একটি বই প্রসঙ্গে

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ভাষাগত অসংলগ্নতায় যারা বিরক্ত হন, পোস্টটি তাদের জন্য না।
[এই লেখাটার একাংশ গত বছর ১৫ই অগাস্ট উপলক্ষে সামুর জন্য ড্রাফট করেছিলাম। যাই হোক সামুর পাতি বুদ্ধিজীবিদের কাদা ছোড়াছুড়িতে বিরক্ত হয়ে ঐখানে যাওয়া বন্ধ করায় এটা আর পোস্ট করা হয় নাই। এখন সিসিবিতে লেখার সুযোগ পেয়ে রিএডিট করে পোস্ট করলাম। বুদ্ধিজীবি প্রসঙ্গে সম্প্রতি পড়া একটা লাইন শেয়ার করার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না – “এই দুনিয়ায় সবকিছু বিক্রি হয় – মানুষও। মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বিক্রি হয় বুদ্ধিজীবিরা”।]
২০০৩ বা ২০০৪ সালের কোনো এক সময়ের কথা। কোর্স রিকোয়্যারমেন্ট হিসেবে ২টা ইংলিশ ক্লাস করতে হয়েছিল যাদের যন্ত্রণা অসীমের কাছাকাছি। যাই হোক ঐগুলার মধ্যে কোনো একটা কোর্সের শেষ দিকের একটা ক্লাস চলছে – বিষয়বস্তু ফাইনাল পেপার; সবাইকে নিজের নিজের দেশ/কালচারাল কোনো টপিকের উপর লাইব্রেরী, ইন্টারনেট ইত্যাদি ঘাটাঘাটি করে ১৫-২০ পেজ এর প্যাচাল লিখতে হবে।আমাদের ইন্সট্রাক্টর এক চাইনিজ মহিলা যার বিশেষত্ব হলো সারাক্ষণ দুলতে থাকা। যথাসময়ে আমার ডাক পড়লো। ম্যাডাম দুলতে দুলতে জিজ্ঞেস করলেন আমার মাথায় পেপারের জন্য কোনো টপিক আছে নাকি। আমিও দুলতে দুলতে উত্তর দিলাম – জ্বি না, দেন আপনার যা মর্জি। উনি তখন সম্ভবত চিলির সালভাদর আলেন্দে হত্যা ও তার সাথে CIA-এর ইনভল্ভমেন্ট নিয়ে একটা বই পরছিলেন (The Trial of Henry Kissinger – Christopher Hitchens, যাতে নিক্সন/কিসিন্জার প্রশাসনের গুষ্ঠী উদ্ধার করা হয়েছে), যার ফলোআপ করতে গিয়ে উনি শেখ মুজিবের Assassination সম্পর্কে অবগত হন, আমারে বললো ঐটা নিয়া কিছু লিখতে। আমার তো মাথায় বাজ, Assassination নিয়া কি লিখবো ? ম্যাডাম বলেন কে করলো, কিভাবে করলো, কেনো করলো ইত্যাদি লিখতে। আমার জেনারেল নলেজ মাশাল্লাহ কিংবদন্তীতূল্য, আর ঐসময়ে বাংলাদেশ নিয়ে তেমন ইনফরমেটিভ কিছু অনলাইনেও পাওয়া মুশকিল ছিল। ম্যাডামরে বল্লাম, বাংলাদেশের ফল-ফ্রুট নিয়া কিছু লিখি? বলাবাহুল্য সুবিধা করতে পারি নাই। যাই হোক শুরু করলাম ঘাটাঘাটি। বাংলাদেশের প্রথম ১০ বছরের ইতিহাস রক্তাক্ত,বেদনাদায়ক এবং একই সাথে eventful ও বটে। ঐ সময়ে এবং পরবর্তীতে এই ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে বেশ কিছু বই আমার পড়া হয়(!!!!) যার মধ্যে অন্যতম Anthony Maskarenhas এর Bangladesh: A legacy of Blood বইটা। আউট অফ প্রিন্ট হওয়ায় বহু খোঁজাখুঁজি করেও এর হদিস মেলেনি। সম্প্রতি Amazon থেকে উহা খরিদ করে, স্ক্যান/সেভ করে প্রায় ডাবল দামে আবার বিক্রয় করে দেই। হঠাৎ ভাবলাম সিসিবিতে বইটা শেয়ার করি।
পার্ট ১ , পার্ট ২, পার্ট ৩
আমি পরবর্তীতে বেশ কিছু বাংলা বইও দেখি যার বেশীরভাগই আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবিদের আবেগময় অতিকথন। মোটামুটিভাবে বেশ নিরপেক্ষ একটা বর্ননা লেঃ কর্নেল (অবঃ) এম এ হামিদ রচিত “তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা” বইয়ে পাওয়া যায় (বইটি সহজলভ্য, নীলক্ষেত/নিউমার্কেটে অবশ্যই পাওয়া যাবে)। উৎসাহ থাকলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষীদের বয়ান পড়তে পারেন এইখানে। ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরীর সুবিধা যারা নিতে পারেন, তারা মিডিয়া সেকশনে খুঁজে দেখতে পারেন গ্রেনাডা ফিল্মসের “World in Action” ডকুমেন্টারি সিরিজের ২রা অগাস্ট, ১৯৭৬-এ প্রচারিত পর্বটি যাতে ফারুক/রশীদের চাঞ্চল্যকর একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়।
motivation যাই হোক, এইসবগুলা সোর্সেই বলা হয়েছে রক্তাক্ত এইসব ইতিহাস বর্ণনার উদ্দেশ্য হলো আমরা যাতে এথেকে শিক্ষা নিতে পারি, যাতে ভবিষ্যতে এরকম বিপুল রক্তপাত এড়ানো যায়। সম্প্রতি পিলখানাতে ঘটে যাওয়া ঘটনায় পরিষ্কার ইঙ্গিত, আর যাই হোক “শিক্ষা” আমরা নেইনি। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার কথা। ১৫ই অগাস্ট ১৯৭৫ – এর রাতে মুজিবকে হত্যা করতে বের হবার আগে মেজর ফারুক তার সৈন্য/অফিসারদের ফাইনাল ব্রিফিং/প্রিপারেশন করিয়েছিলেন যেই মাঠে, তা আর্মি ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মাত্র কয়েকশ গজ দূরে (সুত্র: “তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা” – লেঃ কর্নেল (অবঃ) এম এ হামিদ, ৪র্থ সংস্করণ পি ৩০)। ৩৪ বছর পর পিলখানায় গণহত্যা, আমাদের গোয়েন্দারা যেই তিমিরে সেই তিমিরেই।
যাই হোক এই লেখাটির আসল উদ্দেশ্য হলো, মাসকারেনাসের বইটার লিন্ক দেয়া; না পড়ে থাকলে অবশ্যই পড়ে দেখবেন।

