আমি সেই সব মানুষের দলভুক্ত নই যাদের আত্মকথন লোকে সময় নিয়ে পড়ে। তবুও এই অখ্যাতের আত্মকথনের দুঃসাহস পেলাম এই ভেবে যে আমাদের ক্যাডেটদের প্রত্যেকেরই কোন না কোন ঘটনা, কারো না কারো সাথে মিলে যায়ই।
সুসন্তান জন্মদানের গর্বে গর্বিত হবার আনন্দটা উপভোগ করার জন্য আমার বাবাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেকগুলি বছর। তিন মেয়ের পর সর্বকনিষ্ঠ একমাত্র ছেলের প্রতি তার প্রত্যাশা দিগন্ত ছুয়ে যেত। তিনি শুধু গর্বিত হতে চেয়েছিলেন, বেশী কিছু না। এখন যত সহজ মনে হয়, ছোট সময়টাতে ব্যাপারটা অনেক বেশী ভয়ংকর ছিল। এখনও যে তিনি খুব একটা গর্বিত তা বলছি না, তবে অবস্থার উন্নতি হয়েছে, এটুকু বলা যায়।
ছুটিতে বাসায় থাকার দিনগুলি ভালই কাটতো, অন্তত রেজাল্ট কার্ড বাসায়ে পৌছানোর আগ পর্যন্ত। বিষয় ভিত্তিক ‘ঘ’ শ্রেণীর নম্বর আর শৃংখলাতে ‘ঙ’ দেখে আমার স্বপ্নাহত বাবা নিজে ভয়ংকর ছটফট করতেন এবং আমাকেও বাধ্য করতেন যন্ত্রণায়ে ছটফট করতে। পরের দিকে স্নেহময়ী মা, বাবার হাতে আর রেজাল্ট কার্ডই দিতেন না, দিলেও ছুটি শেষ হবার এক দুই দিন আগে। বাবার মনটা যখন ভিজে ভিজে একটু নরম হচ্ছে।
প্যারেন্টস ডে ছাড়াও আমার বাবা কলেজে গিয়েছেন অতিরিক্ত ‘এগারো বার’, খোদ প্রিন্সিপালের নিমন্ত্রণে। প্রতিবারই ভীষণ কষ্ট পেতেন। ছয় পার হবার পর অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন, আর দশ পার হবার পর ‘ডেসপারেট’। এগারোতম তে প্রিন্সিপালকে বলেছিলেন, ‘বছরে ২৬৫ দিন ছেলে থাকে আপনার কাছে, ১০০ দিন আমার কাছে। ছুটির দিনগুলিতে ছেলে যা করে দায়ীত্ব আমার। ওই সময়টাতে ছেলে কিছু করলে আমি কি কখনো আপনাকে ডেকে কমপ্লেইন করেছি?? তাহলে যে ২৬৫ দিন ছেলে আপনার দায়ীত্ত্বে দিয়ে আমার নিশ্চিন্ত থাকার কথা, সেই সময় কেন আমাকে এত ডাকাডাকি?? মারুন, কাটুন শাস্তি দিন, আমাকে আর ডাকবেন না প্লিজ। কলেজ আউট করে দিলে শুধু ডাকবেন, এসে নিয়ে যাব’। আমার উপরকার ক্ষোভই যে বাবা ঢাললেন, সেটা বুঝতে ‘ক’ শ্রেণীর ক্যাডেট হওয়া লাগে না।
৯৮ সালে কলেজ জীবন শেষ করেছি যদিও, ক্যাডেট জীবন শেষ করতে পারিনি। টাঙ্গাইলের আমরা ছয় কলেজের ছয়জন, ঢাকায় বাসা নিলাম। বাসা নেয়ার গল্প নাই বা বলি … ঢাকায় যাবার আগে আমার লক্ষ্য স্থির করে দেয়া হয়েছে ‘বাবার স্বপ্ন পূরণ, ভাল কোথাও নোঙ্গর ফেলা’।
কল্যাণপুরে আমাদের দোতলার বাসার মালিক বড় উপকার করেছিলেন বাসা ভাড়া দিয়ে, একমাস পরই প্রতিদান চাইলেন, দোতলা ছেড়ে নীচতলায়ে স্থানান্তর করতে। নীচতলার নির্মান কাজ তখনো চলছে, সদর দরজা বলতে কিছু নাই, দুই রুমে তখনও ছাঁদ ঢালাইয়ের বাশ দাঁড়িয়ে, শুধু একটা রুম কোন রকমে কমপ্লিট, বৈদ্যুতিক যোগাযোগ বাদে। ছয় ম্যাট্রেস পাশাপাশি, মাথার কাছে ব্যাগ, এমাথা ওমাথা নাইলনের রশিতে ঝুলানো ব্যবহারের কাপড়, টেবিল ফ্যান, আর তার টেনে ঝুলিয়ে দেয়া ১০০ পাওয়ার ফিলিপ্স বাতি। বাতাসে যখন লাইট দুলতো, ‘বাচতে হলে জানতে হবে’, ‘মাদককে না বল’, ‘নেশা খাবি খা, মারা যাবি যা’ জাতীয় জনসচেতনতা মূলক এ্যাডের স্যুটিং স্পট হয়ে উঠত আমাদের রুম।
