গ্রামীনফোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

আমি গত প্রায় দুই দশক ধরে গ্রামীন ফোনের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করি। গ্রাহক সেবা বা মানজনিত সমস্যা, কলরেট বা ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য ইত্যাদি সত্ত্বেও অন্য নেটওয়ার্কে যাই নি শুধুমাত্র পুরনো নম্বরটি অনেকের কাছে আছে দেখে। কেননা, এটা এখন আমার পরিচয়ের অংশ হয়ে গেছে। (পরিতাপের বিষয় গ্রামীন কর্তৃপক্ষ একবারও সামান্য সৌজন্য কল করে ধন্যবাদ পর্যন্ত দেয় নি! এত পুরনো গ্রাহক হবার কারণে এতটুকু তো আশা করতেই পারি!)

যা হোক, আমি গত কিছুদিন ধরে গ্রামীনের একটি বিশেষ ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করছি। ১৬ টাকায় ১ জিবি, ১২ ঘণ্টার জন্য (কোডঃ *5020*2212#). এই কোডটি টাইপ করার পর নিচের ছবির মত (ছবি ১) একটি ফিরতি এসএমএস আসে। সাধারণত এর কিছুক্ষণ পর গ্রামীন থেকে উক্ত প্যাকেজ চালু হবার কনফারমেশন মেসেজ পাঠায়।

গতকাল (২৪/০৪/২০১৮) সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমি উপরে আমার মোবাইল ফোনে উল্লেখিত কোডটি প্রেস করি এবং সাথে সাথে (ছবি ১ এর মত) ফিরতি এসএমএস পাই। আমি মোবাইল ফোনটি মোডেম হিসেবে ব্যবহার করি বিধায় এরপর আর অন্য মেসেজের জন্য অপেক্ষা না করেই ল্যাপটপ ব্যবহার করা শুরু করি। অবশ্য, তার আগে ব্যালেন্স চেক করি। আমি শতভাগ নিশ্চিত ছিলাম না একাউণ্টে কত টাকা আছে তবুও ৪৭৪ বা ৪৭৬ টাকা (বা কাছাকাছি) দেখতে পেয়ে ধরে নিই প্যাকেজ চালু হয়ে গেছে। কেননা, আমার ধারনা ছিল একাউন্টে ৪৯০+ টাকা ছিল এবং প্রায়শই এমন হয়েছে যে প্যাকেজ চালু হবার বেশ কিছুক্ষণ পর কনফারমেশন মেসেজ এসেছে।

গ্রামীনের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে এমনিতে ‘পে পার ইউজ’ পলিসিতে (যত ব্যবহার তত টাকা) ইন্টারনেট ব্যবহার করলে নেটওয়ার্কের কোন সমস্যা হয় না, কিন্তু প্যাকেজ কিনলেই ঝামেলা শুরু হয়। আজও সেরকম সমস্যা হচ্ছিল। এর মাঝে কয়েকটি এসএমএস আসলেও আমি সেগুলো দেখার কথা ভাবি নি। মনে করেছি হয়ত প্যাকেজ চালু হবার কনফারমেশন এসএমএস এসেছে।

কিন্তু রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ফোন চেক করতে গিয়ে দেখি সেখানে ‘মেইন একাউন্ট থেকে টাকা কাটার’ এসএমএস এসেছে!! (ছবি ২) গত সাড়ে তিন ঘণ্টায় আমার প্রায় দুইশ টাকা কেটে নিয়েছে! আমি নাকি পে পার ইউজ ইন্টারনেট ব্যবহার করছি!

সাথে সাথে আমি গ্রামীনের নির্দিষ্ট নম্বরে এসএমএস পাঠাই এবং তারা আমাকে জানায় আমি আসলেই ‘পে পার ইউজ’ প্যাকেজ ব্যবহার করছি! (ছবি ৩)

এরপর আমি কাস্টোমার কেয়ারে ফোন দিই। বেশ কয়েকমিনিট পর জনৈক ‘জনাব তোহা’ আমার সাথে কথা শুরু করেন। তাকে আমি সমস্ত ঘটনা খুলে বলি। তিনি জানান উপরের প্যাকেজটি আমার জন্য স্পেশাল অফার ছিল এবং সেটা ২৩ পর্যন্ত বলবৎ ছিল (অথচ প্যাকেজটির অফার ২৬ তারিখ পর্যন্ত ভ্যালিড, ছবি ৪)। সবচেয়ে বড় কথা উক্ত প্যাকেজটি কেন চালু হল না বা গ্রামীন থেকে ‘এই প্যাকেজ আর ভ্যালিড নেই’ এ ধরণের কোন নোটীফিকেশন আমাকে দেয়া হয়নি। যাহোক, তিনি আমাকে কোন সমাধান দিতে না পারায় তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানাই। অনেক্ষণ ধরে অপেক্ষায় রাখার পর কথা শুরু করেন ‘জনাব সৌরভ’।