২৬ টি মন্তব্য : “একটি বই প্রসঙ্গে”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    Anthony Maskarenhas এর Bangladesh: A legacy of Blood বইটা আমার জীবনে পড়া বইগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা বই, অনেক কষ্টে খুজে পেয়েছিলাম এক কোর্সমেটের কাছে, কিন্তু ২য়বার আর পড়ার সুযোগ পাইনি পরবর্তিতে দুজনেরই দুই জায়গায় চলে যাবার কারনে...তারপর থেকে অনেক জায়গায় খুজেছি কিন্তু...

    আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ বইটা শেয়ার করার জন্য।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে, আমাদের সংগে এটা শেয়ার করার জন্য।

    অফঃ ১। তোমার নামটা এভাবে লিখেছ কেন?
    অফঃ ২। সিসিবি আর্কাইভে আপলোড করে দিলে আমাদের আর্কাইভটা অনেক সমৃদ্ধ হত। একটু ভেবে দেখবে?


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
    • সাল্লু (৯২/ম)

      ফয়েজ ভাই: নামের ভ্যারিয়েশন কলেজে থাকতে হইছে। আপামর ক্যাডেট জনতা আমারে এই নামেই চিনে। ব্যাপার এমন যে, পুরা নাম দেখলে অনেকেই কনফিউজ খায়। আর আর্কাইভের ব্যাপারে আমি শিউর না, কারন টোটাল ফাইল সাইজ প্রায় ৬/৭ মেগা। মডারেটররা যদি আ্যলাউ করে তবে অবশ্যই করে দিব।

      জবাব দিন
  3. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)
    তোমার নামটা এভাবে লিখেছ কেন?

    কারণ, 'সালাহউদ্দিন ভাই' এর চেয়ে 'সাল্লু ভাই' আমাদের বেশি আপন... 😀
    সাল্লু বস,কেমন আছেন?
    এই বইটা আমিও বহুত খুঁজছি...শেয়ার করার জন্য অনেক থ্যাংকস!


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  4. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    এসএসসি'র প্রস্তুতির সময় একরকম জোর করেই একটা ট্রানসিলেশন শিখতে হয়েছিল এরকম,

    মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না

    যেই স্যার এটা করতে দিয়েছিলেন তাকে মৃদু আপত্তি জানাতেই অনেকগুলো উদাহরণসহ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন 🙁 ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।