নব্বইয়ের হ্যামলেট (পর্ব-সাজ্জাদ)

ঠিক সূর্য্য উঠার আগে আগে, যখন মসজিদ থেকে লোকজন নামাজ পরে বের হয়, সেইসময়টায় রাস্তা দিয়ে হাটতে আমার খুব ভালো লাগে। সব কিছু সুনসান, একটা কেমন নিরব পরিবেশ, প্রকৃতিতে আর একটা ব্যাস্ত দিনের প্রস্ততি, মাঠের ঘাস গুলো ভেজা ভেজা, পাখির ডাক, আমি বেশ অনুভব করি। দিনের আলো গলে গলে পরে আমার উপর, আমি যান্ত্রিক আর একটা দিনের প্রস্তুতি নেই।

কাল চলে যাব এখান থেকে, অনেক দিন থাকলাম, ৮ বছর তো হবেই, অনেক স্মৃতি, আনন্দ, বেদনা, হাসি কান্না, কুতসিত, বীভতস, কত পরিচিত মুখ, পরিচিত অনুভব, পরিচিত শক্র, পরিচিত পরিবেশ। অবশ্য এতে আমার অনুভুতিতে খুব একটা হাহাকার নেই, আমি ঘসে ঘসে অনেক শক্ত করেছি আমার মাংশপেশি। চলে যাব, যেতে হবে তাই, পিছে পরে থাক হাহাকার, আমার কি?

অনেক ব্যাস্ত ছিলাম কালকে রাত অনেকটা পর্যন্ত, গোছগাছ, পুরানো জিনিস ফেলে দেয়া, কিছু পুরানো জিনিস উপযুক্ত জায়গায় দিয়ে দেয়া, কিছু নিব ঢাকায় আর কিছু নিব রংপুর, এইসব অনেককিছু।

আর কিছু ছিল ফেলে রাখা হিসাব চুকানো। এসব কাজে জিসানকেই সাধারনত সাথে রাখি, ওর অনেকগুলো গুনের মধ্যে যেটা সবচেয়ে ভালো, কাজের সময় কোন প্রশ্ন না করা। যা বলি চুপচাপ করে যায়। প্রভুভক্ত কুকুরের মত। জিসানের এইগুনটা অবশ্য ধরতে পেরেছি অনেক পরে, যখন অপারেশন গুলোতে ওকে সাথে রাখতে শুরু করি। ওকে কাছে টেনেছি ওর পেটানোর ভঙ্গি দেখে, ফার্ষ্ট ইয়ারের একটা ছেলে এমন র্নিবিকার ভাবে কাউকে মারতে পারে, তাও ডাইনিং এর সামান্য ঘটনায় এটা জিসানের আগে কেউ করে দেখায়নি। মারার সময় ওর চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল, পেটানোটা অনেক উপভোগের একটা কাজ।

আমার শুরুটা অবশ্য এরকম ছিল না। খুব ভালো রেজাল্ট নিয়ে পড়তে এসেছিলাম বাবার আশা পুরনের জন্য, প্রথম বছরটা ভালোই ছিলাম, রেজাল্টটাও ছিল বেশ ভালো। খামোখা আমার রুমটা পুড়িয়ে, মেরে রুমথেকে বের করে না দিলে হয়ত জীবনটা এমন হত না। অই ঘটনার পর পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে বেশ কদিন। আমার আপরাধ, যোবায়ের ভাই আর আমি একই এলাকার ছেলে, যোবায়ের ভাই পার্টি করতেন, গ্রপিং ছিল, আর যেটা করতেন তা হল আমাকে আদর করতেন ছোট ভাইয়ের মত। রুম পুড়ানোর পরের তিন মাসের মধ্যে ছবির মত অনেক কিছু ঘটে গেল, ক্যাম্পাসে ফিরে এলাম বীর দর্পে, যোবায়ের ভাই সহ, সব কিছুর নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিলেন যোবায়ের ভাই, আমি পেলাম ভালো পোষ্ট। কোন কিছু না বুঝেই অন্যের কথা আর খবরের কাগজ পড়ে বাবা ভুল বুঝলেন, মাস্তান হয়ে গেছি এই অপবাদ দিয়ে বাবা ত্যাগ করলেন আমাকে। বাসায় যেতে নিষেধ করলেন কারন ছোট ভাইটাও নাকি নষ্ট হবে আমার সাথে মিশে, আর, আর শম্পা ফিরিয়ে দিল ডাইরিটা।

