এড হকিন্স এর লেখা Bookie Gambler Fixer Spy বইটির দুইটি অধ্যায় আমার পরিচিত ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য অনুবাদ শুরু করেছি। ঠিক অনুবাদ নয়, ভাবানুবাদ। আকারে বেশি বড় হয়ে যাবার কারণে কিছু অনুচ্ছেদ আমি বাদ দিয়েছি।
যাই হোক, আজ সেটার তৃতীয় কিস্তি শেয়ার করছি। মনে রাখবেন স্পয়লার এলার্ট কিন্তু আগেই দিয়ে রাখছি। নিজ দায়িত্বে পড়বেন। কারণ ‘It will change the way you look at cricket!’
———–
———–
যা বলছিলাম, উভয় পক্ষের উইন-উইন নিশ্চিত হবার পর ওরা আমাকে তথ্য দেয়া শুরু করল। ঘটনাক্রমে ২০১১ বিশ্বকাপ তখন একেবারে দ্বারপ্রান্তে, যার আয়োজন করেছিল সম্মিলিতভাবে ভারত, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা। রীতি অনুযায়ী টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আইসিসি থেকে ঘটা করে সাংবাদিক সম্মেলন করার মাধ্যমে একটি সুন্দর, স্বচ্ছ, দুর্নীতি মুক্ত বিশ্বকাপ উপহার দেয়ার অঙ্গীকার করা হল। আইসিসি’র প্রধান নির্বাহী হারুন লরগাত জানালেন তিনি ‘আত্মবিশ্বাসী’ যে আসন্ন বিশ্বকাপে কোন ঝামেলা হবে না। কেননা,পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের দুর্নীতির কেচ্ছা ফাঁস হবার পর আইসিসি সব সমূলে উৎপাটন করে দিয়েছে।
‘আমি দু’টো কারণে আত্মবিশ্বাসী’, লরগাত বললেন। ‘প্রথম কারণ হচ্ছে খেলোয়াড়দের বেশিরভাগই সৎ। তারা ক্রিকেটের সত্যিকারের আদর্শকে ধারণ করে। খেলাকে ভালবেসে খেলে, অসুদপায় অবলম্বন করে বাড়তি টাকা রোজগারের আশায় নয়।‘
‘দ্বিতীয় কারণ, আমরা সকল প্রকার দুর্নীতি থেকে ক্রিকেটকে বাঁচাবার জন্য দিন-রাত কাজ করে চলেছি। নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। অনেকেই জানে না আমরা পাকিস্তানিদের স্পট ফিক্সিং এর ঘ টনাটিকে নিউজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ফাঁস করার অনেক আগে থেকেই তদন্ত করছিলাম। বিশ্বকাপ ঘিরে আমাদের প্রস্তুতির ব্যাপারে আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। নজরদারি আগের চেয়ে অনেকগুণে বাড়ানো হয়েছে।‘
সাংবাদিক সম্মেলনের পর তিনি বিশ্বকাপে অংশ নেয়া সকল দলের অধিনায়কের সাথে কথা বলেন। এক পর্যায়ে দুর্নীতি দমনে আইসিসির পদক্ষেপসমূহ সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাইলে তিনি কোন প্রকার ভণিতা না করে স্বীকার করতে বাধ্য হন যে ‘আমাদের দুর্নীতি রোধ করার মত ক্ষমতা বা লোকবল নেই। এটি প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার!
আসলেই সেবারের টুর্নামেন্টটি ছিল ফিক্সারদের স্বপ্নের বিশ্বকাপ! একপেশে ম্যাচের আধিক্য, লম্বা টুর্নামেন্ট-স্পট ফিক্সিং করার জন্য একেবারে আদর্শ পরিবেশ! ম্যাচের ফলাফল ফিক্স করা না হলেও খেলার সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় ফিক্স করা ছিল অত্যন্ত সহজ। এসোসিয়েট সদস্য বেশি থাকার কারণে বড় দলগুলোকে হাত করা খুব সহজ ছিল, কেননা তারা জানত মিনোজদের বিরুদ্ধে খেলা ম্যাচগুলোয় তারা আরামসে জিতবে। একইভাবে টুর্নামেন্টের ফরম্যাটও বড় দলগুলোর পক্ষে ছিল। এর অকাট্য প্রমাণ ইংল্যান্ড। আয়ারল্যান্ড ও বাংলাদেশের কাছে হারার পরও তারা ঠিকই পরের রাউন্ডে উন্নীত হতে সক্ষম হয়।
পার্থিব এবং বিনয় পুরোপুরি নিশ্চিত ছিল বিশ্বকাপে ফিক্সিং এর ঘটনা ঘটবে। ‘হয় স্পট ফিক্সিং হবে অথবা ফ্যান্সি ফিক্সিং’, বিনয় বলেছিল। ‘মাঝে মাঝে আমরা আগে থেকেই এসব ব্যাপারে খবর পাই। অন্যান্য সময় ম্যাচের গতিপথ দেখে বুঝতে পারি, বিশেষ করে যখন ব্যাটসম্যান গ্লাভস বদলায় অথবা দ্বাদশ খেলোয়াড় অন্য কোন কারণে মাঠে প্রবেশ করে। ওটাই ফিক্সিং এর সিগন্যাল।‘
‘আসলে এসব সবসময়ই হচ্ছে। আমরা এখন এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। গত বছরের একটি ম্যাচের কথা বলতে পারি কারণ সেদিন ফিক্সিং এর ব্যাপারটি একেবারে দিনের আলোর মত পরিষ্কার ছিল। আমাদের ফোন করে জানানো হল যে খেলার ১৫ তম ওভারে টানা ৩টি ওয়াইড বল হবে। এবং হয়েছিলও তাই!’
পার্থিবও বিনয়ের সাথে সহমত প্রকাশ করল। শুধু তাই নয় প্রমাণ স্বরূপ সে ‘বিগ জি’ নামক এক লোকের সাথে আমাকে আলাপ করিয়ে দিল। বিগ জি ছিল পার্থিবের বস, মুম্বাই-ভিত্তিক একজন বুকি। পার্থিব এর শুরুটা হয়েছিল তার হাত ধরেই এবং সে সেসময় বিগ জি’র প্রতিনিধি হয়ে ছোট-খাটো কাজ করত, যেমন, বেট গ্রহণ করা, বেট এর টাকা গ্রাহকদের কাছে পরিশোধ করা ইত্যাদি। বিগ জি এই ব্যবসায় আছে প্রায় ৩০ বছর হল, সেই আমল থেকে যখন বিদেশে অনুষ্ঠিত খেলা ভারতে বসে দেখার কোন ব্যবস্থাই ছিল না। তিনি রেডিওর মাধ্যমে খবরাখবর পেতেন এবং বাজির কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। ‘তিনি এই ব্যবসাটা দারুণ বোঝেন’, পার্থিব বলল। ‘একেবারে নিজের বা হাতের তালুর মতন। তিনি তোমার সাথে কথা বলতে আগ্রহী।‘ আমরা দ্রুত স্কাইপির মাধ্যমে ফোনালাপের ব্যবস্থা করলাম এবং কথা বলার শুরুতেই তিনি লরগাতের সকল কথায় জল ঢেলে দিলেন!
‘দুর্নীতিমুক্ত হবার কোন সুযোগই নেই!’ বিগ জি’র সাফ কথা! ‘অনেক খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তাও আছে যারা এই টুর্নামেন্ট থেকে কিছু টু-পাইস কামানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমরা তো কিউরেটর (গ্রাউন্ডসম্যান) এর কাছ থেকেও তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছি। তবে, এটা বেশ কঠিন কাজ। কেননা, ওরা সরাসরি বোর্ডের বেতনভূক্ত। তবে, প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার আরও অনেক উপায় আমাদের জানা আছে।‘
‘বেশিরভাগ বাজি ধরা হয় ইনিংস রান এবং ব্রাকেট (১০ ওভারের সেশন) এর উপর। এবং বেশিরভাগই থাকবে ফিক্স করা। প্রথম রাউন্ডের বেশিরভাগ ম্যাচ কম গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এসবের উপরে বাজির বড় অংকগুলো বেশি ধরা হবে। কানাডা বা নেদারল্যান্ডের মত দলগুলো যখন টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিরুদ্ধে খেলবে তখন ওগুলোই হবে হট আইটেম। যেমন ধরুন, ভারত বনাম নেদারল্যান্ডের খেলা। এই ম্যাচে ফিক্স করা সহজ কারণ ডাচদের বিরুদ্ধে ভারতের হারার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ফলে, ভারত চাইলেই একটু ধীর গতিতে খেললেও সমস্যা নেই, কিন্তু এর প্রভাব পড়বে ইনিংস রান বা সেশন রানের উপর অর্থাৎ ব্রাকেট।’
আমি তার কাছে জানতে চাইলাম ম্যাচ ফিক্সিং এর কারণে তাদের আর্থিক ক্ষতি হবার কোন আশঙ্কা আছে কী না। ‘খুব একটা না। কারণ, এসব তো নতুন কিছু না। আমরা এগুলো সম্পর্কে জানি, এসবের সাথে অভ্যস্তও হয়ে গেছি। ফিক্সিং এর ব্যাপারটি বোঝার বেশ কয়েকটি উপায় আছে। কয়েকজন খেলোয়াড়, সাবেক খেলোয়াড়, ধারাভাষ্যকার, কর্মকর্তাকে হাত করে আপনি কিছু কন্টাক্ট তৈরি করবেন। ব্যাস! এবার ম্যাচ ফিক্স করা একেবারে ডালভাত। এরপর নিজেই সব বুঝতে পারবেন!’
