এই লেখাটা লেখার আমার কোন ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু আমি জানি আমি না লিখলেও আজ আরো অনেকে এই নিয়ে লিখতে চাইবে। এবং তাদের যে কারোটাই আমার চেয়ে অনেক বেশি মন খারাপ করা লেখা হবে। আর মন খারাপ করে থাকতে আমার একদম ভালো লাগে না। অন্যরা মন খারাপ করুক এটাও আমি চাইনা।
এর আগে কামরুল (কামরুলতপু) এই নিয়ে লিখেছে। ওর লেখাটা আমি কোনদিন একবারে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারিনি। তার আগেই আমার দু’চোখ ঝাপসা হয়ে উঠেছে। মনিটরের সামনে থেকে উঠে গিয়ে একা একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কেঁদেছি । পাছে কেউ দেখে ফেলে এই ভয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছেটুছে স্বাভাবিক হয়ে তবেই রুমে ফিরে এসেছি। মনে মনে ও কে অনেক বকাবকি করেছি, কেনো তুই এই নিয়ে লিখতে গেলি। কিন্তু আমি জানি, লিখতে গিয়ে আমার চেয়ে বেশি মন খারাপ ওঁর হয়েছিলো। হয়েছিলো বলেই লেখাটা ও শেষ করতে পারেনি।
আজ ভাবলাম একবার চেষ্টা করে দেখি। কারো খুব বেশি মন খারাপ না করে দিয়ে লিখতে পারি কিনা।
১১ নভেম্বর ১৯৯৯।
সেদিন আমাদের প্রি-টেস্ট পরীক্ষা শুরু হবার কথা। পায়ে ব্যথার কারনে আমি অনেকদিন ধরেই হাসপাতালে। সেখান থেকেই পরীক্ষা দেবো। হাসপাতালে থাকার মজা হচ্ছে অন্যদের চেয়ে একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠা যায়। সেদিনও হয়তো উঠতাম। পরীক্ষা-টরীক্ষা নিয়ে আমার কোনোদিনই খুব বেশি টেনশন ছিলো না। তারচেয়ে ঘুম আমার ঢের প্রিয়। কিন্তু সেদিন হাসপাতালে হঠাৎ হাসপাতালে অনেকের চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। যেখান থেকে চিৎকার আসছিল, কি হয়েছে জানার জন্যে বারান্দা দিয়ে সেখানে উঁকি দিলাম। সে দৃশ্য আজো মাঝে মাঝে আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। শামস আর রুশো (আমাদের ইমিডিয়েট জুনিয়র) দুজনে মিলে রক্তে ভেজা প্রায় নিথর একজন ক্যাডেটকে ধরে রেখেছে তাদের কোলে আর চিৎকার করছে, এম্বুল্যান্স লাগবে এম্বুল্যান্স, অক্সিজেন সিলিন্ডার কই? গাড়ি বের করতে বলেন কাউকে।
আমি খুব ভীতু ধরনের মানুষ। এক নজর দেখেই ভয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। সেই ছেলেটার শরীরের রক্তে শামস আর রুশো’র সাদা পিটি ড্রেস লাল হয়ে আছে। যাকে কোলে ধরে রেখেছিলো তাকে চিনবার কোনো উপায়ই নেই। রক্ত ছাড়া আর কিছু দেখিনি।
গাড়ি আসলো। এডজ্যুট্যান্ট স্যারকে দেখলাম চিৎকার করছেন, ‘আরো একজন আছে, মাঠে। তাকেও নিতে হবে।’ গাড়ি মাঠের দিকে ছুটলো। আমি এরই মধ্যে একজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম কি হয়েছে।
কলেজের গ্রাউন্ড সমান করার জন্য আর ক্রিকেট পিচ বানাবার জন্য একটা রোলার কেনা হয়েছিল। ৫টন ওজন। ৪০০ মিটার ট্র্যাক সেই রোলার টেনে সমান করতো ক্লাস সেভেনের ছেলেরা।। অন্য সব বার যদিও সিটি কর্পোরেশনের রোলার আসে এই কাজ করার জন্য। কিন্তু সেবার কেনো যেনো আসেনি। সেদিন সেই ঘন কুয়াশার ভোরে রোলার টানতে গিয়ে তার নিচে পড়ে গেলো দুই জন। তাদেরই একজনকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলো শামস আর রূশো। অন্যজন তুলে আনার মতো অবস্থায় নেই। আমি বাকহীন হয়ে রইলাম অনেক্ষন। হাসপাতালে একজন মেডিক্যাল স্টাফ থাকেন। তাকে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘স্টাফ, কেমন দেখলেন? ছেলেটা বাঁচবে তো?” উনি আমার কাঁধে হাত রেখে মাথা নিচু করলেন।
