তুমি ভাসবে হৃদয় মাঝে – ৫ | | | | তুমি ভাসবে হৃদয় মাঝে – ৬
তুমি ভাসবে হৃদয় মাঝে – ৪ | | | | তুমি ভাসবে হৃদয় মাঝে – ৭
তুমি ভাসবে হৃদয় মাঝে – ৩ | | | | তুমি ভাসবে হৃদয় মাঝে – ৮
তুমি ভাসবে হৃদয় মাঝে – ২
তুমি ভাসবে হৃদয় মাঝে – ১
“এই রিকশা, এই…” … মহা যন্ত্রনা! আজকাল রিক্সাওয়ালাগুলা’র এমন ভাব হয়েছে! কোথাও যেতে চায়না, ভাড়া চায় অতিরিক্ত। বিরক্তিকর লাগে রাস্তায় বেরুলে। ওর বিমর্ষ চেহারা দেখে আরো মেজাজ বিগড়ে যেতে লাগল। আমি এম্নিতেই ঠান্ডা টাইপ মানুষ, রাগারাগি করা আমার স্বভাবজাত না। আমি মনে মনে মুষড়ে থাকলেও ওর দিকে হাসি হাসি মুখ করে বললাম – “কেউ-ই তো কানে নিচ্ছে না, হাঁটা দিব নাকি?”
“না বাবা, আর না… সেদিন হেঁটে আমার খবর হয়ে গিয়েছিল।”
আমি একচোট হেসে বললাম “তুমি-ই তো বলেছিলে, অফারটা কিন্তু আমার ছিল না।”
“হইসে… তোমার অনেক হাঁটার স্বভাব আছে সেটা বুঝানোর দরকার নাই ওটা আমি জানি। এখন দেখ কিভাবে যাব। লেট হয়ে যাচ্ছে।”
“এত টেনশন কর কেন? মেয়েমানুষ টেনশনের ডিপো… don’t worry লেট হবে না; এই… এই…” — একটা অটো থামালাম। “উঠো, আর ভুরু সোজা কর।”
পাশাপাশি বসে আছি চুপচাপ। দু’জন মিলে কনসার্ট দেখতে যাচ্ছি। এখন বিকাল। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত কনসার্ট হবে স্টেডিয়ামে। বাসায় পৌছে দিয়ে আসতে হবে। ওদের এইতো ক’দিন হল বাসা বদল হয়েছে। এখন আর আমাদের কাছাকাছি থাকে না। এদিকে আমাদের গাড়িটাও আজ ওয়ার্কশপে। এজন্য ট্রান্সপোর্ট নিয়ে এত বিড়ম্বনা। আমার বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে। ভাবছি বাসায় যাব কিনা। বাসার মানুষজনকে মধ্যরাতে জাগিয়ে ডিস্টার্ব করাকরি আমার কাছে খুব ফালতু কাজ মনে হয়। এক বন্ধুকে ফোন করে বলে দিতে হবে যে তার মেসে রাত কাটাব যদি অনেক দেরি হয়।
আলতো করে হাতের উপর হাত রেখে ও বললঃ “কি এত চুপ কেন? কি ভাব?”
“অনেক রাত হবে ফিরতে। কই থাকব সেটা প্লান করে রাখছিলাম।”
“আমার সাথে থাকবে!”
“ফাজলামি কর, না?”
“কি? তুমি আমার সাথে সারাজীবন থাকতে রাজি না?”
“ঠিক আছে রাজি, কিন্তু আজ তো আর না। কি যে বলে এই মেয়ে…”
“আমি মেয়ে হয়ে তোমাকে এমন একটা সুযোগ দিচ্ছি আর তুমি সেটা গ্রহন করতে চাচ্ছ না? Very strange!!” দুষ্টুমিমাখা চোখে ভ্রু নাচিয়ে বলল। ওরে বাপরে আবার চোখ টিপ মারে! ভয়ংকর মেয়ে তো!!
“come on! হইসে অনেক দুষ্টামি হইসে। টপিক বদলাও।”
“কি ব্যাপার তুমি অন্যদিকে তাকিয়ে কেন? আমাকে কি ডাইনিবুড়ী’র মত দেখাচ্ছে?”
“টপিক বদলাতে বললাম বলে কি এখন ঊটকো ঝগড়া করবা নাকি?”
“উফ তুমি এত সিরিয়াস কেন আজ? একটু মজা করছি, আর তুমি সেটাকে দিচ্ছ নষ্ট করে। ধুর!!”
“এই ধরনের মজা করতে ভাল্লাগতেসেনা। শুদ্ধতার অভাববোধ করতেসি।”
“আচ্ছা ঠিক আছে বাবা… শেষ আর করবনা… বিশিষ্ট শুদ্ধ মানুষের সাথে বিশুদ্ধ আচরণ করব… হইসে?”
