হুমায়ূ্নের মেজর জিয়াঃআমার ভুল সুপারহিরো লিখাটা পড়লাম। আমি লিখা নিয়ে কোন মন্তব্য করব না। তোমার মত আমারও কিছু প্রশ্ন আছে। সেগুলো অনেকটা এরকমঃ
১। আমাদের যে সেনাবাহিনীতে আজকে যে শৃঙ্খলা বিরাজমান ১৯৭৫ সালে এর কতটা ছিল?
২। যখন ভাবি সেনানিবাসের ভিতর রাজনৈতিক নেতাদের অবাধ বিচরন এবং তারা সৈনিকদের সাথে অবাধে মিলামিশা করছেন আর সেনাবাহিনীর অনেক দৈনন্দিন কার্যক্রমের ব্যাপারে তার নাক গলাচ্ছেন তখন ব্যাপারটা কেমন হয়?
৩। পৃথিবীর যত উন্নত সেনাবাহিনীর কথাই ভাবি না কেন এদের ব্যাপারে বেসিক একটা প্রবাদ হচ্ছে ” Troops are useless/dangerous without the guidance of officers”. সেই সৈনিকদেরকেই যখন ব্যাবহার করা হয় অফিসারের বিরুদ্ধে তখন ব্যাপারটা কেমন হয়? ১৯৭৫ সালে না থাকলেও ২০০৯ সালে তো তুমি ছিলে। বি ডি আর বিদ্রোহের ঘটনা তো দেখেছ। এখানে শুধু বলতে চাচ্ছি উস্কানিটা কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেটা একটু ভাবতে চেষ্টা কর।
৪। ১৯৭৫ সালে মোবাইল ফোন বা টেলিফোন অথবা মিডিয়া অথবা সাংবাদিকতা কতটা প্রযুক্তি নির্ভর ছিল? যে সমস্ত সৈনিকদের উস্কে দেয়া হয়েছে তারা কতটুকু জানত পুরো ঘটনার ব্যাপারে? আর না জানার ফলাফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা আমি ২০০৯ এর ২৫,২৬,২৭ এ স্বচক্ষে দেখেছি। ভ্রান্তি মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়?
৫। ১৯৭৫ এর ঘটনা আজকে যারা বর্নণা করছেন তারা কয়জন পুরো ঘটনার স্বাক্ষী? একজন ব্যাক্তির পক্ষে একই সময়ে মঈনুল রোড, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর সেনানিবাস, ঢাকা সেনানিবাসের সকল জায়গায় থাকা কি সম্ভব? তিনি হয়ত এক জায়গায় ছিলেন কিন্তু বাকি গুলো কথা বলে জেনেছেন। তখন তো মোবাইল চিল না। ভিন্ন ব্যাক্তি একই ঘটনা ভিন্নভাবে বর্নণা করছেন। কেন এমন হচ্ছে?
৬। আমিন আহমদ চৌধুরী বললেন ২ দিনে ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন তাই জেনারেল ওসমানী জিয়াকে রিমুভ করতে চেয়েছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে এই মুক্তি যোদ্ধা কারা? এদের প্রশিক্ষণ, মনোবল এবং অস্ত্র কামালপুরের পাকিস্তানী স্ট্রং পয়েন্টের তুলনায় কতটুকু ক্ষমতাধর চিল? সকল প্রতিরোধ কি সমান? সব জায়গায় ক্যাজুয়ালটি কি একই হবে? একজন সামরিক অফিসার হয়ে জেনারেল আমিন কেন ১৫০ সংখ্যা কে এমন জোরালো করলেন ঠিক বুঝলাম না।
৭। জেনারেল ওসমানী কি রকম অফিসার ছিলেন? জেনারে জিয়ার সাথে তার সম্পর্ক কেমন চিল? এ ব্যাপারে ভারতিয় জেনারেল ডি কে পালিতের বইয়ে অনেক বর্নণা দেয়া আছে।
৮। আমাদের দেশের মানুষ অনেক সহনশীল। কেন তারা এই রাজাকারদের কে দেশের মন্ত্রী স্থানে দেখলেন? কেন তারা তাদেরকে তখন প্রতিহত করলেন না?
৯। জেনারেল জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কেন তাদের নিয়ে সরকার গঠন করলেন?
১০। জেনারেল আমিন আহমদ , কর্নেল নুরুন্নবী জিয়ার সমালোচনা করছেন। কিন্তু অলি আহম্মদ, মীর শওকত, খালেকুজ্জামানেরা কেন তার যুদ্ধকালীন বিরত্বের প্রশংসা করছেন?
