১৯৮৩ সালের শেষের দিক তখন। জাপান থেকে দেশে ফিরে জোরে সোরে কাজে লেগে গেলাম। প্রিন্টিং প্রেস থেকে ১৬X১৬ ঘরের ব্লাঙ্ক টেমপ্লেট ছাপিয়ে নিলাম। আমার সহকর্মী গ্রাফিস আর্টিষ্ট আশরাফকে লাগিয়ে দিলাম বিভিন্ন অক্ষরের আকার অনুসারে প্রতিটি অক্ষরের জন্যে একটি করে ঘরের গ্রিড পূরণ করতে। দুই টাকা দিয়ে কেনা প্রথম শ্রেনীর পাঠ্য বিদ্যাসাগরের বর্ণমালা বই অনুসরণ করে সব স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জন বর্ণ আমরা মেট্রিক্সে লিপিবদ্ধ করতে লাগলাম।
যেহেতু তখনও আমার লক্ষ্য কম্পুউটারের জন্যে একটা বাংলা ক্যারেকটার জেনারেটর রম তৈরী করা এবং প্রপোরশনাল স্পেসিং-এর ধারনা তখনও দানা বাধেনি – তাই আমি চেষ্টা চালিয়ে গেলাম একটা সম্পূর্ণ অক্ষর তালিকা প্রস্তুত করার জন্যে। এখানে অক্ষর তালিকা বলতে আমি শুধু স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জন বর্ণ এবং যুক্তাক্ষরকে বোঝাচ্ছি না – ঐ সব যুক্তাক্ষরের সাথে স্বরবর্ণের যে সব অক্ষর যুক্ত হতে পারে এবং এক যুক্তাক্ষরের সাথে অন্য এক বা একাধিক যে সব অক্ষর যুক্ত হতে পারে – এ সব যুক্তাক্ষরের সম্পূর্ন তালিকা বুঝাচ্ছি।
যশোরে আমার বাবার একটি প্রিটিং প্রেস ছিল এবং আমি সখ করে সেখানে কম্পোজ করা, মেসিন চালানো, ইত্যাদি শিখেছিলাম। তখন শীশার অক্ষর ব্যবহার হতো কম্পোজ করার জন্যে। কম্পোজ করতে হতো ডান দিক থেকে বাদিকে একটার পর একটা শীশার অক্ষর সাজিয়ে। অক্ষরগুলো উল্টো ভাবে লেখা ছিল, যাতে ছাপাবার পরে সেটা বা দিক থেকে ডান দিকে লেখা দেখা যায় এবং অক্ষরগুলিও ঠিক ভাবে পড়া যায়। এর ফলে উল্টো ভাবে লেখা পড়তে আমি বেশ অভ্যস্ত ছিলাম। অর্থাৎ অক্ষরের স্বরূপ যাই হোক, সহজে পড়তে পারতাম আমি।
এছাড়া ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় বাংলার উপর ভিত্তি করে আমি আমার নিজের ব্যবহারের জন্যে এক ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে ডায়েরী লিখতাম, যাতে অন্যরা কেউ আমার ডায়েরী পড়তে না পারে। এর ফলে আমি বেশ সহজেই যে কোন চিহ্ন ব্যবহার করা বাংলা সহজেই পড়তে পারতাম। আমার এই গুনটা পরে বিশেষ কাজে এসেছে যখন ম্যাকের সম্পূর্ণ অপারেটিং সিসটেম বাংলায় রূপান্তরিত করেছি। অন্য কাউকে দেখানোর আগে আমার এই কাজটি অ্যাপেল কম্পুউটারকে জানিয়েছি এবং তারা বাংলায় রূপান্তরিত সিসটেম দেখে আপত্তি তো করেইনি, বরং উৎসাহিত করেছে আমাকে। যা হোক এটা হচ্ছে পরের ঘটনা।