আমার মনে হয় আজ কোনো একটা সমস্যা হয়েছে। তার রোমান্টিক আচার-আচরণগুলি কখনো আমার অতিরিক্ত মনে হয়নি, কিন্তু কেন জানি আজ কিছুই ভাল লাগছে না। কনসার্টে যাবার ইচ্ছা আমার ছিলনা। ও জোর করে বলল নিয়ে যেতে। আমি একা হলে যেতাম না। কিন্তু যেহেতু ও সাথে আছে, আমার মনে হচ্ছিল আমার সময় কেটে যাবে শুধু ওর দিকে অপলক তাকিয়ে থেকেই। তার শরীর থেকে ভেসে আসা খুব মিষ্টি একটা ডিওডোরেন্টের সুবাস, ক্ষণে ক্ষণে তার চুলের কিছু উড়ে আমার মুখে এসে শিরশিরে একটা অনুভুতির সৃষ্টি করা, হঠাৎ হঠাৎ তার জোরে আমার বাহুতে একটা চাপ দিয়ে বলা “কি? ব্যথা লাগে?” – এই সবই আমি অসম্ভব মাত্রায় উপভোগ করি। কিন্তু ঠিক এই মূহুর্তে আমার সব কিছুই কেমন একটা অস্বস্তিকর ঠেকছে। তার উপর যুক্ত হয়েছে অটো’র তীব্র কড়-কড় আওয়াজ। অসহ্য!
“তোমার কি শরীর খারাপ?” কপালে হাত রাখল সে, তারপর মুখ ফেকাশে হয়ে গেল। “কি ব্যাপার তুমি বলনি কেন তোমার এত সিরিয়াস জ্বর?”
“তাই নাকি? আমার জ্বর নাকি? টের পাচ্ছিনা।”
“এই ড্রাইভার ভাই, দাঁড়ান; গাড়ি ঘুরান”…
“কি ব্যাপার শো দেখবা না?”
ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে করতে সে বললঃ “তুমি আগে না শো আগে? তুমি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি prioritized. ” … ওর এই একটা কথায় আমার মন ভাল হয়ে গেল। এবং সাথে সাথে জ্বরের অনুভবটা feel করতে লাগলাম। এতক্ষণ কি ঘোরের মধ্যে ছিলাম নাকি? অবশ্য ওর সাথে যে কোনো রকম এ্যাটাচমেন্টে আসলেই আমি ঘোরের মধ্যে থাকি। ভাল লাগার ঘোর। আজ মনে হয় ভাল লাগার সাথে শরীর খারাপের ব্যাপারটা মিশে একটা হাইব্রিড কিছু হয়ে গিয়েছিল। “ড্রাইভার ভাই একটু জোরে টানেন,” তার উদ্বিগ্ন কন্ঠ তাগাদা দিল আবার। অটোওয়ালাদের ড্রাইভিং নিয়ে আমি মোটেই সন্তুষ্ট নই। এরা নিয়ম না মেনে চালাতে গিয়ে প্রায়ই কিছু না কিছু দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে। আবার আমাকে তার প্রশ্নঃ “তুমি কেন বলনি যে তোমার এত শরীর খারাপ? তাহলে তো আর তোমাকে কষ্ট দিতাম না এভাবে। ইস!!” আমি কিছু বললাম না – মনে হতে লাগল “আহা সারাবছর যদি সিরিয়াস শরীর খারাপ থাকত তাহলে হয়তো সারাক্ষণ-ই তাকে আশে পাশে পেতাম।
——————————————-
বিকেলের আলোটা জানালা দিয়ে ঢুকে ঘরের সাদা দেওয়ালে প্রতিফলিত হয়ে একটা সুন্দর ডিফিউজড্ ইফেক্ট তৈরী করেছে। সোহান তার সিগারেট-টাতে শেষ টান দিয়ে ফিল্টার টা অ্যাশট্রে তে গুঁজে দিল। আজকাল আর তার মনে কোন রকম সৌন্দর্য-ই দাগ কাটে না। মিউজিক করা ছেড়ে দিতে হয়েছে অনেক আগেই, বলতে গেলে বাধ্য হয়েই। একটা হাতে তো আর সুন্দর করে গিটার বাজানো যায় না।
টেবিলের উপর রাখা মোবাইলটা ঘর-ঘর করে শব্দ তুলছে। ফোন সাইলেন্ট করা, ভাইব্রেশনে বাড়ি খাচ্ছে। মামুনের ফোন। “দোস্ত গুড নিউজ। তোর করে দেওয়া সেই গান টা ‘ক্রিয়েটিভিটি কনটেস্ট’-এ টপ করসে। রেকর্ডিং-এর কন্ট্রাক্ট কনফার্ম। আজ প্রথম সেশন করে বেরিয়ে তোকে কল দিলাম।”
“তাই নাকি? কনগ্রাটস। ভাল…শুনে ভাল লাগল।”
“শালা তোর গিটার সোলো-টা মিস করসি। তোর হাতে যেরকম ফিল ছিল ঠিক ঐ জিনিসটা এখানকার কম্পোজাররা দিতে পারেনাই।”
“কিছু করার নাই বন্ধু।”
“হুম্ম্…” দীর্ঘশ্বাসের শব্দঃ “আসলেই কিছু করার নাই। anyway, dude, পরে তোর সাথে দেখা করব এখন রাখি।”
“ওকে, বাই।”
ফোন রেখে সোহান হেঁটে হেঁটে জানালার পাশে এসে দাঁড়াল। আলো আরেকটু কমে এসেছে। মনে হয়ে গোধুলীলগ্ন। এই সময়ে সে সাধারনত ঘুমায়, কারন এই সময়টাই আসলে তার ভাল লাগেনা। সুমি’র সাথে প্রথম দেখা হবার সময়টা ছিল এরকম। এবং তার সাথে শেষ দেখা হবার দিনটাও ছিল অনেকটা এরকম-ই। হয়তো সময়টা ভাল লাগত, যদিনা বেদনা’র ঘটনাগুলো এত তীব্র না হত; অর্ধচেতন অবস্থায় থেতলে যাওয়া বা’হাতের অসহ্য যন্ত্রনায় ঘোলা হয়ে আসা দৃষ্টিতে সুমিকে দেখার চেষ্টায় মাথা ঘুরিয়ে বাসের ধাক্কায় ডিগবাজি খেয়ে উল্টে থাকা অটো’র পাশে তার মরণাপন্ন দেহের শেষ অভিব্যাক্তি অবলোকনের পুরো ব্যাপারটি যদি একটা জঘন্য দুঃস্বপ্ন-ই শুধু হত!
:: The End ::
ইয়াহুহুহুহুহু । পরথম হইসি 😀 😀 😀
good job. 🙂
এইবার আমি ২য়........... 🙁 😀
ব্যাপার না।। 😀 😀 😀
খুবই দুঃখজনক শেষ ......
কেনু এমন করলা আদনান ... কেনু ... কেনু ??? (ক রা - রা আ)
এই এপিসোডে একটা শিক্ষনীয় বিষয় আছেঃ অটোওয়ালাকে কখনো বলা উচিত না যে "ভাই জোরে চালান"।
এত্ত তাড়াতাড়ি শেষ কইরা দিলেন ক্যান !!!!!!!!!!
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ওদের কপালে দুর্ভোগ লেখা ছিল, তাই তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেছে।
শেষটা মানিনা... x-( x-(
বেচারা'র ভাগ্য খারাপ। কিছু করার নাই।
আমার মনে হয় তুই অনেকদিন পর ব্লগে এসে দায়সারা ভাবে সিরিজটার সমাপ্তি টানলি, আমি এর প্রতিবাদ করছি এবং সুষ্ঠ বিচার চাই। এই পর্ব নতুন করে লেখা হোক। :gulli2:
“আমি মেয়ে হয়ে তোমাকে এমন একটা সুযোগ দিচ্ছি আর তুমি সেটা গ্রহন করতে চাচ্ছ না? Very strange!!”
আসলেই ভেরি স্ট্রেঞ্জ 😉 গল্পের নায়ক দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বিশেষ কলেজের হইলে অবশ্য নট স্ট্রেঞ্জ এট অল,র্যাদার দ্যাট উড বি কোয়ায়েট নর্মাল :)) :))
শালা, আমি আর নইড়া চইড়া বইলাম "একশন" এর আশায় আর তুই এইডা কি করলি??এই শেষ মানিনা,মানবো না x-( x-( x-(
=)) =)) :khekz: :khekz: :khekz:
সব মাছেই ** খায়, নাম হয় ইলিশ মাছের।
দোষ খালি উত্ত্রাঞ্ছলের বিশেষ কলেজের ?? মাস্ফুদার মনে হয় এই বেপারে বিশেষ অভিজ্গতা আছে ?? 😛
:duel: :duel: :frontroll: :frontroll:
🙁 আহারে চেতস কেনো ভাই! দেখস না এইখানে গাছ,পিসিসি,ভিলেজ সবকিছু নিয়াই দুষ্টামি করে আর কেউ কিছু মনেও করেনা...এইটা নিয়া আমার একটা লেখা আছে "কামরুল ভাইয়ের ইফতারি ও হাবিজাবি" নামে।পড়লেই বুঝতে পারবি আমি :just: দুষ্টামি করছি 🙁 🙁
🙁 রাব্বি রে,পিলিজ মাইন্ড খাইস না 🙁
এইডা মানি না। এইডা বাতিল করতে হবে :grr: :grr: :grr:
খুবই সুন্দর একটা সিরিজের ততোধিক মন খারাপ করা শেষ। গল্পের শেষে প্রচণ্ড ধাক্কা খেলাম।
নাহ! তাড়াহুড়া করে শেষ করা পর্ব!
পুরা সিরিজটার জন্য অনেক প্রশংসা পেলেও শেষ পর্বের জন্য কিছু তিরস্কার প্রাপ্য! x-(
এইভাবে শেষ না করলেও হইত রে ভাই! 🙁
সমাপ্তি বড়ই সুন্দর হয়েছে। পড়ে ভাল লাগল।
এতদিনে কেউ বুঝলোঃ রোমিও-জুলিয়েট কেন হিট হইসিলো!!