অনেকের কোন কিছু হয়ে ওঠা হয় না। অনেকে সেটা শুরুতেই বুঝে যায় যে তাদের কিছু হয়ে ওঠা হবে না। তখন তারা একধরনের হাল ছেড়ে দেয়া অনুভবে ভাসতে থাকে। তারপরে একটা সময়ে সেই এলিয়ে পড়া অনুভূতিটাই তাদেরকে অভ্যস্ত করে ফেলে দৈনন্দিন ঘটনাবলীতে। তারা বুঝে ফেলে যে এই কোন কিছু না হয়ে ওঠা, কোনকিছু না করে ফেলাটাই একটা বড়ো কঠিন কাজ। এবং এরকম ক্রিয়াটি সুসম্পন্ন হলে তারা তৃপ্ত হয়।
আমিও ধীরে ধীরে কোনকিছু না হয়ে ওঠাদের দলে চলে যাচ্ছি। আজ একটা বন্ধু এসেছিল, স্কুল-কলেজ সময়কালের বন্ধু। একেক জনের পথ বেঁকে চুরে একেক দিকে চলে যাওয়ার পরেও কিভাবে কিভাবে জানি ওর সাথে মাঝে মাঝে মিলে যায়। আমিও বাৎসল্য দেখাই। ছেলেটা মাঝে একটা ভয়াবহ রোড এক্সিডেন্টে স্মৃতি হারিয়েছিল। কাউকেই চিনতো না, সবাইকে নাম বলে, ফটো দেখিয়ে চেনাতে হতো। তারপরেও ভুলে যেত প্রায়ই। এমআইএসটি-তে পড়তো, সে পড়াশোনাও মুলতুবি হলো, সারাদিন বাসায় বসে মস্তিষ্কের ব্যায়াম করে। আমি একবারই দেখতে গিয়েছিলাম, দেখে মনে হচ্ছিল ও যেন লুকোচুরি খেলায় নেমে কাউকে খুঁজে না পেয়ে হতাশ! আমাকেও চিনে নাই তখন। তারপর কিছু সময় থেকে চলে এসেছিলাম। আমার পুরোনো বন্ধুটার ছায়া পাই নাই।
পরে ধীরে ধীরে কোনওএক অদ্ভুত নিয়মেই, ওর স্মৃতি ফিরে আসে একটু একটু করে। এখন আবার সুস্থ, হাসিখুশি নির্মল মুখটা! পড়াশোনা থেমে গিয়েছিল, ভর্তিও নাকচ হয়ে গেল বলে অন্য একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। আবারও পড়াশোনা শুরু করেছে, যদিও যথেষ্ট কষ্ট করে পড়তে হচ্ছে। পুরোনো পড়া বেশি মনে নাই, নতুন পড়া মুখস্থ হয় না। মোটামুটি নিজের অসুখ, অপারগতা নিয়ে সে এখন বিব্রত-ই কিছুটা। আগে যারা এটাকে সহানুভূতি দিয়ে দেখতো, তারাও একটু একটু অসহিষ্ণু হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সকল প্রতিক্রিয়াই তীব্র থেকে লঘুগামী; আর এই গমনও, এক্সপোনেনশিয়াল রাশিমালার সূত্র মানে।
বন্ধুটি আমার কাছে কিছু কিছু পড়া বুঝতে আসে। পড়ার চেয়ে বেশি হয় গল্প। তার সাথে গল্প করার মজা হলো, সে কোনকারণে সকল সামাজিক আচরণ-প্রণীত ল্যাঙ্গুয়েজ হারিয়ে ফেলেছে। বা সে টেরও পায় না যে সামাজিকভাবে যেগুলো অসৌজন্যতা বলে গণ্য হয় সেগুলো কী কী! খুব সহজেই সে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে ফেলে, আর নিজের মতামতটাও কারো তোয়াক্কা না করে বলে দেয়। আমি এই একটা কারণে তাকে বিশেষ পছন্দ করি, স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি কারণ আমাকেও কাস্টম-মেইড কোন মুখোশ পরতে হয় না। অবলীলায় আমি কলেজ-জীবনের সরলতার অভিনয় করতে থাকি।
ওর সাথে আজকে বাসা থেকে বেরিয়েই টের পাই আমাদের অবস্থানগত বাস্তবতার ফারাক! এই স্বাচ্ছন্দ্যের অবস্থান, ওর জন্যে যা প্রতিদিনের ধ্রুব সত্য, যেই সত্যকে নাকচ করে সে আমাদের কষা-রুগ্ন বাস্তবতায় খাপ খাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, সে অবস্থানে কিছু সময় অভিনয় করতে আমার একেবারেই খারাপ লাগে না। আমি বরং ওর সময়টাতেই নিজেকে আটকে রাখতে চাই! খুব কামনা করি ওর সঙ্গ। নিজের মুরোদ নাই কোন দেয়াল ভাঙার, কিন্তু একজন আংশিক বেসামালের আড়াল নিয়েও আমি একটু তৃপ্তি পাই অভিনয়হীনতার। কিংবা সরলতার অভিনয় করতে আমার ভালোই লাগে বলে আমি সরল সাজতে চাই।
===
৫.৩.৯
শুভাকাংখীরা সবাই চাচ্ছে ও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক...কারণ সমাজের চোখে
এটা একটা অসুখ... 🙁 ?????????