সেই রকম এক অসময়েই বাবা এলেন, ছেলে কেমন আছে দেখতে। তাস খেলায়ে এতই মগ্ন ছিলাম যে সবাই যে হুট করে হাওয়া হয়ে গেছে টের পাইনি। হঠাৎ উপলব্ধি করলাম রুমে শুধু আমি আর বাবা। ‘সিরাজে কোচিং কেমন হচ্ছে ?? আজ যাও নি ??’ ‘আজ শরীর ভাল লাগছিল না’ ‘গত সোমবারেও তো যাও নি, আমি তো ওখান থেকেই এলাম। সিরাজ তোমাকে চেনেই না, আমাকে বলে কোন তাইফুর?? ওমেকা তে তোমার ক্লাস কবে কবে?? মিথ্যে বলার প্রয়োজন নেই, আমি ওখানেও গিয়েছিলাম, এবং ওখানেও কেউ তোমাকে চেনে না। আর এইটা কি মানুষের বাসা?? খাট কিনতে টাকা নিলা খাট কই??’
সুসন্তান জন্মদানের গর্বে গর্বিত হবার আনন্দটা উপভোগ করার জন্য আমার বাবাকে যতদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে ততদিন বাবা আমাকে বুঝতে দেন নাই তিনি আমাকে ভালবাসেন। ভাঙ্গাচোরা কোন এক ঘাটে কোন রকমে নোঙ্গর ফেলার পর আমি বুঝতে পারলাম, বাবা আমাকে ভালবাসেন। আসলে সব ভালবাসা প্রকাশেরই একটা ইউনিক সময় থাকে। সেই সময়ের একটু আগে বা একটু দেরীতে বললেই সেই ভালবাসা আর পরিণতি খুজে পায় না।
মন ছোয়া লেখা
বকওয়াজ লেখা সময় নিয়া পড়ছিস, আমি এতেই খুশী।
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
কথাটা মনে হয় বস ঠিকই বলছেন...!!!
আমাদের সকল বাবা-মা'কে :salute:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ধারা বজায় রাইখা তোরেও :salute:
কিন্তু তুই এইলেখা পইড়া সময় নষ্ট না কইরা... জলদি
সহজ ভাষায় ইংরেজী পর্ব চার নামা তাড়াতাড়ি।
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
বস আমারে কি পাইছেন??? আমি কি ইঁন্দুর নাকি?? x-(
ইঁন্দুররা নাকি প্রসব করার পর পরই আবার গর্ভবতী হতে পারে!!! :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ইন্দুর হইবি ক্যান, তুই হইলি গাছ, সারা বছর ঘন্টায় ঘন্টায় ফল দিতে পারে এমন ...
পরাগায়ন না হইলে কইস 😉
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
তাইফুর ভাইএর ইরোটিক কথাবার্তার জন্য ওনার চাই... x-(
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ঘোর শরমের ব্যাপার হইল 😕
দ্বিতীয় লাইনটা লিখা তাইলে ঠিক হয় নাই 😀
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
ছি তাইফুর ভাই, আপনে কচি কচি ছেলেদের এইগুলা কি ভাষা শিখাইতাছেন?নাউজুবিল্লাহ মিন যালেক-আদব লেহাজ দুইন্না থিকা উইঠা গেছেগা 😕
দুইন্না থিকা উইঠা গিয়া কি নসু'তে গিয়া পরছে ??
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
বাবা রা চিরকালই বাবা , খালি কারো প্রকাশ আগে, কারো প্রকাশ পরে
মান্নান কে ধণ্যবাদ,
বাবাদের ভালবাসার প্রকাশ আসলে আগেও না, পরেও না ...একদম সঠিক সময়ে। বাবারা আসলেই :boss:
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
ওই মিয়া,
আমার কাহিনী কপি পেস্ট কইরা দিছেন ক্যান?
আমারো তো এক্কেরে সেম টু সেম কাহিনী। 😉 😉 😉
তুই আমার মায়ের পেটের আপন খালাতো ভাই না ......