জীবন টা বদলে গেল আমার। যোবায়ের ভাই চলে যাবার পর পুরোটা নিজের করে নিতে খুব একটা কষ্ট হয়নি, গ্রুপে জিসান চলে এসেছে এর মধ্যে।

রেজাল্ট খুব একটা ভালো হয়নি, পাশ করেছি, ভালো হবার কথাও নয় অবশ্য। বরং আমাকে সামনে রেখে রেজাল্ট ভালো করে নিল ফারজানা, মোটামুটি চেহারার মেয়ে, খুব উচ্চকাংখি, ফিজিক্সে পড়ত। আমাদের একটা বোঝাপড়া ছিল, আমার প্রয়োজনে ওকে কাছে পেতাম, সবাই জানতো আমরা প্রেম করি, এই সুবাদে কিছু একাডেমিক সুবিধা নিত সে, আমাকে কিছু করতে হত না, যা করার ফারজানাই করত, কারন ফারজানা তখন ক্যাম্পাসে পরিচিত মুখ, আমার সংগে ঘুরে। ফারজানার প্রয়োজন ফার্ষ্ট ক্লাস, আর আমার প্রয়োজন, মাংসের স্বাদ, আর্তনাদ আর শীতকারে মিলিত অনুচ্চ ধ্বনি, শরীরের রি রি কাপন। অন্য সবার থেকে ফারজানাই কাজটা সবচেয়ে ভালো জানত, তাই ফারজানার প্রথম শ্রেনীতে আমার কোন আপত্তি ছিলনা। আমিতো সুনীল নই, শুধু গন্ধে আমার হয় না, আর তাছাড়া যার গন্ধ নিতে চাইতাম সে সরে গ্যাছে ততদিনে। তাই ফারজানা, গত বছর পাশ করেছে, শুনলাম বিদেশে পি, এইচ, ডি করে এইরকম একজনকে বিয়ে করে এখন আমেরিকায়। আমি খোজ নেইনি, প্রয়োজন নেই, ফারজানাও বুদ্ধিমান মেয়ে, আর যোগাযোগ রাখেনি।

শম্পা বিয়ে করেছে এক কেরানিকে, পাচ হাজার টাকা বেতন। একটা বাচ্চা হয়েছে, বাচ্চাটার পেটে টিউমার, বলেছিলাম দেশের বাইরে নিয়ে যেতে, আমি খরচ দিব, রাজি হল না। অনেক নীতিকথা শুনিয়ে বাসা থেকে বের করে দিল। আর নীতিকথা শুনিয়েছেন মা। পাপের টাকায় হাত দিবেন না, মরে যাবেন তবুও। বাবা তো এসব নিয়ে এখন আর ভাবেনই না। শালার জীবন একটা। মাঝে মাঝে ছোট ভাইটা আসে, ভাল করছে বুয়েটে, টুকটাক কথা বলে, আমাকে নিয়ে ওর বুক চেরা দ্বীর্ঘশ্বাস অনুভব করি। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আমি আমার অচেনা আমিকে খুজি।