এই সমাজের ব্যান চাই... x-(
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
এটাই এই কষা-হাগু-মার্কা সমাজের পরিচয়। প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন না? এই সমাজের কষাঘাত থেকে যে আমরা বের হয়ে আসি এটা আমাদেরই কৃতিত্ব (শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বলেছিলেন বোধহয়)!!
আমিও এই সমাজের ব্যান চাই। তারপরে নতুন সমাজ নতুন আই.পি. সহ তৈরির আবেদন জানাই! x-( x-( x-(
ইসবগুল খেতে হবে, কোন উপায় নাই আর। 😀
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আবারো অনন্য একটা লেখার জন্ম দিলেন, বর্ণনাভঙ্গিটা খুব ভালো লেগেছে :boss: ।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ধন্যবাদ রকিব। তবে এক কাপ চা হলে ভালো হইতো! 😉
:teacup: :teacup: 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
নিজেকে খুঁজে পেলাম যেন... 😕
আন্দালিব, অসাধারণ বর্ণনাভঙ্গি...তোমার বন্ধুটির জন্য শুভকামনা থাকলো...
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
ধন্যবাদ সাকেব ভাই। যে বর্ণনাটা কোট্ করেছেন, ওটা আমার নিজের জীবন। এভাবেই কাটছে দৈনন্দিনতায়...
সাকেব ভাই বড়ই বিনয়ী, তাইফুর ভাই থাকলে কিছু বলতেন হয়ত :dreamy:
:clap: :clap:
তোর বন্ধুটাকে চিনতে পেরেছি। এমআইএসটি ছেড়ে দিয়েছে জানতাম না। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ততায় খোঁজখবর বেশি রাখা হয়নি ওর। ভালো থাকুক ও।
ও এমআইএসটি ছাড়ে নাই, এমআইএসটি ওকে ছেড়েছে। দুই বছর গ্যাপ পড়লে নাকি ভর্তি ক্যানসেল এরকম একটা ভুয়া নিয়ম দেখাইছে। আমরা যে সুযোগ পেলেই মানুষকে হাইকোর্ট দেখাই তার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ!
ভাল থাকুক ও... এটাই শুধু আমার কামনা!
আমি বরাবরই আন্দার লেখার কঠিন ভক্ত!
এটাও ওর অসাধারণ একটা লেখা। :boss: :boss:
অনেক ধন্যবাদ তানভীর ভাই! আপনাদের উৎসাহটুকু খুবই ভাল লাগে! ভাল থাইকেন! 🙂
সুন্দর করে বলেছ আন্দালিব, পড়তে আরাম লাগল, নরম একটা অনুভূতি হল। :boss:
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আন্দালিব, এতো ভালো লেখস কেম্নে?
জানি না রবিন ভাই। কেমনে কেমনে জানি লেখা হয়ে যায়।
ধুর এতো ভালো লেখার জন্য আন্দালিবের ব্যান চাই
সকল প্রশংসা আন্দালিবের জন্য।
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
কথা সত্য।
এই কথাটা আগে খেয়াল করিনাই...
অসম্ভব দামী একটা কথা...
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
:hatsoff: 🙂
হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া লেখা.....সাবলীল রচনা....এবং......সহমর্মিতা......
আন্দালিব ভাই তো জানেনই যে আমি আপনার পাঙ্খা। এই লেখাটা দিয়ে আপনি আবারও আপনার অনন্যতার প্রমান রাখলেন। :clap: :clap: :clap:
ধন্যবাদ শার্লী। তোমার উচ্ছ্বাস সবসময়েই আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। খুব মন খারাপ থাকলে আমার ব্লগে করা তোমার কমেন্টগুলা পড়ি, আর কিছুক্ষণের মাঝেই মন ভাল হয়ে যায়!! 🙂
এমআইএসটি'র বন্ধুর প্রতি শুভ কামনা রইল।
:hatsoff: :hatsoff:
Life is Mad.
আন্দা লেখাটা মনের অনেক গভীর ছুয়ে গেল । খুব ভাল লিখেছিস । :hatsoff: