Mocha উইথ আ ‘k’ ফ্রম মিশিগান – ৩য় সংস্করণঃ জীবনের গল্প।

(১) প্রেমটা করার আগে বলতে গিয়েও পারিনি যে আমার এর আগে আরো একবার বিয়ে হয়েছিল। এই দেশে মেয়ে হিসেবে “আগে বিয়ে হয়েছিল” বিয়ে বাজারে বিশাল বড় লালকালির দাগ। মন্দের ভাল পারিবারিক চাপে করা বিয়ে মাসখানেকের সমঝোতায় শেষ করে বের হয়ে এসেছিলাম। গত সপ্তাহে যখন বললাম ততদিনে রাজনের সাথে সম্পর্ক অনেকদূর গড়িয়েছে। বলার পরে রাজনকে হতাশ হবার চেয়ে চিন্তিত হতে দেখে জানা আশংকাই মাথায় চেপে বসলো। বুঝতে পেরেছিলাম লালকালির দাগ সমস্যা করবে। দুদিন আগেও ভাবী বলে গদগদ হয়ে যাওয়া ছোটবোনটি ফোন করলো বলার প্রায় সপ্তাহখানেকের মাথায়। আরেকটু পড়েই আশা করেছিলাম। নানান কটু কথার মাঝে একটি হুমকি শুনে কষ্টের মাঝেও হাসি পেল, “এই বিয়ে হবে না। আর হলেও আমি দেখে নিব কিভাবে আপনি আমাদের পরিবারে সুখে থাকেন।” নিয়মিত হিন্দী ডেইলি সোপ দেখা একটি পরিবারের কারো বাস্তব জীবনে এরকম নাটকীয় ডায়ালগ দিতে পারাটা সৌভাগ্যের ব্যাপার মনে হয়। সাদাসিদে ছেলেটাকে ভাল লাগে। এত করে বললাম শুনলো না। ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছে দিন চারেক হলো। নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারছি না। আমি কি স্বার্থপর? রাজনকে আমার চাই। কিন্তু অগ্রিম যুদ্ধ ঘোষণা করা পরিবারের মাঝে যাব কিভাবে? নাকি ওকে ঘর থেকে বের করে এনে চিরজীবনের মত ভিলেনের চরিত্রে নাম লিখাবো?

(২) আট বছরের বৈবাহিক জীবনের ইতি টানলো ফারজানা। সন্তানহীন আটটি বছর। আর কত টানা যায়? মফস্বলের ফুটবল দলের সমান বড় যৌথ পরিবারে বছরে বছরে নবজাতকের আগমনে আলোকিত হয়েছে এক এক ঘর। কিন্তু শফিক-ফারজানার ঘরে ছিল নিস্তব্ধ অন্ধকার। বাড়ির বাকি বউদের মিষ্টি কথার ভাজে একটু-আধটু খোঁচা হজম করাটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল ফারজানার কিন্তু এই লড়াই একা চালানো কঠিন। দুই বছর হতে চললো ডাক্তার বলেছে সমস্যাটা তার। শুরুতে এই ব্যাপারে ফারজানার পাশে থাকলেও ইদানিং শফিক নীরব। মানুষটাকে মনেপ্রাণে ভালবাসে ফারজানা। কিন্তু ভালবাসা দিয়ে কি হয়? সন্তান চাই। এতশত চিন্তা করতে করতে ঘাড়ে চেপে বসা হতাশাকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে দেবর তুহিনের ফুটফুটে মেয়ে তৌশীকে কোলে নেয় ফারজানা। চাচীর বুকে মাথা রেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে বাড়ির সবচাইতে শান্ত মেয়ে তৌশী। গোছানো ছোট ব্যাগের দিকে একমনে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একফোঁটা জল অবশেষে গড়িয়ে গাল পর্যন্ত এলো ফারজানার। “আমি চলে যাচ্ছি। আরেকটি বিয়ে করে নিও। আশা করি সন্তানের মুখ দেখবে।” বিকালে অফিস থেকে ফিরে চিরকুটটির দিকে তাকিয়ে ছিল শফিক। ফারজানার মোবাইলে ফোন দিতে ঘরেই বেজে উঠলো সেটি। পিতামাতাহীন ফারজানার বড় চাচাকে ফোন করতেই তিনি জানালেন, “বাজান ওরে আর ফিরাইতাম ফারতাম না। তুমি তালাকনামাত সই দস্তখত কইরা ফাডায় দেও।”

ঘুমন্ত পাঁচ মাসের অন্তঃসত্বা স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে শফিক। ফারজানা চলে যাবার পরে ধরে বেঁধে তাকে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলো বড় ভাইবোনেরা। সেটা ঠেকাতে ও মনকে শান্ত করতেই প্রায় মাসখানেকের জন্য গায়েব হয়ে গিয়েছিল সে। ঘুরে বেড়িয়েছে এদিক সেদিক। দেখেছে পাহাড়ের মাঝে চুপটি করে বসে থাকা বগা লেকের সৌন্দর্য, গুণে গিয়েছে সমূদ্রের ঢেউ এর পরে ঢেউ। এরপর অনেকটা হুট করে ফেরত এসেই সায়মার সাথে পরিচয়। গুরুজনদের জানাতেই উনারা পরিমরি করে বিয়েটা দিয়ে দিলেন। মাস দুয়েক পরের এক বিকেলে পিতা প্রয়াত জহিরুল হক মুন্সীর শোবার ঘরে বসে বাড়ির বড় ভাই, বোন, ও ভাবীরা যখন চিন্তা করছেন এখনই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন কিনা, তখনই চায়ের ট্রে হাতে সায়মার প্রবেশ। পিছে হাস্যোজ্জ্বল শফিক। আলো জ্বলে উঠলো ঘরে। দোয়া পড়লেন বাড়ির মেয়ে, বউয়েরা। বড় ভাই ইফতি হাঁক দিলেন, “অয় তুহিন, দোকানের ছেলেডারে সাইকেল দিয়া উজান ভাটিত ফাডা। দশ কেজি মিষ্টির দশটা ফ্যাকেট অইবো। আমি ফুনে কয়া দিতাসি।” চায়ে তৃপ্তির চুমুক দেয় সকলে। দাঁতের ফাঁকে ভেঙ্গে যাওয়া বিস্কুট কুড়মুড় শব্দ করে মিলিয়ে যায়। আলোর দ্যুতিতে অন্ধ হয়ে যায় ভালবাসা।

(৩) “I hate to say this, but you should call your senior. At least one of your chamber clerks. They expect you to call them.” ল-স্কুলের সহপাঠী ও আমার সিনিয়ার উকিলের ভাগ্নে মুশফিকুর রহমানের ফেইসবুক মেসেজ। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে খোঁচা দিয়ে টাচস্ক্রীনের কোনায় ফেইসবুক চ্যাটহেডটি সরিয়ে দ্রুত নাম চাপলামঃ Raf শুরুর কয়টি নামের মাঝে একটি লিখা রফিক মুহুরী। কল অপশনে ছুয়ে দিতেই কল যাওয়া শুরু করলো। আড়াই বছর আদালত, বার সমিতি, চেম্বার কালচারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কিন্তু অভ্যাস ভুলিনি। সিনিয়ারের কাছে প্রথম ফোনটি করা উচিৎ নয়। আগে রফিক ভাই। এখন দেশে বাজে সন্ধ্যা সাতটা। স্বপন স্যার খুব সম্ভবত মাগরীবের নামাজ পড়ে নিচে নেমেছেন। খুব সম্ভব কথাবার্তা চলার সময় উনি পাশেই থাকবেন কিন্তু কথাগুলো প্রাথমিক ভাবে চলতে হবে মুহুরীর সাথে।

ডায়াল টোন বন্ধ হলো, “আসসালামু আলাইকুম! কে?”
“রফিক ভাই, আমি এ্যাডভোকেট মোকাব্বির। কেমন আছেন?”
“মোকাব্বির স্যার? সর্বনাশ! স্যারতো ভুইলাই গ্যাছেন আমগোরে। আছেন নি ভালা?”
“আছি ভাই আপনি কেমন আছেন?”
“আমি আছি ভাল। আপনি দেশে কবে আইতাসেন? আইলে চেম্বারে আইসা দেখা কইরা যাইয়েন কিন্তু?”
“অবশ্যই আসবো। বাকিরা সবাই কেমন আছেন? সবার খবর বলেন।”

স্যারের ছেলে কম্পিউটার সায়েন্স থেকে পাশ করে ব্র্যাকের শিক্ষক।
স্যারের মেঝো মেয়ে জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ থেকে পাশ করেছে ২০১৪ সালে। ময়মনসিংহ মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। চেম্বারের অপর মুহুরী আওলাদ মামা (উনি আমার আমার স্যারের চেয়ে সিনিয়ার। আর সবাই ভাই বলে ডাকলেও আমি স্যারের দেখাদেখি উনাকে মামা বলে ডাকি।) উনার ছেলেও ময়মনসিংহ মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। নটরডেম কলেজের দুর্দান্ত ছাত্র ছিল মনে পড়ে। চেম্বারের অপর উকিল রোকেয়া আপার এখন এক মেয়ে এক ছেলে। মেয়েটা খুবই চঞ্চল। নামটা আমার খুব প্রিয় ছিল, প্রতিভা। স্যারের ছোট মেয়ে ক্লাস সিক্সে। সম্ভবত বড় বোনের পদাঙ্ক অনুসরণ করার ইচ্ছা তবে স্যার এবার ময়মনসিংহ গার্লসে দিতে চান। নরসিংদী থেকে ছয় বছর জয়পুরহাটে প্যারেন্টসডেতে যাবার কষ্ট আর করতে চান না।

সবাই স্যারকে আমার কথা জিজ্ঞাসা করে। স্যার উত্তর দিতে না পেরে এড়িয়ে যান। গত দুই বছরে আত্মীয়-স্বজন পরিবারের সাথে যোগাযোগ না রাখার অভিযোগে অনেক দুর্নাম কামিয়েছি। মাকে পর্যন্ত মাসের ব্যবধানে ফোন করা হয়েছে। ক্যানসাস সিটিতে অবস্থানরত ভাইয়াভাবী ফোন করে বকা দেয়ার আগ পর্যন্ত দেশে ফোন দেয়া হতো না। বেঁচে আছি কিনা এটা মায়ের প্রথম প্রশ্ন থাকে। দ্বিতীয় প্রশ্ন থাকে অসুস্থ কিনা। আমার কোন খবর নাই মানে আমি ভাল আছি, মা এখন এভাবেই বুঝে নেন। আজকে আবার রফিক ভাইয়ের মুখে একই অভিযোগ শুনে দীর্ঘশ্বাস লুকালাম। ০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের দমকা শুষ্ক বাতাসের ঝাপটায় গাল বেয়ে চোখের পানি নেমে আসতে লাগলো। এরমাঝে ভেজাল হিসেবে ছিলো কিছু কষ্টের পানি।

“কাউকে ভুলি নাই রফিক ভাই। ফোন করা হয় নাই এই আরকি। ভাল থাইকেন। সামনে দেখা হবে।”
“ইনশাল্লাহ স্যার দেখা হবে। ভাল থাইকেন। আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম সালাম।”

৪,৬৫০ বার দেখা হয়েছে

২৮ টি মন্তব্য : “Mocha উইথ আ ‘k’ ফ্রম মিশিগান – ৩য় সংস্করণঃ জীবনের গল্প।”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    দেশের মানুষ মনে করে দেশের বাইরে যারা থাকে তারা ভাব মেরে যোগাযোগ করে না।
    আর করলে নিজের সুখ দেখানোর জন্য করে।
    ফিল পিটি ফর দেম।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      সম্ভবত এই ব্যাপারটা শুধুমাত্র মা বোঝেন। বাকিরা মনে করেন আমি ইজি কাজে বিজি থাকি। কিংবা যেটা বললেন, আমার ভাব বেশী। সত্য বলতে খুব অল্প কিছু মানুষের অভিযোগ এখন গায়ে মাখি। যাদেরটা মাখি তারা আসলে অভিযোগ করে না! 😀


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
      • জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

        সামাজিকতা, লৌকিকতার খাতিরে ফোনে গ্যাঁজানো বা দাওয়াত খেতে যাওয়ার মত বিরক্তিকর কাজ খুব কমই আছে। আমি অবশ্য এসবের মধ্যে যাই না। আগে মা ঘ্যানঘ্যান করত, এখন বাদ্দিছে... 😀


        ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

        জবাব দিন
        • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

          হেহেহ এই বদ অভ্যাস আপনারো আছে দেখা যায়। তবে আমি গত কয়েক বছরে একটু পরিবর্তিত হইসি। এখন হাসিমুখে ঢেঁকি গিলে ফেলতে পারি। 😛


          \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
          অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

          জবাব দিন
          • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

            সারা সপ্তাহের ব্যস্ততার পর শনিবারের ডিনার কিন্তু আমরা এঞ্জয় করি, মোকা...এমনকি শুক্রবারের লেট নাইট পার্টিও! আমার আশেপাশে বাঙ্গালী পরিবার নাই মোটে, ঘন্টাখানিক ড্রাইভ করলে দেশী বন্ধুদের দেখা মেলে... তাই শনিবারের আড্ডা জম্পেশ হয়! 🙂

            জবাব দিন
            • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

              আমার সম্ভবত কপাল খারাপ অথবা আমি খারাপ। ধরে নেই আমি খারাপ। আমি এইখানের যে কয়জন বাঙালী আছেন তাদের সাথে চলাফেরা দেখা সাক্ষাত করি না। উনারাও আমাকে ডাকাডাকি করেন না। আমি কি করি, কোথায় যাই, কি খাই, কি পান করি এইসব নিয়ে রিসার্চ ল্যাব খুললে আমার পক্ষে সেই ল্যাবের ইঁদুর হওয়া সম্ভব না। উইকের শেষের আড্ডায় আমার বন্ধু গুলো সব আন্তর্জাতিক (মার্কিনি সহ) 🙂


              \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
              অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

              জবাব দিন
              • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

                রিসার্চ ল্যাব যে এখানে নাই তা কিন্তু নয়, মোকা! 🙁 কাউকে ছোট না করেই বলি, এখানকার বহু বাঙ্গালী মেয়েদের গা থেকে এখনো আদা রসুনের গন্ধ যায় নাই অথবা মগজ থেকে কূটকচালী! B-)

                আমার ভাগ্য খুবই সুপ্রসন্ন এইজন্য যে আমার তিনটি মায়াবতী আপা থাকেন এই শহরে আর আছেন তাদের তিনজন অসাধারণ ভাল মানুষ হাসবেন্ড। মিলি আপা আবার আমার ক্যাডেট কলেজে দীর্ঘদিনের রুমমেট ছিলেন! আপাদের সাথে আড্ডা মানেই ভালবাসায় ডুবানো দিন! 😀

                জবাব দিন
                • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

                  কপালগুণে গত দুই বছরের রুমমেট ছিল জোসেফ (ফকক ২০০০-২০০৬), বাঙলায় খুটিনাটি কথাবার্তা, আড্ডা বলতে যা বোঝায় সেটা ওর সাথেই দিয়েছি। ও আবার সবার সাথেই চলাফেরা করতো। আমি পারি নাই। তবে দেশের মানুষগুলো যারা এই যেমন মুহুরী রফিক ভাইয়ের কথা বললাম, এরা কাছের মানুষ। এরা আমার প্রতিদিনের জীবন (আদালত) যুদ্ধের সহযোদ্ধা ছিল। হয়তো বিভিন্ন কথা মনে করে আপন মনে হাসি কিন্তু ফোনটা আর দেয়া হয়নি। বাইরে থেকে দেখে এটা ভুল বুঝবে এটাই স্বাভাবিক।


                  \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
                  অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

                  জবাব দিন
  2. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    সন্তান কতোটা জরুরী জীবনে?
    সন্তানের হাসি মুখ আনন্দের। সেই সাথে গু মুত, বমিটাও পরিষ্কার করা লাগে। নিজের বলে সময় থাকে না।
    আরেকটা কথা পুরুষ সন্তান কতোটা জরুরী?
    বংশ রক্ষা ঠিক কতোটা সঠিক?
    মানে এই আইডিয়া আর কি?
    আমার ৩ নম্বর সন্তান যেটা তার মার গর্ভেই মারা গেলো, বা প্রিম্যাচিউর বলা যায় সেটাও মেয়ে ছিলো।
    আর মনে হয় না ট্রাই করা হবে। যদিও আরো গোটা দুই মেয়ে সন্তানের ইচ্ছা ছিলো।

    বিবাহ পূর্ব যৌন সম্পর্ক বা লিভ টুগেদার বা খন্ডকালীন বিবাহ কে এখন মানুষ কিভাবে দেখে>>>>

    আজকেই পরিচিত একজন (সমবয়েসী) বললেন বিয়ে করবেন। আমি বললাম আপনার মা-বোন এখনো মেয়ে ঠিক করতে পারে নি!
    বললেন, দেখছে। আপনিও দেখেন। এখানে হলে ভালো হয়।
    উনি এখানে বলতে বাঙালি বুঝিয়েছেন। বাঙালি সিঙ্গেল মেয়ে যে এখানে নেই তা নয়। কিন্তু কার ক্যারেক্টার কি/ কি করে গুপনে কে জানে/
    মজাটা হলো যতোই আধুনিক ভাব ধরি না ক্যানো, যতোই নারী স্বাধীনতার কথা বলি না ক্যানো একটা মেয়ে তার পরিবার ছেড়ে একা একা বিশেষ করে অবিবাহিত দেশের বাইরে পড়তে আসবে এটা মানতে বাধো বাধো ঠেকে।

    আসলে প্রয়োজন নারী স্বাধীনতা না যোনির স্বাধীনতা???
    তবে কি তসলিমাই সঠিক???