‘লোকজন এখন টেস্ট নিয়ে বেশি ফিক্সিং করছে। ঠিক পুরো ম্যাচ নয়, তবে পিচ সংক্রান্ত তথ্য, যেমন কিউরেটর পিচ ভেঙে দিয়েছে বা ঘাস ছেঁটে দিয়েছে কী না, কিংবা আবহাওয়া কেমন প্রভাব ফেলবে ইত্যাদি।‘
‘ফিক্সিং আমার তেমন ক্ষতি করতে পারবে না কারণ বেশিরভাগ পান্টার (বাজিকর) কে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। যেহেতু ভারতে এটা সম্পূর্ণ বে-আইনি তাই এই ব্যবসায় একে অন্যকে বিশ্বাস করা ছাড়া কোন উপায় নেই। আমাদের সব লেনদেন হয় নগদ টাকার মাধ্যমে। আমরা জানি তারা কাদের সাথে ওঠ-বোস করে, কতটা ক্ষমতাবান তারা… ফিক্সিং হলে সাধারণত আগে থেকেই আমরা জেনে যাই,অথবা যারা বাজি ধরছে তাদের কারা সেটা দেখেও আমরা বুঝতে পারি। আসলে বাজির টাকার মাধ্যমেই বোঝা যায় ফিক্সিং কখন, কোথায় হচ্ছে।‘
‘নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না (বিশ্বকাপের) কতগুলো খেলায় ফিক্সিং থাকবে। এত আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। টুর্নামেন্ট শুরু হবার পর জানাতে পারব। তবে এটা হবেই, এতে কোন সন্দেহ নেই। কোন রকম ফিক্সিং না হলেই বরং অবাক হব!’
‘সবচেয়ে বাজে দল? অবশ্যই পাকিস্তান। কোন সন্দেহ নেই। ব্যাটারা ফিক্সিং করায় একেবারে ওস্তাদ!’
