সময়টা আমাদের HSC পরীক্ষা শুরু হবার মাসখানেক আগের ঘটনা।
আমাদের একটা আউটিং এ্যারেঞ্জ করা হল খুলনা তে, নিউজপ্রিন্ট মিল দেখাবে। নিউজপ্রিন্ট মিলে তখন যদিও দেখার কিছুই ছিল না, সব তো বন্ধ হয়ে গেছে। যাই হোক, আমাদের অধিকাংশের বাড়ি খুলনা হওয়াতে কেউ আপত্তি করল না। নিউজপ্রিন্ট দেখা হবে না তো কি, ফ্রেন্ডদের বাসায় বসে মাস্তি করব।
শিডিউল অনুযায়ী আমাদের যাত্রা শুরু হল। গেলাম নিউজপ্রিন্ট। দেখার তো কিছু আসলে নাই, সুতরাং লাঞ্চ সেরে আমরা সবাই বেরিয়ে গেলাম শহর ট্যুর করতে। আমি আসলাম আমার বাসায় একগাদা পোলাপান নিয়ে। আরেক সার্কেল গেল আরেক বাসায়। নিউমার্কেটে ঘুরে বেড়ালাম। সেখানে কোন এক ডিফেন্স অফিসারের সাথে আমাদের মাশরুফের বেধে গেল (অই ম্যাশ, গল্পটা দিয়া পোস্ট দে শালা, লিখস না এক্কেরে… মাইর খাবি!!)। শোয়েব আবার গেল তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে, আমরাও পরিচিত হলাম।
যেটা হয়, আউটিং-এ আসলে ছেলেপেলের একটা বড় সুযোগ হয় বিড়ি-সিগারেটের সাপ্লাই বাড়ানোর। আমাদের এই আউটিং-এও সেটার কোন এদিক-ওদিক হয়নি। স্মোকারগুলা সবাই প্রয়োজনমত গোল্ড লিফ কিনে-টিনে সেরে রেখেছে। যারা খোর না তারা মিষ্টি-দই-রসমালাই এসব কিনেছে, ফিরে গিয়ে পার্টি দেবে।
এই সু্যোগে আমিও আমার পোর্টেবল সিডি প্লেয়ারটা বাসা থেকে একটা কালো পলিথিনে মুড়ে নিয়ে এসেছিলাম, সাথে ৪ টা সিডি। কলেজে তখন ক্যাসেট দিয়ে গান শোনা হত; ভেবেছিলাম সিডি লাইন-ইন করে শুনবো।
যা হোক, কলেজে ফেরার পর আমাদের বাস থেকে নেমে সাথে সাথেই ব্রেক দেয়া হল না; একটা ফল-ইন হল। এ্যাডজুটেন্ট স্যার (তৎকালীন মেজর নবী, সিসিআর-এর এক্স) ইংরিজিতে কচকচ করে বল্লেন “যার যা জিনিস আছে সব জমা কর। আমি জানি তোমরা বাসা থেকে এমন অনেক কিছু এনেছ যেগুলো এখানে এ্যালাউড না।” অনেকেই দিয়ে দিল, মিষ্টি দই আরো কি কি সব। কেউ কেউ গল্পের বই এনেছিল সেগুলি ছেড়ে দেওয়া হল। আমার মত কিছু কতিপয় ক্যাডেট আমরা দেইনি। চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলাম।
ফল-ইন ব্রেক আপ হবার পর আমি খুব সন্তর্পণে আমার সিডি সমেত সিডি প্লেয়ারের ব্যাগটা মেইন রোড থেকে ডাইনিং হলে যাবার এন্ট্রেন্স-টার পাশের হেজ এর ভিতর লুকিয়ে রাখলাম। পরে এসে নিব এটা প্ল্যান ছিল। যারা সিগারেট এনেছিল তারা তো অনেক সেয়ানা, আন্ডারওয়্যারের নিচে, মোজার ভিতরে ঢুকিয়ে সুন্দরমত চলে গেছে। আমারই শুধু একটা পিছুটান।
যা হোক, ডিনার করলাম। টিভি দেখলাম। পোলাপানের সাথে CHILL করলাম। আমার মাথায় কিন্তু ঘুরছে আমার জিনিসটা ওখানে রয়েছে। চিন্তা করলাম সাড়ে ১০টার দিকে গিয়ে নিয়ে আসব। কারণ বেশ অনেক্ষণ সেখানে এ্যাডজুটেন্ট স্যার আর ফর্ম মাস্টার দাড়িয়ে কথা বলছিলেন। পরে যে সময়টায় যাব ভেবেছিলাম তখন কারো থাকার কথা না, দেখিওনি।
যেই কথা সেই কাজ। সাড়ে ১০টার দিকে রওনা দিলাম। স্বাভাবিক ভাবেই বদর হাউজ হয়ে আমি হুনাইনের দিকে যাবার একটা ভান করে শেড দিয়ে যেতে লাগলাম। মোক্ষম জায়গাটিতে এসে খুজলাম, দেখতে পেলাম আমার কালো পলিথিনের ব্যাগটি। হাতে নিলাম; কিন্তু একি! এটা হাতে ‘সাই’ করে উঠে আসল… ভেতরে কিছু নেই!! আমি আবার চিপে-চুপে দেখলাম, ভেতরে আসলেই কিছু নেই।
