বড় জানতে ইচ্ছে করে-৩…!!!

[লেখাটি উৎসর্গ করছি আমার বন্ধু ও অনেক অপকর্মের সাথী ইসলাম (জেসিসি, ১৯৯৫-২০০১) কে…ওর সাথে কথা বলার সময়ই প্রথম আজকের প্রসংগটি উঠে এসেছিল…]

দৃশ্যপট-১: গ্রামের মেয়ে কুলসুম। যৌতুকের বিনিময়ে তার বিয়ে হয় একই গ্রামের রুস্তমের সাথে। ছেলেটা অকর্মার ধাড়ি, এবং নেশাখোর…কয়েকমাস যেতে না যেতেই, আরও টাকার জন্য সে দাবী করে কুলসুমের বাবার কাছে। দরিদ্র বাবা তার এ দাবী মেটাতে ব্যর্থ হলে কুলসুমের উপর শুরু হয় অকথ্য অত্যাচার। একদিন নেশাগ্রস্থ অবস্থায় রুস্তম কুলসুমকে লাঠি দিয়ে মারতে মারতে আধ-মরা করে ফেলে, পরে আশে-পাশের লোকজন এসে কুলসুমকে উদ্ধার করে এবং দ্রুত স্থানীয় সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করে। ডাক্তার বলেছে, কুলসুমের অবস্থা আশংকাজনক। ঘটনার পর থেকে রুস্তম পলাতক।
উপরের ঘটনাটি এক দৈনিক সংবাদপত্রে এসেছে-শিরোনাম ছিল ‘পাশবিক ঘটনা’…!!!

দৃশ্যপট-২: কিশোরগঞ্জ জেলার সুমাইয়াকে পাড়ার বখাটে ছেলেরা প্রতিদিনই স্কুলে যাওয়া-আসার পথে উত্যক্ত করত। ছেলেগুলোর অনেকের বাবা রাজনীতিবিদ হবার কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেত না। এক পর্যায়ে এক ছেলের কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ছেলেটি এসিড ছুঁড়ে মারে…এতে সুমাইয়ার শরীরের বেশ খানিকটা পুড়ে যায়…ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে পারলেও, তার এক চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে…এবং সুশ্রী মুখটি পুড়ে হয়ে গেছে কুৎসিত!!! ঘটনার পর থেকে এসিড-সন্ত্রাস ছেলেটি পলাতক…
‘পাশবিক’ শিরোনামে পরবর্তিতে এই ঘটনাটিও এক দৈনিকে প্রকাশিত হয়…!!!

ঘটনা দু’টি তো পড়লেন, এবার আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন…আপনারা কেউ কি কখনও দেখেছেন/শুনেছেন, যে কোন পশু অন্য কোন পশুকে বা মানুষকে কখনও এসিড ছুঁড়ে মেরেছে? কিংবা যৌতুকের দাবীতে কাউকে মারতে মারতে আধমরা করে ফেলেছে??? বিনা কারণে মেরে ফেলেছে অন্য কোন পশুকে???
নিশ্চয়ই নয়।
বরং আমার জানামতে কোন পশু, তা যতই হিংস্র হোক বা মাংসাশী হোক- অকারণে কখনোই কাউকে আঘাত করে না। শুধুমাত্র খাদ্যের চাহিদা মেটাবার জন্য, আত্মরক্ষার জন্য কিংবা খুব বেশি হলে সংগী/সংগিনী নির্বাচনের জন্য পশুরা একে অন্যের সাথে লড়াই করে।

এই দিক থেকে মানুষ সবার চাইতে আলাদা। প্রানীকূলের মধ্যে শুধু মানুষই অকারণে অন্য মানুষকে আঘাত করতে পারে। সামান্য কারণে করতে পারে খুনাখুনি। নেহায়েত শিকারের রোমান্স পাবার আশায় করতে পারে অকারণ প্রাণী হত্যা। মানুষের ভয়াল থাবার হাত থেকে বাঁচতে পারে না জল ও ডাঙ্গার নানা মৎস্য, প্রানী, উদ্ভিদ…!!!