‘ক্রিকেট-দলসমূহ যে হোটেলে অবস্থান করে এবং খেলার মাঠে আইসিসি কড়া নিরাপত্তা রক্ষা করে। ফলে আমাদের কাজ একটু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। তবে এরপরও একটা ব্যবস্থা হয়েই যায়। জানেন তো ভারতের পুলিশকেও ম্যানেজ করা যায়!খেলোয়াড়দের সাথেই আমাদের সরাসরি যোগাযোগ হয়। অনেকেরই সেলফোন নম্বর আমাদের কাছে আছে। এভাবেই আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাই।‘
গ্রুপ পর্যায়ের প্রতিটি খেলা দেখার সময় বিগ জি’র বলা ‘এভাবেই আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাই’ লাইনটা সবসময় মাথায় ঘুরপাক খেত। ওদিকে পার্থিব টুইটারে ডিরেক্ট মেসেজ দিয়ে আমাকে সেই সব ‘তথ্যে’র নমুনাও পাঠিয়েছিল। গ্রুপ পর্যায়ের দু’টো ম্যাচের তথ্য আমাকে সে পাঠিয়েছিল, যা তার ভাষ্য অনুযায়ী ফিক্সড ছিলঃ
৮ মার্চ (খেলা চলাকালীন)- পাকিস্তান বনাম নিউজিল্যান্ড
‘আমার দুবাই এর সোর্স বলেছে নিউজিল্যান্ড জিতবে।‘
পার্থিব তার দুবাই এর সোর্সের নাম আমার কাছে কখনোই প্রকাশ করেনি। যাই হোক, এই মেসেজকে আমি ঠিক অকাট্য প্রমাণ হিসেবে নিতে চাই না। কারণ এভাবে যে কেউ-ই বলতে পারে। সম্ভাবনার সূত্র অনুযায়ী এই কথাটি সঠিক হবার অনুপাত ফিফটি ফিফটি! তবে উল্লেখ্য, মেসেজটি সে খেলা শুরু হবার প্রথম দু’ঘণ্টার মধ্যেই দিয়েছিল।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড শেষ ৪ ওভারে তুলে নেয় ৯০ রান! কিউরা শেষ পর্যন্ত জিতে যায় ১১০ রানের বিশাল ব্যবধানে। তারপরও এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়ে যে পাকিস্তান ম্যাচ ফিক্সিং করতে রাজি হয়ে এত বড় ব্যবধানে হেরে যাবে। আইসিসি’র আকসু এই ম্যাচ নিয়ে কোন অভিযোগ পায় নি, ওদিকে পিসিবিও কোন প্রকার ফিক্সিং এর অভিযোগ উড়িয়ে দেয়।
১০ মার্চ (ম্যাচ চলাকালীন)- শ্রীলঙ্কা বনাম জিম্বাবুয়ে
‘শুনলাম লঙ্কানদের ইনিংস কত লম্বা হবে তা ঠিক করা হয়েছে…সংখ্যাটা ৩৫০।
অর্থাৎ, শ্রীলঙ্কার ইনিংস ৩৫০ রান অতিক্রম করতে পারবে না। আমার জন্য এই ঘটনাটি ইন্টারেস্টিং ছিল, কেননা আমি নিজে ওদের ইনিংস রান ৩৫০+ হবে বলে কিছু টাকা বাজি ধরেছিলাম। একটি সময় পর্যন্ত সেটা অবশ্যম্ভাবী বলে মনে হচ্ছিল, এ কারণেই অমন বাজি ধরেছিলাম। কিন্তু ১৫ ওভারের পর থেকে ওদের ব্যাটসম্যানদের রান তোলার গতি কেমন যেন ধীর হয়ে গেল। রান রেট কমে এলো পাঁচের নিচে! ২৫ ওভার পর্যন্ত ওভাবেই খেলা চলল। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার ইনিংস রান হল ৩২৭। অবশ্য, লঙ্কানদের ইনিংসের মাঝে দ্রুতগতিতে রান তোলার ব্যাপারে দুর্বলতা ছিল। যাই হোক, আগের মতনই আইসিসি’র আকসু এই ম্যাচ ঘিরেও কোন অভিযোগ পেল না।
বিনয়ের কাছ থেকে ‘ফিক্সিং’ সংক্রান্ত একটি তথ্যই পেয়েছিলাম। সেটা হল সন্দেহভাজন একজন বুকমেকারকে ভারতীয় ড্রেসিং রুমে দেখা গেছে। ম্যাচটি ছিল নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে, যা ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভারত ঐ ম্যাচটি জিতেছিল ৫ উইকেটের ব্যবধানে।
পরে এই ঘটনা নিয়ে পুরো ভারতীয় মিডিয়ায় তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল। এক ভিডিওতে দেখা যায় ২০০৮ সালে আইপিএল এর ম্যাচ ফিক্সিং করার দায়ে সন্দেহভাজন প্রদীপ আগারওয়ালকে ভারতীয় ড্রেসিং রুমের সামনের ব্যালকনিতে বসে আছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করার পর আইসিসি’র আকসু নিম্নলিখিত বিবৃতি প্রদান করে-