প্রিটিং প্রেসে বাংলা অক্ষরের সংখ্যা ছিল অনেক – চার কেস ভর্তি। তবে আমার ছোটবেলার প্রিটিং প্রেসের এই অভিজ্ঞতা থেকে সহজে বের করতে পারলাম না বাংলা ক্যারেকটার জেনারেটর রম-এ মোট কতটা অক্ষরের স্থান রাখতে হবে। ভাবলাম বাংলা একাডেমীতে গেলে নিশ্চয় খুব সহজে এ খবরটা পাবো। প্রচন্ড শক পেলাম যখন জানলাম আসলেই কেউ সঠিক ভাবে বলতে পারছেন না এই সংখ্যাটি কত হবে। ব্যাপারটি একটু বুঝিয়ে বলি। বাংলা যুক্তাক্ষরের সংখ্যা বলতে আমি মূল অক্ষরের সাথে অন্য অক্ষরের সংযোগ, তা স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণ যেটাই হোক না কেন, – সেটাকে বোঝাচ্ছি। কিন্তু কেউই সঠিক করে বলতে পারলেন না যে এভাবে সৃষ্ট অক্ষরের মোট সংখ্যা কত হবে। যেহেতু প্রতিটি যুক্তাক্ষর কম্পুউটারের স্মৃতিতে বেশ খানিকটা জায়গা দখল করবে, তাই যে যুক্তাক্ষরগুলি লেখা যায় অথচ বাংলা ভাষায় ব্যবহার হয়না, সেগুলির জন্যে কোন স্থান রাখার প্রয়োজন নেই। যেমন ‘ক্মি’ ও ‘ক্মী’ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে (তাও বেশ অপ্রচলিত শব্দে), কিন্তু ‘ক্মৌ’ বা ‘ক্মৃ’ ব্যবহারকারী কোন শব্দ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঢাকার বাংলা একাডেমী থেকে শুরু করে, ও অন্য সব প্রতিষ্টানে অনেক খোঁজ করেও, যখন প্রচলিত যুক্তাক্ষরের কোন সঠিক তালিকা পেলাম না, তখন বাধ্য হয়ে নিজেরা একটা তালিকা প্রস্তুত করা শুরু করলাম। এই পরিশ্রমে আমার একটি বিশেষ লাভ হলো যে অনেক নতুন বাংলা শব্দ শিখলাম।
এ ব্যাপারে বেক্সিমকোতে আমার সহকর্মী আমিনুল হককে কাজে লাগিয়ে দিলাম। একটা মোটা রেজিট্রি খাতাতে আমরা বাংলা অক্ষরের তালিকা লিপিবদ্ধ করতে থাকলাম। প্রায় ৭০০ অক্ষরের তালিকা হয়ে গেল। এর পর দেখি নতুন অক্ষর সহজে খুঁজে পাচ্ছি না। ঘোষনা করে দিলাম আমাদের তালিকার বাইরে বিদ্যমান কোন নতুন যুক্তাক্ষরের খোঁজ দিতে পারলে ১০ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। আরও নতুন কিছু যুক্তাক্ষরের খোজ পেলাম এভাবে। তারপর পুরস্কারের অঙ্ক বাড়িয়ে ২০ টাকা করলাম। এভাবে শেষ পর্যন্ত প্রায় ১২০০ যুক্তাক্ষরের তালিকা প্রস্তুত হল। এই তালিকা অনুযায়ী স্বরবর্ণ, ব্যাঞ্জনবর্ণ, যুক্তাক্ষরগুলি ও স্বর-চিহ্ন গুলি প্লট করা শুরু করলো আশরাফ। তার বন্ধু রশীদ এবং আলমের সহযোগিতা পেয়েছিল সে এই কাজে। তারা সবাই আর্ট কলেজের ছাত্র ছিল এক সময়।
.
