পে-প্যাল, টেসলা মোটর্স এবং স্পেস এক্স- এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইলোন মাস্ক (Elon Musk) গত ১২ই আগস্ট ‘হাইপারলুপ’ এর প্রথম ডিজাইন প্রকাশ করেছেন। তাঁর কল্পনা এবং ব্লুমবার্গ বিজনেসউইক এ বলা ভাষ্য অনুযায়ী, যাতায়াতের এই নতুন মাধ্যম হবে সম্পূর্ণ সৌরবিদ্যুৎ চালিত এলিভেটেড আন্তঃনগর যাতায়াত ব্যবস্থা।
হাইপারলুপঃ এতে ভ্রমনরত যাত্রীরা প্রায় ৮০০ মাইল গতিতে একটি এলুমিনিয়াম পডে বসে স্টিলের তৈরি টিউবের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করবে। মাস্কের হিসেব অনুযায়ী এতে (লস এঞ্জেলস থেকে সানফ্রান্সিস্কো) খরচ পড়বে ৬ (শুধু যাত্রী) থেকে ১০ বিলিয়ন (যাত্রী ও গাড়ি) মার্কিন ডলার। তবে, তিনি বিশ্বাস করেন এর টিকিটের মূল্য হবে অ্যামট্রাক (Amtrak) – এর তুলনায় অনেক কম।
মাস্ক বিশ্বাস করেন, যখন এত বড় মাপের কোন বিনিয়োগ করা হয়, তার সুফলও সেই অনুযায়ী হওয়া উচিত। (এখানে উল্লেখ্য অ্যামট্রাক কর্তৃক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের উচ্চগতির রেল ব্যবস্থা প্রকল্পের কাজ এ বছর ক্যালিফোর্নিয়াতে শুরু যাচ্ছে। এর ফলে ২০২৯ সাল নাগাদ সান ডিয়েগো ও স্যাক্রামেন্টো’র মধ্যে সরাসরি সংযোগ তৈরি হবে। শুরু থেকেই মাস্ক এই প্রকল্পের তীব্র বিরোধিতা করে আসছেন, ”আপনাদের বুঝতে হবে ওদের দেয়া হিসেব এবং প্রকৃত হিসেবের মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য হবে। কেননা আমার হিসেব মতে এই প্রকল্প ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে” বলেছেন মাস্ক। সাথে এও বলেছেন এত কিছু করে যা পাওয়া যাবে তা খুব বেশি গতিসম্পন্ন হবে না, উপরন্তু বহু মানুষ তাদের জমি হারাবে!)
মাস্ক এর মতে হাইপারলুপ হবে নিরাপদ, অধিকতর দ্রুত, কম খরচের, সুবিধাজনক, আবহাওয়ার প্রভাব থেকে মুক্ত, স্বনির্ভর, ভূমিকম্প প্রতিরোধী। সবচেয়ে বড় কথা হাইপারলুপের কারনে এর রুটে অবস্থিত কোন স্থাপনা বা জমিতে কোন প্রকার বিঘ্ন ঘটবে না। তবে টিউবগুলো লম্বায় শত শত মাইল হবার কারনে অনেকে বিঘ্ন না ঘটার ব্যাপারটি আদৌ বাস্তব সম্মত কি না- প্রশ্ন তুলেছেন। কেননা অনেক পথ পেড়িয়ে, অনেক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্য দিয়ে রুটটি যাবে। তবে মাস্ক এই সংশয়কে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন যতটা কঠিন মনে হচ্ছে ব্যাপারটি অতটা নয়। ব্লুমবার্গ বিজনেসউইকে দেয়া তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী-
The tubes would, for the most part, follow I-5, the dreary but direct freeway between L.A. and San Francisco. Farmers would not have swaths of their land blocked by train tracks but could instead access their land between the columns.
ডিজাইনঃ নিচে মাস্ক এর করা খসরা ডিজাইনের কিছু ছবি দেয়া হল-
হাইপারলুপের কথা জনসমুক্ষে প্রথম আসে গত বছর, যখন এই বিখ্যাত উদ্যোক্তা পান্ডোডেইলি -এ সাক্ষাতকার দেন। তিনি বিশ্বাস করেন হাইপারলুপ হবে আধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থা পঞ্চম স্তম্ভ (প্লেন, ট্রেন, নৌকা/জাহাজ এবং মোটরগাড়ির পর)। তিনি আরো বলেছিলেনঃ
This system I have in mind, how would you like something that can never crash, is immune to weather, it goes three or four times faster than the bullet train… it goes an average speed of twice what an aircraft would do.
You would go from downtown LA to downtown San Francisco in under 30 minutes.