আরো এক দু বছর থাকা যেত, কিন্ত ক্যাম্পাস ছাড়ছি প্ল্যান মতই। এলাকার এমপি নুরু ভাইয়ের অবস্থা ভালো না। এবার হারবে নিশ্চিত, তবু তার সংগে কাজ করবো এইবার। সব কিছু একবারে নিয়ে নেবার আগে একটা উপলক্ষ্য লাগে। উপলক্ষ্য রেডি হয়েছে। এবার নুরু ভাইয়ের সংগে খুব কাজ করতে হবে, কিন্ত এন্ড অব দ্য ডে ওনাকে ইলেকশনে হারতে হবে। কারন পরের র্টামটা আমার। জিসানকেও একটু অর্ধৈয্য মনে হয় ঈদানিং, কিছু দিন পরে কথা আর নাও শুনতে পারে। এখানকার সব কিছু রেডি করে নিয়েছে ওর নিজের জন্য এই খবর আমি পেয়েছি, আমি নিজে থেকে না গেলে সমস্যা হতে পারে।

মিনহাজের কাজটা বাকি থাকল। কালকেও খুজতে বেরিয়েছিলাম জিসানকে নিয়ে, গ্রপ বদল যে সহজ নয় এটা বুঝানো দরকার ওকে। গ্রপ বদলই শুধু না, একমাত্র এল, এম, জিটা নিয়ে বেচে দিয়েছে। প্ল্যান ছিল ওকে ধরে প্রথমে জিসানের হাতে দিব, মনের সুখে পিটানোর জন্য। এরপর, চৌরাস্তার মাথায় নিয়ে পা দুটো ভেংগে দিব যাতে দৌড়াতে না পারে, এরপর সারাগায়ে অকটেন ঢেলে পায়ে একটা গুলি করব। আগুনে পুড়িয়ে মারব ওকে, যাতে এই ভুল করার আগে তিনবার ভাবে অন্যরা। জিসানকে বলেছি প্ল্যানটার কথা, কিন্ত আমি চলে গেলে ও মনে হয় এত কষ্ট করবে না মিনহাজকে শায়েস্তা করতে। এনি ওয়ে, ওর রাজত্ব, ও যেভাবে খুশি চালাক।
শম্পা আর আমার লেখা যে ডাইরিটা ছিল, ওটা কাল রাতে পুড়িয়ে ফেলেছি। প্রায় এগার বছর ডাইরিটা বয়ে বেড়ালাম। আর কত? ডাইরিটা দুমাস থাকত আমার কাছে, পরের দুমাস শম্পার কাছে। সেই আমি যখন ক্লাস টেনে, আর শম্পা এইটে তখন থেকে ওটা লেখা শুরু করি আমরা। আমাদের ঘিরে আমাদের যে অনুভুতি, তার সব আমরা লিখে রেখেছিলাম ওখানে। প্রায় চার বছরের অনুভুতি কালো অক্ষরে লেখা আছে ডাইরির পাতায় পাতায়। আমার এ পথে আসার পর শম্পা ডাইরি নিতে অস্বীকার করে। অথচ কথা ছিল অন্যরকম। কথা ছিল আমরা বিয়ের পর একসংগে ডাইরি পড়বো। আমাদের ছেলে মেয়েদের দেখাবো আমাদের অনুভুতির প্রকাশ। এখন তো আর এগুলো হবে না, কি লাভ বোঝা বাড়িয়ে, আরও অনেক আগেই পুড়িয়ে ফেলা উচিত ছিল ওটা।

কাল চলে যাব এখান থেকে। পরবর্তী দশ বছরের প্ল্যান করা আছে। ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে প্রথম যাব গুলশানে। একটা ভালো করে ম্যাসাজ নিতে হবে। এরপর অন্যকিছু।

৩,১৯৯ বার দেখা হয়েছে

২৯ টি মন্তব্য : “নব্বইয়ের হ্যামলেট (পর্ব-সাজ্জাদ)”

  1. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    ফয়েজ ভাই
    দুর্দান্ত। বিশেষত ডিটেইলগুলি

    আর লাস্ট কিছু পোস্ট দেখে সিসিবিকে পূর্ণাঙ্গ ব্লগ মনে হচ্ছে। কি নেই এতে........? :party: :party: :party:


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    ফয়েজ ভাই, এটা কি চলতে থাকবে??
    ক্যাম্পাস ছাড়া দেখে চিন্তায় পড়ে গেছি... :dreamy:
    নাকি পরে ফ্লাশ ব্যাক করবেন???