১১। হুট করে হিরো কে ভিলেন বানানো বা কাউকে অন্ধের মত হিরো হিসেবে ভাবা কোনটাই মনে হয় ঠীক না।
১২। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে কেন জিয়াউর রহমান কে মানুষ তুলনা করে এটাই আমি বুঝি না। শেখ মুজিবের সাথে কারও তুলনা করাটা মনে হয় গোড়ায় গলদ টাইপের কিছু একটা।
ভাই আমিও তোমার মত কিছু বই পড়েছি, ইউ টিউবের ভিডীও দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধ আমার অত্যন্ত আগ্রহের একটি বিষয়। যেখানে/ যেভাবে যার কাছে যতটুকু শুনতে/ জানতে পারি খুব আগ্রহের সাথেই জানি/শুনি/দেখি। তারপর আমার পূর্বের আভিজ্ঞতার সাথে মিলানোর চেষ্টা করি। সেনাবাহিনীতে চাকুরীর সুবাদে সেই সমস্ত সেক্টর কমান্ডারদের কারও কারও সামনাসামনি হয়েছি। কিছু কথাও শুনেছি। একটা কথা ভাবতেই কষ্ট হয় যখন তারা যুদ্ধ করেছিলেন কেউ মনে হয় ভাবেওনি যে একদিন তারাই তাদের শত্রু হয়ে যাবেন? একে অপরকে মিথ্যাবাদী বলবেন। ব্যাক্তিগত/দলীয় স্বার্থে ইতিহাসকে বিকৃত করবেন।
কথা ঠিক ভাইয়া।
প্রশ্নগুলো পুরোই যুক্তিযুক্ত।
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
১। আমাদের যে সেনাবাহিনীতে আজকে যে শৃঙ্খলা বিরাজমান ১৯৭৫ সালে এর কতটা ছিল?
আমাদের জন্য এটা একৈ সাথে আনন্দের ও বেদনার যে বাঙলাদেশ স্বাধীন হয়েছে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করে।
স্বাধীন বাঙলা সরকার (মুজিবনগর) এর অধীনেই সব পরিচালিত হয়েছে সত্য কিন্তু মূল লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে যুদ্ধ করে।
সো যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে বা তাদের যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তারা নিজেদেরকেই সর্বেসর্বা ভেবেছিলো।
দেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই অস্থিরতা ছিলো। অস্থিরতা যদি দেশে বিরাজ করে তবে তা সেনাবাহিনীতে ও থাকবে। সেটাই স্বাভাবিক।
৭৫ এ সেনাবাহিনীতে কারা ছিলো
০১ পাকিস্থান আমলের কমিশনড অফিসার ও সৈনিকেরা
০২ পাকিস্থানে আটকে থাকা অফিসার ও সৈনিকেরা যারা পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে একীভূত হয়েছিলো।
০৩ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে কমিশন প্রাপ্ত নতুন ব্যাচ।
যুদ্ধ করা মেজরেরা হয়ে গেছেন মেজর জেনারেল, বিগ্রেডিয়ার আর পাকিস্থান ফেরত কর্ণেলেরা রয়ে গেছেন কর্ণেল।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
অনেক প্রশ্নের উত্তর আমরা কোনদিনও পাবোনা।
যেটুকু বলতে পারি সেটা হচ্ছে, সেনাছাউনি থেকে কোনদিন গণতন্ত্র বা রাজনীতির পাঠদান চলতে পারেনা। এটা অনেকটা কাঁঠালের আমসত্তের মতো ব্যাপার।
রাজনীতিতে অনেক ঘাপলা, দূষণ, পচন আছে এবং থাকবে --- সবারি ইচ্ছা হয় রাজনীতিবিদদের একহাত নিতে; সময়ে সময়ে জুতা, ইট, চড়লাথি মারার খায়েশ সবারি হয় ক্ষোভ থেকে। অস্ত্রের কাছাকাছি থাকে বলে এই জোশ সেনাবাহিনীর মধ্যে কয়েক ডিগ্রী বেশি হবে এ আর আশ্চর্য কি। তবে নিজেকে দেশপ্রেমিক প্রমাণ করতে চাইলে সেনাবাহিনীর সেইসব জোশিলা অফিসারদের অন্যতম প্রধান কর্তব্য হচ্ছে একমাত্র যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি ছাড়া এধরণের উস্কানিতে প্ররোচিত না হওয়া -- অন্য যে কোন সরকারী চাকুরের মতোই। তারা যেটা করার জন্য প্রোগ্রামড না সেটা করতে যাওয়াই দেশদ্রোহিতা - সহজ সমীকরণ।
তোমার ২ নং পয়েন্টে নিয়ে কিছু কথাঃ
বাংলাদেশে কোন কিছুই ঠিক পথে চলেনি একেবারে শুরু থেকেই।