জনাব সৌরভও এ ব্যাপারে কোন সহায়তা করতে অপারগতা জানান। তাদের ভাষ্যমতে কোন প্যাকেজ নেয়ার পর তা চালু না হলে সেটা গ্রাহককে জানাবার কোন সিস্টেম গ্রামীনের নেই। এজন্য গ্রাহককেই নিজের গরজে ব্যালেন্স চেক করতে হবে, কোন প্যাকেজ চলছে সেই অনুসন্ধান করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি…

আমাকে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে তারা যে ২০০+ টাকা কেটে নিল তার উপযুক্ত শাস্তি চাই। টাকা বড় কথা নয়-এখানে মূল প্রশ্ন স্বচ্ছতা এবং গ্রাহক সেবার। আর কতদিন এই সব কর্পোরেট জায়ান্টদের হাতের পুতুল হয়ে থাকতে হবে? আমি গ্রামীনের এই হঠকারীতার সুবিচার চাই।

আমি চাই-

১। উপরোক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার এবং শাস্তি

২। সকল প্যাকেজে ইন্টারনেটের স্পিড একই যেন থাকে তা নিশ্চিত করা

৩। কোন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করার সাথেই সাথেই (৬০ সেকেন্ডের মধ্যে) নিশ্চিতকরণ এসএমএস পাঠানোর গ্যারান্টি।

৪। কোন কারণে কোন প্যাকেজ চালু না হলে তা তক্ষণাৎ গ্রাহককে (৬০ সেকেন্ডের মধ্যে) অবহিত করা।
৫। কোন ইন্টারনেট প্যাকেজ শেষ (সময় বা ডেটা) হবার পর সাথে সাথে তা জানিয়ে গ্রাহককে এসএমএস করা।

৬। ১৫ বছর বা তারচেয়েও বেশি দিন ধরে যারা গ্রামীনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন তাদের জন্য বাড়তি সুবিধা দেয়া। (অন্ততঃ মাঝে মাঝে ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন বা এসএমএস তো করা যায়! এমনিতে তো তারা দিনে একাধিক এসএমএস পাঠিয়ে ঠিকই জ্বালাতন করে)।

বিঃ দ্রঃ
১। প্রায় আধা ঘণ্টা (এজন্যও টাকা খরচ করতে হয়েছে!) কাস্টোমার কেয়ারের সাথে কথা শেষে আমি উক্ত প্যাকেজ চালু করার কোড আরেকবার প্রেস করি এবং এবার ঠিকই কনফারমেশন মেসেজ পাই (ছবি ৪)।

২। কোন প্যাকেজ শেষ হবার পরও তারা কোন নোটিফিকেশন পাঠায় না। অর্থাৎ প্যাকেজের সময় বা ডেটা কখন শেষ হবে তা গ্রাহককেই নিজের গরজে একটু পরপর হিসেব করতে হবে! অথচ বেশি ব্যবহার করলে মেইন একাউন্ট থেকে টাকা কাটা শুরু করবে। এখানেও জোচ্চুরি!

২ টি মন্তব্য : “গ্রামীনফোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ”

  1. মেহেদী (০৭-১৩)

    এজন্যই আমি জিপি চালাই না :)) । আর এখনো আপনি জিপি থেকে সরে আসতে পারেন, শুধু আপনার কন্টাক্ট লিস্ট এ নতুন নাম্বার দিয়ে একটা গ্রুপ মেসেজ দিয়ে চেঞ্জ করে ফেলতে পারেন 🙂

    জবাব দিন
  2. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    গ্রামীন ফোনে যে বেশ কিছুদিন ধরে এক ধরণের জোচ্চুরি চলছে, তা আমিও টের পাচ্ছি। কিন্তু নম্বর বদলানোর ঝামেলার কারণে আমিও বদলাতে উদ্যোগী হই নাই।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।