রেজা আর ইকবাল, দুজনের কেউই আর ফিরে আসেনি।
এরপর অনেক কিছুই হয়েছে। কম বেশি তা সবাই জানেন। সেসব কথা আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। সাধ্যের মধ্যে যা করার ছিলো তাই দিয়ে প্রতিবাদ করেছি আমরা সবাই। ফলাফল অনির্দিষ্ট কালের জন্যে কলেজ ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছে, একের পর এক ইনকয়্যরি বোর্ড বসেছে, বেছে বেছে প্রতিবাদী ক্যাডেটদের কলেজ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে , কেউ দিয়েছে মোটা অঙ্কের জরিমানা। কিন্তু আসলে কিছুতেই কিছু হয়নি। রেজা আর ইকবাল কখনো ফিরে আসেনি।
কলেজ থেকে বেরিয়ে আসার পর এই দুই জনের ফ্যামিলির সাথে যোগাযোগ হয়েছে নিয়মিত। ইকবাল ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার আগে যে স্কুলে পড়তো সেখানে তার স্মরনে তার বাবা-মা একটা বৃত্তি চালু করেছেন, “সাইমন ইকবাল ট্রাস্ট” নামে। আমাদের ওকাস (ওল্ড ক্যাডেটস এসোসিয়েশন অব সিলেট) থেকে তাতে কিছু অনুদান দেয়া হয় প্রতি বছর। ওকাসের সহ-সাধারন সম্পাদক হওয়ায় বছর দুয়েক আগে সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলাম আমিও। ইকবালের কলেজের বড় ভাই এসেছে শুনে সবাই আমাকে মাইক্রোফোন
ধরিয়ে দিলো কিছু বলার জন্যে। মাইক হাতে নিয়ে আমি দেখলাম ভেতর থেকে কান্না ছাড়া আর কিছুই আসছে না। “ক্ষমা করবেন” বলে মাইক রেখে দেবার পর ইকবালের বাবা এসে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কান্না শুরু করলেন। আমিও আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।
রেজা-ইকবালের স্মরনে ওদের বন্ধুরা (২৪তম ব্যাচ, সকক, ৯৯-০৫) গঠন করেছে rimo (reza iqbal memorial organization)। প্রতি বছর তারাও স্মরন করে তাদের বন্ধুদের। কলেজের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের ছেলে মেয়েদের বৃত্তি দেয় রিমো (rimo)। যতো কাজই থাকুক আমি সেই আয়োজন মিস করিনা, অনেকেই করেন না।
আজো আমাদের কলেজের ২৪তম ব্যাচকে কেউ ২৪তম ব্যাচ বলে ডাকে না। বলে রেজা-ইকবালদের ব্যাচ। এই কিছুদিন আগেই যখন আমি জিহাদ রায়হান আর মুহাম্মদকে আমার বন্ধু মাসুদ, শোয়েবের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলাম তখন নিজের অজান্তেই বলেছি, আরে ওরা আমাদের কলেজের রেজা-ইকবালদের ব্যাচ। রেজা-ইকবাল এভাবেই বেচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে।
১১ নভেম্বর। রেজা-ইকবালের মৃত্যু বার্ষিকী।
কারো প্রতি কোন অভিযোগ নয়, কারো প্রতি ঘৃনা নয়। আজ শুধু আমরা তাদের স্মরন করবো। ঘৃনা আর অভিযোগ যাদের প্রতি তারা কিছুই হারায়নি। আমরা হারিয়েছি। আমাদের ছোট ভাই, আমাদের বন্ধু অথবা আমাদের বড় ভাই। আজকের দিনটা তাই শুধুই রেজা- ইকবালের জন্য।
রেজা আর ইকবাল। যেখানেই আছো ভাইয়ারা, অনেক ভালো থেকো।
পরানের গহীন ভিতর থেকে আজ শুধু তোমাদেরকেই স্মরন করছি।
# অন্যান্য লিংক: রেজা ইকবালকে নিয়ে লেখা ওদের ব্যাচের সামির (৯৯-০৫) এর ব্লগ: বন্ধু, তোদের জন্য
ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই...কিন্তু লেখাটা পড়তে গিয়ে যে কান্নাটা আসল-আমি তা ঠেকানোর চেষ্টাও করলাম না...যদি বুকটা একটু হাল্কা হয়, ক্ষতি কি???
