প্রলাপঃ প্রেমিকাকে ফেলে এসেছি শেয়ালভরা বনে ও বাঁশিওয়ালা সিরিজ


১.
বলতো আমি কেন আর লিখবো?আমার কি লেখা উচিত?
তুমি যতদিন ছিলে,লিখবার পর মনে হত এ কবিতার একটা উদ্দেশ্য অন্তত তুমি।এখন,লিখতে গেলে যদি কোন দুঃখ ঢুকে পড়ে,লোকে একে ভুল বুঝে ভেবে নেয় এটি তুমিহীনতার নিজস্ব দুখগাঁথা।
এখন বলোতো কেন আমি নিজের এই একান্ত ব্যক্তিগত বিষন্নতা অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দেবো?আমার কি লেখা উচিত?
আজকাল খুব সহজেই তোমার খোঁপায় একটি প্রজাপতি কিংবা তোমার বিছানায় পা ছড়িয়ে বসে থাকবার একটি আনন্দময় দৃশ্যের চিত্রকল্প লিখে ফেলার চেয়ে একটি ভাঙা ব্রীজের পাশে শীতের সন্ধ্যায় তোমার নিঃসঙ্গ বসে থাকবার মনখারাপ একটা ছবি এঁকে ফেলতে বেশী ইচ্ছে হয়।নৌকায় করে একে একে চলে যায় তোমার পক্ষের ক্লাউনেরা।আমরা পাড়ে বসে এসব দেখে হেসে হেসে লিখে ফেলি শত পৃষ্ঠার প্রলাপ সিরিজ।দায়সারা বৃদ্ধকে বলি, ‘চুপ করে বসে থাকো।’-আমাদের ব্যক্তিগত স্বর্গরাজ্যে সবকিছুই প্রতীকি।

২.
তুমি কি বুঝতে পারো তুমি ও আমাকে ঘিরে দুটি মেরু সৃষ্টি হয়েছে এবং এ দুটির দায়িত্ব এখন আমাদেরই নিতে হবে।ক্লাউনেরা মনে করে এটি বিপরীত মেরু,তুমিও তাই ভাবো,তাইনা?আমি ইচ্ছে করেই কোনো সাব-অর্ডিনেট নেই নি।কারণ তোমার সাথের ক্লাউনদের লাফ-ঝাপ,রঙচঙে মুখ দেখবার আনন্দটা আমি একলা নিতে চাই।এবং চাই না অন্য কেউ তোমার সার্কাস দেখুক।তুমি তো একলা আমার-এবং ভাঙা এবং গড়ার অধিকার আমার একলার।যেমন সেই ভোরের রাবার বাগান, আমাদের কবিতা পাঠ ও অনবরত চুমু -আমি অন্ধ হয়ে গে’ছিলাম।অথচ এখন এসব কান্নার দায় কেউ নেবে না আর।
৩.
“সাবিত্রী,লুকিয়েছো বনের ভেতর,পেয়েছো কি আড়াল?”
তোমার বনে যেতে ইচ্ছে করে একবার।তোমাকে গিয়ে দেখে আসি।কতদিন ভোরের জঙ্গলে হাটা হয় না,রাত নেমে এলে গাছটির ডালে পা দুলিয়ে বসে পড়ে চাঁদ-এইসব রাত,কিংবা সোমেশ্বরীর পাড়ে তোমার অবাধ ছুটোছুটি-এইসব আর দেখাই হলো না ছুঁয়ে।বন্ধুকে বলেছি, “প্রেমিকাকে রেখে এসেছি শেয়াল ভরা বনে।”আসলে তো পালিয়েছো তুমি।অথচ এর কোন দরকারই ছিল না।
শুধুশুধু মাঝে থেকে আমার লেখার ক্ষমতাটা হারিয়ে গেল।

৪.
তাই মাঝে মাঝে মনে হয় বাঁশিওয়ালা হয়ে জন্মালেই ভালো হতো।পরের জীবনের অপশন থাকলে বাশিওয়ালা হবো,যার আত্মপরিচয় কেউ জানবে না।কেউ জানবে না যে হাওয়াদের খোঁজ তাদের মাতাল করে তৈরি করবো মায়ার সুর,আর সব পরীদের ফিরিয়া আনবো বাসগৃহে।যে সংসারে লোকে কবিতার মতো একটা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে রাতের পর রাত জাগে সে সংসারের নারী থাকতে পারে?তুমিই বলো,তাহলে আমি কেন আর লিখবো?

১১ টি মন্তব্য : “প্রলাপঃ প্রেমিকাকে ফেলে এসেছি শেয়ালভরা বনে ও বাঁশিওয়ালা সিরিজ”

  1. লুবজানা (২০০৫-২০১১)

    লিখবেন কারন কেউ কেউ আপনার লেখা পরার জন্যে হাঁ করে বসে থাকে!!! 😛
    আর বাঁশিওয়ালা......... মিল পাইলাম! ইন্সপায়ারড বাই?? 😛


    নিজে যেমন, নিজেকে তেমনি ভালবাসি!!!

    জবাব দিন
  2. শাওন (৯৫-০১)

    লেখাটা বেশি ভালো হয়েছে......


    ধন্যবাদান্তে,
    মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
    প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১

    ["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]

    জবাব দিন
  3. আসাদুজ্জামান (১৯৯৬-২০০২)

    শাহরিয়ার,
    Samuel Taylor Coleridge কবিতা লেখার আগে আফিম, মারিজুয়ানা এসব সেবন করতেন। তার কবিতা পড়িনি। কিন্তু কবিতার গদ্যরূপ পড়েছি এবং মনে হয় গ্রেডিং এর আগের যুগের সবাই পড়েছেন। তার কবিতা দিয়ে পাঠকদের মাঝে কতটুকু মাদকতা ছড়াতে পারতেন জানিনা যদিও নিজেই মাদকতায় ভুগতেন। 😉

    আর তোমার কবিতার ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হয় যে, তুমি কিসে থাকো জানিনা কিন্তু তোমার লেখা এক ধরনের মাদকতা ছড়িয়ে দেয় যখন পড়ি। একধরণের বিমূর্ত কবিতা। 🙂 চালিয়ে যাও।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।