আমার পিতার মাথার চুল প্রায় শাদা। মধ্য তিরিশেই তাকে দেখতাম মাঝে মাঝে ছুটির দিনে হাতে একটা শণ্ (চিমটা) নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে চুল বাছতে। তারপরে একটা সময়ে পাকাচুলের সংখ্যা এত বেড়ে গেল যে সেগুলো বাছার খুব একটা দরকার পড়েনি। বেশ কাঁচাপাকা একটা ধূসরতা তাঁর মাথার ওপরে মেঘের মত বসে যায়। চোখের ওপরে মোটা ফ্রেম আর ভারী কাচের চশমায় তাঁকে ঋষিসুলভ লাগে আমার! সময়ের সাথে সাথে মাথার উপরের সেই মেঘ আরো ফর্সা, আরো সুন্দর হয়েছে।
আমার মাথায় প্রথম পাকাচুলের আভাস পেয়েছিলাম যখন দ্বাদশবর্ষে পড়ি। সেসময়ে ক্লাশ সাসপেন্ড হয়ে গেছে। পরীক্ষার আগে সারাদিন ঘরে বসে পড়াশোনা করি। পড়ার সময়ে নখ খোঁটা, চুল এলোমেলো করা আমার বদভ্যাস। সেই সময়েই একদিন আবিষ্কার করি একটা বেশ লম্বা চকচকে সাদা চুল সামনের দিকে অনেক কালোচুলের ভীড়ে হিহি করে হাসছে! অতি দ্রুততায়, কেউ দেখে ফেলার আগেই ওটাকে উৎপাটন করলাম। তারপরে অনেকক্ষণ চোখের সামনে ধরে রাখলাম। কী আশ্চর্যজনক একটা নতুন জিনিশ। আমার মাথার প্রথম পাকা চুল! তখনই আঁতিপাতি করে খুঁজলাম, আর পাই কী না, কিন্তু না, বাকিরা ইন্সপেকশনের সময়ে বিলকুল কালোচেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
তারপরে অনেকদিন খেয়াল করিনি, দুয়েকবার চোখে পড়েছে শাদা ঝিলিক। কিন্তু প্রথম পাওয়ার সেই উত্তেজনা আর বোধ হয়নি। সব অনুভূতিই খুলে-রাখা-মুড়ির মত পোঁতায় যায়। টের পেতাম যেদিন চুল কাটাতে যেতাম। নরসুন্দরের দোকানে আজকাল ছেলেরাও রূপচর্চা করে। ফেস্যিয়াল, ব্লীচিং, কালারিং ইত্যাদি নানারকম চৌকস রূপায়নবিদ্যার খবর পেয়েছিলাম এক প্রগলভ ও ব্যাকুল নরসুন্দরের কাছে। সে খুব করে চাইছিল আমার মাথাকে রঙে রাঙাতে, বা আমার মুখের অবাঞ্ছিত লোম উৎপাটন করার। আমার খোমাসৌন্দর্য নিয়ে সে বড়োই উদ্বিগ্ন। তখন তার অতিউৎসাহে ভাঁটা দিতে আলোচনা ঘুরিয়ে দিয়েছিলাম। সেই সুবাদে জানতে পারলাম মেয়েদের মতো, ছেলেরাও ভ্রূ-প্লাক করে। প্রৌঢ়দল আজকাল কলপ মাখে না, ওটা খ্যাত। এখন মেহেদি দিয়ে চুলকে করে ফেলা হয় আগুন-কমলা রঙ, দৃষ্টি আকর্ষক এবং হাল ফ্যাশান। তারা পাশাপাশি কান ফুটাও করে থাকেন। বলার সময়ে তিনি আমার কানের উপরের চুলে কাঁচি চালাচ্ছিলেন, ভয়ে আমার হাত পা…
পকেটে টাকা নেই এই অজুহাতে সেদিন তার কালার আর ব্লীচের হাত থেকে বেঁচেছিলাম। তারপর থেকে আরো কমদামি, এবং ওপেন-স্পেস সেলুনেই আমার যাতায়াত, সেখানে এত রকমারি বিলাসিতার চাহিদা বা যোগান কোনটাই নেই। তখন থেকেই আমি এটা নিয়ে ভেবেছি। ছেলেদের মাঝে কেন এই সৌন্দর্যসচেতনতা বা রূপ-সজাগবোধ? এটা নিশ্চয়ই স্কুল-কলেজ-পরিবার-বন্ধুমহল থেকেই সবাই শিখছে (যেভাবে আমি নিজের “রূপ-বিমুখতা”(!) শিখেছি)। সেখানে কী অবস্থান থেকে এই বোধ কিশোর বা তরুণদের মনে পৌঁছায় সেটা বুঝে ওঠার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি বলেই সেই সব সেলুনে যেতে আমার এত অপারগতা।