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)
      আসলে প্রয়োজন নারী স্বাধীনতা না যোনির স্বাধীনতা???

      আপাতত আপনারএই প্রশ্নের উত্তরঃ দ্বিতীয়টি।

      সমস্যা হলো কান টানলে মাথা আসার মত এখানে সমাজ ব্যবস্থা আসবে, ধর্মীয় অনুশাসন আসবে। দেখা যাক আলোচনা (যদি চলে) কোথায় যায়।

      পড়ার জন্য ধন্যবাদ রাজিব ভাই! 😀


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      আমার সবেধন নীলমণি একটি মাত্র সন্তান, তারা! 🙂 তারার সাথে আমার বন্ধুত্ব খুব...কন্যারত্নের সাথে গল্প করে সারা রাত পার করে দেবার ঘটনাও ঘটে আমার বাড়ী। আমার মাঝে মাতৃচরিত্র এতোটাই প্রকট যে আধা ডজন সন্তান থাকলেও হয়তো ঠিক হাপিয়ে উঠতাম না! 🙂

      জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      "তবে কি তসলিমাই সঠিক??? "
      দুঃখজনক হলেও কথাটা ঠিক। তসলিমা যে কতটা ঠিক, সেটা বুঝতে যে গ্রে-ম্যাটার দরকার তা আসতে লাগবে আরও ৫০ বছর। আর ঐ গ্রে-ম্যাটার ইউজ করে বোঝাটা শেষ করতে লাগবে আরও ৫০ বছর।
      ততদিন শুধুই সাফারিং আর সাফারিং।
      অথবা মে জানে তখন নতুন করে কোন সাফারিং ইনডিউস করার কোন তত্ত্ব দাঁড়িয়ে যাবে কিনা?


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      ধন্যবাদ ভাই। নিজের জীবনের আশেপাশে যখন এত গল্পের সমাহার, কষ্ট করে আর বানিয়ে গল্প লিখে কি হবে। তাই লিখে ফেললাম! চাপা অস্বস্তি কাজ করছিল। লিখে কমিয়ে নিলাম। 🙂


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  3. জিহাদ (৯৯-০৫)

    প্রথম লাইন পড়ে চমকে গেসিলাম আপনে কবে বিয়ে করসেন এই কথা ভেবে। দ্বিতীয় লাইনে এসে সে ভুল ভাঙসে অবশ্য।

    আর সপ্তাহে অন্তত একদিন নিয়ম করে আন্টির সাথে কথা বলার চেষ্টা কইরেন ভাই,পেইন লাগ্লেও। আর কারও সাথে কথা বলাটা জরুরী না,কিন্তু মায়ের সাথে জরুরী। আমি নিজেই অনেক সময় দুই তিনদিন ফোন করিনা বাসায়,তাতেই প্রচন্ড মন খারাপ করে আব্বা আম্মা। তখন অপরাধবোধে ভুগি,তারপর আবার ভুলে যাই।কবে যে এই লুপ থেকে বের হব।


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  4. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    নারী মুক্তি, নারী স্বাধীনতা নিয়ে খুব বেশি পড়াশুনা নেই কিন্তু আমার কাছে বিষয়টা পরিষ্কার, নারীকে আর সব পুরুষের মত একজন মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে হবে। সম্মান দিতে হবে তার সিদ্ধান্তকে, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে, সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারকে। সেটা মনের ক্ষেত্রেই হোক আর যোনীর ক্ষেত্রেই হোক। মুখোশের আড়ালে আমরা বেশিরভাগই সেই সম্মান দিতে চরম ভাবে অনাগ্রহী।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      বড় কষ্টের এই যুদ্ধ আহসান ভাই। সামাজিক শিক্ষা বড় কঠিন ও অনড় একটা ব্যাপার। এই একটি বিষয়ে নিজেকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের মাঝে রাখি। কি বলছি, কিভাবে চিন্তা করছি, কিভাবে দেখছি এগুলো সবসময় ক্যালিব্রেট না করলে চিন্তা ভাবনাটা পুরুষ হিসেবেই করে যেতে হবে সারাজীবন!


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।