প্রথমে আমার ইচ্ছা ছিল বাংলা টাইপ রাইটারকে ভিত্তি হিসাবে দাঁড় করিয়ে বাংলা কম্পুউটারের কী-বোর্ড তৈরী করবো। কিন্তু অচিরেই অনুধাবন করলাম সেটা করলে বোকামী করা হবে। যন্ত্রের সীমাবদ্ধতার কারনে ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু টাইপ-রাইটারে করা সম্ভব হয় না, যেগুলি সহজেই কম্পুউটারে করা সম্ভব। কী-বোর্ডে কোন অক্ষর কোথায় বসবে তা নির্ভর করা উচিত কোন অক্ষর কি পরিমান ব্যবহার হয় তার উপর। প্রিন্টিং প্রেসের অক্ষর বিন্যসে দেখেছিলাম যে সব চাইতে বহুল ব্যবহৃত ‘ া’ , ‘ে’, ‘ি’ ইত্যাদি হাতের সামনের নীচের কেসের ঠিক মধ্যস্থানে রাখা হয়েছে। এছাড়াও কোনটা কোনটা যুক্তাক্ষর হবে এবং তাদের বিন্যাসের উপরও নির্ভর করবে কী-বোর্ডে বিভিন্ন অক্ষরের অবস্থান। তখনও কিছু কিছু সংবাদ পত্রে ( যেমন ইত্তেফাক) এবং বিভিন্ন ছাপানো বইতে সাধু ভাষা ব্যবহার করা হতো। সাধু ভাষা থেকে সরে যেয়ে চলিত ভাষা ব্যবহার করলে যে অক্ষর বিন্যাসে কিছুটা পরিবর্তন করতে হবে না – তাতেও খুব একটা নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। এছাড়া আমাদের বাংলা ভাষায় অনেক তৎসম ও তদ্ভব শব্দ ব্যবহার চলে আসছে রবীনদ্রনাথের সময়ের আগে থেকে। পরে পাকিস্তানী সময়ে চেষ্টা চলেছিল ঐ সব শব্দ কম ব্যবহার করা এবং অধিক সংখ্যায় আরবী ও ফারসী শব্দ বাংলাতে ব্যবহার করা। সুতরাং আমরা কোন দিকে যাচ্ছি তার উপরও কিছুটা নির্ভর করবে কোন কোন অক্ষর বেশী ব্যবহার হবে। তাই নতুন করে একটা সমীক্ষা চালালাম বাংলা অক্ষরের ব্যবহারের হিসাব নিতে। বিভিন্ন প্রকারের নমুনা লেখা – যেমন খবরের কাগজের খবর, টেন্ডার নোটিশ, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, অফিসের চিঠি, ব্যাক্তিগত চিঠি, পাঠ্য বইয়ের পৃষ্ঠা, ইত্যাদি থেকে কোন অক্ষর কতবার ব্যবহৃত হয়েছে তার একটা গড় হিসাব নেওয়া হল।
অক্ষরের ব্যবহারের উপর ফ্রিকোয়েন্সি এনালাইসিস করে যে জিনিসটা নজরে এলো সেটা হচ্ছে বাংলাতে সব চাইতে বেশী ব্যবহৃত প্রথম ২৪টি অক্ষর হচ্ছে নিচের তালিকা মত ব্যবহারের শতকরা হিসাবে :
অনেক চিন্তা করে নতুন আকারের বড় করে বাংলা কী-বোর্ড [যেমন জাপানীরা ব্যবহার করতো, বা বাংলা টাইপ-সেটিং মেসিন লাইনো-টাইপে বা মনো-টাইপে ব্যবহার করা হতো] বানাবার চাইতে প্রচলিত ইংরেজী কী-বোর্ডকে বাংলা কী-বোর্ডে রূপান্তরিত করাই বেশী যুক্তিযুক্ত মনে হলো। বাংলা বর্ণমালায় মূল অক্ষরের সংখ্যা ৪৮ টি। এর মধ্যে ব্যঞ্জনবর্ণে ৩৬টি (বা ৪০টি) অক্ষর এবং স্বরবর্ণে ১২টি (অথবা ১১ টি)। সুতরাং কী-বোর্ডের একটি কী দিয়ে যদি দু’টি অক্ষর প্রকাশ করা যায় তা হলে ইংরেজী কী-বোর্ডের অক্ষরের ২৬টি কীর মধ্যে মাত্র ২৪টি কী ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বাংলা বর্ণমালা প্রকাশ করা সম্ভব।