ভারতীয় দলের স্থানীয় লিয়াঁজো অফিসার হিসেবে প্রদীপকে ডিডিসিএ (দিল্লি ডিসট্রিক্ট ক্রিকেট এসোসিয়েশন) কর্তৃক নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং দলের ম্যানেজারের অনুরোধে তাকে পিএমওএ (প্লেয়ারস এন্ড ম্যাচ অফিশিয়াল এরিয়া)’র সাময়িক ভিজিটর পাস প্রদান করা হয়েছে। উল্লেখ্য, আগারওয়াল যে একজন বুকি এটা পুরোটাই মিডিয়ার ভাষ্য, তার বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিং এর কোন অভিযোগ আজ পর্যন্ত প্রমাণিত হয় নি।
জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার গ্রুপ পর্বের ম্যাচ নিয়েও অনেক কানাঘুষা শোনা যায়। টাইমস অব ইন্ডিয়া’র এক রিপোর্টে বলা হয় যে আকসু’র খুব ঘনিষ্ঠ এক সূত্র থাকে তারা জানতে পেরেছে যে ইনিংসের শুরুতে দুই অসি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান, ব্র্যাড হ্যাডিং এবং শেন ওয়াটসনের ধীর গতির ব্যাটিং এর ব্যাপারে তারা তদন্ত করছে। আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত ২১ ফেব্রুয়ারি’র ঐ ম্যাচে তারা প্রথম ১১ ওভারে করেছিল ২৮ রান এবং ১৫ ওভারে মাত্র ৫৩। অস্ট্রেলিয়া শেষ পর্যন্ত ৯১ রানে জিতে যায়। স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রেলিয়ান দল এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে নাকচ করে দেয়, একই পথে হাঁটে আকসু’ও। তারাও কোন প্রকার তদন্তের কথা অস্বীকার করে এবং সাফ জানিয়ে দেয় যে অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়দের প্রশ্ন করার মত কোন ঘটনা ঘটে নি।
২২ মার্চ পত্রিকায় খবর আসে যে মুম্বাই পুলিশ ম্যাচ ফিক্সিং এর সাথে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে যারা কুখ্যাত দাউদ ইব্রাহিম গ্যাং এর সদস্য। পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী ঐ তিনজনের ফোনে আড়ি পেতে জানা গেছে তারা নাইরোবি, লন্ডন এবং নাগপুরে ম্যাচ ফিক্সিং সংক্রান্ত একাধিক কল করেছিল।
টুর্নামেন্টের আগে বিগ জি’র কাছ থেকে আগাম সতর্কতা না পেলে পার্থিব, বিনয় কিংবা পত্রিকা থেকে পাওয়া এসব খবরে আমি হয়ত মুষড়ে পড়তাম! তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন গ্রুপ ম্যাচে হারার সম্ভাবনা কম বলে ইনিংস রান বা সেশন রানের ফিক্সিং করতে কোন সমস্যাই হবে না। ‘কোন রকম ফিক্সিং না হলেই বরং অবাক হব’ তিনি বলেছিলেন।
গ্রুপ পর্ব শেষ হয়ে নক আউট পর্বে যাওয়ার পর টুর্নামেন্ট সিরিয়াস হয়ে গেল। কোন দলের ম্যাচ হারার আর উপায় নেই। ডু অর ডাই সিচুয়েশন। ওদিকে পার্থিবের কাছ থেকেও তথ্য আসা বন্ধ হল। পরবর্তী কয়েকদিন ওর থেকে কোন সাড়া পেলাম না। পার্থিব ওর নীরবতা ভাঙল ৩০ মার্চ দুপুরবেলা।
(চলবে)
"অন্যান্য সময় ম্যাচের গতিপথ দেখে বুঝতে পারি, বিশেষ করে যখন ব্যাটসম্যান গ্লাভস বদলায় অথবা দ্বাদশ খেলোয়াড় অন্য কোন কারণে মাঠে প্রবেশ করে। ওটাই ফিক্সিং এর সিগন্যাল" - এখন থেকে মাঠে দ্বাদশ কেলোয়াড়কে পানি, গ্লভস বা ব্যাট হাতে প্রবেশ করতে দেখলেই সন্দেহ ঘনীভূত হবে।
"জানেন তো ভারতের পুলিশকেও ম্যানেজ করা যায়!খেলোয়াড়দের সাথেই আমাদের সরাসরি যোগাযোগ হয়। অনেকেরই সেলফোন নম্বর আমাদের কাছে আছে। এভাবেই আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাই" - কি সাংঘাতিক কথা!