নিঃশব্দ অনুভূতি

ত্রপাদের বাসাটা ছিলো ঠিক আমাদের গলির শেষ মাথা থেকে দ্বিতীয়টা। তখন আমার বয়স ছিলো তেরো কি চৌদ্দ যখন ওরা এইখানে প্রথম এসেছিলো। আমি বেশ ঘরকুনো ছিলাম তখন। বাসা থেকে বিশেষ একটা বের হতাম না। সেবার শীতে শ্বাসকষ্টটা বেশ ভালোভাবেই ভোগাচ্ছিলো। আম্মু তাই স্কুলে যেতে দিচ্ছিলেন না। আমারও বিশেষ একটা সমস্যা হচ্ছিলো না ঐ ঘরকুনো অভ্যাসটটার জন্য। সকালটা জানালার পাশে রোদে বসে বাসার নীচ দিয়ে ডাকতে ডাকতে যাওয়া ফেরিওয়ালাদের দেখেই কাটতো। এমনি একদিন আমার বয়সি মিস্টি একটা মেয়ে দেখলাম স্কুলব্যাগ ঝুলিয়ে বেশ চুলের বেনি দুলিয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। এই গলির মোটামুটি সবাইকেই চিনি, একে তো আগে কখনো দেখি নি। পরদিন আবার জানালায় বসলাম, তবে কিছুটা প্রতিক্ষা নিয়ে। প্রতিক্ষার অবসান হল অবশেষে। আবারও আগের দিনের সেই একই দৃশ্য। আমার সাদাকালো একঘেয়ে জীবনটাতে যেন কিছুটা প্রাণ সঞ্চার হল। মা ব্যাপারটা খেয়াল করল। মায়ের চোখ ফাকি দেয়া আর কি সম্ভব! আমাকে দিন দুয়েক পর কথায় কথায় প্রসঙ্গটা তুলে আমাকে জিজ্ঞাস করল। আমি তো লজ্জায় শেষ। মা বুঝতে পেরে হেসে আমার চুলগুলো নেড়ে দিয়েছিল।

ত্রপাটা’না এখনও সেইরকমই মিষ্টি আছে।গতবার ঈদে বাসায় এসেছিলো। আমাদের বাসাতেও এসেছিলো আমাকে দেখতে। ওর মেয়েটা দেখতে ওরই মত মিষ্টি হয়েছে।দেখলেই পিচ্চিটার গালটা ছুয়ে দিতে ইচ্ছা হয়। আর ত্রপাকে দেখলে মনে হয়……… না থাক, নাইবা বললাম। যাকে আমি ভাষায় রূপ দিতে পারি নি,থাক না ওটা আমার একান্ত নিজস্ব কিছু অনুভূতির মাঝে চুপ করে এক কোণায়।

৮৭৪ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “নিঃশব্দ অনুভূতি”

  1. শাওন (৯৫-০১)

    দারুণ হয়েছে....খুউউব ই ভালো লাগলো..মনে হচ্ছে রবি ঠাকুরের ছোট্ গল্প পড়ছি..


    ধন্যবাদান্তে,
    মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
    প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১

    ["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।