সাদা ওড়নাটা উড়ছে একটু ঠান্ডা, একটু গতিময়, কিন্তু মিষ্টি একটা বাতাসে। দিনের বেলা কিন্তু আলো নেই, আকাশ আঁধার। মেঘ জমছে। বাতাসে বুঝি এজন্যই এমন মিষ্টি গন্ধ। বৃষ্টির আগ দিয়ে যেমনটা পাওয়া যায়।
শীত শীত লাগছে কেন? তুষার-রঙা পোষাক কি এর কারণ? অবশ্য এটা অসহ্য ঠান্ডা নয়, অনেকটা মন ভাল করে দেবার মত। মেয়েটার মন ভাল হচ্ছে না। বিষন্ন লাগছে। আকাশের রং টা আসলেই বোধহয় মরা-মরা। মেঘ গুলো যত বেশি একত্র হচ্ছে, রং-টা ততই বিষাদময় হয়ে উঠছে। সে মেঘের মাঝে চেহারা খোঁজার চেষ্টা করল। কার চেহারা খুঁজছে সে? আকাশে বেশ কতগুলি চেহারা তৈরি হয়েছে – কোনোটাই কি পরিচিত? আকাশের মুখগুলো কি তার দিকে তাকিয়ে? তারা কি তাকে দেখে হাসছে? কিসের হাসি ওটা? বিদ্রুপ, নাকি করুণা? নাকি তারাও তার মনে জমে ওঠা বিষাদের মেঘের আস্তরনে কোনো একটা চেহারা খুঁজে নেওয়ায় ব্যস্ত?
‘ছ্যত’ করে একটা হিমশীতল স্পর্শ – ঠিক তার ঘাড়ের উপর। হাত নিয়ে অনুভব করল, এটা পানির ফোঁটা। অসম্ভব ঠান্ডা। বরফ গলার মুহুর্তে যে তাপমাত্রা থাকে ঠিক তেমন। দৌড়ে গিয়ে সানশেডে দাঁড়ানোর ইচ্ছাটা উদয় হয়ে মূহুর্তেই মিলিয়ে গেল। গমগম শব্দে ঐ মেঘেরা জানালো – আমরা আসছি। আমরাও তোমার সাথে কাঁদব। প্রাকৃতিক কিন্তু অজৈব ঐ মেঘগুলোর সাথে কথোপকথন করতে করতে ওদের খুব আপন মনে হতে লাগল তখন তার; ভাবলঃ “আসুক না! আমার এই একাকিত্বে তো এখন ওরা ছাড়া কেউ নেই।”
—————————————————-
চারিদিক ঘোলা করে বৃষ্টি হচ্ছে, অনেক জোরে। বৃষ্টি পড়ার আওয়াজ হচ্ছে – ঝমঝম… ঝমঝম… । ঠান্ডায় একটু একটু কেঁপে কেঁপে উঠছে তার শরীর। তার ভ্রুক্ষেপ নেই ওদিকে। সে আকাশের দিকে মুখ ফিরিয়ে আছে। মেঘের ঐ চেহারাগুলি বদলাচ্ছে, আবার বদলাচ্ছে, আবার বদলাচ্ছে। তার চোখ বন্ধ। বৃষ্টিরা তার মুখশ্রী ছুঁয়ে ছঁয়ে গড়িয়ে নীচে পড়ছে। সাদা ওড়নাটা এখন আর উড়ছে না বাতাসে; পানির তোড়ে সে চুপসে গুটিশুটি মেরে মেয়েটার গায়ের সাথে সেঁটে আছে। তার শরীরের ছিপছিপে গড়ন কেউ মুগ্ধ নয়নে দেখছে না। কে দেখবে? কেউ নেই তো আশেপাশে – শুধু নীলচে ধূসর আকাশ, আর ঐ মেয়ে!
গাল বেয়ে জলধারা ঝরছে। ঠান্ডা-গরমের এক বিরল সংমিশ্রণ। কেউ কি জানে তার গাল বেয়ে নেমে আসা জলধারা উষ্ণ কেন? কষ্ট বের করে দেবার এ কি সংলাপ তার আকাশের সাথে? তার চোখ থেকে দুঃখের দহনে উত্তপ্ত পানির ধারা বেরিয়ে আসবে আর মেঘও সেই দুঃখে কাঁদবে। কিন্তু মেঘের কান্না কেন এত শীতল? নাকি আকাশেই বিদ্যুৎস্ফুলিঙ্গের সাথে সাথে সেই তীব্র উত্তাপকে সে আগেই বের করে দিয়েছিল? এই জন্যই তো তারা ওর গালে নেমে এসেছে, ঠান্ডা জলে দহন-জ্বালা প্রশমন করতে। কেউ কি সহসা বলতে পারবে ঐ জলধারা আকাশের জল, নাকি চোখের জল? তার মুখমন্ডল গ্রাস করে নেওয়া বৃষ্টির দাপটে সেটা বুঝে নেওয়া দুষ্কর!
ভালবাসার রক্তক্ষরণ হলে বুঝি এমন কষ্ট হয়? নিজেকে ধিক্কার দিল মেয়েটা। সে তো বুঝেছিল, তবু কেন সে মুখ ফেরালো সেদিন? ঐ ছেলেটা অনেক দিন আগে যখন এমন একটা বৃষ্টির রাতে তাকে বলেছিল যে সে তাকে ভালবাসে, তখন সে কিছু উত্তর দিয়েছিল কি না সে মনে করতে পারেনা। শুধু মনে আছে একটা ছোট্ট দৃশ্য – ছেলেটা নিঃশব্দে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে, বৃষ্টিধারা তার গাল বেয়ে নামছে, আর সে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তার চলে যাওয়া পথের দিকে, ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল ঘোলা করে দেওয়া বৃষ্টিতে। মেয়েটা সেদিন খেয়াল করতে পারেনি, ওর চোখ-গাল ছুঁয়ে যেটা নামছিল সেটা বৃষ্টির পানি নয়।
আজ সে অনেকক্ষণ ওর মত করে কাঁদবে। যেই ভালবাসার মোহে সে আক্রান্ত হয়েছিল, যার জন্য আরেকটি হৃদয়কে সে ক্ষতবিক্ষত হতে দেখেও নির্বাক ছিল, সেই ভালবাসা তার হাত ধরে বলেনি – “আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। আমার ভালবাসা তোমার সুখের জন্যই।”… এই কান্না কি তার সেই সত্যিকারের ভালবাসা কে ফিরাতে পারবে? হয়তো না। তবুও সে কাঁদতে চায়, এই বৃষ্টির কান্নাকে তার কাছে পৌঁছে দিতে চায়। বলতে চায় – “বিষন্ন আকাশ আমি আর চাই না; আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তুমি কি আবার আমাকে স্বপ্ন দেখাতে পারবে না?”
তার চোখ আবার ঘোলা হয়ে আসতে চায়… সব ইচ্ছা কি সবসময় পূরণ হয়??
১ম? 😀 😀
তোর ফার্স্ট টাইম ফার্স্ট হওয়া নাকি? :party: :party:
নাও চা খাও (ওভালটিন মিশানো) :teacup:
2nd
৩য় তাইলে 😀 😀 😀
বস,সেইরাম :clap: :boss:
এই theme এর উপর একটা composition নামানোর চিন্তা করছি। 🙂
অনেকদিন পর লিখলা আদনান।
লেখাটা পড়ে ভালো লাগল। :thumbup:
লেখা পড়ে ভালো লাগলো আদনান ভাই :clap: :boss:
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
😀 😀
দাঁত ক্যালান কিয়ত্তি হাসান ভাই??
:thumbup: