শেষ বিকেলের রোদ এসে পড়ছে চোখে। বাবার কোল থেকে নেমে দাঁড়ালাম। গাজীপুর সেনানিবাসের ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে বেশখানিকটা গাড়িবারান্দার শেষ প্রান্তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ভাইয়া। লনে হাঁটছে শফিক মামা। ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকিয়ে দেখি দোতালার বারান্দায় বসে মা হাসছে। লজ্জায় পা নড়াতে পারছি না। আমার পায়ের সামনে বলটা ছেড়ে দিল বাবা। আজকে ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনার খেলা হবে। আজকে আমি ব্রাজিল, কারণ গতকাল ভাইয়া ছিল ব্রাজিল। বল নিয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে ভাইয়ার সামনে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেললাম। কিন্তু রেফারী বাবার সময়োচিত পদক্ষেপে গোল হয়ে গেল….moka….moka?!….
“Hey Moka…what’s up?! Are you okay?!”
“Hey Utku…how are you? I am fine…just strolling through some memory lanes!” বলতে বলতে হাতের গেলাস খেয়াল করে দেখি পানীয় শেষ হয়ে গিয়েছে। আরো একটি ইন্ডিয়ান পেইল এইল নেয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। এবারের গ্রীষ্মকালীন স্পেশাল বিয়ার গুলো ভাল করেছে। অনেক পুরোনো এই স্মৃতিগুলো হলিউডের চলচিত্র মেমেন্টোর মত টুকরো ছবি হিসেবে ধরা দেয়। এত আগের স্মৃতি মনে থাকার কথা নয়। এই টুকরো ছবিগুলোই সম্বল। এর সাথে কল্পনা মিশিয়ে বেশ খানিকটা থ্রিডি আমেজ প্রায়শই নেয়ার চেষ্টা করি। বিকেল বেলা ভাইয়ার সাথে ফুটবল খেলার স্মৃতি সম্ভবত ১৯৮৯ সালের কাহিনী। যে বছর বাবা ক্যান্সারের সাথে বসবাসের মাঝে মাস ছয়েকের জন্য চলাফেরা করার মত সুস্থ ছিলেন। “Hi, can I have a Galaxy IPA?” গ্রীষ্মকালের বৃহস্পতিবার সন্ধা ৮টা হিসেবে আজকে বেশ ভীড় দেখছি এই স্থানীয় পানশালায়। স্থানীয়দের ভীড়ে আমরা গুটিকয়েক আন্তর্জাতিক।
ফীডার হাতে শুয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে আছি। বামপাশে বাবা বসা। আলতো করে আমার পেটে-পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন কিন্তু চোখ টিভি পর্দায় সেঁটে আছে। হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠলেন, সেই সাথে আমিও গুঙিয়ে উঠলাম কারণ উৎসাহের আতিশয্যে বাবা আমার পা চেপে ধরেছিলেন….Excuse me….excuse me….!!
“Are you okay?!”
“Oh! I’m sorry! I’m fine. Thanks!” দাম মিটিয়ে তুর্কী বন্ধু উতকুর সাথে এসে বসলাম। যখন তখন কল্পনার থ্রিডি সিনেমা নিয়ে বসে যাবার বদ অভ্যাস বন্ধ করতে হবে। কিন্তু ছোটবেলার এই এক-আধলা স্মৃতিগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে ভালোই লাগে। কদিন থেকেই ভাবছি সিসিবিতে লিখবো, তাই এই পুরোনো দুটো স্মৃতি মাথায় চালু করে দেখছিলাম। কথ্য ভাষায় পিনিক নেয়া। ফীডারের এই স্মৃতিটাও আগেরটির সময়কার। ১৯৮৯ এর মধ্যভাগে। এত আগের স্মৃতি হয়তো মনে থাকার কথা নয়। আমারো যে আছে তা কিন্তু নয়। আমার ছবির মত এই দুই চারটা টুকরো চিত্র মাথায় আসে যেগুলো মা বা ভাইয়ার কাছ থেকে শুনে নিশ্চিত হয়েছি যে এগুলো আমার নিছক স্বপ্ন নয়। এগুলো সত্য ঘটনা। ১৯৯৪ সালে ১০৪ ডিগ্রী জ্বর নিয়ে বিছানায় শোয়া। খালু ও কাকা দুই ব্রাজিলের কড়া সমর্থক মায়ের অনুমতি নিয়ে আমাকে নিয়েই খেলা দেখতে বসলেন। রবার্তো কার্লোস, দুঙ্গা এইসব খেলোয়ারের নাম বাদে বিশেষ কিছু মনে নেই। বিশ্বকাপ দেখার প্রথম স্মৃতি বলতে রাত দুটোয় ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া এবং সেই সাথে ব্রাজিলের গোল ও খালুর উল্লাস ছাড়া আর কিছু মনে পড়ে না। সেই থেকে ব্রাজিল সমর্থন শুরু করি। বিজয়ীর সমর্থক হওয়া অনেক সহজ। সহজটাই বেছে নিয়েছিলাম।
ক্যাডেট কলেজের ৬ বছর বাস্কেটবল খেলা দেখে, শিখে ও খেলে কাটিয়েছি। আহামরি ভাল খেলতাম যে তা নয়, কিন্তু ফুটবলের মাঠে কখনোই পা বাড়ানো হয় নি। ক্যাডেট কলেজে ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনার বাজির খেলা ও মন কষাকষি হয়নি এমন কোন ব্যাচ পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু ওতেও আমার যাওয়া হয়নি। মজার ব্যাপার হলো ‘৯৪ এর বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাজিল জেতার পর আরেকটি ব্যাতিক্রমধর্মী খেলার প্রতি ভালোবাসা জন্মেছিল। সেটা হলো ফরমুলা ওয়ান। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র হিসাবে আয়ারটন সেনা কিংবা ফরমুলা ওয়ান আমার কাছে একদম নতুন বিষয় কিন্তু এটুকু বুঝেছিলাম ব্রাজিল তাদের বিশ্বকাপ আয়ারটন সেনা নামের কোন এক রেসারকে উৎসর্গ করেছিল। এরপরে বছর গড়িয়েছে। সবাই বেছে নিয়েছে বার্সেলোনা, আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ আর এদিকে আমি সময় সুযোগ পেলে জার্মান গ্র্যান্ড প্রী কিংবা মোনাকোর গ্র্যান্ড প্রী-তে হিসেব করেছি শুমাখারের চ্যাম্পিয়ানশীপ পয়েন্ট। সবাই যখন একটি বিশেষ গোলের বিশ্লেষণে ব্যস্ত আমি তখন উদ্বিগ্ন শুমাখারের দ্বিতীয় পিটস্টপে সময় বেশী ব্যয় হওয়া নিয়ে। এই ফরমুলা ওয়ানও যে দেখা হয় তা কিন্তু নয়। তবে ক্রিকেটের পর যদি আর কোন খেলার খবরে চোখ বুলানো হয় সেটা ফরমুলা ওয়ান ও টেনিস।
পাশে ফিরে দেখি উতকু চলে গিয়েছে। কাজটা ঠিক হলো না। হয়তো বিদায় জানিয়েছে। ঠিক মত উত্তর দিয়েছি কি? স্রোতের বিপরীতে চলার চেষ্টা করতেই হোক আর প্রতি ম্যাচ অনুসরণ করার আলসেমী থেকে বাঁচতেই হোক, লীগ পর্যায়ের ফুটবল আমার দেখা হয় না। বিশ্বকাপটাও ঠিক মত দেখা হয় নাই। ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৬ ও ২০১০ এর কথা চিন্তা করলাম। ফুটবল বিশ্বকাপ বলতে কাকার অতি উৎসাহে বিশ্বকাপ কুইজে অংশ গ্রহণ ও ডাকযোগে পূরণ করা পেপার কাটিং পাঠানো বাদে আর কিছুই মনে পড়ছে না। এর মাঝে আমার গ্যালাক্সি শেষ হয়ে এসেছে। গেলাস ফেরত দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলাম।
“Please wait while we connect your call! [Dial tone] হেলো! হেলো মা কেমন আছ?”