আমার ভাই-আমাদের ভাই, রেজা-ইকবাল, তোমরা যেখানেই থাক- ভাল থেক।
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
কিছু কিছু ক্ষোভ মোছা যায়না।ভোলা যায়না কিছু কিছু অন্যায়কেও।তারপরেও বলি-আজকের এই দিনে রেজা ইকবালের জন্য শুধুই এক্রাশ দুঃখ ভরা অক্ষম ভালবাসা।
অপূর্ব প্রকাশভঙ্গী,কামরুল ভাই!
কামরুল ভাই, তোমাকে ধন্যবাদ। ঘটনাটার কথা মনে হলে কলেজের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু পশুর জন্য এখন শুধু করুণা হয়। আর কোন অনুভূতিই আর কাজ করে না । ভাল লিখছ তুমি। :salute:
লিখাটা যখন পরছিলাম সামনে ল্যাব মা্নুয়াল খোলা ছিল। নিজেও জানি নাহ কখন খোলা পাতাটা ভিজে গেছে। সাইমুম ভাই আর রেজা ভাই- আপনারা যেখানেই থাকুন, ভাল থাকবেন... এতগুলো মানুষের ভালবাসা চিরকাল আপনাদের সাথেই থাকবে। মনে হয় এটাকেই বলে Bond of brotherhood…….. ভাল লাগসে না
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছিনা।
আল্লাহ্'র কাছে দোয়া করছি রেজা, ইকবাল আমাদের ভাইদুটিকে তিনি যেখানেই রাখেন, ভালো রাখেন।
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
ক্যাডেট বলেই হয়ত আমাদের কষ্ট গুলোও এক। নইলে চিনিনা, জানিনা, দেখিনাই ছেলেদুইটার জন্য এত কষ্ট হবে কেন ??
'সাইমন ইকবাল ট্রাস্ট','rimo' উত্তরোত্তর আরও পূর্ণতা পাক, যেন ওই সময়ে প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্টদের আজীবন মনে করিয়ে দেয়া যায় তারা 'কি' না করলেও পারত।
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
আজকে রেজা কিংবা ইকবালের যে কোন একজনের বাবা এসেছিলেন বুয়েটে। আমাদের সিলেটের পোলাপানদের যাওয়ার কথা ছিল বরিশাল ওদের কারও কবর জিয়ারত করতে...
কামরুল ভাই, লেখাটায় বেশ কয়েকবার মন্তব্য করতে যেয়েও করি নাই, কি লিখবো বলেন... 🙁
সব মনে আছে আমার। আজও চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না... গুটিকয়েক পশুকে কোনোদিন ক্ষমা করবোনা...
রেজা-ইকবাল... অনেক অনেক ভালবাসা তোদের জন্য।
কি লিখবো?
রেজা-ইকবালের জন্য অনেক আদর, অনেক ভালোবাসা।
আর এই ব্লগে সব ছোটভাইরা তোমাদের জন্য শুভ কামনা। ভালো থেকো সবাই।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
কাটখোট্টা বলে আমার পরিচয় যাদের কাছে তারা যদি এখন আমাকে দেখতে পেত তবে হয়ত বিশ্বাস করত না যে এই আমিও কাঁদতে জানি। আজ কোন লজ্জা নেই, আজ আমাদের কান্নার দিন, আজ আমাদের কান্নায় কষ্ট দুঃখ আছে তবে লজ্জা নেই। আর কিছু করতে না পারি আসুন আমরা একটু কাঁদি। আজ আমাদের কান্না শুনুক আমাদের বন্ধুরা, আমাদের অশ্রুজলে সিক্ত হোক এই পৃথিবী আর প্রশমিত হোক ওদের কিছু জ্বালা।
যারা আগে পড়েন নি তারা রেজা ইকবালের খুব কাছের বন্ধু সামিরের (৯৯-০৫, সকক) এই লেখাটাও পড়তে পারেন।
বেশ কয়েকবার বেশ কয়েকটা লাইন লিখেও মুছে ফেললাম। মনের মতোন হচ্ছে না কোনটাই - কোথাও না কোথাও খামতি ঠিকই থেকে যাচ্ছে। এখন আর কিছু লিখতেও মন টানছে না। শুধু বলি ভাইয়ারা তোমরা যেখানেই থাকো ভালো থাক।
Life is Mad.
