ঢাকার রাস্তার সবচেয়ে বড় আতঙ্ক- হর্ন!

বর্তমানে ঢাকার রাস্তার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম হর্ন। জ্যামে আমরা অভ্যস্ত (বাধ্য) হয়ে গেছি। ছিনতাই, রাহাজানি বা দুর্ঘটনা উপরওয়ালার হাতে ছেড়ে দিয়েছি, কিন্তু হর্নের কোন ব্যবস্থাই করা যাচ্ছে না।

অবশ্য, সেটা হবেই বা কিভাবে? আমাদের শ্রবণশক্তি তো আর রাতারাতি বাড়ানো সম্ভব নয়! গবেষণায় দেখা গেছে শব্দের মাত্রা ২৫ ডেসিবল পর্যন্ত আমাদের শ্রবণযন্ত্রের জন্য স্বাভাবিক। এরচেয়ে বেশি হলেই শুরু হয় ঝামেলা।

কী কী ঝামেলা? দেখা যাক-
১। স্ট্রেস
২। হাইপারটেনশন
৩। ঘুমের সমস্যা
৪। হৃদযন্ত্রের সমস্যা
৫। শিশুর জন্মত্রুটি
৬। শ্রবণযন্ত্রে ত্রুটি

noise-pollution1

যে কোন সাধারণ রাস্তায় শব্দের মাত্রা গড়ে ৮৫ ডেসিবলের বেশি থাকে। ঢাকার রাস্তার শব্দের মাত্রা নিয়ে কোন গবেষণা হয়েছে কী না জানি না। তবে এটা অবশ্যই ১০০ ডেসিবলের চেয়ে হবে।

আমাদের বেশিরভাগ গাড়িচালক অসচেতন এবং অশিক্ষিত বলে এই যন্ত্রণা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গাড়ি সিগন্যালে আটকে থাকা সত্ত্বেও অনেকে হর্ন বাজায়। সিগন্যাল ছাড়ার সাথে সাথেও হর্ন বাজাবার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। এমন ভাব যেন সামনের গাড়ি কিছু দেখছে না…এমনি সামনের গাড়ি নষ্ট থাকলেও অনেকে হর্ন বাজায়। হর্ন যেন সর্ব রোগের মহৌষধ!

z_p13-noise-01

দিনে তো বটেই রাতেও হর্ন থেকে নিস্তার নেই। অথচ হেডলাইট ব্যবহার করেই হর্নের ৯০ ভাগ কাজ চালানো সম্ভব। কিন্তু ঐ যে- আমাদের স্বভাবই তো খারাপ! রাস্তায় যত হর্ন বাজে তার ৮০ ভাগই হয় কোন কারণ ছাড়াই। আর হর্ন বাজাবার প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে এগিয়ে মোটর সাইকেল, হিউম্যান হলার এবং বাসগুলো।

ইদানীং নতুন আর এক উপদ্রব শুরু হয়েছে। অনেক গাড়িতেই ব্যবহৃত হচ্ছে হুটার বা সাইরেন। আগে যা শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, অ্যাম্বুলেন্স কিংবা জরুরী কাজে নিয়োজিত গাড়িগুলোয় দেখা যেত। বর্তমানে বেশিরভাগ জীপ এবং দামী গাড়িতে হুটার আছে। এরা বাজাতেও পারে মাশা আল্লাহ…

প্রতিকার চিন্তা করতে গেলে প্রথমেই আসবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নাম। টহল বা ট্রাফিক পুলিশ চাইলেই হর্ন বাজানো অনেকখানি কমাতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের কোন গরজই দেখা যায় না। অন্যান্য বেশিরভাগ সমস্যার মত সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেও হর্ন বাজানো কমানো সম্ভব। কিন্তু কিভাবে হবে? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, মিডিয়া, প্রশাসন সবাই এ ব্যাপারে উদাসীন!

সামাজিকভাবে লজ্জা দেয়া যেতে পারে। আপাতত এই এক পন্থা ছাড়া আমি আর কোন পথ দেখছি না। এজন্য বন্ধুর গাড়িতে এই নোটিশটি ঝোলাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর পাশাপাশি রাস্তায় কোন গাড়ি চালক বেশি হর্ন দিলে তাকে ডেকে যতটা সম্ভব নরম গলায় এটা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করে চলেছি। দুই একজনের বোধদয় হলেও মন্দ কী!

20161129_192445

পরিশেষে বলতে চাই, হর্ন শুধুমাত্র জরুরী কাজে এবং দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যবহার করার জন্য। অযথা হর্ন বাজিয়ে নিজেকে নির্বোধ প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন না।

৪ টি মন্তব্য : “ঢাকার রাস্তার সবচেয়ে বড় আতঙ্ক- হর্ন!”

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    গাড়ীর আরোহীরাও এ ব্যাপারে নিজ নিজ চালককে শিক্ষা দিতে পারে, প্রয়োজনে ভর্ৎসনা করতে পারে। পাবলিক যানবাহন সমূহের চালককে বাগে আনতে হলে পুলিশের এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই। পোশাক পরিচ্ছদের মত গাড়ী চালনাতেও মানুষের রুচিবোধের প্রকাশ পায়, এ তথ্যটা গণমাধ্যমে বেশী করে প্রচার করতে হবে। সবার সমবেত প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, এ কামনা মনে পোষণ করি।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।