ঠিক সেই মুহুর্তে টের পেলাম কেউ একজন আমার পিছনে কলারের কাছটা খামচে ধরেছে। বুঝতে পারলাম অবস্থা বেগতিক। দৌড় দেবার চেষ্টা করলাম। খাকি পোষাকের সিকিউরিটি গার্ডও ছাড়েনা, সে জাপ্টে ধরতে গেল। আমি তখন একটু গাট্টাগোট্টা ছিলাম, হ্যাচকা টানে আমি তার আটুনি থেকে মুক্ত হয়ে পালানোর চেষ্টা করলাম। গার্ড-ও নাছোড়বান্দা, আমার ‘ম্যাসিভ’ শরীরের ‘এক্সেসিভ’ টানে সে পড়ে গেল নিচে, কিন্তু আমার প্যান্ট খামচে ধরল। পা-এর কাছে ব্যালেন্স এদিক-ওদিক হয়ে যাওয়ায় আমিও গেলাম পড়ে। গার্ড মশাই চিৎকার করতে লাগলঃ “স্যার ধরসি স্যার”। আমি বুঝলাম, এবার খবর আছে। আমি উনাকে বলতে লাগলামঃ “ভাই প্লীজ ছাইরা দেন আমি যাই গা”। সে তো কারো কোন কথা শোনার পাত্র না। এদিকে চিৎকার শুনে দেখি স্টাফ, ফর্ম মাস্টার, এডজুট্যান্ট সব কোথা থেকে চলে এল। আমি তখন হাল ছেড়ে দিলাম। বুঝে গেলাম সব ব্যাপার-স্যাপার; লুকিয়ে রাখার সময় স্যার দেখেছিলেন… আর আয়োজন করে রেখেছিলেন। আমি ট্র্যাপে মুখ দিয়েছি।
স্টাফজি আমাকে ডেকে নিয়ে বললঃ “কি আনসিলা? সিগারেট?” আমি বল্লামঃ “বিশ্বাস করেন স্টাফ আমি সিডি প্লেয়ার আনসি, কোন বাজে জিনিস আনিনাই”। তার পর এডজুট্যান্ট আমার চেহারাটা দেখল, বলল দেখা করতে পরদিন। পরদিন ক্লাস এর পর তার অফিসে গেলাম। উনার আবার ‘খুতবা’ দেবার বাতিক ছিল। বিশাল খুতবা দিলেন। সাবধান হয়ে দাড়ায় থাকতে থাকতে হাটু ফুলে গেসিলো। আমি বহুত রিকোয়েস্ট করলাম যে ওটা যেন দেয়, আমার কোন ILL INTENTION নাই ইত্যাদি। যাই হোক, সেখানে উনি অনেক কথা বলেছিলেন যার সার কথা ছিল এই যে, পরিক্ষা শেষ করে দেখা করতে হবে, তখন উনি ভেবে দেখবেন কি করা যায়। ইডি লাগাননি কারণ আমি প্রিফেক্ট ছিলাম, বিষয়টা বিচ্ছিরি হয়ে যেতে পারে। তবে উনার খুতবা খাওয়া ইডি’র চেয়ে কোন অংশে কম নহে।
কলেজ থেকে বেরোনোর ৩ দিন আগে মসজিদে মাগরিব প্রেয়ার শেষে উনার সাথে দেখা করলাম। বল্লাম স্যার পরিক্ষা শেষ এবার কি পেতে পারি? উনি তখন আরেক রাউন্ড খুতবা দিলেন যেটার চোটে আমার মুভি শো -এর ফার্স্ট হাফ মিস হয়ে গেল! হাউজে যখন ফিরেছি মসজিদ থেকে তখন ডিনারের জন্য ফল-ইন-এ দাড়াচ্ছে সবাই। অনেক মেজাজ খারাপ হইসিলো তখন। সেদিন সে বলসিলো যাবার দিন পাওয়া যাবে।
যেদিন সেই বহু প্রতীক্ষিত (এবং একই সাথে গভীর বেদনাসিক্ত) দিন এল, আমাদের পাসিং আউট ডে। সবাই খুব মাঞ্জা মেরে চুলে স্পাইক-টাইক করে ‘ইয়ো’ হয়ে বের হলাম। বিদায়ের লাইনে হ্যান্ডশেক, ক্যাডেটরা, স্যাররা… কান্নাকাটির হু-হু আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, সবার চোখে জল। স্যারদের মধ্যে এক ইয়ং টাইপ টিচারের সাথে আমাদের ব্যাপক বাধাবাধি হয়েছিল শেষের দিকে, ওর সাথে কেউ শেক করলাম না (মাশরুফ একটা ডায়লগ দিয়েছিল ওই লোককে: YOU DON’T DESERVE IT… মনে আছে); ঘুরতে ঘুরতে আমার পালা এলো এ্যাডজুটেন্টের সাথে হাত মিলানোর। আমি হাত মিলিয়ে বললামঃ “স্যার, আমার সিডি প্লেয়ার-টা?” উনি বললেন, এখন তো সময় নেই, সার্টিফিকেট যখন তুলতে আসবে তখন পাবে। … কেমন লাগে!!!!!
সেই জিনিস আমি কলেজ থেকে বার হবার ৩ মাস পর উদ্ধার করতে পেরেছি উনার কাস্টডি থেকে। … এবং সেদিনও তার ম্যারাথন খুতবা আমাকে ছেড়ে দেয়নি!
আজকে আমার কি হইলে রে?
এই কে আছিস, দেখে যা... :grr:
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
কনগ্রাটস, অনেকগুলা '১ম' হবার জন্য। :clap:
তাও তো পাইসো
আর বইলেন না... ৪টার মধ্যে একটা সিডি মিসিং ছিল (যদিও আমি আর বেশি কতা কইতে যাইনাই)
সিডি গুলা কিসের ছিল সেটাই চিন্তার বিষয়। ;))
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
ভাইবো না ব্রাদার... অডিও... কোন সচিত্র বিনোদন না!
ছি ছি, কি দিন ছিলো ;;) , পোলাপান অডিও শুইনা বিনোদন নিতো!
www.tareqnurulhasan.com
ফলইন ব্রেক হওয়ার পরে সরাসরি হাউসে না নিয়া গিয়া এমন কমন জায়গায় লুকায়া রাখসিলা কেন?আর লুকাইলে হাউসের কাছাকাছি হেজের মধ্যে লুকাইলেই হইতো...
হাউসে কি আরেক দফা চেক করার চান্স ছিল?
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
সেই শঙ্কা-তেই ছিলাম ভাই। ডিনার টাইমে একটা চকিত চেক মারার পসিবিলিটি ছিল।
ওরে এইটা কি নুরুন্নবী ভাই নাকি? আমাগো কলেজ গেমস প্রিফেক্ট আছিল, বিরাট সাদাসিদা মানুষ ছিল, তয় মারদাংগা ছিল গেমসে।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
হ উনি-ই...
সাদাসিদা?? খুতবা দিয়া আউলায়া দিত রে ভাই!!! ইডি রেস্ট্রিকশন ফেল!!!!!!!!!!!
যাক শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেছে ...আমরা তাতেই খুশি... :))
আমি খুশী তেমন একটা হইতে পারিনাই... কারণ তার ক'দিনের মধ্যেই ওটা গ্যাড়ায় গেসিলো।
সিডি প্লেয়ারটা বাসা থিকা আনার সময় বড় একটা আন্ডি কেনা উচিৎ ছিল। অন্য সবার মত তুইও তাইলে সিডি প্লেয়ারটা আন্ডিতে ঢুকায়া রাইখা বাইচা যাইতে পারতি ... :-B
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
ইশ কেন যে আমার রিকিশি ব্র্যান্ডের আন্ডি ছিল না 🙁 🙁
কোন জন??????
হাহাহা... ভালই বলছিস... ... উই যে সেই... মৌরি না কি নাম! ওটা মনে হয় ফার্স্ট ছিল যদ্দুর জানি!
ওর বিয়া হয়া বেবী হবার পর একদিন ওর বাসার পাশ দিয়া যাবার সময় শোয়েব বলতেসিলোঃ "বাবা বাবা লাগতেসে"।
=)) =)) =)) =)) =))
রিকিশি ব্র্যান্ডের আন্ডি =)) =)) =))
ঐ সিকিউরিটি গার্ডকে পরে আর কিছু করা হয় নাই? x-(
আন্ধারের মধ্যে চিনিনাই... চিনলে একটা কিছু ভাইবা দেখা যাইত।
আর খুতবা, আমাদের নাজমু স্যারের খুতবা খেতে খেতে দিন দুনিয়া উল্টায় যেত। 🙁
নাজমুল স্যার :bash: :bash:
ফেরত পাইসো এই বেশি । আমাদের সবকিছু ওয়ান ওয়ে তে যাইতো, রিটার্ন টিকিট ছাড়া ।
আদনান, অবৈধ মাল ফেরত পাইছ এইতো বেশি। 😛 😛
মজা পাইলাম। :)) :))
লেখাটা ভাল লাগলো।
স্টাইলটা খুব সাবলীল।
পড়তে মজা লাগছে।
:thumbup:
সৈয়দ সাফী
আমি লাস্ট. ইয়ে....