আমার প্রথম প্রচেষ্টা এভাবেই ছিল। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো যে যুক্তাক্ষর তৈরীর কাজটি কম্পুউটার নিজে থেকে করতো। এর ফলে ‘স্ত্রী’ লিখতে হলে আমি পরপর ‘স’ ‘ত’ ‘র’ ও ‘ঈ’ অক্ষরের কী-তে চাপ দিতাম এবং এরপর একবার ‘খালি ঘরে’ (স্পেস বার) চাপ দিতাম। খালি ঘরে চাপ দেবার অর্থ কম্পুউটারকে জানানো যে, যে ক’টা অক্ষরের কী-তে চাপ দিয়েছি সেগুলি দিয়ে একটা যুক্তাক্ষর বানাও। এ রকম একটা ব্যবস্থা না রাখলে কম্পুউটারের পক্ষে বোঝা সম্ভব না যে আমি ‘ক’ ও ‘ই’ চেপে ‘কই’ না ‘কি’ লিখতে চাচ্ছি। আপাতঃ দৃষ্টিতে এই ব্যবস্থাটা খুব কার্যকর মনে হলেও এর দু’টি প্রধান অসুবিধার জন্যে শেষ পর্যন্ত এই পদ্ধতিকে বাদ দিতে হলো। প্রথম অসুবিধা হল অতি অধিক সংখ্যক বার খালি ঘরে চাপ দেওয়া। আমরা সাধারণত টাইপ রাইটার বা ইংরেজী কম্পুউটার ব্যবহার করার সময় প্রতি শব্দের শেষে একবার করে খালি ঘরে চাপ দেই। অথচ এখানে প্রতি অক্ষর বা যুক্তাক্ষরের পর একবার করে খালি ঘরে চাপ দিতে হচ্ছে। যুক্তাক্ষর বানাবার পরে খালি ঘরে চাপ দিতে অতটা খারাপ লাগে না, তবে যুক্তাক্ষরহীন অক্ষরের পর বারবার খালি ঘরে চাপ দিতে বিরক্তি এসে যায় এবং ভুল করার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
এই সমস্যা এড়িয়ে যেতে আর একটা পদ্ধতি চেষ্টা করেছিলাম। সেটা হচেছ যুক্তাক্ষরহীন অক্ষর সাধারণ ভাবে, অর্থাৎ খালি ঘরে চাপ ছাড়া, টাইপ করলেই হবে ; শুধু যুক্তাক্ষরের বেলায় – যুক্তাক্ষর শুরু করার আগে একটা এবং যুক্তাক্ষর গঠন করার পরে আর একটা বিশেষ কী চাপতে হবে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে যেয়ে দেখা গেল যে খুব মনযোগ দিয়ে টাইপ না করলে এতে প্রায় ভুল হচ্ছে এবং ফলে এর গতি খুবই শ্লথ।
তখনকার দিনের কম্পুউটারে প্রসেসিং স্পিড এবং মেমরী স্পেস দু’টিই এখনকার দিনের তুলনায় অনেক কম ছিল। ফলে কম্পুউটারে ব্যবহার করতে যেয়ে দেখা গেল যে সামান্য কয়েক শত অক্ষরের পর কম্পুউটারের গতি শ্লথ হয়ে আসছে এবং তার স্মৃতিতে স্থান সংকুলান হয়ে দাড়াচ্ছে একটা বড় সমস্যা। আরও দ্রুত গতির এবং অধিক শক্তিশালী কম্পুউটার সহজলভ্য ক্রয় সীমার আওতায় না আসা পর্যন্ত এই পদ্ধতি ব্যবহার আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এই সব কারনে, যদিও আমি এটাকে একটি ইন্টেলিজেন্ট পদ্ধতি হিসাবে গন্য করেছিলাম – শেষ পর্যন্ত তখনকার কাজের জন্যে বাদ দিতে বাধ্য হলাম।