রেজা ও ইকবাল,আমাদের দুটি ছোট ভাই কে আল্লাহ বেহেশত নসিব করুক,আমিন
কিছুই বলতে পারছি না, কেমন যেন হয়ে গেল মনটা। ভুলেই গিয়েছিলাম এই দিনটির কথা। ইকবাল আর রেজা তোরা ভাল থাকিস।
রেজা, ইকবালের জন্য ভালবাসা
আমি সিলেটের না,তবে অইদিন সকাল আটাটার মধ্যেই আমারাও ঘটনাটা জেনে যাই,আমার চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে উঠছে,দিন টা কেমন যেন অদ্ভুত ভুতুরে একটা দিন ছিল,কোন একটা কারনে আমারা সেদিন ব্রেকফাস্টে অনশন করেছিলাম।ম্যাথস পরিক্ষা ছিল।পুরা ক্লাসের কেউ পরিক্ষায় সেদিন কিছু লিখে নি,এসব এর সাথে এইরকম একটা ব্যথাতুর সংবাদ বুকে শেল এর মত আঘাত হেনেছিল,বুকের বাম পাশটায় কেমন যেন একটা চিন চিন ব্যথা উঠেছিল,ক্লোজ কয়েকজন স্যার,মেস ওয়েটর,এদের কাছ থেকে বার বার খবর নিচ্ছিলাম সিলেটের পরিস্থিতি সম্প র্কে।প্রতিবাদ আর ঘৃনা জানিয়েছিলাম আমরাও,কথায় আর প্রকাশ ভঙ্গিতে।কি জানি এরই আরেক নাম হয়ত ভালবাসা,নইলে কেন কুমিল্লায় থেকে আমাদের অনেকেরি চোখ সেদিন জলে ভারি হয়ে গিয়েছিল?
ইকবাল,রেজা............ভাই তোরা কি আমাদের নিঃশ্বাস এর শব্দ শুনতে পারছিস?
সুখে থাকিস ভাল থাকিস............
Umme Ruman Rais (Los Angeles, CA) wrote
at 5:37am
Hi All,I read the write up done by Kamrul Hasan & Samir Ahmed regarding the November 11 incidence & the death of Reza & Iqbal.I wanna say sorry for the incidence & both the writing touched my heart.Such a sad story!!!& both of them are very good writer!I hope this kind of incidence will never happen in anywhere in this world!Take Care,MGCC-1st batch.
আমার খুব কষ্ট হয় যখন মনে হয় যারা এর জন্য দায়ী তাদের কোনো শাস্তি হলনা । তবে এটা ভেবে শান্তি পাই যে রেজা ও ইকবাল জান্নাতবাসী হবে ইনশাআল্লাহ।
We lost our brothers... May Allah bless their soul and our prayers will always be with them.
ভাইরা সিসিবির লেখা পরে যে কোনদিন কাঁদতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি :(( :(( :(( কামরুল ভাই অসাধারান :salute: :salute: :salute:
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
Please read this :
prothom- alo
দেখতে দেখতে ৯ বছর হয়ে গেল।
আচ্ছা কেউ কি একটু দয়া করে বলবে, ওই সময় এ্যাডজুটেন্ট আর প্রিন্সিপাল কে ছিল, এখন তারা কোথায়?
