কে এই ডাস্টিন ব্রাউন??!!

সাংবাদিকগণ একেকজন খেলোয়াড়ের বর্ণনা লিখতে গিয়ে একেক রকম শব্দ ব্যবহার করেন। কেননা, প্রত্যকের জন্য আলাদা আলাদা বিশেষণের প্রয়োজন পড়ে। ডাস্টিন ব্রাউনের কথা মনে হলে যে কারও মনে যে শব্দটি প্রথম মনে পড়বে তা হল- প্রথাবিরোধী (Unconventional)!

তার খেলার স্টাইলটি প্রথাবিরোধী। তার মনোভাব প্রথাবিরোধী। তার বেশভূষা, আচার-আচরণ, ব্যাকগ্রাউন্ড সবকিছুই প্রথাবিরোধী। তবে, এ সমস্ত কিছুই টেনিসের মধ্যে দারুণ বৈচিত্র্য এনেছে! এবং টেনিসকে করেছে সমৃদ্ধ!

কেউ আগে থেকে চিনুক বা না চিনুক- গতকালের পর থেকে এই ঝাঁকড়া-চুলের অধিকারী, ট্যাটু আঁকা, অর্ধ জার্মান-অর্ধ জ্যামাইকান ডাস্টিন ব্রাউনকে সারা বিশ্বের সকল টেনিস ভক্ত চিনেছে! চিনবেই বা না কেন, তিনি যে এবছরের সেরা অঘটনের জন্ম দিয়েছেন- দুই বারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন রাফায়েল নাদালকে প্যাক করে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন! ”সম্ভবত আমার জীবনের সেরা দিন” খেলার পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে এভাবেই বলেছেন উপস্থিত সকলকে। সে সময়ে গায়ে ছিল জার্মান পতাকার আদলে আঁকা সুপারম্যান লোগো সম্পন্ন কালো টি-শার্ট। গোলাকার বড় একটি টুপি দিয়ে বিশাল চুলের গোছা ঢাকা ছিল!

বয়স ৩০ পার হয়েছে, প্রফেশনাল ক্যারিয়ারও কম নয়- ১৩ বছর! অথচ কিছুদিন আগ পর্যন্তও তাকে দেখা যেত পৃথিবীর বিভিন্ন ফিউচার এন্ড চ্যালেঞ্জার সার্কিটে ঘুরে ঘুরে খেলতে। ২০১০ এর পর থেকে তার র‍্যাংকিং এর উন্নতি ঘটেছে এবং তা ১০০ এর ভেতরে থাকত। ২০১৪ তে ক্যারিয়ার বেস্ট ৭৮ নম্বরে পৌঁছান। ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাবা-মা’র দেয়া ভক্সওয়াগন ক্যাম্পার ভ্যানে করে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিতেন তিনি।

ডাস্টিন ব্রাউনের খেলার উত্থান হয়েছে এমন এক দেশে যেখানে টেনিস খেলাটি তেমন জনপ্রিয় নয়! মা জার্মান হবার কারণে তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা জার্মানি হলেও ১৯৯৬ সালে তারা সপরিবারে পাড়ি জমান জ্যামাইকা, বাবার জন্মভূমিতে। সেখানেই তার টেনিস খেলার উত্তরণ ঘটে।

b_020715_228_brown_aeltc_ek

গায়ে বাবার ছবি ট্যাটু করা আছে, গতকাল নাদালকে হারিয়ে শার্ট খুলে উৎযাপন করার সময় সেটি সবার নজর কাড়ে। ‘আমার বেডরুমে বাবার একটি বিশাল পোট্রেট-ও আছে। আসলে বাবাকে সমসময় কাছে পাই না তো…’ এভাবেই ব্যাখ্যা করলেন ব্রাউন। ”আমাকে এবং আমার পরিবারকে অনেক দীর্ঘ ও বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। আর এই জিনিসটা আমি অনেক দিন ধরেই করতে চাচ্ছিলাম! গত বছর জার্মানি কোলন শহরে দারুণ এক ট্যাটু আর্টিস্ট পেয়ে গেলাম। ব্যস!”
ট্যাটু, সাধু-সন্ন্যাসীদের মত পাকানো চুল (Dreadlocks)- যে কারণে তার টুইটার হ্যান্ডেল @DreddyTennis… অন্য আরও অনেক কিছুর সাথে এসব ব্যাপারগুলো টেনিস ভক্তদের বাধ্য করেছে ব্রাউনের উপর নজর দিতে! তার প্রথাবিরোধী খেলার ধরণ, প্রচণ্ড গতির সার্ভ, আক্রমণাত্মক মনোভাব, শারীরিক ক্ষিপ্রতা…তাকে দেখে অনেকেরই গায়েল মনফিলস এর কথা মনে পড়বে! জার্মান, ইংরেজি এবং জ্যামাইকান (আসলে উচ্চারণ!) ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন তিনি। সাংবাদিক সম্মেলনে তার স্বাচ্ছন্দ্য উপস্থিতি সবাইকে দারুণ মুগ্ধ করেছে!

