রোজকার স্বপ্নলিপি


১.
নিজের সাথে নিজের এই ক্লান্তিকর খেলা শেষে রমণোত্তর বালকের হতাশা দেশে ফেলেছিলো এক নিরুত্তাপ তরুণী।এই দেখে তারও বোধহয় সাধ হয়েছিলো সন্ন্যাসের।তাই নদী ভ্রমন থেকে ফিরে এসে সে ঘরে যায় নি আর,জলপ্রপাতের তুমুল জলরাশির ভেতর হারিয়ে যেতে যেতে একমুহূর্তে ডেকে উঠেছিলো বালককে।
বালক তখন গভীর নিদ্রায় অচেতন হয়ে মুছে নিতেছিলো সমগ্র রাত্রির পাপ ও ক্লান্তি।তাই সেই নারী কন্ঠের ডাক একটি অসহায় পাখির কূজনে ট্রান্সলেট হয়ে ঢুকে পড়েছিল বালকের স্বপ্নের ভেতর।

২.
স্বপ্নে যে নারীকে চুমু খেয়েছি,সচেতনে তার প্রতি কোন আকর্ষণ বোধ করিনি কোনদিন।অবচেতনের কোন কোণে ঘাপটি মেরে লুকিয়েছিলো এই বাসনাটা,কবেই বা ঠাই নিয়েছিলো গোপনে,এর হিসেব করতে করতে অবাক হয়ে আবিষ্কার করি সদ্য ঘুম ভাঙা আমার সচেতনও এবার তার প্রতি অনুরক্ত।তাই আর অবদমনের পথে না গিয়ে স্বপ্নকে উড়িয়ে দেই ফড়িঙের ডানায়।এক ভরদুপুরের নিস্তব্ধতায় সে খবর দিয়ে আসুক সেই স্বপ্নদায়িত্রীকে।

তারপর যতবার তার কথা ভেবেছি,নাকে পেয়েছি সেই আমিষের ঘ্রাণ।আতরের শিশি সারা গায়ে উপুর করে ঢেলে দিয়ে দেখেছি,শেষ পর্যন্ত সেই ঠোঁটের আমিষ ঘ্রাণকেই খুঁজে পেয়েছে নিউরন।তাই আজকাল ভরসন্ধ্যায় ফড়িঙের সাথেই মগ্ন হই বিষণ্ণ কথোপকথনে।

৩.
তৃতীয় স্বপ্নের উৎস হয়তো সদ্য পঠিত কোন উপন্যাস।প্রবাসের কোন দেশী বিপনীবিতানের বাঙালী দোকানদারের কাছে একটা ব্লেড চেয়েছি।ডলারে পে করবো না টাকাতে-এই নিয়ে দ্বিধাগ্রস্থ অবস্থায় হঠাৎ দেখে নিয়েছি বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্পাপ হরিণীকে।মানুষীর ভাষায় সে হঠাৎ ডেকে উঠলো,”ও জামাই,সুইসাইড করবি নাকি?তার আগে আমাকে তোর ডানহাতের একটা আঙ্গুল কেটে দিয়ে যাবি?”
ঘুম ভাঙার পর প্রলাপ বকেছি,-“এই আঙুলে আর কোন উষ্ণতা অবশিষ্ট নেই গো সুদূরতমা।তুমি দূরে থাকো।দূরেই ভালো।নয়তো কখন কোনদিন তোর জানালায় দাঁড়িয়ে ডেকে উঠবো তোর গোপন ডাকনাম ধরে।দুর্ঘটনা ঘটে যাবে তখন।”

৪.
তোমার স্বপ্নের দৌড়ের ফিনিশিং পয়েন্টে ফ্ল্যাট,দামী গাড়ি আর ম্যাটারিয়ালিস্টিক সত্যবাদীতায় দুর্দান্ত কোন পেঁয়াজ ব্যবসায়ী।মেয়েলোক বিয়ে বসলেই এইসব পেয়ে যায়।আমাদের স্বপ্নের সাথে তখন সহবাস হাজার বইয়ের রাজত্ব আর পাখির সংসার।মায়াবী খাঁচা খুলে দিলেও যে টিয়া অন্যদের মত উড়ে উড়ে হারিয়ে যায় নি নিঃসীম আকাশে।খামোকা লজ্জা পেয়ে উড়ে এসে বসেছে জাদুকরের কাঁধে।তাই আমরাও আমাদের বুকে ছড়িয়ে দেই শস্য দানা-সে তার টুকটুকে লাল ঠোঁটে খুঁটে খায় সেসব।
আর রোজ রাত্রীরে ঘুমোবার আগে মনে মনে জপি,”হায় ঈশ্বর,আজ রাতে একবার স্বপ্নে এসে চুমু খেয়ে যাক সেই রাতদুপুরবাসিনী।হায় ঈশ্বর!”

৮৭২ বার দেখা হয়েছে

৩ টি মন্তব্য : “রোজকার স্বপ্নলিপি”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।