“ভাল আছি। তুমি কেমন আছ?”
“ভাল আছি মা। আচ্ছা বাবা যখন খেলা দেখত ৯০ এর দিকে তখন কি কোন লীগের দল সাপোর্ট করতো? মনে আছে?”
:brick:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
:teacup: চলুক!
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
মোকা, বিষণ্ন এবং দুর্দান্ত সুন্দর স্মৃতিচারণ।
আমিও একটা লেখা নামাবো কি না ভাবতেসি।
ধন্যবাদ ভাই। নামায় ফালান। অংশগ্রহণই মূল কথা। এই লেখাগুলো থাকবে এই আনন্দেই লিখলাম! 🙂
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
সুখ স্মৃতির কিছু এই জীবনে লিখতে পারলাম না। আমি দুঃখ ও নৈরাশ্যবাদীতার জাহাজ! 🙁
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
:brick:
:teacup: চলুক! 🙂
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
নতুন একটা এঙ্গেল।
ফুটবল নিয়ে লিখা অথচ ফুটবল নাই সেইভাবে।
মুগ্ধ হয়ে পড়ে গেলাম।
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
ধন্যবাদ ভাই। আপনারা লিখছেন দেখে ভাবলাম একটা কিছু দিয়ে লিখে ফেলি। না হোক ফুটবল কিছু স্মৃতিচারণ তো হবে! 🙂
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
চমৎকার লেখা মোকা ভাই। আপনার যত ব্লগ পড়সি সেগুলার মধ্যে ভালো লাগার রেটিং করলে এটা একদম শুরুতে থাকবে!
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
অসংখ্য ধন্যবাদ জিহাদ। :teacup: :hatsoff:
অল্পসল্প ফুটবল যোগ করে এটাকে প্রতিযোগিতায় নামানো উপযুক্ত করলাম। 😛
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
:duel: :duel:
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।
ধন্যবাদ হুমায়ুন! 😀
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
দূর্দান্ত হয়েছে মোকা, toched.
অফটিপিক: ফর্মুলা ওয়ান ফলো করা তেমন কাউকে পাই না, তোমাকে দেখে ভাল লাগলো 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ধন্যবাদ আহসান ভাই! ফাঁকিবাজি করলাম। ফুটবল নাই কিন্তু লেখা আছে! ;))
অফটপিকঃ সময় মিলাতে পারি না বলে রেস দেখা হয় না। তবে চোখের সামনে পড়লে মিনিট দশেক চোখ আটকাবেই। এখনো বছরের শুরুতে নিয়মকানুনের নতুন পরিবর্তন নিয়ে আমরা গুটিকয়েক বন্ধুবান্ধব ফেইসবুকে হা-হুতাশ, আলোচনা, গালিগালাজ করি। ভালই লাগে! 🙂
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
জীবন্ত ফসিল রোল প্লে করার জন্য স্মৃতির গভীরে ডুব দেই আমিও 🙁
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
অবশ্যই। মোস্ট ওয়েলকাম।
কাউকে না কাউকে দায়িত্বটাতো নিতে হবে।
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
:thumbup: :hatsoff:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
:hatsoff:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
দূর্দান্ত শট। :boss: :boss: :boss:
• জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •
ফুটবলে তো অনেক বেটিং হয়। আমাদের এই প্রতিযোগিতায় বেটিং নাই কোন? থাকলে এই পোস্টে আমার ১০০ ড্রাকমা।
• জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •
ধন্যবাদ শাহরিয়ার! :teacup: :hatsoff: লেখা দিয়ে দাও একটা পড়ি আমরা সবাই! 🙂
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
মোকা ভাই :duel: :duel: :duel:
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
ধন্যবাদ মাহমুদ! :teacup: 😀
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
ভীষণ বিষন্ন সুন্দর লেখা... 😐 :thumbup:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ধন্যবাদ ভাই! 🙂 (সম্পাদিত)
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\