(নামকরণ কৃতজ্ঞতাঃ সাইফ)
ঢাকা শহরের পিলখানা থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে বসে একজন ক্যাডেট তার সেইসব ভাইয়ের জন্য কাঁদছে, যাদের সাথে তার কোনদিন চোখের দেখা হয় নাই, সুযোগ হয় নাই অনলাইনেও কথা বলার; তবুও তারা তার আত্মারই অবিচ্ছেদ্য একটা অংশ…
আসলে আমরা এভাবেই বড় হয়েছি…মাজহার ভাইয়ের নাম গতকালের আগে কখনো শুনি নাই, কিন্তু আমাদের রহমান ভাই তো তার সাথেই ‘স্বপ্ন দিয়ে তৈরী, স্মৃতি দিয়ে ঘেরা’ ছয়টা বছর পার করেছেন…হায়দার ভাইয়ের কথাও আগে কখনো শোনা হয় নাই, কিন্তু আমাদের তারেক ঠিকই মনে রেখেছে তার বাস্কেটবলের স্কোরের কথা, সাইফ দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে তার লংজাম্প রেকর্ড ভাঙ্গতে না পেরে…নিজের কলেজের হুমায়ুন ভাই- কোন ব্যাচের তাও জানিনা, উনিও নিশ্চয় আমার মত একই পোশাক পরে হেঁটে গেছেন একাডেমিক ব্লকের একই বারান্দায়…হাউসের পোর্চ, ডাইনিং হলের শেড, ফুটবল গ্রাউন্ড- এইসব জায়গায় হয়তো একই রকম স্মৃতি বুনে গেছেন আমার কয়েক বছর আগে…মাজহার ভাই, হায়দার ভাই, হুমায়ুন ভাই সবাই নিশ্চয়ই হ্যান্ডস ডাউন, লংআপ,হাফ নীলডাউন করায়ে রেখেছেন রবিন,তানভীর,আলম অথবা তাইফুর ভাইকে; আবার টার্মএন্ড পরীক্ষার আগে লাইটস আউটের পর সযত্নে বুঝায়ে দিয়েছেন বীজগণিতের বিদঘুটে সূত্র, অ্যাথলেটিক্সের সময় রুমে ডেকে হাতে ধরায়ে দিয়েছেন এক প্যাকেট ‘এনার্জি প্লাস’ বিস্কুট, ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং এর প্র্যাকটিক্যাল খাতা লিখায়ে নিবার পরে ডিউটি ক্যাডেটকে দিয়ে টেবিলে পাঠায়ে দিয়েছেন স্পেশাল ডিনারের সুইট, ক্লাস সেভেনের ক্যাডেটকে নিয়ে কোয়াইট আওয়ারে সবাই মিলে ফান করায়ে ভুলায়ে দিতে চেয়েছেন বাসার চিঠি পেয়ে হাউমাউ করে কান্নার দুঃখ…হয়ত স্থান-কাল-পাত্র বদলে যায়; কিন্তু আমাদের বড় ভাইরা সবাই এই রকমই ছিলেন…
তাই সুয়ারেজ লাইন দিয়ে ভেসে আসা আমার ভাইয়ের চোখ-উপড়ানো লাশ আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারিনা…নৃশংস ভাবে তাদের হত্যা করার বর্বরতা তো মেনে নেওয়ার প্রশ্নই উঠেনা, আরো বেশি মানতে পারিনা দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারের অপবাদ দিয়ে তাদের এই হত্যাকান্ডকে পরোক্ষভাবে জায়েজ করার বুদ্ধিজীবিয় অশ্লীলতাকে…আশেপাশে সবাইকে দেখি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদী জোশে চিৎকার করতে করতে গলায় ফেনা তুলে ফেলতে, তাইলে আমাদের এই বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করলো কারা?