ক্যাডেট নম্বর!

যে কোন ক্যাডেটের প্রথম পরিচয় তাঁর ক্যাডেট নাম এবং নম্বর। ক্লাস সেভেনে কলেজে পা দিয়েই কলেজ থেকে পাওয়া এই দুটি জিনিসই যে কোন ক্যাডেটের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে ভাবে মিশে যায়। ক্যাডেট নম্বর টা অনেকটা ব্রান্ড এর মত-ওয়েস্টার্ন আমলে গরু বা ঘোড়ার পিছনে লোহা গরম করে যেমন দেয়া হত! কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্যাডেটদেরকে নম্বর দিয়ে কত সমস্যার সমাধান করেছে তার ইয়ত্তা নেই। অমুক সিনিয়র ক্লাস সেভেনের পাঁচজনকে ডেকেছেন-
কে কে যাবে?
কেন, প্রথম পাঁচ ক্যাডেট নম্বর অথবা শেষ পাঁচ???
এমনিভাবে খাঁকি ড্রেস, কালো জুতা, পিটি সু, বই-খাতা ইত্যাদি নেয়ার সময় অথবা ডাইনিং এ বসা, ডিউটি ক্যাডেটশীপ, এমন কি বোর্ড পরীক্ষার আসন বিন্যাস-সব কিছুই ক্যাডেট নম্বর অনুযায়ী। ক্লাস সেভেনে আমাদের অন্যতম প্রধান কাজ ছিল সব সিনিয়র ভাইএর ক্যাডেট নম্বর মুখস্থ করা। কারণ, ধুপিতে তার কাপড় দেয়ার সময় অথবা ধুপি থেকে আসার পর কোন ভাইএর কোন কাপড় তা বোঝার জন্য অবশ্যই ক্যাডেট নম্বর জানতে হবে। আরও আছে, কোনও সিনিয়র ভাই হয়ত একাডেমিক ব্লকে দেখা করতে বলেছেন, তিনি কোন ফর্মে- এটা জানতে হলেও তার ক্যাডেট নম্বর অবশ্যই জানতে হবে! কেননা সাধারনত জোড়-বেজোড় করেই ফর্ম ভাগ করা হয়ে থাকে…
এমনিভাবে ক্যাডেট নম্বর যে কোন ক্যাডেটের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকগুলোর একটি।

মনে আছে, কলেজে থাকতে যার যার ক্যাডেট নম্বরকে ইউনিক পরিচয় দেবার কত প্রয়াস…!!
-‘জানিস, আমার ক্যাডেট নম্বর আর অমুকের জন্ম সাল এক?’
-‘আমারটায় অমুক যুদ্ধ হয়েছিল’
-‘আমারটায় অমুক মারা গিয়েছিল।’ আরও কত বাহানা…
যাদের নম্বরটি ছিল রাউন্ড ফিগার- যেমন ১৫০০, ১৬০০, ১৭০০…তাদের তো ভাবে মাটিতে পা’ই পড়ত না…
– হোয়াট!!! ‘তুমি আমার ক্যাডেট নম্বর জান না? আমার টা হল…’

কলেজ থেকে বের হবার পরও ক্যাডেট নম্বরের গুরুত্ব কমে না…বিভিন্ন পাসওয়ার্ড এর ক্ষেত্রে ক্যাডেট নম্বরটি যে কারো প্রথম পছন্দ- অন্ততঃ পাসওয়ার্ড এর একটি অংশে হলেও নম্বরটি থাকতে হবে…বিভিন্ন অকেশন- গেট-টুগেদার, বিয়ে, জন্মদিন-এ বন্ধুদেরকে আমন্ত্রণ জানানোর ক্রমটাও কিন্তু ক্যাডেট নম্বর অনুযায়ী…

সিনিয়রদের বেশীরভাগ নম্বর ভুলে গেলেও বন্ধুদের কারও ক্যাডেট নম্বর এখনো ভুলি নি, ভোলা হয়ত সম্ভবও নয়…
আর নিজেরটা??? নিজেরটা যেদিন ভুলে যাব, সেদিন বুঝব মৃত্যুর আর বেশি বাকি নেই…!!!

১,৩৬৭ বার দেখা হয়েছে

২৪ টি মন্তব্য : “ক্যাডেট নম্বর!”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)
    নিজেরটা যেদিন ভুলে যাব, সেদিন বুঝব মৃত্যুর আর বেশি বাকি নেই…

    ভুল কথা।নিজেরটা যেইদিন ভুলবেন সেইদিন আপনে মইরা গেছেন,আজ্রাইল ও ক্যাডেট নাম্বার অনুযায়ী আপনেরে দোজখে থুক্কু বেহেস্তে যাইতে কইব।
    অফ টপিকঃআমার ক্যাডেট নাম্বার আপনের চেয়ে ঠিক ১০০ পরে।হসপিটালে অ্যাডমিট থাকা অবস্থায় এইটা নিয়া অনেক তেলাইছিলাম আপনেরে। 😀

  2. সামিয়া (৯৯-০৫)

    :salute:
    ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হওয়ার পর খুব দুঃখ হয়েছিল, ক্যাডেট নম্বরটার জন্য,মনে আছে শেষ সিগনেচারটা দিসলাম এক মাইল লম্বা একটা নিঃশ্বাস সহ...
    পরে ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে গিয়ে দেখি আপারা ক্যাডেট নম্বর দিয়ে নোট করে... 😀

  3. অর্চি (৯৯-০৫)

    সিনিয়রদের ক্যাডেট নম্বর মুখস্থ করার মত পেইন আর ছিলনা। তার উপর ১ম দিকের ক্যাডেট হবার ঝামেলা! x-(
    কিন্তু এখন ওই ৪ ডিজিটের নাম্বারটার জন্য মন আকুপাকু করে... 🙁

  4. আমার নম্বর ২০০৫।আমার নম্বরের বিশেষত্ব হল,আমাদের ব্যাচ ২০০৫ এ পাস আউট হয়েছে।একমাত্র আমাদের ব্যাচেই কলেজে থাকবার সালগুলোতে ক্যাডেট নম্বরগুলোও কলেজে কলেজ লাইফ পার করেছে।

  5. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    @সামিয়া
    জমাইছ আপু
    বহুত মজা পাইছি এই কমেন্টগুলা পড়ে
    আমার ক্যাডেট নম্বর ১০৪৭ । এরপর কেমনে জানি ৪৭টা আমার সাথে ট্যাগ হয়ে গেছিল বুয়েটের স্টুডেন্ট নম্বরের লাস্ট দুইটা ডিজিট ৪৭। এখানে এসে নতুন ভার্সিটিতে অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়ে গেছে এখন লাস্ট দুই ডিজিত হইল ৪৮।