কলেজ জীবনের Ctrl+Z আর Ctrl+Y গুলো…

প্রথম পোস্টে জীবনে রিউইণ্ড-পজ-প্লে আর undo সম্পর্কে লিখেছিলাম। ভাবনা যখন লিখা হয়ে ভূমিষ্ঠ হয় তখন মনে হয় এর ডালপালা গজাতে থাকে। আমার বেলা হলও তাই। Undo কথাটা লিখার পরেই মনে হল আচ্ছা সুযোগ পেলে আর কি কি undo করতাম আমি। কল্পনাই যখন করছি, তখন redo নিয়ে চিন্তা করতে তো বাধা নেই। (লেখাটা আমাদের ব্লগের সাইন্স ফিকশন গুরুদের ‘যোগাযোগ মডিউলে’ একটা চিন্তার খোরাক দিতে পারে)।

সত্যিই যদি জীবনের কিবোর্ডে Ctrl+Z প্রেস করা যেত তাহলে এই সমস্ত ইভেণ্টগুলোকে undo করতামঃ (সংগত কারণে সারা জীবনের ইপ্সিত undo গুলো ক্লাসিফায়েড, তাই কলেজের অংশটুকুর কথা লিখলাম)

১। আমার তিন প্যাকেট ক্যাপস্টান মিকচার (আমাদের সময়ের হাই গ্রেড ব্রান্ড) ঐ দিন কাপবোর্ডে রাখতাম না। বিশ্বনাথ চাকি স্যারের কাছে সিগারেট খেয়ে ধরা খাবার রাতে আর মাত্র ৫ মিনিট আগে drying room থেকে বেরিয়ে নিজেকে ভাল ছেলের গ্রুপে বহাল রাখতে পারতাম।

৩। ক্লাস নাইনে যে একমাত্র কারণে বোটানির টিচার এর চোখে খারাপ হলাম – সেই সর্বনাশা চশমা নিতাম না। চশমা লাগানোর পর থেকেই উনি আমকে বিদ্রূপের সাথে ‘পণ্ডিত’ ডাকা শুরু করেছিলেন। পরীক্ষার খাতায় নম্বরগুলোও পাল্টে যেতে শুরু করেছিল।

৪। নেইল কাটার নিয়ে ওয়েষ্টার্ণ বইয়ের চরিত্রের রেড ইন্ডিয়ানের মহড়াটা করতাম না। নেইল কাটার এর যেয়ে লাগল পেছন দিক থেকে হেঁটে আসা ইকবালের বুকে, ও পেল ৩টা সেলাই আর আমি এডজুট্যাণ্ট এর কাছে মোটামুটি একটা ‘খুনী’ টাইপ খেতাব পেয়ে গেলাম।

৫। কলেজ পালিয়ে বাইরে যাবার বীরত্বের অভিজ্ঞতাটা একা অর্জন করার চেষ্টা করতাম না। কাউকে সাথে নিতাম। ২ মাইলের সামান্য রাস্তা অলমোস্ট সারারাত গ্রামগঞ্জ ঘুরে ৭-৮ মাইল হেঁটে পাড়ি দিয়েছিলাম সে রাতে।

৬। আমার লকার পার্টনার কে শুধুশুধু পানিশমেণ্ট দিতাম না। বেচারাকে সবার কাছে ভাল রাখার (এবং সেই সাথে আমিও ভাল লকার পার্টনার/গাইড থাকার) জন্য অনেক অত্যাচার করেছি। এরই ফলশ্রুতিতে আমি নাইনে থাকতে কলেজ প্রিফেক্ট এর কাছ থেকে ‘মেয়র অফ আপষ্টেয়ারস’ খেতাব অর্জনে সফল হয়েছিলাম। সাব্বিরের কাছে আমি অনেক মাফ চেয়েছি। এখনও চাই।

৭। ক্লাস টেন এর ক্রস-কাণ্ট্রির দিনে আর যাই হোক মিনি ক্রিকেটটা খেলতাম না। এডজুট্যাণ্ট এর কাছে ধরা খেয়ে আমি, সাইফ আর সাজ্জাদ সমস্ত মাঠের মাঝখানে রোদে ২ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকলাম। এর মধ্যে অবশ্য আমরা দুই তিনটা এক্সটেম্পোর-স্পীচ আর ডিবেট প্র্যাকটিস করে ফেলেছিলাম। টপিক অবশ্যই এডজুট্যাণ্ট এর নির্দয় আচরণ, ক্ষমার সম্ভাবনা কিংবা ই.ডি’র সংখ্যা ইত্যাদি।

৮। বাস্কেটবলের চর্চাটা হেলায় হারাতাম না। ক্লাস সেভেনের প্রথম দিকেই কলেজের সর্বনিম্ন হাইট (৪’–৩”) নিয়ে আমার প্রথম ‘লে-আপ’ করার মধুর স্মৃতিটার কথা আজও ভুলিনি। আজকে এই চাকরি না ঠেলে হয়তো বাই দিস টাইম NBA তে থাকতাম। :dreamy: :dreamy: ;;) ;;)

৯। অংককে এত অবহেলা করতাম না। অংকের প্রতি এই অবহেলা একসময় তৈরি করল অংক-ভীতি যা আমার জীবনের মোড়টাই ঘুরিয়ে দিল।

আরও অনেক কিছুকেই undo করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এখন এই লেখাটাকেই কেন যেন undo করতে ইচ্ছা করছে। তাই Ctrl+Z প্রেস করার আগেই লেখাটাকে পোস্ট করলাম। দেখি পরে কোন সময় redo নিয়ে লিখব।

১,৮১৭ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “কলেজ জীবনের Ctrl+Z আর Ctrl+Y গুলো…”

  1. রেজওয়ান (৯৯-০৫)

    আহারে......... :((
    আমিও যদি কিছু আন্ডু করতে পারতাম তাইলে...... :dreamy:

    অংককে এত অবহেলা করতাম না। অংকের প্রতি এই অবহেলা একসময় তৈরি করল অংক-ভীতি যা আমার জীবনের মোড়টাই ঘুরিয়ে দিল।
    আমার লকার পার্টনার কে শুধুশুধু পানিশমেণ্ট দিতাম না। বেচারাকে সবার কাছে ভাল রাখার (এবং সেই সাথে আমিও ভাল লকার পার্টনার/গাইড থাকার) জন্য অনেক অত্যাচার করেছি। এরই ফলশ্রুতিতে আমি নাইনে থাকতে বাপরে ডাইকা বন্ডে সই করাইসিলাম

    😀 😀 😀

    জবাব দিন
    • এরই ফলশ্রুতিতে আমি নাইনে থাকতে বাপরে ডাইকা বন্ডে সই করাইসিলাম

      Content modification এর জন্য আমি দেশ ও জাতির কাছে রেজওয়ান এর ভ্যান - না, না, থুক্কু, সম্পুর্ন 'পরিবহন পুল' চাই। 😡 x-(

      জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    আমি তো মন হয় না কোন কিছু undo করতাম। বরং কিছু বাকী ছিল, করতে পারি নাই সাহসের অভাবে, বুক ফুলায় ওই গুলা করি ফেলতাম।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।