11183269

”আমাকে যেমন দেখছেন, আমি এরকমই! আমি আমার সারাজীবনই এরকমই ছিলাম। বেশিরভাগ মানুষই এটাকে (বেশভূষা, পোশাক-পরিচ্ছদ) স্বাভাবিকভাবেই নিয়ে থাকে। অবশ্য, অন্যরা কি ভাবছে সেটা নিয়ে বেশি চিন্তা করলে আমি সম্ভবত আমার চুল কেটে ফেলতাম বা পোশাক-পরিচ্ছদ অন্যরকম পড়তাম!’ বলেছেন তিনি!

আসলে তার নিজেকে বদলাবার প্রয়োজনও নেই…তার সাম্প্রতিক সাফল্য তাকে সম্মান, স্ট্যাটাস এবং গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছে। সত্যিকার অর্থে এটি নাদালের বিরুদ্ধে তার দ্বিতীয় জয়। গতবছর জার্মানির হল টুর্নামেন্টে (Halle Open) তিনি নাদালকে সরাসরি সেটে হারিয়েছিলেন (অবধারিতভাবে সেটাও ঘাসের কোর্ট ছিল!!)। নাদাল সে সময় এক নম্বর র‍্যাংকের অধিকারী ছিলেন। পৃথিবীর খুব কম খেলোয়াড়ই আছে যার কি না এখনো নাদালের মত একজন গ্রেট খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে ১০০ ভাগ অপরাজিত থাকার রেকর্ড আছে!

অথচ প্রতিবার দুর্দান্ত জয় পাবার পর তিনি অবিশ্বাস ভরা চেহারা নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির হন। তিনি নিজেই এটি সর্বশেষ সম্মেলনে স্বীকার করেছেন! কে জানে তৃতীয় রাউন্ডে ২২ নম্বর সিড ভিক্টর ট্রয়স্কির সাথে খেলা হবার পর আমরা তার কোন রূপটি দেখতে পাব- তবে খেলাটি যে দারুণ আকর্ষণীয় হবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই! এবং অবশ্যই তার খেলা প্রথাবিরোধীও হবে!

”খেলার সময় বোকার মতন মারা শটও অনেক সময় দারুণ ফল বয়ে আনে। আমি অনেকটা ঐরকমই! এটাই আমাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে, বিশেষ করে ঘাসের কোর্টে।”

”যেদিন থেকে আমি বুঝলাম নিজের দিনে আমি যে কাউকে হারাতে পারি- সেদিন থেকে আমি আমার খেলাকে আর বদলাবার চেষ্টা করি নি। হ্যাঁ, মাঝে মাঝে আমি হয়ত খুব খারাপ-ভাবে হেরেও যাব। তবে, এটাই জীবন। আমি এটাকে মেনে নিয়েছি এবং কোর্টে গিয়েও এটা মনে রাখার চেষ্টা করি।”

”জটিল সমীকরণ, হাজারো চিন্তা বা হাজারো স্ট্রাটেজির বদলে আমি খুব সাধারণ একটি তত্ত্ব মেনে চলি- হয় হারব না হয় জিতবো। ব্যস!”
————————————
মূল লেখার লিংকঃ Who is Dustin Brown?

৭ টি মন্তব্য : “কে এই ডাস্টিন ব্রাউন??!!”

  1. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    "হয় হারব না হয় জিতবো। ব্যস!"
    - এর পরে আর কি কথা থাকে !
    থাকে আর কি সংশয় তাকে বুঝে নিতে ।
    সহজ সাবলীল নির্ভেজাল সে জয় করে নিক সব আপন গতিতে ।

    যথাসময়ে লেখাটি দেয়া আর সাবলীল ভঙ্গিমায় সুন্দর প্রকাশের জন্য সাধুবাদ লেখককে ।

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    আমার তেমন কোন ক্রেডিট নাই, ভাই।
    এটা উইম্বলডন ডট কম এর একটি লেখার ভাবানুবাদ!
    পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ! 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  3. সাইদুল (৭৬-৮২)

    জুনায়েদ তোমার পরপর দু'টি লেখায় দু'জন টেনিস তারকাকে পেলাম, বোনাস হিসেবে একটিতে ম্যান্ডেলার ছায়া একটিতে নাদাল, ধারাটা ভালো। পড়ে আনন্দ পেলাম


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  4. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    তার ব্যাপারে এ চমৎকার লেখাটার মাধ্যমে পরিচিত হয়ে সমৃদ্ধ হ'লাম, আর "আমি খুব সাধারণ একটি তত্ত্ব মেনে চলি- হয় হারব না হয় জিতবো। ব্যস!” থেকে একটা চমৎকার তত্ত্ও পেয়ে গেলাম।

    জবাব দিন
  5. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    জুনা,
    তুমি কি ক্রিড়ালেখক হিসেবে কোন পত্রিকায় আছো? না থাকলে শীঘ্রই জয়েন করো কোন একটায়। তোমার দূর্দান্ত এইসব লেখা থেকে আম-পাঠকও খানিকটা বিনোদিত হোক।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।