আমি তাদের চিনে রাখতে চাই।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ভাইয়া
এখন এতোদিন পরে আমি আর সেই এ্যাডজুটেন্ট প্রিন্সিপাল, আর ভাইস-প্রিন্সিপাল কাউকেই মনে রাখতে চাইনা।
তবে এনামুল (শুয়রের বাচ্চা) নামে একজন স্টাফ ছিলো। তার সাথে হিসাব-নিকাশটা বাকি রেখে দিলাম।
কামরুল, আমি তাদের চিনে রাখতে চাই, পৃথিবী খুব ছোট, আমি জানি এটা আমার অথবা এই ব্লগে কারও না কারও কাজে লাগবেই।
আমি বিশ্বাস করি কোন কিছুই হারিয়ে যায় না। প্রকৃতি বল বা বিধাতা, নিয়ম কিন্তু একটা আছে।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
প্রিন্সিপাল(লে.ক.রুহুল আমিন) সেদিন কলেজে ছিলেন না। তবে রাতে কলেজে ফিরেও তিনি কিছুই করতে পারেন নি। ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ছিলেন, ভাইস প্রিন্সিপাল রফিক নওশাদ(সারা পৃথিবী তাকে পামোশ নামে চিনে)। এতো বড় একটা একসিডেন্টের পর যিনি বলেছিন "যাও সবাই পরীক্ষা দিতে যাও"। আর এডজুট্যান্ট ছিলেন মেজর মঞ্জুর (আমার ধারনা তিনি পাগল ছিলেন, না হলে ক্লাস সেভেনের ছেলেদের দিয়ে কেউ রোলার টানানোর কথা ভাবেন কি করে)।
আর এনামুল স্টাফ(শুয়রের বাচ্চা কে নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কোন এক দিন যেনো তার সাথে আমার দেখা হয় ...)
এইটা পাগল না, সাইকো
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
পামোশ টাইপ তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা আমাদের চিহ্নিত শত্রু...আমি মাঝে মাঝে অবাক হতাম এই লোক রাতে ঘুমায় কেমনে???
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ধুর! কি লিখব????????????????
রেজা আর ইকবাল। যেখানেই আছো ভাইয়ারা, অনেক ভালো থেকো।
পরানের গহীন ভিতর থেকে আজ শুধু তোমাদেরকেই স্মরন করছি।
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
২৪ ব্যাচের কাঊসার (৯৯-০৫,সকক) আজ প্রথম আলোতে একটা কলাম লিখেছে এই নিয়ে। আগ্রহীরা পড়তে পারেন এখানে।
অনেকের সুবিধার জন্য আমি লেখাটা এখানে হুবহু ছাপিয়ে দিচ্ছি।
****************************
স্নরণ
রেজা ও ইকবাল: ভুলেও ভুলিনি
মহিউদ্দিন মো. কাউসার
সিলেট ক্যাডেট কলেজের স্টাফ লাউঞ্জে আমাদের একজন শিক্ষক বিষয়টা তুললেন।
‘ক্লাস সেভেনে পড়া ১১-১২ বছরের ক্যাডেটদের দিয়ে তিন টন ওজনের রোলার টানানো খুবই অমানবিক। যেকোনো সময় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তা ছাড়া মাঠ সমান করার জন্য কর্মচারীই তো আছে।’
কিন্তু রোলার টানানোর সিদ্ধান্তটা এসেছে কলেজ অ্যাডজুটেন্টের কাছ থেকে। অতএব প্রিন্সিপালও বিষয়টা ‘শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ঠিকই আছে’ বলে মনে করলেন। উল্টো যিনি অনুযোগটি করের্ছিলেন সেই স্যারকেই অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে।
এ ঘটনার দু-তিন দিন পরই ১১ নভেম্বর ১৯৯৯-এর কুয়াশাচ্ছন্ন এক ভোরে সেই রোলারের নিচেই চাপা পড়ে সকল শৃঙ্খল ছিঁড়ে চলে গেল আমাদের প্রিয় দুই বন্ধু রেজা ও ইকবাল। শিশিরভেজা মাঠ ভিজল অপাপবিদ্ধ দুই কিশোরের রক্তে। সেই রক্ত ও সেই স্নৃতি আজও একাকার হয়ে আছে স্নৃতিতে। স্নৃতি বেদনার্ত হতে পারে, কিন্তু এই স্নৃতি কেবলই বেদনার নয়, তিক্ততার এবং ক্ষোভের। সুবিচার না হওয়ায় তা আমাদেরও অপরাধী করে দেয়। আমাদের মনে ওদের বয়স বাড়ে না, কিন্তু আমরা বেড়ে চলেছি। যতই বাড়ছি, ততই সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ওদের স্নৃতির ভার। ওদের মৃত্যুর শোক আমাদের তাই বর্তমানের আরো অনেক শোকার্ত ঘটনার দিকে টেনে নিয়ে যায়। আমরা দেখি, সেই গাফিলতি আজো ঘটে চলেছে অনেক জায়গায়।