আমি যদিও তখন বেক্সিমকো প্রজেক্টস ডিভিশনের প্রধান – তবে কম্পুউটারে বাংলার কাজ গুলি হচ্ছিল অনেকটা আন-অফিসিয়ালি। আমার বড় কাজ গুলির মধ্যে অনেকগুলি প্রজেক্ট কৃতকার্য হতে পারেনি। যেমন ইষ্ট-ওয়েষ্ট ইন্টার-কানেকটার প্রজেক্ট, চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা, চট্টগ্রাম বন্দরে ক্রেইন স্থাপন, ইত্যাদি। আবার অনেকগুলি কৃতকার্য হয়েছিল যেমন – সি,এন,জি পাইলট প্রজেক্ট, বাখরাবাদ-চট্টগ্রাম গ্যাস পাইপ লাইন, বি, এ, ডি, সি-র গভীর নলকূপের জন্যে ড্রিলিং রিগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকশালের জন্যে টাকা ছাপাবার মেসিন, দেশের সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ফ্রিজিং প্লান্ট, ইত্যাদি। এছাড়াও প্রথম বারের মত বাংলাদেশ থেকে টেলিফোন কেবল, ইলেকট্রিক কেবল, পারটেক্সট বোর্ড , এমনকি ২০০০ টন আলু বিদেশে রপ্তানিতে আমার বিশেষ ভূমিকা ছিল। ফলে আপাতঃ সম্ভব বা অসম্ভব সব ধরনের কাজেই আমি হাত দিতে অনেকটা স্বাধীনতা ভোগ করতাম।
৮০-র দশকের প্রথম দিকে যখন মধ্য-প্রাচ্যের বয়কটের কারনে তেলের দাম বিশ্বব্যাপি বেড়ে গেল – তখন আমাদের জন্যে একটা অভাবিত সুযোগ এসে দেখা দিল। ঠিক হল দক্ষিণ কোরিয়া থেকে একটি সম্পূর্ণ চালু মিথানল প্লান্ট আমরা খুলে এনে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে স্থাপন করবো। এটির ফিড ষ্টক আগে ছিল ন্যাপথা, প্যাট্ট্রোলিয়াম জাতীয় দ্রব্য, তার বদলে আমরা প্রকৃতিক গ্যাস দিয়ে চালাবো যাতে উৎপাদন খরচ কমের মধ্যে থাকে। যা উৎপাদন হবে তার সবটাই কোরিয়া কিনে নেবে। তখনকার বাংলাদেশের জন্যে যতেষ্ট ভাল প্রজেক্ট ছিল এটি। প্রজেক্টের ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে আমি গেলাম দক্ষিণ কোরিয়ার পুসানে, খতিয়ে দেখতে প্লান্ট স্থানান্তরের সময় কি কি করতে হবে, ইত্যাদি।
কোরিয়দের সাথে তাদের প্লান্টের গেষ্ট রুমে বসে খাচ্ছি, তখন আমার চোখ পড়লো দেওয়ালে টাঙ্গানো একটা কোরিয় ভাষায় লেখার প্রতি। প্রোজেক্ট ম্যানেজারকে জিগাসা করলাম লেখাটার মানে কি? অবাক হলাম যখন দেখলাম মানে তো দূরে থাক, লেখাটা পড়তেই পারছে না সে। সে আরও দু’জন কোরিয় স্টাফকে জিজ্ঞাসা করলো – কিন্তু কেউই সঠিক ভাবে সবগুলি অক্ষর পড়তে পারল না। কোরিয় ভাষার নাম, হিংগুল। কিন্তু জাপানী ভাষার মতই এরাও অনেক চীনা কাঞ্জি অক্ষর তাদের ভাষায় ব্যবহার করে। মোট কাঞ্জি অক্ষরের সংখ্যা ৫০০০ থেকে ১০০,০০০ – তাই সবার পক্ষে সব অক্ষর জানা বা পড়তে পারা সম্ভব না। বিশেষ করে যে অক্ষরগুলি অপ্রচলিত, সে গুলি অনেকেই পড়তে পারে না। প্রাচ্যের ভাষার ব্যাপারে নব্য জ্ঞান লাভ করলাম।
ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে কাজ করার জন্যে লন্ডনে স্থানান্তরিত হলাম আমি। ঠিক হল অন্তত এক বছর বিলাতে থাকবো। ওয়ার্ক পারমিটও সেভাবে করা হয়েছিল। আমার পরিবারও আমার সাথে বিলাতে গেল। আমাদের বিলাতে যাবার আর একটা বড় কারণ ছিল আমার এক মাত্র ছেলের জন্মের সময় ক্লিনিকের ডাক্তারের অবহেলার কারনে সে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। আমি চাচ্ছিলাম যে কিছুদিন বিলাতে থেকে দেখতে, তার কিছু উন্নতি করা সম্ভব কিনা। লন্ডনে পৌছালাম ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি। উত্তর লন্ডনের এক মধ্যবিত্ব এলাকায় দু’তলা একটা সেমি-ডিটাচড বাসা ভাড়া করলাম আমরা। ছেলেকে একটা স্পেশাল স্কুলে দিলাম।
(চলবে … )
প্রথম।যাই এবার পড়ি।
ভাইয়া, আমার পরীক্ষা চলতেছে। সবকিছু বাদ দিয়ে পড়াশুনা করতেছিলাম। তবু যখন সিসিবি তে ঢুকে আপনার লেখা দেখলাম, তখন পুরোটা একটানে না পড়ে থাকতে পারলাম না। সত্যি অসাধারন লাগছে।পরের পবের অপেক্ষায় থাকলাম।
পরীক্ষা শেষ হবে কবে? পরের পর্ব না হয় দেরীতে পোষ্ট করবো। শুভেচ্ছা রইলো।
ধন্যবাদ ভাইয়া। পরীক্ষা শেষ, আগামী বুধবার এর জন্য অপেক্ষা করছি।
দ্বিতীয় ।
আপনার লেখা পরে বাংলা বর্ণমালা সংক্রান্ত অনেক তথ্য জানতে পেরেছি ।আপনি না লিখলে হয়ত এগুলো জানা হতো না ।আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
মেলিতা, কচুপাতা, মাসরুফ, তৌফিক, জুনায়েদ, তাসনীম, বর্ষা, স্বপ্নচারী, রনি, রবিন, ফায়সল, তাইফুর, মান্নান, তানভীর, সায়েদ, টুম্পা, রায়হান, রেশাদ, লাবলু, মান্না, শান্তা, ডোনাল্ড ডাক, শহীদুল, আব্দুল্লাহ্, কামরুল, দিহান, মেহবুবা, ফয়েজ, রকিবুল, কাইয়ূম, মাহমুদ, মামুন, সামিয়া ও সবাই,
সময়াভাবে এক সাথে সবাইকে লিখছি। প্রথমে সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আগের পর্বটি পড়ার জন্যে এবং কষ্ট করে মন্তব্যগুলি লেখার জন্যে।
আমার মা ইংরেজী পড়তে পারতেন না, এবং আমার বাংলা হাতের লেখা এতই খারাপ ছিলো যে অন্যরা দূরে থাক, আমি নিজেও আমার লেখা অনেক সময় পড়তে পারতাম না। ফলে ২৫শে জানুয়ারী (আমার জন্মদিন), ১৯৮৫ তারিখে কম্পুউটারে বাংলায় লেখা চিঠিটা মা বহু যত্নে অনেকদিন তার সংগ্রহে রেখেছিলেন।
আপাততঃ চেষ্টা করবো প্রতি বুধবারে একটি করে পর্ব পোষ্ট করতে যতক্ষণ না শেষ হয়। আমেরিকান জীবনে - ফুলটাইম চাকরী বজায় রেখে এবং প্রতিবন্ধী সন্তানের কেয়ারের পর এর চাইতে তাড়াতাড়ি পোষ্ট করা বোধ হয় সম্ভব হবে না। সচলের পোষ্টিংয়ের চাইতে এই ব্লগে লেখাটা বিস্তারিত করার চেষ্টা করবো এবং ব্যক্তিগত ঘটনার প্রকাশ বেশী হবে বলে আশা রাখি।
সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছান্তে,
সাইফ ভাই
:salute:
ভাইয়া,
আগের পর্বের মত এটাও পড়ে ফেললাম। ভালো লেগেছে, কিন্তু একটু কম বুঝছি (আর্টস পার্টি ত, তাই 🙂 )
