মোনাজাত উদ্দিনের কথা হয়ত অনেকেই ভুলে গেছেন। মফস্বল সংবাদের অগ্রপথিক এক সাংবাদিক। এখনও হয়ত মাঝে মাঝে তার মৃত্যুবার্ষিকীতে কোন কোন দৈনিক কাগজের ভিতরের কোন এক পৃষ্ঠায় ছোট্ট এক কোনে তার স্মরণে ছোট্ট করে সাংবাদিকতার দায় সারতে কেউ কেউ খবর ছাপিয়ে থাকেন। অনেক ছোট বেলায় তার দুই একটা বই পড়ার দুঃসাহস করেছিলাম, কলেজে থাকতেই। ‘লক্ষ্মীটারি’ তেমনি একটা বই।
ওই বয়সে অনেক কিছুই বুঝতাম না, তাও পড়েছি, তাই অনেক কিছুই আজ ভুলে গেছি। তার উপর আবার গত ৯ বছর ধরে হাটুর উপর দিয়ে অনেক প্রেসার গিয়েছে, কিন্তু এত প্রেসারের মাঝেও হাটুটাকে অক্ষত রাখতে যে কিছুটা মগজের দরকার আছে, অনেক কষ্টে অন্যদের না হউক নিজের প্রয়োজনে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, জানি না কতটুকু পেরেছি। মাফ করবেন ,আমি অহেতুক জটিলতায় যাচ্ছি।তার চেয়ে আসল গল্পে আসি। ওই বইটাতে কয়েকটা লাইন ছিল, হুবুহু মনে নেই, অনেকটা এরকম. …… (আগেই বলেছি ভুলে গেছি, ভুল হলে ক্ষমা করবেন……)
“কুপির শলতে কেরোসিন খাচ্ছে, কুপির আলোকে অন্ধকার খাচ্ছে, ঘরের ফাক দিয়ে আসা ব্যাং পোকামাকড় খাচ্ছে, সেই ব্যাংকে সাপ খাচ্ছে ,সাপ এবং ব্যাং দুইই খাচ্ছে মানুষ, মানুষ মানুষ কে খাচ্ছে, সেই মানুষ পচে গলে যাচ্ছে, ব্যাক্টেরিয়া মানুষকে খাচ্ছে ………………এভাবেই জগন্ময় সবল দুর্বল কে গ্রাস করছে…..এ যেন খাদ্য শৃংখলের মত।”
বস্তুতপক্ষে শাসক/শোষক আর শোষিতের প্রতিকী হিসেবে তিনি তার অন্ধকার ঘরের মাঝেই জাগতিক শোষন এর একটা চিত্রকল্প তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। এরকম একটা লাইনও মনে হয় ছিল “……হত দরিদ্র গরিব মানুষের গল্প বানিয়ে আমি বই লিখে খাচ্ছি, পত্রিকার কাটতি বাড়ছে….যারা না খেয়ে মরার তার না খেয়েই মরছে।”
সত্যিই তো, নইলে আজো এত বছর পর সেই উত্তরবঙ্গের পায়রাবন্দ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারীকে আমরা এখনো মঙ্গাপীড়িত এলাকা হিসেবেই কেন জানি।
কালকে কিছুক্ষনের জন্য আমার ঘরে আলো চলে যাবার পরে, পোকামাকড় আর ইদুর বিড়ালের দৌড় আর গত কয়েক সপ্তাহে দেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি সব মিলিয়ে কেমন যেন একটা আশঙ্কা আর অস্থিরতার কারনেই হয়ত হঠাৎ করে মোনাজাত উদ্দিনের এই কথাগুলো আমার মনে অবচেতনভাবে এসেছে, সচেতন ভাবে কিনা জানি না।
টিভি খুললেই কত কিছু দেখি……’বাংলালিংকে’র দিন বদলানোর গল্প, গ্রামীন ফোনের মুক্তিযুদ্ধের গল্প, প্রিয়জনের কাছে থাকার গল্প, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার অনাগত সন্তানকে মা আর মাতৃভুমির লেখা গল্প, ফুল চুরি করে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধঞ্জলির গল্প…দেখলে মন ভরে যায়, চোখে পানি আসে, চা খেতে খেতে কাজের ফাঁকে সবার সাথে আলোচনা ……জটিল আইডিয়া…। কিন্তু আবার এক সময় মনে হয়, নিজের আবেগ অস্তিত্ব আর ইতিহাস সবই যেন নিলামে উঠছে। কে কার চাইতে বেশি দর তুলতে পারে সেই প্রতিযোগিতা। লজ্জায় আর অপরাধবোধে লীন হয়ে যাই নিজের কাছেই নিজে। প্রশ্ন করি নিজেকেই। আমি কি পেরেছি নিজেকে এইসবের বাইরে রাখতে। আমার ছায়াসঙ্গিনী উত্তর দেয়। না, পারনি।
নিজেরাই নিজেদেরকে নিলামে তুলছি অথচ টেরও পাচ্ছি না কেউ। কেউ কথা দিয়ে, কেউ ছোট্ট একটা ছবি ছাপিয়ে ,কেউ দিন বদলের স্বপ্ন দেখিয়ে, কেউ ব্লগিং করে, কেউ রিসার্চ পেপার তৈরি করে, কেউ প্রহসনের হাসি হেসে, কেউ নিজের দায়ভার অন্যের ঘারে চাপানোর চেষ্টা করে, কেউ নিছক সস্তা প্রচারনার খাতিরে, কেউবা লাবলু ভাইয়ের গল্পের শান্তির মা’কে দিয়ে সালিশ ডেকে, কেউ হত্যাকে উৎসব বানিয়ে, কেউবা সেই উৎসবের লজ্জা ঢাকতে টিভির পর্দায় কিংবা দেশব্যাপী শোক পালন করে, কেউবা ধৈর্য ধারন করে কেউবা তদন্ত বোর্ড গঠন করে, কেউবা সেই বোর্ডের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করে, কেউবা ঘটনা ঘটার তিন দিন পরে হঠাৎ সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে, সরকারকে সহযোগিতা দেবার ঘোষনা দিয়ে, আর আমাদের মত কেউবা নিজের আবেগ আর অনুভূতি নিয়ে ব্লগর ব্লগর করে।
অবশেষে সব একদিন থমকে যায়, দিন যায়, রাত যায়, নিলামের পাল্লা ভারি হতে থাকে। সেই পাল্লায় আমরা নিজেদেরকে তুলে দেই, নিরবে অজান্তে।নিলামের সেই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মনে হয়, অনেক দূর এসে……সেই আগের জায়গায়তেই দাঁড়িয়ে আছি কিংবা অনেক পিছনে।
সেদিন খুব দূরে নয়, নচিকেতার গানের মত……আমার মৃত দেহে ঝুলবে নোটিশ বোর্ড ‘কর্তৃপক্ষ দায়ী না।’ আমার মনে হয় সেই ভালো। নইলে গোটা দেশ যেভাবে নিলামে উঠছে …জন্ম থেকে যেরকম দেখে আসছি, তা যদি চলতেই থাকে তাইলে তো ……আমার লাশও একদিন নিলামে উঠবে…কিন্তু কেনার কেউ কি থাকবে?
আগে সুমনের গানে ভরসা খুজতাম – সন্ধ্যে নেবে লুটে, অনেকটা চেটেপুটে, অন্ধকারের তবু আছে সীমানা , সীমানা পেরুতে চাই জীবনের গান গাই , আশা রাখি পেয়ে যাব বাকি দু আনা । কিংবা কতটা পথ পেরুলে তবে পথিক বলা যায়, কতটা পথ পেরুলে পাখি জিরোবে তার ডানা , কতটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায় , প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তর ওতো জানা
কিন্তু সেই গানও আজ আর মনের খোরাকি দেয় না। হৃদযন্ত্রীতে অনুরনন তুলে না। বাস্তব যেখানে অনেক কর্কশ, রুঢ়, সীমারের চেয়েও পাষান, গান সেখানে হেমলক এর মত মনে হয়, সেই হেমলক পানে মৃত্যু ছাড়া আর কিছু নেই।
১৯৯৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে,জহির রায়হানের ‘সময়ের প্রয়োজনে’ অবলম্বনে বিটিভিতে একটা নাটক প্রচার করা হয়,ওই একই নামে। সেখানে ছোট্ট এক কিশোরের চরিত্রে সামি আনসারী অভিনয় করে…তাকে লেখক জিজ্ঞেস করে……”কেন লড়ছো?” উত্তর দেয়…”ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইল! সে তো ভূগোলের কথা, কিছুই জানি না, শুধুই জানি…সময়ের প্রয়োজনে লড়ছি।” সেই সময় কি এই সময়! ভাগ্যিস সে তরুণ বেচে নেই, তাইলে বুকে মাইন বেধে ভৈরব ব্রিজ নিচে ঝাপিয়ে পড়া সেই তরুন হয়ত আজ গোটা জাতির সামনে প্রকাশ্যে ঝাপিয়ে পড়ত। সময়ের প্রয়োজনে বহিঃশত্রুর সাথে লড়া যায়, কিন্তু সে যদি ঘরের শত্রু বিভীষন হয় ,কিভাবে লড়বেন? রাবনের চিতায় জ্বলে মরা ছাড়া যে আর কোন পরিনাম নেই। এখন কি তাহলে a Wednesday ছবির নাসিরুদ্দিন শাহ এর মত আমাদের সবার a damn bloody common people …………হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই? কেন মেজর কামরুল ইসলামের ‘জনযুদ্ধের গনযোদ্ধা’ সেই তৈয়ব আলি, অহেদ কেরানি, তাগড়া, রমিজ, শমসের এদের সব কিছুই আজ অর্থহীন, গল্প, বিরক্তিকর ইতিহাস?
চেঙ্গিস খা’র একটা উদ্ধৃতি মনে পড়ছে………
“আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে বর্ধিষ্ণূ জনপদের ধ্বংসলীলা , উৎপীড়িত জনগনের প্রবল বিদ্রোহ বা মাতৃভুমির উপর বন্য বর্বর জাতির আক্রমঅনের মত বিরাট ঘটনা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ যদি কেউ পায়, তবে তার উচিত যা কিছু দেখেছে লিখে রাখা। ইতিহাসের ভাষা লিপিবদ্ধ করার নৈপূণ্য যদি তার না থাকে ,লেখনীর ব্যাবহার থাকে অনায়ত্ত্ব, তবে তার উচিত কোন অভিজ্ঞ লিপিকারকারের কাছে সে অভিজ্ঞতা বর্ননা করা। লিপিকার লিখে রেখে পৌত্র-প্রপৌত্রদের শিক্ষার নিমিত্তে তা অক্ষয় করে রাখাবেন”
আমাদের অতীত গৌরবোজ্জ্বল সেই স্বাধীনতার ইতিহাস আমাদের পূর্বসুরীরা হয়ত ঠিকমত আমাদের মাঝে পৌছে দিতে পারেননি, নইলে এত বছর পরেও কেন এত কিছু দেখব, কেন গাইতে হবে- কি দেখার কথা কি দেখছি, কি শোনার কথা কি শুনছি…………
আমাদের অগ্রজদেরতো সু্যোগ ছিল, কিন্তু আমাদেরতো সেই সু্যোগও থাকবে না…কেননা যেই ইতিহাস আমাদের চোখের সামনে রচিত হচ্ছে ,এ কি লিখে রাখার কিংবা বলার মত ইতিহাস……এর চেয়ে তো মনে হয় ধরনী দ্বিধা হও, আমি তোমার ভিতরে প্রবিষ্ট হই……
কিন্তু বীরভোজ্ঞা বসুন্ধরা তো বীর ছাড়া কাউকে ঠাই দিবে না…।
তবে কি নর্দমাই আমার শেষ ঠিকানা?
........কিছু বলার নাই ।
ঐ
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ ভাই,ঐ তে কি?............ঐরাবত অই আসছে তেড়ে......।।হা হা হা
:)) :))
ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন ও তো হতে পারে...
..........
....................................
দোস্ত, কি বলব কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। 🙁 🙁
ভালো থাকিস!
সাইফ ভাই অসম্ভব ভাল লিখসেন....... :boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :boss:
সাইফ, অনেক আশা করেছ তাই হতাশ হচ্ছ। অনেক আশা কেন করেছিলে, এই প্রশ্ন করি? খুব সহজেই সব কিছু পাবার জন্য নাকি? সব কিছু কি সহজে পাওয়া যায়?
একটা জিনিস কি জান, "যা করার আমাকেই করতে হবে, অন্যরা সহায়ক হতে পারে, কিন্তু করতে হবে আমাকে" যতদিন মানুষের মাঝে এই বোধ না আসবে ততদিন অন্যের কাছে আশা আর আশা না পূরনের হতাশার গল্প।
আমরা সবাই শুধু "চাই", কিন্তু "দেই" কয়জন?
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ভাইয়া,আমি আসলে ব্যক্তিগত কোন গ্রিভেন্স থেকে নয়,দেশের সার্বিক অব স্থা চিন্তা করে,এইখানে আমি বলতে ব্যক্তি আমি না,আপামর জন সাধারনের ভয়াবহ পরিনতি আর দুর্ভোগের বিষয়টি ই বলতে চেয়েছি।
সহমত
:thumbup:
নচিকেতার আরেকটা গানের লাইন মনে পড়ছে,
.............
....................
Life is Mad.
সাইফ ভাই
:boss: :boss: :boss:
😕 😕 😕
সহমত
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
..........................................
saif
i am from ccc 3rd intake . forgive me for my inability to type in bangla.
nothing is ever the same anymore for me . But i believe we can pray . and in our own way can make changes .we can reach out to the families .
i dont know what to write actually . just need to let you know people like you inspire me to live .
may god bless
Mahrab
ভাইয়া,অসংখ্য ধন্যবাদ
গত্কালকে লেঃ কঃ সাইফুল ইসলাম এর পরিবার আমাদের বাসায় এসেছিল, আন্টির তিন ছেলে, মেজোটাকে আমি Math পড়াতাম। আমার ছোট বোনের classmate ছিল। MIST তে পড়ছিল, এখন জেদ ধরেছে আর্মি তে যাবে, চোখে আগুন, এত matured হয়ে গেল রাতারাতি! আন্টি বি ডি আর ৈনিকদের মাঝে বিলি করা একটা leaflet দেখালো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সেনাবাহিনীকে গালাগালি করে দাবিদাবা নিয়ে একটা কাগজ। এইটা নাকি লেঃ কঃ সাইফ আঙ্কেলই ঘটনা হওয়ার আগের শুক্রবার আন্টিকে দেয়। আমি বুঝতে পারছিনা এইরকম ঘটনা ঘটার একটা আঁচ পেয়েও management থেকে কেন কোন security measurement নেয়া হলনা, কেন আঙ্কেলরা এ বিষয়টা ignore করলেন? কতযে ক্ষতি হয়ে গেল।
হ্যাঁ, তবুও আশা করতে দ্বিধা করবো না।
খুব ভালো লিখেছেন। লেখার ধার অনুভব করবার মত।