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  3. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    ফয়েজ ভাই। x-( আপনার ভুলে গেলে চলবে না ছোট পত্রিকার এককালে সম্পাদক ছিলাম। x-(
    আমি ভুলভাল মন্তব্য করি না।

    আপনার লেখা আসলেই ভাল হইছে। :clap: লজ্জা পাইয়েন না


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  4. আচ্ছা আমি এতো কিছু ভালো বুঝি না। টিটো বা তারেক আমার চেয়ে ভালো বলতে পারবে। জাস্ট পড়তে গিয়ে মনে হলো, তাই বলছি। শম্পাকে নিয়ে লেখা প্রথম প্যারাটা (শম্পা বিয়ে করেছে......) একটু পরে নিয়ে আসলে কেমন হয়?

    (শম্পা আর আমার লেখা যে ডাইরিটা ছিল...) এই প্যারাটার ঠিক উপরে?

    গঠনটা আরেকটু সুন্দর হয় কি? টিটো ,তারেক কি বলিস? ফয়েজ ভাই কি বলেন। নাকি এভাবেই বেশি ভালো?

    আমার কথা কানে নিয়েন না। হুদাই কইলাম। 😉 😉

    জবাব দিন
  5. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    শোন, বিষয়বস্তু যাই হোক না কেন, এক এক জনের প্রেজেন্টেশান এক এক রকম। এই একই বিষয়ে আমি লিখলে আমি লিখলে হালকা লেখা বেরুত, তারেক রিখলে ভারি লেখা বেরুত আর তুই লিখলে মজার লেখা বেরুত।

    সো......কোনটা আগে বা পরে হবে এটা আমার মনে হয় ব্যাপার না। আমার কাছে শব্দচয়ন আর বাক্য চযন টা মুখ্য

    😮 অনেক জ্ঞানের কতা কইয়া ফলাইছি তো। ভুল হইলে ক্ষমা............ 😀 😀 😀


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  6. বুঝচ্ছি। পুরা ফকফকা।

    তবে তুই লিখলে হালকা লেখা বেরুত (বেরুত বলা আসলে ঠিক না, শুন্তে কেমন কেমন লাগে ) এইটা ঠিক না। তুমি যা জিনিস গুরু এখন সবাই জানে। খামাখা বিনয়ের অবতার হইয়ো না। :boss: :boss:

    ফয়েজ ভাই ও সেইরকম লিখে। পুরা চাল্লু। :boss:

    জবাব দিন
  7. তৌফিক

    ফয়েজ ভাই, সৃস্টিশীল কিছু লিখতে পারি না। যা লিখি অভিজ্ঞতা থেকে লিখি। তাই যখন কেউ সৃষ্টিশীল কিছু লেখে আমি তারে :boss: :boss: :boss: করি। আপনারেও করলাম। মন্তব্যে দেখলাম আপনি সমালোচনা চাচ্ছেন। চন্ডাল হয়ে গুরু হবার দঃসাহসের ক্ষামা চেয়ে নিয়ে বলছি, কাহিনীর ব্যাপকতা মনে হয় এই পরিসরের সাথে যায় নাই। ফোকাস অনেকদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। গল্প হিসাবে লিখলে ফোকাস একমুখী রাখলে মনে হয় ভালো হত। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, আমার লেখাটা ভালো লাগে নাই। আমি সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করলাম আরকি। পড়ি কিন্তু যন্ত্রপাতির কারিগরি, তেলাপোকার পাখি হওয়ার শখ হয়েছে কিনা, তাই এতগুলা কথা বললাম।

