মানুষটা খুব সাধারণ ছিমছাম ছিলেন। ছিলেন বলছি, কারণ তিনি আর এখন আমাদের সাথে নেই। বেশ অনেকটা দিন হয়ে গেল অজানায় পাড়ি জমিয়েছেন, বোধহয় একটু অবেলায়।
আমার সাথে পরিচয়টা খুব স্বল্প সময়ের জন্য। হাতে গুনে দুবার দেখা হয়েছে। প্রথমবারের স্মৃতিটা এখনো টাটকা। ছুটিতে কলেজে যাচ্ছিলাম। ঝিনাইদহ নেমে শহরে ঢুকলাম দুপুরের খাবারটা খাবো বলে। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মেটাতেই পেছন থেকে আশরাফ ডাক দিলো। তাকিয়ে দেখি চিরাচরিত হাসিমুখ নিয়ে আশরাফ আর সাথে একজন বড় ভাই দাঁড়িয়ে। কাছে যেতেই পরিচয় করিয়ে দিলো, সুমন ভাই। বুঝে নিলাম, এটা আমাদের পাগলা আশরাফের বড় ভাই, ও অবশ্য ডাকতো দাদা। একগাল হাসি দিয়ে ভাইয়া বললেন, “কেমন আছো? ছুটি কাটলো কেমন?” টেনে নিয়ে গেলেন ঝিনাইদহের একমাত্র চাইনিজ রেস্তরাঁয়। ভাইয়ার বদৌলতে বেশ ভালোই ভূরিভোজন হলো। গল্পে ঠাট্টায় বেশ মাতিয়ে রেখেছিলেন। উনার হাসি আর কথার আন্তরিকতা দুই নিমিষেই বুঝিয়ে দিলো, মানুষটাকে মনে থাকবে…… বহুদিন। মনে তিনি আছেন; তবে আটকে পড়েছেন স্মৃতিতে, ছবিতে।
সুমন ভাইয়ের পুরো নাম আখতার উজ জামান আফরোজ সুমন। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ, ক্যাডেট নাম্বার ১৫৩২; ইনটেক ২৯ (১৯৯২-১৯৯৮) (তথ্যে সামান্য ভুল থাকতে পারে; শুধরে দেবার জন্য অনুরোধ রইলো)| কলেজে থাকতে আশরাফের কাছে শুনেছু উনি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন, ভারতে। খুব তাড়াতাড়ি নামের আগে একটা ডক্টরেট উপাধি জড়িয়ে ফেলেছিলেন। দুদিনের স্বল্প কথার বাইরে ওনাকে যতটা চিনেছি, পুরোটাই আশরাফের গল্পে। অগ্রজের প্রতি ভালবাসার প্রগাঢ়তা দেখে বেশ হিংসা হতো। মাঝে মাঝেই ছুটি শেষে এটা সেটা নিয়ে এসে বলতো, দাদা দিয়েছেন। আমরা হাতে নিয়ে দেখতাম। কখনো গল্প-আড্ডার অবসরে দাদার কথা জিজ্ঞাসা করলেন কেমন একটা উদ্ভাসিত দ্যুতি ছড়িয়ে পড়তো ওর মুখে।
এরই মধ্যে শুনলাম ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে। ভাইয়া-ভাবী দুজন প্রভাষক হিসেবে সৌদি আরবের কিং খালেদ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে বহুদিন আশরাফের সাথে যোগাযোগ নেই। হঠাৎই মহিউদ্দিনের ম্যাসেজে জানতে পারলাম, সুমন ভাই আর নেই। ২৪ এপ্রিল ২০০৯ এ সৌদি আরবে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ভাইয়া-ভাবী দুজনই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। থম মেরে বসে ছিলাম। আশরাফের সাথে কথা বলার জন্য ফোনে অনেকবার চেষ্টা করলাম, পাইনি সেদিন। না পেয়ে ভালোই হয়েছিল; কারণ ফোন ধরে আমি নিশ্চুপ বসে থাকা ছাড়া কিছুই করতে পারতাম না। আমি সান্ত্বনা দিতে পারি না; আবেগগুলোকে ভাষায় তুলে নিয়ে আসা বড় দুঃসাধ্য আমার জন্য।
ভাইয়া, ফেসবুকে ঢুকলে মাঝে মাঝে আপনাকে নিয়ে আপনার সুহৃদদের গ্রুপটাতে উঁকি দেই। কোনদিন কিছু লিখতে পারিনি। সেদিন আশরাফের একটা মন্তব্য চোখে পড়লো, “Dada, when I felt sorrow you were crying. Now I am crying, what are you doing?”
গত ২৪ এপ্রিল এক বছর পূর্ণ হলো। আশরাফ দোস্ত, জানি না ভাইয়া কেমন আছেন? জানি না আড়াল থেকে তিনি কি তোর কান্না দেখছেন কী না? কেবল এটুকু জানি, তোর অশ্রু মুছে দিতে আজ আর উনি আসবেন না। কাঁদো বন্ধু, কাঁদো তুমি; আমার চোখের পাতাও যে আজ ভেজা।
........................
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
সবার আগে পোস্টটা পড়েছিলাম, কিন্তু মন্তব্য করার ভাষা খুঁজে পাইনি। এখনো পাচ্ছিনা। মন খারাপ হয়ে গেলো ।
.............................
আবেগগুলোকে ভাষায় তুলে নিয়ে আসা বড় দুঃসাধ্য আমার জন্য।
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
ভাবী ছিলেন আমার এক ইউনিভার্সিটি ফ্রেন্ডের বড় বোন। আমরা রিতু আপু বলে ডাকতাম ।
যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন ভাইয়া
আমাদের প্রার্থনা আপনার ও ভাবীর সাথে থাকবে.......
..............................
আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।
যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন ভাইয়া এবং ভাবী
আমাদের প্রার্থনা সাথে থাকবে…….
আল্লাহ সুমন ভাইয়ের আত্মাকে শান্তি দান করুন
...................
আমার বন্ধুয়া বিহনে
...............
সবসময় মন খারাপ থাকে ।লেখাটা পড়ে চোখে পানি চলে আসলো।
আল্লাহ তুমি ভাইয়া ও ভাবীকে ভালো রেখো।
“Dada, when I felt sorrow you were crying. Now I am crying, what are you doing?”আমরাও শান্তনা দিতে পারবনা।