এবার আপনারাই বলুন- কে বেশি হিংস্র??? কে বেশি নির্মম???
লেখার শুরুতে যে দুটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে শিরোনাম হিসেবে ‘পাশবিক’ দেয়া কি ঠিক হয়েছে???
বরং এসব ঘটনাকে ‘মানবিক!!’ বলাই কি বেশি যুক্তি-যুক্ত নয়????

বড় জানতে ইচ্ছে করে????????

১,৮১৫ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “বড় জানতে ইচ্ছে করে-৩…!!!”

  1. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    সবাই বলে আজকালকার মানুষ নাকি দিন দিন প্রবৃত্তির দিক থেকে পশু হয়ে যাচ্ছে 🙁 ব্যাপারটা তাইলে ভুয়া 🙁 🙁 কেননা পশু হয়ে গেলে অন্ততঃ এইসব অনাচার আমাদের আর দেখতে হতোনা।


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  2. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)
    এবার আপনারাই বলুন- কে বেশি হিংস্র??? কে বেশি নির্মম???
    লেখার শুরুতে যে দুটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে শিরোনাম হিসেবে ‘পাশবিক’ দেয়া কি ঠিক হয়েছে???
    বরং এসব ঘটনাকে ‘মানবিক!!’ বলাই কি বেশি যুক্তি-যুক্ত নয়????

    বড় জানতে ইচ্ছে করে????????

    :boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :boss:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  3. আলম (৯৭--০৩)
    যে দুটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে শিরোনাম হিসেবে ‘পাশবিক’ দেয়া কি ঠিক হয়েছে???
    বরং এসব ঘটনাকে ‘মানবিক!!’ বলাই কি বেশি যুক্তি-যুক্ত নয়????

    আরেকটি ঘটনা মনে করুন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর, নয়া পল্টন এলাকায়, রাজপথে। লগি-বৈঠা দিয়ে ক্রমাগত পিটিয়ে, খুঁচিয়ে 'মানুষ' মেরে ফেলা হলো; মৃত নিশ্চিত হওয়ার পর তার লাশে চড়ে নৃত্য শুরু হলো। অসংখ্য টিভি ক্যামেরার লাইভ শো-র সামনে 'রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে' নিয়ে কী 'মানবিক' আচরণটাই না হয়েছিলো সেদিন!!

    জবাব দিন
  4. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    ধাক্কাটা ভাল হইসে...
    আমাদের অধিকাংশ আচরণই আসলে পশুদেরকেও লজ্জায় ফেলে দেওয়ার মত...


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  5. আলম (৯৭--০৩)

    আজকে শফিক রেহমানের একটা কলাম পড়লাম; সেখানে একটা কুকুরের সাক্ষাত্কার তুলে ধরা হয়েছে; সে বলে,

    ...মানুষের সঙ্গে কুকুরের অনেক তফাত আছে। আমরা কুকুররা কখনো বেইমানি করিনা। আমরা জুতা ছুঁড়াছুঁড়িও করিনা। কারণটা অবশ্য দৈহিক। কারণ আমাদের যে চারটি পা আছে সেগুলো হাতেরও কাজ করে। তাই আমরা জুতা পরিনা। তাই জুতা কালচারের অভিজ্ঞতা আমাদের কখনো হয়নি।...
    জবাব দিন
  6. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    আমরা একটা ঘোরের মধ্যে আছি বলে মনে হয় আমার। আমরা সবসময় বিশ্বাস করতে চাই যে মানুষ যখনই কোন খারাপ কাজ করে তখন তা পশুর মত কাজ হয়। কিন্তু এর উল্টোটাই সত্যি বলে মনে হয় আমার। হাতির মধ্যে যে মানুষের চেয়ে বেশি সামাজিকতা ও ঐক্যবদ্ধতা বিদ্যমান তা আমরা সবাই জানি। অনুরূপভাবে তীব্র মাতৃত্বতার পরিচয় দেয় বাঘ,সিংহ,বানর ইত্যাদি প্রশু। আর মানুষ কি করে তাতো জুনায়েদ ভাই উল্লেখ করলেনই। ঘোর থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে। কিন্তু তাই বলে খারাপ যেকোন কাজকেই যদি মানবিকতা বলা হয় তবে এই বিশ্বে যারা ভালো মানুষ আছেন তাদের অসম্মান করা হয়। তাই এর জন্য নতুন কোন শব্দের প্রয়োযন বোধহয়।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।