তবে চুল কাটলেই আজকাল নাপিত কলপের কথা তুলে। “ভাইজান, সাইড দিয়া চুল তো অনেক পাইকা গ্যাসে। কলপ লাগাইবেন নিহি?” এই চালুপ্রশ্নে আমি আনুভূমিক মাথা দুলিয়ে চলে আসি। কয়েকদিন খোঁচা খোঁচা সাদা ঝিলিক চোখে পড়ে, সকালে দাঁত ব্রাশ করার সময়ে। তারপরে অন্য চুলের মিছিলে তারা একটু ম্রিয়মাণ হয়ে লুকিয়ে যায়। আমি স্বস্তিতে থাকি। বয়স যতোই বাড়তে থাকে, ততই আমরা তরুণ হতে চাই মনে হয়, অনেকটা ভাঁটার টান ধরলে তাড়াতাড়ি তীরে উঠে আসার তাগিদের মতো।
তবে এখন বেশ অন্যরকম হাল্কা অনুভব হচ্ছে। মাঝে উইক-এণ্ড ছিল বলে দাড়ি কাটিনি কয়েকদিন। আজকে সকালে অফিসে যাবার আগে আয়নার সামনে খুব ভাল করে খেয়াল করলাম। তিন-চারটা শিশুতোষ শাদা রোঁয়া থুতনির কাছে ‘হ্যালো! হাউ আর ইউ স্যার?” বলে উঠল! আমি থতমত ভঙ্গিতে তাদেরকে ফিরতি সম্ভাষণ জানালাম। তারপরে ততোধিক শাদা ফেনায় মুখ-চোয়াল ঢেকে নিলাম। ফেনার তলে চোয়াল নিজের অজান্তেই দৃঢ় হয়ে এলো। হাতে উঠে এলো “সচেতন পুরুষের আস্থা” জিলেট রেজর! ঘ্যাচাঘ্যাচ-ঘ্যাচাং টানে শিশুপাকাদাড়িগুলো ফেনায় মুড়ে নামিয়ে ফেললাম।
আআহ! কী শান্তি!
অনেকদিন আমি ব্লগে আসি না। এরকম অনিয়ম করলে আসলে একটু লজ্জা কাজ করে...
সবাই কেমন আছেন গো?
আমরা ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন তো? 😉
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
ভালো থাকতে হলে আমাদের সঙ্গেই চলো 😉
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
দল বাইন্ধা কই যান আপনারা দুইজন?? ;;;
“সচেতন পুরুষের আস্থা” শুইনা একটা জিনিসের কথা মাথায় আসলো। মুখে বলতে লজ্জা লাগতেছে 😛
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
তাইলে অন্যকিছু দিয়া ক যদি পারোস 😉
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
=)) =))
ইংলিশটা তো আরও অন্যরকম।
দ্য বেস্ট এ ম্যান ক্যান এভার গেট!
এই বাক্যের মর্তবা আইজও বুঝবার পারলাম না! 😕
বেশি বুইঝ্যা কাম নাই। কম বুঝ, ভালো থাকো। :grr: :grr: :grr:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
জ্বি, লাবলু ভাই, আপনি যা বুঝাইবেন! 😀 😀
বহুদিন পর এলেন যে! তো খেয়ে এসেছেন নাকি যেয়ে খাবেন ভাইয়া? (শুনেছি কলকাইত্যায় নাকি এমনে কইরা কয়!!)
:grr:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
😀
হয় নাই, হয় নাই।
:grr: :grr:
ঐ হইলো, আমি তো অকলকাইত্যা 😕 অনেকদিন পর আসলেন, বরাবরের মতই দারুন লেখা নিয়ে। কেমন আছেন ভাইয়া? ব্যস্ততা কি খুব বেশি?
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
মাঝে খুব বাজে সময় গ্যাছে। এখন কিছুটা রিল্যাক্স। এই পোস্টটা সহজ সরল। সামনে আরেকটা আসবে, অনেকদিন পরে কবিতা লিখলাম। দেখা যাক! 😀 😀
আন্দালিব ভাইয়ের সবচেয়ে সহজ রচনা 😀
আছেন কেমন ভাইয়া?
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আছি মোটামুটি ভালই। এখন এই টার্মে একটু ক্লাশের ভীড় কম, তাই অবসর সময়...
তোমার খবর কী?
বহুদিন পর এলেন যে! তো খেয়ে এসেছেন নাকি যেয়ে খাবেন ভাইয়া? 😕
না রে ভাই, গিয়ে আর কি খাবো? এখানেই খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা হউক।
আন্দালিব ভাই যে!