    ভাই, ভয়ে ভয়ে কমেন্ট দিলাম। পছন্দ না হইলে বলবেন। নিজেই হ্যান্ডস ডাউন হয়ে থাকব আধাঘন্টা।

    জবাব দিন
  8. ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে প্রথম যাব গুলশানে। একটা ভালো করে ম্যাসাজ নিতে হবে

    বস্, গুলশানে ম্যাসেজ নেয়ার জায়গাটার ঠিকানাটাও দিয়া দিতেন :grr:

    সাধারণ পাঠক হিসাবে গল্প ভালো এবং সেইরকম লাগছে। ডিটেইলে পড়ছি কিন্তুক।

    জবাব দিন
  9. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আমারে এট্টা সুইট দেইখখা ফারজানা আইন্না দেন......... :((

    অফ টপিক- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি বলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে খোলা মাঠ,টি এস সির চত্ত্বর, অপরাজেয় বাংলা আর মধুর ক্যান্টিন মিলিয়ে এক অসামান্য জগৎ যেখান থেকে জন্ম নিয়েছে আমাদের দেশের ইতিহাস।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্কশ,ভয়াল বাস্তবের মুখোমুখি হতে হয়নি কখনো,যদিও পত্রিকাতে পড়েছি,টিভিতে দেখেছি আর বাবা মায়ের কাছে শুনেছি।লেখাটা পড়ে মনে হল সব কিছু যেন অনুভব করতে পারছি।আশা করি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ খুব শিগগিরি কালো শকুনদের ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত হবে।

    লেখাটির জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ ফয়েজ ভাইকে।

    জবাব দিন
  10. @ তৌফিক, মুল ফোকাসটা আসলে গল্পের নায়কের মানসিক ব্যাপারটা, ওটা ফোটানোর জন্য অনেকগুলো বিষয় এনেছি।

    জিসান কে নিয়ে আরেকটা এপিসোড লিখব কিনা ভাবছি। পলিটিক্যাল চেঞ্জ এর সংগে ক্যাম্পাস চেঞ্জ এর বিষয়টা।

    জবাব দিন
  11. তারেক (৯৪ - ০০)

    গল্পটা বেশ ভাল লাগলো।
    তবে একটু যেন ঠাসাঠাসি হয়েছে। অল্প জায়গায় অনেক চরিত্র, কোনটাই যেখানে পুরোপুরি স্পষ্ট হয়নি। মানে গল্পের মধ্যে একটা চরিত্র যেখান থেকে শ্বাস নিতে শুরু করে, ওইটুকু পর্যন্ত লেখকের উচিৎ সেই চরিত্রটাকে কোলে পিঠে বয়ে আনা। ফয়েজ ভাইকে সেই তুলনায় চরিত্রগুলার প্রতি অনেকখানি নির্মম মনে হলো।
    আরেকটা কথা, গল্পটা সবার জন্যে সহজবোধ্য হবে বলে মনে হয় না। আমি পড়তে গিয়ে যখন জিসানের কথা পড়লাম, আমার একুশের হলের এক বন্ধুর কথা মনে পড়ে গেল। অথবা যখন যোবায়ের ভাইয়ের কথা পড়লাম, আরেকজনের স্মৃতির সাথে মেলাতে পারলাম। তো, পড়তে পড়তে আমার নিজের জীবন থেকে খানিকটা সাপোর্ট পাচ্ছিলাম। কিন্তু সেটা যে সব পাঠকই পাবে, তার নিশ্চয়তা নেই।
    তবে, সবমিলিয়ে কেমন একটা টুয়েন্টি-২০ আমেজ পেলাম। আরেকটু হাত খুলে জায়গা নিয়ে লিখলে একটা টেস্ট ম্যাচ, নিদেন পক্ষে ওয়ানডে যদি পড়তে পারতাম, আরও ভাল লাগতো!


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  12. @ তারেক এইগুলা সব নিজের জীবনে দেখা টুকরো টুকরো কাহিনী, এটা ঠিক যারা ইউনিতে হলে ছিল না, তাদের বুঝতে কষ্ট হবে।

    আরেকটু বড় করতে বলছো? ধরে রাখতে পারব?

    বুঝছি না.।.।।

    জবাব দিন
  13. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আমার নিজের জীবনে ফারজানার কাছাকাছি একটা চরিত্র ছিল কিনা...(কাছাকাছি বলসি, পুরাপুরি বলি নাই কইলাম)
    অবশ্য আমার ফারজানা পড়াশুনায় আহামরি কিসু না তার লক্ষ্য হইল গিয়া হাই স্টাটাস অর্জন-নিজের রূপ লাবন্যের বিনিময়ে...
    আর শম্পার অস্তিত্বে আমি অবিশ্বাস করি।

    জবাব দিন
  14. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    (অল্প জায়গায় অনেক চরিত্র, কোনটাই যেখানে পুরোপুরি স্পষ্ট হয়নি।)
    লেখাটি যদি ফয়েজ ভাই এখানেই শেষ করেন তাহলে এই মন্তব্যটি ঠিক আছে। নতুবা চরিত্রগুলোর প্রতি সুবিচার করা হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে।

    (গল্পের মধ্যে একটা চরিত্র যেখান থেকে শ্বাস নিতে শুরু করে, ওইটুকু পর্যন্ত লেখকের উচিৎ সেই চরিত্রটাকে কোলে পিঠে বয়ে আনা। ফয়েজ ভাইকে সেই তুলনায় চরিত্রগুলার প্রতি অনেকখানি নির্মম মনে হলো।)

    ফয়েজ ভাই, আমার মনে হয় আপনি আরো কয়েক পর্ব লিখলে চরিত্রগুলোর পূর্ণাংগতা স্পষ্ট হবে।

    তবে, লেখাটি আমার ভালো লেগেছে। ফয়েজ ভাই, আরেকটু লম্বা করেন না বস...।।

    জবাব দিন
  15. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    (অবশ্য আমার ফারজানা পড়াশুনায় আহামরি কিসু না তার লক্ষ্য হইল গিয়া হাই স্টাটাস অর্জন-নিজের রূপ লাবন্যের বিনিময়ে…)

    মাসরুফ,
    যুগে যুগে তোমার জীবনের ফারজানার মত ফারজানারা এমনটা-ই করে। তোমার আগেও এমন হয়েছে, তোমার সাথে হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে...। একটা সময়ে হয়তো মনে হবে জীবনটার কোন মানে নাই...। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানো, জীবনটা কখনো থেমে থাকেনা। ফারজানাদের সংসার হয়...অর্থ হয়...স্ট্যাটাস হয়, হয়তোবা সুখও হয় (!!!!!)...নতুন বুকে মাথা রেখে ভালোবাসার সুমধুর(!!!!) কথা শোনায়...। কিন্তু জীবনের একটি পর্যায়ে এই উপলব্ধি আসতে বাধ্য,"নিজেকে সে ঠকিয়েছে"।

    এনিওয়ে, ফয়েজ ভাই'র লেখা পইড়া আমার মাঝেও কি সাহিত্যিক ভাবটা উকি মারলো নাকি? তাইলে তো বিপদ...। যাইরে ভাই...ক্লাশ আছে...দেরী করলে স্টুডেন্টরা আবার মকড়া মনে করবো...।

    মাসরুফ, "চলো আগে বাড়ি...। নো ফারজানা নো ক্রাই। 😀 " আমার একটা খুব প্রিয় কোটেশন আছে...। "Don't cry for someone who doesn't deserve your tears, and the person deserves your tears, will never let you to cry...."

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।