…তিক্ত হলেও সত্য যে, আমি-আপনি, আমাদের বাপ-ভাই-মামা-চাচারাই বিভিন্ন লেভেলে বিভিন্ন ধরণের দুর্নীতি করি, পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা অথবা ভিনগ্রহের এলিয়েন এসে বাংলাদেশে দুর্নীতি করে দিয়ে যায়না…আর্মিরাও আমাদের মতই বাংলাদেশী, তাই স্বভাবতই এদের একটা অংশেরও এই করাল ছোবলে আক্রান্ত হওয়া হয়তোবা বাস্তবতা…কিন্তু কোনভাবেই তার শাস্তি নৃশংস ঢালাও হত্যাকান্ড হতে পারেনা…যদি এইটাই সিদ্ধ হতো, তাহলে এই মূহুর্তেই বাংলাদেশের ৯০% রাজনীতিবিদকে ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলা উচিত…কিন্তু এইটা সম্ভব না; কারণ ‘দুর্নীতি দমনের’ চিৎকারের পাশাপাশি তথাকথিত ‘গণতন্ত্র রক্ষাও’ আমাদের জাতীয় শীৎকার…
তাই আমিও ঠিক করেছি চিৎকার করে যাবো…আমার ভাইদের নির্বিচারে মেরে ফেলার জন্য দায়ী কেউ ‘সাধারণ ক্ষমার’ আড়ালে পার পেয়ে যাবে- এইটা হতে দেওয়া যাবেনা…লালমাইয়ের ঐ বাড়ির প্রাঙ্গনে একদিন রহমান ভাই, সাইফ, তারেক, রবিন, তানভীর একত্র হবে- মাজহার ভাই, হায়দার ভাই আর কোনদিন ঐ বাড়িতে যাবেনা…আমাদের বাড়িতেও আমি কোন রি-ইউনিয়নে হুমায়ুন ভাইয়ের সাথে হ্যান্ডশেক করে বলতে পারবোনা, ‘বস, আমি 31st ব্যাচ…আপনে কোন হাউসে ছিলেন?’…আমরা তবু সেইসব বাড়িতে তোমাদের লংজাম্প, বাস্কেটবলের গল্প করে যাবো…
অকৃতজ্ঞ এই জাতি তোমাদের দুর্নীতিবাজ আর অহংকারী বলে অপবাদ দিবে, সেইটা তাদের হীনমন্যতা…কিন্তু তোমাদের ছোট ভাইরা কোনদিন তোমাদের ভুল বুঝবে না…আমরা তো এই “হৃদয়ের কবরে তোমাদের দাফন দিয়েছি” (কৃতজ্ঞতাঃ শার্লী)…কলেজের সেই গ্রাউন্ড, ট্র্যাক অথবা স্টেজের মত সেইখানেও তোমরা চিরদিন নায়ক হয়েই থাকবে…তোমাদের পরিবারের পাশে আরো অনেক নাম-না-জানা, মুখ-না-চেনা ছোট ভাইরা তোমাদের জন্য কাঁদবে…
ভাইরা আমার, শান্তিতে ঘুমাও…আমরা তোমাদের ভুলতে দিবোনা…ভুল বুঝতে দিবোনা…
কিছু বলতে পারছি না...শুধু বুঝতে পারছি আমি ,আমারা যেই কষ্ট পাচ্ছি তা অন্যদের বোঝাতে পারছি না....
বস,আমি আমার মা যাবার দিন থেকে কান্না বন্ধ করেছিলাম,এরপরে আর কোন দিন কেদেছিলাম কিনা জানি না,মনে পরে না,কিন্তু আমি এই লেখা পড়ে নিজের অশ্রু সংবরন করতে পারলাম না।কোন এক আমেরিকান হয়ত কোন এক ব্লগে লিখবে ......আমরা সবাই নাকি কান্না করছি...আফসোস ওদের জন্য...।আল্লাহ ওদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভুতি ভোতা করেছে......হায়দার ভাই এর মাথার মাঝখান দিয়ে সিথি করা চুল আমার চোখের সামনে এখনো ভেসে উঠে,মাজহার ভাই এর বিয়ের ভিডীও ,আর হূমায়ুন স্যার এর ফোনের কণ্ঠস্বর মিষ্টী সুরে ডাকা...brother, আমি ঢাকাতে থাকতে প্রায়ই স্যারের সাথে কথা হত...
আসলেই ভাই, আমাদের এই কষ্টগুলা কেউ বুঝবেনা...
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
-এদের জন্যই আজ নিজেকে মানুষ ভাবতে ঘৃনা হচ্ছে!
আমাদের কষ্টগুলো কেউ বুঝবে না.........