তো এই আনন্দে এসে খাওয়াবেন নাকি আমি গিয়ে খেয়ে আসবো? :grr:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
যাও, তোমার বাসার সামনের দোকান থেকে একটা সাঁ-ঝুপ পিৎজা খেয়ে আসো! :grr: :grr:
এত সহজ করে এই কাহিনি লিখিস ক্যামনে.........????
চমেৎকার হয়েছে...।।
সহজ কথা কহিতে আমায় কহ যে
সহজ কথা যায় না বলা সহজে
এইটাই এতদিন ধরে চেষ্টা করতেছিলাম। আজ হইছে দেখে মন ভাল হয়ে গেল! 😀
এত কমেন্টের পরও আসল কথা কেউ কইল না। এত ইনিয়ে বিনিয়ে তুই যা বুঝাইতে চাইলি আমি ছাড়া কি কেউ বুঝে নাই? তোর বয়স হইছে মেয়ে দেখা লাগবে এই তো। বড় ভাইয়রা ওর জন্য পাত্রী দেখেন।
কেমন আছস দোস্ত। অনেকদিন পরে আসলি।
হ্যাঁ অনেকদিন পর। আমার গাফিলতি, আলসেমি ক্ষমার অযোগ্য। :boss:
===
ইনিয়ে বিনিয়ে কিছু বলি নাই। তবে তোর কমেন্টে বুঝলাম। যার মনে যা ফাল দিয়ে ওঠে তা। দেশে আয়, তোর বিয়া বসানির টাইম হইছে। :grr: :grr:
মজা লাগলো পড়ে। 🙂
www.tareqnurulhasan.com
থ্যাঙ্কু নূরুল ভাই। ভাল থাকবেন। 🙂
আরে! আমাদের আন্দা দেখি সহজ-সরল গদ্য লিখছে!! 😀 😀
প্রথমবার যখন আমার মাথায় একটা সাদা চুল আবিষ্কার করলাম, তখন ব্যাপক খুশী হয়েছিলাম। ঐটাকে একটু সিস্টেম করে বের করে রাখতেই ভাল লাগত। আর এখন তো সাদা চুল বেড়ে যাচ্ছে। 🙁 ঐগুলা আর দেখায়ে রাখতে ভালো লাগে না।
লেখা পরে খুব মজা পেলাম।
জ্বি ভাই, এই চেষ্টার কথাটাই বলছিলাম। অনেক তো প্যাঁচাইলাম। এখন না হয় একটু সরলতাই করি! 🙂
এইটা একটা হিউম্যান নেচার। কোন কিছু প্রথম প্রথম খুব ভাল লাগে তারপরে বেশি হয়ে গেলে মনে হয় "ভিক্ষা চাই না মা, তোর কুত্তা সামলা!" 🙁 🙁
চুল পাকা ধরছে তোমার, 🙁
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
এ তো কবে থেকেই...
ফয়েজ ভাই, চুল কানের উপরে দুইপাশে অনেক খানি পাকছে। মাঝেও একটু আধটু ঝিলিক দেয়! 😀 😀
আদনান, তুমি সায় দিতেছ কেন? তোমার তো চুলই নাই। 😛
সহজ-সরল ভাষায় লেখা, আমি একবারেই বুঝে ফেললাম। 😀
কিন্তু কি বুঝছি সেতা কমু না (তবে কামরুলতপু কি জানি কইছে 😛 )
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
কামরুলতপুর কথা দেখলেন, আর তার জবাবে আমার কথাটা দেখলেন না! খোদার দুনিয়ায় কী কোনও বিচার নাই! :(( :((
কি মজা বিয়া খামু, বিয়া খামু; এক লগে দুইটা :awesome: :awesome: :tuski: :guitar:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আমিও বিয়া খাপো :((
আমার খোমাসৌন্দর্য নিয়ে সে বড়োই উদ্বিগ্ন।
জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন-নরসুন্দর ব্যাটা কি আগে পিসিসির ক্যাডেটদে চুল কাটত?
অফ টপিক-পিসিসির ভাইয়াদের সামনে :frontroll: :frontroll: শুরু করে দিছি
ইয়ে মানে আন্দা ভাই আমি একটু উর্দু বলি??
আপ কা তো াল হি পাক গিয়া মেরে ভাই,শাদি কিউ নেহি ক্যার রাহা হো? :-B :-B
অফ টপিক-কেয়ামত পর্যন্ত :frontroll: :frontroll: :frontroll: শুরু কইরা দিছি আপনের কওয়া লাগবনা