১।
পরীক্ষার কারনে কয়েকদিন হলে কাটিয়ে বাসায় ফিরে দেখি হুলস্থুল ব্যাপার। নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে- তাদের মাল-পত্র আনা নেয়া, লোকজনের হাঁকডাকে পুরো বাড়ি মাথায় উঠেছে। বাসায় ফিরে মা’কে খাবার দিতে বলে আমার ছোট বোন টুনিকে ডাক দিলাম। ওর নাম দিয়েছি আমি ‘এফ এম’, কলোনীর যে কোন ভাল-মন্দ খবর আমি সবসময় ওর কাছ থেকেই পাই।
-ভাইয়া, ডেকেছ? টুনি জিজ্ঞাসা করল।
-তোর রেডিও প্রোগ্রাম শুরু কর…
ভেংচি কেটে ও শুরু করল,
-গতমাসে হাসিব আংকেলরা তো বাসা ছেড়ে গেলেন, ওনাদের জায়গায় এসেছে জামান আংকেল। বাবার কলিগ, আগের পোস্টিং ছিল চিটাগাং এ। তাঁর এক মেয়ে- নাম শীলা। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। এতদিন হলে ছিল, এখন বাসায় থেকেই পড়াশুনা করবে। আন্টি খুব ভালো রান্না করেন। একটু আগে…
– কোন ডিপার্টমেন্ট এ পড়ে? – আমি বাঁধা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।
– কে?
-ঐ যে শীলা না কি নাম বললি…!
-ওহ্, শীলা আপু? তোমার ডিপার্টমেন্ট না…সম্ভবত মার্কেটিং বা ফাইন্যান্স এ সেকেন্ড ইয়ার এ পড়ে…আমার ঠিক মনে নেই…আপু খুব ভাল! আমাকে চকলেট খাইয়েছে…!!!
-তুই তো ঘুষখোর!! যা, গিয়ে দেখ মা খাবার দিল কি না…
টুনি আবার ভেংচি কেটে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেল।
পরদিন সকালেই শীলাকে দেখলাম, সম্ভবত ভার্সিটি যাচ্ছে। ও যখন ওদের প্রাইভেট কার এ উঠতে যাবে তখন আমি লিফট থেকে বের হচ্ছি। ওর দিকে তাকাতেই হালকা ধাক্কা খেলাম। মেয়ে তো ভয়ানক সুন্দরী! কোন মতে সামলে ছোট্ট করে একটি হাসি দিলাম। ভাল করে লক্ষ্য কা করলে দেখা যায় না- টাইপ হাসি ব্যাক করে ও গাড়িতে উঠে চলে গেল। আমি ধীরে-সুস্থে বাইক বের করে ভার্সিটির দিকে রওনা হলাম।
২।
এক মাস পরের ঘটনা।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোন ঘটনা ঘটে নি। মাঝে মাঝে বাসা থেকে বের হবার বা ফেরত আসার সময় শীলার সাথে দেখা হয়েছে। দু এক বার ‘হাই’ ‘হ্যালো’ও হয়েছে- এরচেয়ে বেশি কথা হয় নি। অবশ্য প্রায় প্রতিদিনই ওর আপডেট হোম ‘এফ এম’ এর কাছ থেকে পাচ্ছি। টুনিকে দেখলাম শীলার খুব ভক্ত হয়ে গেছে। কথায় কথায় শীলা আপু…শীলা আপু…
সেদিন আমার বন্ধু ফয়সাল বাসায় আসার পরও একই অবস্থা। টুনি ফয়সালের কাছেও শীলার গল্প করতে লাগল। ফয়সাল আমাদের ব্যাচের প্রেমিক পুরুষ নামে পরিচিত। প্রতিদিনই ওর দু একটি করে প্রেম হয়। তবে, আশার কথা হচ্ছে এর কোনটাই টেকে না। ফয়সালও ‘ব্যর্থতা সাফল্যের চাবি কাঠি’ মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে পরের প্রেমের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। বাপ বিশাল বড় লোক, এ কারনেই কিনা কে জানে- পড়াশোনা নিয়ে ওকে কখনো সিরিয়াস হতে দেখি নি। ভার্সিটি লাইফ এনজয় করাটাই ওর জীবনের এখন মূল লক্ষ্য। অবশ্য পড়াশুনা বাদে কালচারাল ইভেন্টস বা স্পোর্টস-এ ও খুব আগ্রহ নিয়ে অংশ নেয়। সত্যি কথা বলতে কি- ও আমাদের ভার্সিটির সেরা এথলেটদের মধ্যে একজন!