কাহিনী তো সেম হইবই।
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
তোমার কাছে আশা বেড়ে যাচেছ। 🙂 ভালো লাগসে :clap:
বিশাল কমপ্লিমেন্ট দিলেন বস। নার্ভাস লাগতিছে ... 😕
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
দোস্ত, কি লেখলি এইটা !
খালি কি :salute: দিমু না অন্য কিছুও দিমু বুঝতাছিনা। এই রকম কাট টু কাট কি আমাগো সব পোলাপাইনেরই, কি জানি ।
ঘাট টা খুজেই যাচ্ছি। ভয়ে ভয়ে মাঝে মাঝেই চিন্তা করি, ইউনিক সময়টা আবার ফেল করে ফেলবোনাতো!
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
ঘাট খুইজা পাস নাই, চাপাবাজ ... x-(
সময়টা তুই ফেইল করলেও আংকেল ফেইল করবেন না। 😉
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
দারুণ প্রকাশ। বাবা আর ছেলেকে :salute:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
বস, আপনারেও :salute:
আমার লেখায় এইটা আপনার দ্বিতীয় মন্তব্য ... 😛
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
তাইফুর ভাই,
আপনি-ত ভাই আমার তেরটা বাজায় দিছেন।
তোর ঘড়ি চেঞ্জ করার টাইম আসছে মনে হয়। 😕
আগে জানলে জন্মদিনে তোরে ঘড়ি দিতাম। 😛
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
তাইফুর ভাইয়ের লেখা যতই পড়তেসি ততই আশ্চর্য হৈতেসি। আপনারে নিয়া ম্যালা কিসু শুনছি। স্যরি টু সে, তার বেশির ভাগই জুনিয়র পোলাপানের জন্য ঠিক সুখকর না। 😀 কিন্তু আপনার এই লেখার গুন সি সি বি না থাকলে কোনদিন শোনা হৈতোনা।
সি সি বি ঝাকাঝাকি করে। B-)
আপনেও দেখি টাংগাইলের। :boss:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
সব চমচম পার্টি। পাঁচানি বাজারের চমচম।
খাইছে ... বিশাল ধন্দে পইরা গেলাম। পোলাপান আমার নামে খ্রাপ কথা কয় ??
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
😕 🙁 😕
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
খাইসে আপনে যেমন খ্রাপ ভাবতেসেন তেমন কিসু না। আমি মিন করসি যেসব কাহিনী শুনছি তাতে আমরা যদি জুনিয়র অবস্থায় আপনারে সিনিয়র পাইতাম তাইলে আমাদের জন্য ব্যাপারটা ঠিক সুবিধার হৈতোনা। এই আর কি 😀
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
এইডা কি কম খ্রাপ কথা ?? x-(
তোর মত জুনিয়ার আমার খুবই 'লাইক' 😉
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
আমরা সিসিবিকে পিসিসি না বানাই 😛
চল তাইলে পিসিসি'রে সিসিবি বানাই ... 😛
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
:salute:
আর কি কমু বুঝতাছি না!
www.tareqnurulhasan.com
কিছু না বইলাও কত কিছু বললি ... ধণ্যবাদ
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
ওহ, বাপের সাথে বিরাট ঝামেলা লাগাইছিলাম, পাশ করার পর, সে এক বিরাট পারিবারিক ইতিহাস।
বাবা যে কত বড় সাপোর্ট বুঝেছি বাবা মারা যাবার পর। এখন মাও নেই, পুরা এতিম।
তাইফুর তোমার ভক্ত হয়ে যাচ্ছি আস্তে আস্তে। :salute:
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ক্যামনে পারেন বস?? শরম আর প্রেরণা একসাথে দিতে ...
আপনারেও :salute:
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
দারুণ বিন্যাস...বস :salute:
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
ভাল লাগ্লো যে লিখাটা তুই মন্দিয়া, সময় নিয়া পড়ছিস।
ধণ্যবাদ, এবং তোরেও :salute:
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
তাইফুর ভাই, জটিল হইসে। পুরা :gulli2: :gulli2:
কমরেড, আপনাকে :salute:
তোমারেও :salute:
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
:boss: :boss:
:salute:
চালায়া যান...।
আর কত ?? 😛 😀
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
ওম্বা ওম্বা টিল ডেথ 😉 😛
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
টাংগাইলের পোলা হইয়া খুব ভাল লাগতেছে,কঠিন লিখছেন,Boss
:salute:
আমারও খুব ভাল লাগতিছে ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
ভাইয়া খুব সুন্দর করে মনের ভাবটা লিখেছেন।
আপনাকে :hatsoff:
আবার ভালোলাগা জানায়ে দিয়ে গেলাম। :boss:
অসাধারণ !!! অসাধারণ !!!
:boss: :boss: :boss:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
বেশি জোশ হইছে লেখা। কিন্তু তাইফুর ভাই কুনাই??