ক'দিন আগেও ১/১১-র পর সেনাবাহিনী রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত ভাবে কি ভাবে কি প্রক্রিয়ায় স্বীকারোক্তি আদায় করছিলো হেনস্থা করছিলো তার ভিডিও অডিও রেকর্ডিং সবাই বেশ তামাশা সহকারে দেখেছে। যেন সেনাবাহিনীতে কোন দুর্নীতি হয়না, চুরি হয়না - শুধু রাজনিতীবিদরাই চোর; সময়ে সময়ে একমাত্র সেনাবাহিনীই দেশের অভিভাবক বনে যেতে পারে কারণ তারা সশস্ত্র। সেনাবাহিনী দেশের রাজনীতিতে নাক না গলালে বাংলাদেশ আরো অনেক বেশি উন্নতি করতে পারতো সন্দেহ নেই।
৮ নং পয়েন্টঃ
রাজাকারদের পুনর্বাসন এবং ইত্যাকার প্রসঙ্গে আমাদের আগের প্রজন্ম প্রতিবাদ করেনি বলে চিরতরে অপরাধী হয়ে থাকবে। সুবিধাবাদ ও বেঁচে থাকার নামে আমাদের বাবা-মায়ের জেনারেশন এসব অনাচার সহ্য করেছে বলেই জিয়া এরশাদের বাড় বাড়তে বাড়তে শাহ আজিজ, মওলানা মান্নান, নিজামী, মুজাহিদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়েছে --- যার ফলশ্রুতিতে আজকে আমাদের হেফাজতকে মোকাবেলা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে ।
মুহিব ভাই,
প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই।খুব কম আর্মি অফিসারকেই ব্লগ লিখতে দেখি,আপনি তাদের একজন।
আরও একবার ধন্যবাদ দিতে চাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার আগ্রহের কারণে।আমার উপরের আর নিচের কয়েক ব্যাচে আপনার মত সচেতন ও ইতিহাসে আগ্রহী অফিসার হাতে গোনা।
এবার আসি আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তরের ব্যাপারে।
১।রাজীব ভাই অলরেডি উত্তর দিয়েছে।আরও বেশী জানতে চাইলে রাজীব ভাইয়ের সাম্প্রতিক ব্লগটি পড়ে দেখতে পারেন।
২ এবং ৩। এ ব্যাপারে আমার লেখায় সম্ভবত আমি কিছু বলিনি।রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা বলতে যদি কর্নেল তাহের আর জাসদের কথা বলেন তাহলে বলবো কর্নেল তাহেরের ভিশন আমার ভালো লাগে।সেনাবাহিনীতে যে সাম্য তিনি আনতে চেয়েছিলেন তা বোধহয় খুব একটা খারাপ ছিলোনা।আর উস্কে দেয়ার কথা যদি বলেন তাহলে বলবো সৈনিকদের যদি শুধুমাত্র অফিসারের আদেশ পালন করতে গিয়ে একজনের আরেকজনের দিকে অস্ত্র তাক করতে হয়,কোন কারণ ছাড়াই মরতে হয় তখন কি উস্কানির খুব প্রয়োজন আছে?সিপাইরা অফিসারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলে সমস্যা আর ক্ষমতা বা অন্য কিছুর লোভে যখন অফিসার সৈনিককে দিয়ে অন্যায় কিছু করতে বাধ্য করে তখন সমস্যা না।
৪,৫,৬,৭।যেহেতু সেই সময় জন্ম হয়নি সেহেতু বই বা অন্যান্য উপকরণই ভরসা।এই ব্যাপারে রাজীব ভাই স্পেশালিষ্ট,উনি আরও ভালো বলতে পারবেন।তবে এটুকু বলে রাখি,একজনের বই বা বক্তব্য অনুযায়ী লিখিনি আমার লেখাটা।
৮,৯,১০।হয় বাঙালি প্রচণ্ড ভুলোমনা অথবা বেঈমান।
১১।আমি মোটেও হুট করে হিরোকে ভিলেন বানাইনি কিংবা অন্ধভাবে কাউকে হিরো মানিনা।আমার এই মনোভাব গত ৪ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনার ফসল।
১২।আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত।
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।
এই পোস্টটা মেটাব্লগিং-এর একটা পারফেক্ট উদাহরণ। মূল লেখার লিংক নেই। যে পোস্টের আকার, তা সরাসরি মূল পোস্টে কমেন্ট হিসেবে দেয়া যেতো। তাতে আলোচনাটা সেখানে থাকতো। আলাদা পোস্ট দেয়াতে পুরো বিষয়টা এলোমেলো হলো। বিশৃঙ্খল হলো।
মুহিব, you should post this as a comment in that blog post.