পোস্ট যখন গান নিয়েই….তবে তাই সই…..কলেজের সময়ের গান

ক্যাডেট কলেজের সময়টুকুতে অনেক কিছুর সাথে মনে হয় গানটাও শুনতে শিখেছিলাম। যতদূর মনে পড়ে গান-পাগলামিটা সেভেন-এইট থেকেই শুরু। ঢাকার ছেলে, ঢাকায় থাকি – তাই ঢাকার হাওয়াটাই গায়ে লেগেছিল। বাংলায় সোলস-মাইলস-ফিডব্যাক-চাইম এর সাথে ইংরেজি গানের দিকে যে কখন ঝুঁকে পড়লাম, টেরই পেলাম না।

Wham, A-Ha, Pet Shop Boys, Bee Gees, Madonna, Bob Marley, Sting, Pink Floyd এর পাশাপাশি এক সময় heavy metal শোনা শুরু করলাম। Iron Maiden, Kiss, Dio, AC/DC, Def Leppard, Led Zeppelin, Dokken, Black Sabbath কোন কিছুই বাদ গেল না। কেউ যদি পছন্দের অথবা genre এর প্রশ্ন তোলে, তাহলে আমি বলব আমার (এবং সেই সাথে আমাদের সময়ের অনেকেরই) ছিল এক বিচিত্র পছন্দের রেন্জ। কিভাবে একই ব্যক্তি reggae, metal, psychedelic আর country একই সাথে পছন্দ করে – এই প্রশ্ন আমি এখন নিজেকেই করি – অন্যেরা তো দূরের কথা।

ছুটি থেকে ফিরে গিয়ে প্রথম কয়দিন আলোচনা থাকতো কে কোন গানটা শুনেছি, আর কে কোনটা ‘মারাত্মক মিস’ করেছি। এটা যেন ছিল একটা ক্রেডিট নেবার কম্পিটিশন এর মত। আমার মনে পড়ে তখন ছিল LP আর ক্যাসেট এর যুগ। ছুটিতে আসলে দৌড়ে গিয়ে প্রথমেই খোঁজ করতাম ‘Hits’ বা ‘Now’ লিস্টিং এর কোন LP টা এসেছে। অথবা ব্রিটিশ ‘Top of the Pops’। ব্যাস সাথে সাথেই পছন্দের (অনেক সময় না জেনেই – শুধু ধারণার উপর) গানের লিস্ট করে ক্যাসেট করতে দিয়ে আসতাম। এলিফ্যান্ট রোডের ‘সুর বিচিত্রা’ ‘রিদম’ বা ‘রেইনবো’ আমাদের নাগালের বাইরে ছিল। ওরা একটা ক্যাসেট করতে সময় নিত এক থেকে দেড় মাস। এই বিলাসিতা আমাদের অর্থাৎ ক্যাডেটদের জন্য প্রযোজ্য ছিল না। তাই কলাবাগান বাসস্টান্ডের ‘সিঙ’ ছিল আমার ভরসা। সপ্তাহের মধ্যেই পেয়ে যেতাম নতুন একটা ক্যাসেট।

আরেকটা পাগলামি করতাম গানের লিরিক নিয়ে। ঐ সময় Video Guide নামে একটা ম্যাগাজিন বের হত যার শেষের কয়েকটা পাতায় বেশ কিছু গানের লিরিক দেয়া থাকত। এছাড়াও মাঝে মাঝে বের হত ‘Rock & Rhythm’ নামের আরেকটা ম্যাগাজিন যার পুরোটাই লিরিকে ভর্তি থাকত। ১৫ টাকা দামের এই ম্যাগাজিনগুলো কত যে কিনেছি তার হিসেব নেই।

সে সময়ের যে গানগুলো আমার মনে দাগ কেটেছিল, তার মধ্যে অনেকগুলোই স্মৃতির পাতা থেকে হারিয়ে গেছে। তারপরও হঠাৎ করে যে গানটা মনে পড়ে সেটা লিখি রাখি আর ডাউনলোড করে ফেলি। এভাবে আমি প্রায় হাজারখানেক গান নামিয়ে ফেলেছি। মাঝে মাঝেই এই গানগুলো শুনি। এক একটা গান আমকে নিয়ে যায় এক একটা বিশেষ স্মৃতিতে। এই বিশেষ গানগুলো তাই আমার ছেলেবেলার ডাইরীর পাতার মত। বলা যায় অনেকটা ডিজিটাল পাতা। সযত্নে তাই পাতাগুলোকে লালন করছি ডিভিডিবদ্ধ করে।

৩,৪২৭ বার দেখা হয়েছে

৩৪ টি মন্তব্য : “পোস্ট যখন গান নিয়েই….তবে তাই সই…..কলেজের সময়ের গান”

  1. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    দারুণ। ভীষণ ভালো লাগলো তোমার অভিজ্ঞতা পড়ে। ওই বয়সটা ছিল এমনই। নিজের ছেলের (ক্লাস এইটে পড়ে) আগ্রহের জায়গাগুলো যেভাবে পরিবর্তন হতে দেখি; তখন যেন ওই বয়সের আমাকে তার মধ্যে খুঁজে পাই।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • ওকে ক্যাডেট কলেজে দিয়েছেন নাকি? দিয়ে থাকলে মাঝে মাঝে শুনবেন ওর কথা - ওর গল্পগুলো। আমি যেমন আমার ভাগ্নের কাছ থেকে মাঝে মাঝে শুনতাম....অদ্ভুত আনন্দদায়ক। নিজেকে বারবার ফিরে পাওয়ার মত - ঠিক যেমনটা বলেছেন।

      জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    চয়েজ করে দিলে রেকর্ডিং এর জন্য বেশি টাকা রাখত... :((
    ঐসব দোকানদারের ব্যান চাই... 😡

    কলেজে থাকতে ছুটির দিনে ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে দিয়ে মিনি খেলা...আহা...আহা... :dreamy:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  3. নাজমুল (০২-০৮)

    পোষ্টা পড়ে আবার কলেজ এর কথা মনে পড়ে গেলো।
    ঘুমাতে গেলাম কলেজ এর টয়লেট এর কথা মনে পরে গেলো তাই একটু ছাঁদ থেকে ঘুরে এসে আবার বসলাম 🙁
    লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো :boss:

    জবাব দিন
  4. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    আমাদের সময় ক্রেজ চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল। তখন বাংলা ব্যান্ডের যুগ, প্রায় প্রতিদিন একটা করে ব্যান্ডের জন্ম হত, প্রতি মাসে নতুন নতুন ক্যাসেট বের হত। আমরা ছুটিতে গিয়ে গান শুনতাম আর কলেজে এসে গল্প করতাম।

    আমরা কলেজে ক্যাসেটে গান শুনতে পারতাম না। বিভিন্ন ফাংশানের জন্য মাঝে মাঝে ক্যাসেট নিয়ে আসা হত, হাউস কালচারাল প্রিফেক্টের কাছে থাকত, এর পর আবার নিয়ে যেত। তবে কলেজ অডিটরিয়ামে প্রগ্রামের সময় ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে কাজ করতে পারতাম।

    দূর নষ্টালজিক করার জন্য ইউসুফ ভাইয়ের ভ্যান গাড়ি চাই।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।