আমরা তাই শৃঙ্খলা ভেঙে নেমেছিলাম আন্দোলনে। সমস্ত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এই অমানবিক ঘটনার হোতাকারীদের শাস্তি চেয়েছিলাম। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়ে আমাদের শান্ত করলেন। কিন্তু অত্যন্ত বেদনাভরা চোখে আমরা দেখলাম, উল্টো আন্দোলনে থাকার অপরাধে অনেক সিনিয়র ক্যাডেটকেই বহিষ্ককার করা হলো। অথচ যাঁর বা যাঁদের খামখেয়ালে বেদনাদায়ক ঘটনাটি ঘটলো, তারা কিন্তু থাকলেন বহাল তবিয়তে। শাস্তি পেলেন শুধু একজন ননকমিশন্ড আর্মি স্টাফ। এমন একটা ঘটনা তো আমাদের জাতির দৈন্যকেই উন্েনাচিত করে।
প্রকৃত অর্থেই দারুণ মেধাবী ছিল ক্যাডেট রেজা ও ইকবাল। স্বপ্ন ছিল অনেক বড় হওয়ার। যেমন আরো অনেকেরই থাকে। কিন্তু অনেকে সেটা বাস্তবায়নের সুযোগ পায়; ওরা তা পায়নি। ওদের পরিবার দেখতে পারেনি ওদের পূর্ণ জীবনের পূর্ণ অবয়ব।
ইকবাল হয়তো একদিন বলল, বিজ্ঞানী হব, তো আরেক দিন বলল, না, ইঞ্জিনিয়ার হব। ‘বড় দাবাড়ু হব’−দাবার বোর্ডের সামনে বসে এমনই হয়তো হতো শপথ কিংবা কলেজ ম্যাগাজিনে যখন তার লেখা একটা সায়েন্স ফিকশন প্রকাশিত হলো, তখনই দেখে ফেলল সাহিত্যিক হওয়ার স্বপ্ন।
রেজার একসময় হয়তো মনে হলো, ‘আর্মি অফিসার হব, আবার আরেক সময় মনে হলো না, ডাক্তার হব। মানুষের সেবা করতে হবে না?’
দারুণ অ্যাথলেটও ছিল সে। স্বপ্নেরা সবে ডানা মেলতে শুরু করেছে, আর তখনই অপ্রত্যাশিত এক দুর্যোগ। আমরা শুধু প্রিয় দুজন বন্ধুকেই হারালাম না, এক ঝাঁক স্বপ্নেরও যে অপমৃত্যু হলো। স্বপ্নকে এমন কঠিন নির্মমতায় হত্যা করতে পারঙ্গম বলেই হয়তো জাতি হিসেবে আমরা আজও সামনের সারিতে দাঁড়াতে অক্ষম। এমন একেকটা ১১ নভেম্বরের সুষ্ঠু বিচার হয় না বলেই হয়তো আমাদের শুনতে হয়−শিক্ষকের আঘাতে প্রাইমারি ছাত্রের মৃত্যুর খবর। ক্ষমতার অপব্যবহারের এমন নজির বারবার সৃষ্টি হয় বলেই হয়তো পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যু হয় মেধাবী নিরপরাধ কলেজছাত্রের। মানসিকতার এমন দারিদ্র্যের জন্যই হয়তো অপমানিত হয় দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠের ছাত্ররা।
রেজা ও ইকবালের মৃত্যু ওদের মা-বাবাকে এখনো কতখানি কাঁদায়, তাঁদের সামনে দাঁড়ালে এর কিছুটা হয়তো বুঝতে পারি। এই মৃত্যু আমাদের হূদয়ে কতখানি ক্ষত সৃষ্টি করেছে তার কিছুটাও হয়তো আমাদের আশপাশের মানুষ বুঝতে পারে। শোকাহত আমরা সবাই-ই জানি, চাইলেও আর রেজা ও ইকবালকে ফিরে পাব না। তাই আমরা চাই কোনো কারণেই আর কোনো স্বপ্ন যেন অতলে হারিয়ে না যায়। পুরোনো ব্যর্থতার জাল থেকে বেরিয়ে জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য এই বদলটার যে বড়ই প্রয়োজন।
লেখক: সাবেক সভাপতি, রেজা-ইকবাল মেমোরিয়াল অর্গানাইজেশন
অনেকক্ষন ধরে চেষ্টা করলাম কিছু লিখতে। পারলাম না। অফিসে আসার পথে সিএনজি তে বসে ফেসবুক গ্রুপ এ মেসেজ পেলাম তোর এই লেখা নিয়ে। অফিসে এসে প্রথমেই পড়লাম। চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নাই। আল্লাহ ওদের বেহেশত দিন।