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
এক সাথে অনেক কথা মনে আসছে ......... কিছুই বলতে পারছি না।
আমাদের ভাইদের মৃত্যু বৃথা যেতে দেয়া যাবেনা । দেশে দেশের বাইরে আমরা যারা আছি, আসুন ঐক্যবদ্ধ হই এবং এ বর্বরতার পেছনের অপশক্তিকে দিনের আলোয় নিয়ে আসি । একবার শুধু ডাক দিস আমরা সবাই প্রস্তুত ।
এইমাত্র শাহেদ ভাই(সিসিসি ৯০-৯৬)এর পাঠানো একটা গ্রুপ মেইলে মাজহার ভাইয়ের বিয়ের ছবি দেখলাম...
... ... ...
কি বলবো?...কি বলবো?...
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
ভাইয়া, আলমের মৃত্যুর পর যেমন ফাঁকা অনুভূতি হয়েছিল তেমনই লাগছে। অনেক আলমের বিদেহী আত্মা ঘুরে ফিরছে এই সিসিবিতে। আড় কিছু বলতে পারছি না। আমি সহজে কাঁদি না।
ইউনিফর্মের সাথে চোখের পানি খুব একটা যায় না...........
কিন্তু আমার দিনটা আজ শুরুই হলো চোখের পানি দিয়ে।
অবশ্য গত দুদিন ধরেই এমনটা আছি।
এরকম একটা লেখার জন্য থ্যাংকস সাকেব।
Life is Mad.
…তোমাদের পরিবারের পাশে আরো অনেক নাম-না-জানা, মুখ-না-চেনা ছোট ভাইরা তোমাদের জন্য কাঁদবে…
ভাইরা আমার, শান্তিতে ঘুমাও…আমরা তোমাদের ভুলতে দিবোনা…ভুল বুঝতে দিবোনা…
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
:hatsoff:
গত বছর সামারে কি একটা কোর্স করতে আমার শহরের কাছেই এসে উঠেছিল মাজহার, সেই থেকেই বন্ধুমহলে প্রিয়মুখ ছিল সে। দেশে ফেরত যাওয়ার পরে আর কথা হয়ে উঠেনি। মাত্র ২/৩ মাস আগে বিয়ে হয় ওর। ফেসবুকে আমার ফ্রেন্ডলিস্টটাতে ওর প্রোফাইলটা দেখতে গিয়ে অদ্ভূত একটা মিশ্র অনুভূতি হয় - এও কি সম্ভব।
আমাদের অকালপ্রয়াত আরেক বন্ধু সায়ানের(গত বছর মারা যায়)একটা ছবির নিচে মাজহারের কমেন্ট ছিল এটা -
sayaan miss u bachu.u were really bacha.but went earlier than everybody.early coming and going.strange way of life decided by almighty.
বিধাতার খেলা আসলেই অদ্ভুত।
আমাদের কষ্ট কেউ বুঝবে না।বোঝার মত ক্ষমতা কারো নেই।
অনেক কিছুই বিশ্বাস হয় না, কিছুই বিশ্বাস হয় না। অথচ সবই সত্যি, বাস্তব।
www.tareqnurulhasan.com
ধিক্কার জানাই সকল বুদ্ধিজীবীয় অপব্যাখ্যাকে। ধিক্কার জানাই তাদের যারা বিডিআর বিদ্রোহের মত একটা সংগঠিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে "শ্রেণী সংগ্রাম" আখ্যা দিয়ে মহিমান্বিত করার সামান্যতম চেষ্টা করছেন।
...
ধিক্কার জানাই সকল বুদ্ধিজীবীয় অপব্যাখ্যাকে। ধিক্কার জানাই তাদের যারা বিডিআর বিদ্রোহের মত একটা সংগঠিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে “শ্রেণী সংগ্রাম” আখ্যা দিয়ে মহিমান্বিত করার সামান্যতম চেষ্টা করছেন।
আমি নাকি বেশি কথা বলি। আজ কোন কথা পাচ্ছি না কেন?
সাকেব,
নির্বাক, নিশ্চুপ হয়ে গেছে আমার আশপাশ।
এত কষ্ট কেন। মাথা কাজ করছে না।
দোস্ত, তোর পারমিশন না নিয়েই আমি এইটা মানুষের মাঝে ছরিয়ে দিসি।
আফতাব,
তুই কি আজিজ স্যারের খবরটা শুনছিস?
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
সাকেব ভাই,আমি অনেক দিন রাতে ঘুমাতে পারি নাই,ওই ঘটনার পর।বার বার দুঃস্ব্পন দেখে জেগে উঠতাম।
অভিশপ্ত একটা জাতি...