অফ টপিকঃ সিসিবিতে মাহমুদ কিন্তু অনেক, কম করে ৪ জন।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ চারজন হইলেও প্রত্যেকের আলাদা নাম আছে।এই যেমন আপনার কোডনেম ফুকো মাহমুদ :-B
অফ টপিক- :frontroll: :frontroll:
সাইফ ভাই, আপনার ছবিটা ১৯৮৪ সালে আমার জন্মেরও কয়েক মাস আগে তোলা-ভাবতেই কেমন জানি লাগছে! এত ব্যস্ততার মাঝেও সিসিবিতে লেখা দেবার জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
শহিদলিপির মাধ্যমে একজন উদ্ভাবক, পেশা জীবনের বিভিন্ন বর্ননায় একজন উদ্যোগী পেশাজীবি এবং এই মন্তব্য একজন হার না মানা মানুষের পরিচয় পে্লাম। বুঝতে পারছি অনেক কষ্ঠ করে সময় বের করে লিখছেন। কিন্তু একবার লেখা হয়ে গেলে সেটা তো থেকে গেল। বাংলা ভাষার সমৃদ্ধ ইতিহাসের কারণে এই ভাষা নিয়ে গবেষণা হতে থাকবে - সেই সাথে শহিদলিপির কথাও উল্লেখ হবে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
মনে মনে একটু অভিমান করেছিলাম...কিন্তু এই মন্তব্য পড়ে মনটা ভাল হয়ে গেছে... 😀
সাইফ ভাই, প্রাউড অব ইউ... :salute:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
কেন জানি মনে হচ্ছে রোমাঞ্চকর কোন থ্রিলার পড়ছি…পরের পর্বের প্রতীক্ষায় রইলাম…
:boss: :boss:
কপিপেস্ট করিস কেন? x-(
ভাই, মানুষের জন্মগত স্বভাব কি আর বদলানো যায়, নাজমুলের জন্মের পর থেকেই স্বভাব কপি-পেষ্ট করার, কি করা বলেন =))
x-( x-(
সাইফুদ্দাহার ভাই, আপনার কাছে অনুরোধ থাকবে আপনি একটা থ্রিলার টাইপের গল্প লেখার কথা মাথায় রাখবেন। আপনার মুক্তিযুদ্ধের লেখাটার কথা বাদ দিলাম, কারন মুক্তিযুদ্ধের লেখা পড়তে সেরকম থ্রিল আসা স্বাভাবিক। সাধারনত কোনো টেকনোলজি কিভাবে ডেভেলপড হলো এইটা খুব ইন্টেরেস্টিং গল্প হয়না। কিন্তু আপনার এই সিরিজটা জাস্ট থ্রিলার গল্পের মতন লাগছে।
টেকনোলজির ইতিহাস লিখতে গিয়ে সেটাকেও যে রহস্যগল্পের মত রোমাঞ্চকর করা যায়-না পড়লে বিশ্বাসই করতাম না!
আসলে খেয়াল করে দেখো, রহস্য গল্পগুলোতে যেমন কিছু কিছু কাহিনী গোপন করা হচ্ছে বলে বোঝা যায়, সাইফুদ্দাহার ভাই কিন্তু তেমন কিছু করছেন না। জাস্ট বর্ননাভঙ্গির কারনে থ্রিলটা আসছে।
Cell phn theke korchi tai eng comment er jonno sorry.this is first time from cell. Usually i love to do it( definately in bangla) from my pc.kintu saif vai apnar post a kichu bolar(eto small font kosto kore pora) lov samlate parlamna.ei j amra banglay likhte pari tar jonno amra sobai apnar kache rini.eto bestotar majhe eto sundor blog kemne likhen! :boss:
সাইফুদ্দাহার ভাই, দারুণ লাগছে টেকি লেখা পড়তে। ইশ এমন এক্সাইটিং একটা জায়গায় থামলেন, পরের পর্ব না আসা পর্যন্ত তো শান্তি হবে না!
ভাই চালায় যান ইতিহাস। বাংলা ভাষার ইতিহাস। :salute:
আছি দৌড়ের উপরে, তবুও আপনার পোস্টে একনজর না বুলিয়ে পারলাম না 😀
"ফ" এর ফ্রিকোয়েন্সি দেখলাম লিস্টে নাই, এত বিখ্যাত একটা অক্ষর, তার এই দুরবস্থা, নাহ, দুনিয়াতে ইন্সাফ নাই 🙁
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ভাইয়া, টেকি কাহিনি সাথে স্মৃতিচারন মিলিয়ে আপনার এই লেখা দূর্দান্ত একটা থ্রিলারে পরিণত হয়েছে, অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাথে এ ইতিহাস শেয়ার করার জন্য।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
এই সিরিজটা মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়ছি ভাইয়া।
অক্ষরের ফ্রিকোয়েন্সীতে দেখলাম 'ত' বেশ উপরের দিকে, দেখেই মনটা ভালো হয়ে গেল। 🙂
আপনার প্রজেক্টের নামগুলা দেখে অবাক হলাম, কাজ করে যাওয়ার এবং লেগে থাকার ক্ষমতা না থাকলে এতগুলা কাজ করে যাওয়া সম্ভব না। আপনাকে :salute: ভাইয়া।
আপনার ছেলে এখন কেমন আছে ভাইয়া?
তানভীর ভাই,
অক্ষরের ফ্রিকোয়েন্সীতে 'র' কিন্তু 'ত' এর উপরে। :grr:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
অসাধারণ একটা সিরিজ! কিছু কিছু মানুষের কাজের দিকে খেয়াল করলে মনে হয়, এতো কিছু এক জীবনে সম্ভব! এর কিয়দংশ করতেও তো আমার পুরা তিনটা জীবন লাগবে।
সিরিজ চলুক।
অসাধারণ লাগল ভাইয়া।
এত মনযোগ দিয়ে আগে কখনো টেকী পোষ্ট পড়া হয় নাই।
আগামী বুধবারের জন্য অপেক্ষা করছি।
অবাক লাগে সাইফ ভাই, আজ থেকে দুই যুগেরও বেশি সময় আগে আপনি নিজের মায়ের ভাষাকে কম্পিউটারে আনতে এতোসব ভেবেছেন! আমি নন টেকি মানুষ। প্রযুক্তির ব্যবহারের সব আনন্দ কতো সহজে উপভোগ করি। অথচ এর পেছনের কাজটা যে কতো কঠিন ছিল, ভাবতেই মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা। আপনার জন্য আবারো টুপি খোলা অভিবাদন।
মাঝে মাঝে ভাবি, অনেক আগে আপনাকে যখন সামনা-সামনি দেখেছি, তখন এর কিছুই জানতাম না। আর আজ যখন জানি, তখন চাইলেও আপনাকে সহজে সামনে পাচ্ছি না।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ে যাচ্ছি। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করা বেশ দুঃসাধ্য হয়ে যাচ্ছে ভাইয়া।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
মুগ্ধতায় কথা হারিয়ে ফেলছি।
অভিবাদন গ্রহণ করুন :salute: :salute: :hatsoff: :hatsoff:
Life is Mad.
ভাইয়া কি বলবো ভাষা খুজে পাচ্ছি না। অসাধারণ। উপরে রায়হানের কথার সাথে একমত। অধীর আগ্রহে পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি। :boss: :salute:
শহীদ ভাই,আমাদের ভাতিজা কেমন আছে?কি অবস্থা এখন।
ভীষন ব্যস্ততার মধ্যেও আপনার এই সিরিজটা পড়া সংবরন করা গেল না।
অনেক অনেক দারুণ।
চলুক ভাইয়া।
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
দারূণ লাগছে ভাইয়া......আগামী বুধবারের জন্য অপেক্ষা করছি।
ভাইয়া আপনার লেখা পড়ে অনুপ্রানিত হচ্ছি খুব। :salute:
বুধবারের অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া।
ভাইয়া আমাদের ভাতিজা এখন কেমন আছে? কি করছে সে?