----------------
----------------
----------------
www.tareqnurulhasan.com
ক্যালেন্ডার এর পাতায় যখন ই ১১ ই নভেম্বর তারিখ টা দেখি তখন ই বুকের ভিতর একটা মোচড় দিয়া উঠে। প্রায় ই মনে হয় সব কিছু যদি বদলানো যেত।
রেজা ও ইকবাল আমাদের তোমরা ক্ষমা কর। আমরা কিছুই বদলাতে পারিনি।
ভাইরে বলে বুঝানোর মত কষ্ট না এটা।
আল্লাহ যেন তোদের ভাল রাখেন, তোদের বাবা-মাদের সহ্য করার ক্ষমতা দেন।
সুবিচার হ্য়নাই । আল্লাহ আমরা পারিনাই তুমি অপরাধীদের বিচার কর ।
ইকবাল-রেজা, ভাইয়েরা আমার-শান্তিতে ঘুমাও…
ক্যাডেট হিসাবে যেখানেই পরিচয় দেই-বুকটা আপনাআপনিই বেড়ে থাকে…শুধু এই প্রসঙ্গটা উঠলে আমি আমার ক্যাডেট পরিচয়ের জন্য ভীষণ লজ্জা পাই…মানুষ হিসাবেও খুব লজ্জা লাগে…
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
মির্জা আহসানুল হোসেন (মকক ৯২-৯৮)
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
আল্লাহপাক সবাইকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিক।
ক্যাডেট কলেজের সবচেয়ে খারাপ স্মৃতির একটা হলো....এই দিন..আমার মনে আছে কলেজ প্রশাসন ১২ তারিখ থেকে বেশকিছু দিন পেপার দেওয়া বন্ধ রেখেছিল..আমাদের পুরো কয়েকদিন অন্ধকারের মধ্যে রাখা হয়েছিল এই ঘটনা জানা থেকে।
বলার কিছু নাই........তোমরা যেখানেই আছো ভালো থেকো,তোমরা দেখতে পাচ্ছো নিশ্চয়ই যে, তোমাদেরকে কেউ ভুলে নাই,না তোমাদের বন্ধুরা,না তোমাদের বড়-ছোট ভাইরা।
নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তোমাদের ভালো রেখেছে আর তোমাদের এই অকালে হারিয়ে যাবার পেছনে যারা দায়ী, তাদেরকে ২ দুনিয়াতেই বিচার করবেন.......এই কামনায়.......
cry...cadets cry........
চোখের পানি আটকে রাখতে পারলাম না!
আল্লাহ যেন আমার এই ছোট ভাই দুইটাকে শান্তিতে রাখেন!
সিসিবি তে আসিনা কিছুদিন। এর ফাকে ১১ নভেম্বর পার হল খেয়াল হয়েছিল কিন্তু কি যেন একটা ফেজ পার করছি কিছুই ভাল লাগে না। আজ কামরুল ভাই বাধ্য করল এই লেখা পড়তে। লিঙ্ক দিলে তো আর না পড়ে পারিনা। মজার এত গুলা লেখা থাকতে কেন যে কামরুল ভাইর হঠাৎ মনে হল তপুকে একটা শাস্তি দিতে হবে আল্লাহ মালুম। কাঁদলাম ।
Reza r Iqbal, jeno amar chhoto duti bhai ekdine chole gelo. Ami tader chinina, kokhono dekhini. Kintu amar mone hoy ei dinti aslei ami bhai haranor jontronay bhugte thaki. Kamruler lekhata pore osru dhore rakhte parlamna. Mone pore ei ghotonar protibade amara BUET e kalo badge dharon kore mouno misil kore bishodhor prani der biruddhe protibaad janiechhilam.
Allahr kachhe doa korchhi tini jeno Reza o Iqbal k Jannatul Firdaus nasib koren.
Shahid
28 Intake, JCC(91-97)
Now serving in 25th BCS Railway.
মন খারাপ করা স্মৃতি। কি লিখি?
সেদিনও কিছু লিখতে পারি নি।
আজো পারছি না।
ভাইয়ারা, আপনাদের আত্মা শান্তিতে থাকুক।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
🙁 🙁 মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল ।আল্লাহ এর কাছে রেজা আর ইকবাল ভাই এর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ।