেছি...সুতরাং দুঃখ কইরেন না... :-B

    পশু-সমাজে মনে হয় “ব্রোকব্যাক মাউন্টেইন” জাতীয় কোন অনুভুতি নেই।

    এই অনুভূতিটা তাইলে পুরোপুরি 'মানবিক'... :-B :khekz:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  8. রহমান (৯২-৯৮)

    ফয়েজ ভাই,
    এর আগে আমি কোনদিন সাদা ময়ূর দেখিনি। আঙ্কমন এবং অসাধারণ এই ছবিটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সামনা সামনি এই দশ্যটা দেখাটা খুবই সৌভাগ্যের ব্যাপার বলে মনে করি।

    গত অক্টোবরে ছুটিতে (রোজার ঈদের পরপর) গিয়েছিলাম কক্সবাজার এ। সাফারী পার্কেও গিয়েছিলাম। প্রচন্ড রোদ এবং একই দিনে ২ টা প্ল্যান করাতে তাড়াহুড়ো করে সাফারী পার্কটা এক চক্কর দিয়ে চলে এসেছিলাম। তাই এই ময়ূর দুটো তখন চোখে পড়েনি। এখন তো আপনি আফসোসটা আরো বাড়িয়ে দিলেন। 🙁

    জবাব দিন
  9. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    ফয়েজ ভাই,

    আমি সাফারি পার্ক দেখি নাই।
    আজ আপনার লেখা আর ছবিতে দেখে নিলাম।

    আপনার লেখা নিয়ে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না ।

    খুব সাবলীল। পড়তে ভাল লাগে...
    :salute:


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
  10. সামিয়া (৯৯-০৫)

    সাদা ময়ূরের ছবিটা অসাধারণ...আমিও ডুলাহাজরা গেছি কিন্তু সাদা ময়ূর তো দেখি নাই :((
    ডুলাহাজরার সবচেয়ে মজার হলো সাফারী বাস (শুনতেই সাফারী বাস আরকি :-B ) গুলাতে চড়ে ওই উঁচুনিচু পথে রোলার কোস্টার এর মত অভিজ্ঞতা...আর পথউলা এত সুন্দর একেবেকে চলে...আর এত সুন্দর গাছ...টাওয়ারের উপর থেকে দেখে পুরা টাশকি খেয়ে গেছিলাম...আমার দেশটা অনেক সুন্দর...
    আপনার লেখা খুব ভাল লাগে ফয়েজ ভাই :hatsoff:

    জবাব দিন
    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

      হুমম, সাফারী (রাইডার) বাসটাও মজা, রাইড রাইড লাগে। বাঘ আর সিংহের থাকার ব্যবস্থাও ভাল, ওদের সামনে সাভানার মত করছে। বড় ঘাস।

      ড়ুলার অনেক কিছুই সুন্দর। তবে আরও ভাল করা যায়।


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন
  11. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    বস্ ইয়ে মানে আপনার খেরোখাতা সিরিজটার কয়েকটা পর্ব এফসিসিরে ধার দেয়া যায়না :-B আমারে মেইল করে দেন, আমিই না হয় কষ্ট করে পোস্ট করে দিলাম ;))

    চিটাগাং থাইকাও ডুলাহাজারার পার্কটাতে যাওয়া হয়নাই, খুব তাড়াতাড়ি সিটিজি আসতেছি, আপনি বোনানজায় খাওয়া দাওয়া করিয়ে আমাদেরকে একটা মাইক্রো ভাড়া করে দেবেন ঐখানে যাবার জন্য ;;)


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।