টুনির কাছে শীলার গল্প শোনার তিন-চারদিন পর অবধারিতভাবেই আমার কাছে খুব সিরিয়াসলি এসে একটা জরুরী কথা আছে বলে শুরু করল,
-দোস্ত, গতকাল শীলাকে দেখলাম। মাই গড! ওর তো পিঠে বিশাল দুটো ক্ষত চিহ্ন থাকার কথা!
-কি বলিস এসব??!!
-মানে, আগে যেখানে ডানা ছিল আর কি! ও তো রিয়েল ডানাকাটা পরী রে…!! আই থিংক, ফর দ্যা ফার্স্ট টাইম ইন লাইফ- আই এম ইন লাভ…!!
– কততম বারের মতন ফার্স্ট টাইম?? ফোঁড়ন কেটে জিজ্ঞাসা করলাম।
-ফান করিস না, থিস ইজ সিরিয়াস!
-আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু ও যদি ফাঁকা না থাকে, অর্থাৎ যদি কোন এফেয়ার থাকে??
– তেমন হলে তো কিছু করার নেই- কিন্তু ট্রাই করতে দোষ কি?
-ওকে ট্রাই কর…
-গুড! যা, এখন ওকে কি বলবি ঠিক করে ফেল…
-মানে??!!
– মানে হল- তুই আমার হয়ে ওর কাছে প্রপোজ করবি!
-হোয়াট! আমি কেন?
-কারন তোর মধ্যে ভালমানুষের একটা ছাপ আছে, তোরা একই বিল্ডিং এ থাকিস, তোরা এখন ফ্যামিলি ফ্রেন্ড- আর সবচেয়ে বড় কথা আমার নিজে ওর সাথে কথা বলতে ভয় লাগছে- এজ মাই বেস্ট দোস্ত, এই সম্মানটা আমি তোর কাঁধে দিতে চাই…প্লিজ দোস্ত! আমার জন্য এই কাজটা কর…প্লিজ!
কি আর করা! মহৎ বন্ধুর মতন আমি রাজি হয়ে গেলাম। অবশ্য, আগামী ছয় মাস ও আমাকে সিগারেট কিনে খাওয়াবে- এই শর্তটাও কিছুটা প্রভাব ফেলল…
৩।
-কি বলবেন বলে ফেলুন- শীলা অধৈর্য্যভাবে বলল।
-আমার বন্ধু ফয়সাল। খুব ভাল ছেলে। সম্ভবত দেখেছ ওকে, আমাদের বাসায় প্রায়ই আসে…
-হ্যাঁ দেখেছি…তো?
-না মানে…প্লিজ মাইন্ড করো না, ও তোমাকে খুব পছন্দ করে…আই মিন…ইউ নো হোয়াট…’ বলে নার্ভাস একটা হাসি দিলাম।
– ওহ আচ্ছা! তারমানে বন্ধুর হয়ে আমার কাছে ঘটকালী করতে এসেছেন?!
-আসলে ঠিক তা না, জাস্ট মেসেজটা তোমার কাছে পৌঁছে দিলাম আর কি…তো, হোয়াট ডু ইউ সে…??
– আমি বিবিএ পড়ছি জানেন তো?
-হ্যাঁ, টুনির কাছে শুনেছি…
– আমার মেজর মার্কেটিং এন্ড সেল্স…
কথা কোন এঙ্গেল দিয়ে কোথায় যাচ্ছে না বুঝেও সমঝদারের মতন মাথা ঝাঁকালাম।
-এখন আপনি আপনার বন্ধুকে আমার কাছে সেল করুন।
-মানে?
-মানে হল- ধরুন আমি একজন ক্রেতা, আপনার বন্ধু একটি প্রোডাক্ট আর আপনি সেলস পারসন। এখন আমাকে কনভিন্স করুন!!
বুঝলাম দেখে শান্ত-শিষ্ট, সহজ-সরল বলে মনে হলেও এ বড় কঠিন মেয়ে! ভয়ানক স্মার্ট! পাশাপাশি এটাও বুঝতে পারলাম, মেয়েটার সেন্স অব হিউমার খুব উঁচু লেভেল এর…
-ওকে! ওর নাম ফয়সাল, আমার জানে-জিগার বন্ধু। ব্যবসায়ী বাবা এবং গৃহিনী মা এর একমাত্র সন্তান। লম্বা ও সুদর্শন। কালচারাল প্রোগ্রাম বা গেমস এ খুব ভাল। আর সবচেয়ে বড় কথা খুব মেধাবী- জীবনে কোন দিন কোন পরীক্ষায় সেকেন্ড হয় নি…
-হুম, ইম্প্রেসিভ! তবে আমি আরেকটু ঘুরে ফিরে দেখতে চাই…ঠিক আছে?
-নো প্রবলেম, তাড়াহুড়ার কিছু নেই…
৪।
-আপনি সেদিন আমাকে মিথ্যে কথা বললেন কেন? বাসার নিচে নেমেই শীলার তোপের মুখে পড়লাম।
-কই না তো??!!
-আবার মিথ্যে বলছেন! আপনার বন্ধু সম্পর্কে আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি- তিনি মোটেও মেধাবী ছাত্র নন, ইনফ্যাক্ট উনি প্রতি বছরই খুব কষ্ট করে কানের পাশ দিয়ে গুলি যাবার মতন অবস্থায় পরীক্ষা পাশ করে যান।
– প্রথম কথা হচ্ছে, মেধাবী হবার সাথে ভাল-মন্দ ছাত্রত্বের কোন সম্পর্ক নেই…অন্তত আমার কাছে নেই। দ্বিতীয়ত, আমি বলেছি ও কখনো কোন পরীক্ষায় সেকেন্ড হয় নি- কথা তো সত্য! তুমি ধরে নিয়েছ ও সবসময় ফার্স্ট হয়ে এসেছে- এটা তোমার বোঝার ভুল!! আমি শুধু ও কখনো ফার্স্টও হয় নি- এই কথাটা চেপে গেছি…!!
শীলার ঠোঁটের কোনে সূক্ষ্ম হাসির রেখা দেখে ওর সেন্স অব হিউমারের ব্যাপারে নিশ্চিৎ হলাম। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আস্তে করে বলল,
-আপনার প্রোডাক্ট ভাল, তবে নট গুড এনাফ…
-তারমানে সেলস পারসন হিসেবে আমি ব্যর্থ??
-সরি! তবে প্রোডাক্ট পছন্দ না হলেও সেলস পারসনকে আমার পছন্দ হয়েছে…!!
-মানে??!!
শীলার চোখ-মুখ জুড়ে থাকা হাসি দেখে মানেটা বুঝতে আমার দেরি হল না। ‘এক মিনিট’ বলে সেলফোন বের করে দ্রুত একটা টেক্সট মেসেজ ফয়সালকে পাঠিয়ে দিলাম। গোল্লায় যাক ছয় মাসের ফ্রি সিগারেট!! “স্যরি দোস্ত, সি ইজ অলরেডি উইদ সামওয়ান…:D :P’’
সেই পুরাতন মোরাল অব দ্যা স্টোরি -
"কখনো মুরগী বাগাইতে শিয়াল পাঠানো যাবে না..............."
আহারে, ছয় মাসের ফ্রি সিগারেট মিস হয়ে গেল 😛
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
প্রথমবার একটি লাইন দিতে গিয়েও দিই নি...তোর ডাউটের কারনে একদম শেষে এড করে দিলাম... 😀
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
😀
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ভাই, কঠিন ভাল্লাগছে 😀 😀
যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
বেশ!
পুতুপুতু প্রেমের গল্প! 😀
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
জুনা মনে হয় অনেক দিন পর ফিরা আইলো, আর আইসাই ফাটাইল। :boss: :boss:
অ.ট. শীলার প্রেমে পড়তে মন চায় 😛
তোর তো মনে হয় এখনো বিয়া হয় নি...বয়স থাকতে এখনো বিয়া কর, খুতবার বাকি অংশ দেবে মোসাম্মত এ কে ৪৭ সামিয়া হোসেন... 😛
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
এই হেই, হইতেছে কি?
জুনা ভাই...অন ফায়ার।
হ্যালো, ফায়ার ব্রিগেড?? O:-) O:-)
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
শীলা নামে এ্যকোনোমিকসে দুই ক্লাস নিচে একজন ছিল 😀
আমার বন্ধুয়া বিহনে
আমাদের দুই ক্লাস উপরে ছিল...হু আ এর বেটি... 😀
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
@জুনা,
বহুদিন বাদে আইলি। ভালা লাগল। আর আইসাই জম্পেস একটা দিলি
দুই ক্লাস উপরে ছিল বইলা যার কথা কইলি হেতে কিন্তু এক এক্স ক্যাডেট এর বউ। 😀
ধন্যবাদান্তে,
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১
["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]
সেনাপতি যুদ্ধ জয়ের পর নিজেকে রাজা বলে ঘোষনা করলেন। জানা গেল পরাস্ত রাজ্যের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেন পরমা সুন্দরী রাণী। :party: :party: :party:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
চমৎকার গল্প।
অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে গুলি করা দুনিয়ার প্রায় সকল ক্ষেত্রে নিরাপদ হলেও অন্ত প্রেমের ক্ষেত্রে নয়।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
হক কথা
যুক্তি,সঠিক তথ্য,কমন সেন্স এবং প্রমাণের উপর বিশ্বাস রাখি