এখানে বলে রাখা ভাল, গড়পড়তা হিসেব অনুযায়ী এল এ থেকে সান ফ্র্যান্সিস্কো ড্রাইভ করে যেতে সময় লাগে প্রায় ছয় ঘন্টা (প্লেনে গেলে লাগবে ২ ঘন্টার চেয়ে কম সময়)।
রুটঃ মাস্ক এর প্রাথমিক খসরা অনুযায়ী, হাইপারলুপের বেশিরভাগ অংশই থাকবে এলিভেটেড রেল এর উপর। মাঝে প্রায় ১৫.২ মাইল থাকবে টানেল। প্রস্তাবিত রুটটি এমন- লস এঞ্জেল্স/গ্রেপভাইন (উত্তর ও দক্ষিণ) থেকে আই-৫ করিডোর হয়ে সান ফ্র্যান্সিস্কো বে এরিয়ার আই-৫৮০ পর্যন্ত।
প্রতিটি সেকশনে হাইপারলুপের আনুমানিক গতিবেগ অনেকটা এরকমঃ
১। লস এঞ্জেলস গ্রেপভাইনের দক্ষিণ অংশে ০.৫ g (অভিকর্ষজ ত্বরণ) – এ ঘন্টায় ৩০০ মাইল (৪৮০ কিঃমিঃ)। সময় লাগবে ১৬৭ সেকেন্ড
২। লস এঞ্জেলস গ্রেপভাইনের উত্তর অংশে ০.৫ g (অভিকর্ষজ ত্বরণ) – এ ঘন্টায় ৫৫৫ মাইল (৮৯০ কিঃমিঃ)। সময় লাগবে ৪৩৫ সেকেন্ড
৩। আই-৫ করিডোরে ০.৫ g (অভিকর্ষজ ত্বরণ) – এ ঘন্টায় ৭৬০ মাইল (১,২২০ কিঃমিঃ)। সময় লাগবে ১,৫১৮ সেকেন্ড
৪। এখানে গতি কিছুটা মন্থর হয়ে আই-৫৮০, সান ফ্র্যান্সিস্কো পৌঁছবে ঘন্টায় ৩০০ মাইল (৪৮০ কিঃমিঃ) গতিতে। সব মিলিয়ে মোট সময় লাগবে ৩৫ মিনিট!!
উল্ল্যেখযোগ্য স্টেশনগুলি হবে লস এঞ্জেলস, সান ফ্র্যান্সিস্কো, সান হোসে, সান ডিয়েগো, স্যাক্রামেন্টো এবং ফ্রেস্নো- তে। সব কিছু ঠিক-ঠাক চললে পরবর্তীতে লাস ভেগাসেও স্টেশন করা যেতে পারে বলে মাস্ক মনে করেন।
এক বছর ধরে জল্পনা-কল্পনাঃ এক বছর ধরে হাইপারলুপের ডিজাইনের ব্যাপারে গোপনীয়তা বজায় রাখা হলেও ইলোন মাস্ক আক্ষরিক অর্থেই বহু রাত না ঘুমিয়ে এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার পেছনে ব্যয় করেছেন। তিনি পুরো ব্যাপারটি এমন একটি রুপে আনতে চেয়েছিলেন যাতে করে এটি সাধারণ মানুষ এবং সমালোচকদের কাছে বাস্তব সম্মত, তথ্যবহুল এবং চিত্তাকর্ষক মনে হয়।
Pulled all nighter working on Hyperloop (as did others). Hopefully not too many mistakes. Will publish link at 1:30 PDT.
— Elon Musk (@elonmusk) August 12, 2013
তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার এই নতুন রুপটি কবে বাস্তবতার মুখ দেখবে তা বলা কঠিন। টেসলা’র ২০১৩ সালের দ্বিতীয় কোয়ার্টারের ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্ট প্রকাশ করার সময় তিনি হাইপারলুপ নিয়ে ব্যস্ত থাকা নিয়ে আপসোস করেছিলেন। আসলে তিনি তার সুপরিচিত এবং অত্যন্ত সফল দুটি কোম্পানী- টেসলা এবং স্পেস এক্স নিয়ে এই মুহূর্তে খুবই ব্যস্ত রয়েছেন। ”এই মুহূর্তে আমার অন্য আর কিছু করার প্ল্যান নেই”- তাঁর ভাষ্য!
সুতরাং সম্ভবত তিনি তাঁর এই স্বপ্ন অন্য কাউকে হস্তান্তর করতে চান যাতে করে রিলে রেসের মতন ব্যাটন’টি অন্য কেউ হাতে নিয়ে দৌড়টা শেষ করতে পারে। সম্ভবত তাঁর স্বপ্ন এটাও যে, যোগাযোগ ব্যবস্থা কোন একটি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানীর না হয়ে সাধারণ মানুষের সম্পত্তি হোক।
বিঃ দ্রঃ
১। মূল প্রবন্ধটি এখান থেকে পড়তে পারেন।
২। হাইপারলুপ এর কারিগরি বিষয়ে খুঁটিনাটি জানতে ইলোন মাস্ক এর রিপোর্ট টি এখান থেকে ডাউনলোড করতে পারেন।
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
দেখা যাক কদ্দূর কি হয়্। গুটিকয়েক রাজ্যবাদে মার্কিন দাদাদের সৌরচালিত যেকোন কিছুর উপর চরম অনীহা! ;))
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
টেকি বিষয়গুলো অতো বুঝি নাই, তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চালু হলে খারাপ হয় না 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
হু আমিও তাই বলি। এটলিস্ট ময়মনসিংহ পর্যন্ত তো একটা রুট থাকাই লাগে।
মজার বিষয় হচ্ছে ইলোন মাস্ক, হাইপারলুপের মত প্রযুক্তির ধারনা দিয়েছেন কিন্তু তিনি এটাও বলেছেন যে তিনি আর এটা নিয়ে কাজ করবেন না বা অগ্রস্রর হবেন না। উনি আশা করছেন ভবিষ্যতে অন্য কেউ এটা ডেভলপ করবেন কারন তিনি এখন তার মহাকাশ গবেষনা প্রতিস্থান এবং গবেষনা নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকবেন।
যুক্তি,সঠিক তথ্য,কমন সেন্স এবং প্রমাণের উপর বিশ্বাস রাখি