‘নিজের বাড়ির আলাদা একটা ঘ্রান আছে’-মনে মনে ভাবলেন আমানুল্লাহ্ চৌধুরী। কই,থাইল্যান্ডএ গত দুবছর যে এক বাসায় থাকলেন একবারও তো এই ঘ্রানটা পেলেন না…অবশ্য পাবেনই বা কি করে? ছিলেন পুরো দৌড়ের উপর। দেশে দূর্নীতি দমনের নামে যে ধর-পাঁকড় শুরু হল তা থেকে বাঁচার জন্য প্রথমে ঢাকা-দুবাই, এরপর দুবাই-লন্ডন সবার শেষে লন্ডন-ব্যাঙ্কক! থাইল্যান্ড গিয়েও কি শান্তি ছিল? দলীয় কোন্দল, বেইমানির ভয়, স্থানীয় পুলিশের ভয়- আরও কত কি!!! ভাগ্যিস হাই কমান্ডের ভাল সাপোর্ট ছিল, তা না হলে কি হত কে জানে?? ‘নাহ্, দুইটা বছর খুব কষ্টে গেল!’ পাঁচ বছর প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় শরীরে যে চর্বি জমেছিল তা এই দুই বছরেই উধাও। তবে, লাভ যে একেবারে হয় নাই তা না। এবার তিনি যে শিক্ষা পেলেন তা জীবনে অনেক কাজে লাগবে। এখন থেকে প্রতিটা পদক্ষেপ ফেলাতে হবে খুব সাবধানে, মেপে মেপে। তবে সবার আগে এলাকার মানুষগুলোকে সাইজ করতে হবে। ওরা হয়ত ভুলেই গেছে তিনি কে এবং কি করতে সক্ষম…আর দেরী করা যাবে না, এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে…আগামী দুএকদিনের মধ্যে নির্বাচনী তফসিল নাকি ঘোষনা করা হবে। সুতরাং…
-‘আক্কাস…এই আক্কাস!’
-‘জ্বি স্যার।’
– ‘কামরানকে আমার কাছে আসতে বল।’
-স্লামাইকুম স্যার!
পার্সোনাল সেক্রেটারী কামরানকে দেখে আমানুল্লাহ্ সাহেবের মনটা প্রফুল্ল হয়ে গেল। জিনিয়াস একটা ছেলে। মাথার মধ্যে বুদ্ধি গিজগিজ করে ওর। এবং অবশ্যই কূটবুদ্ধি! গতবার ওর কৌশলের কারনেই দল থেকে নমিনেশন পেয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে জয়ীও হয়েছিলেন।
– ‘ওয়াআলাইকুম স্লাম! আস আস কামরান। তোমাকেই তো এখন দরকার।’
– ‘স্যার, কালকে আপনাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে যেতে পারি নি, আপনার কেইসগুলোকে সাইজ করতে আদালত গিয়েছিলাম…’
-‘আরে, আমি জানি জানি! তা কেসগুলার লেটেস্ট খবর কি?’
-‘খবর ভাল স্যার। সবগুলোয় জামিনের ব্যবস্থা হয়ে গেছে…তাছাড়া এক এক করে ওগুলো খারিজ করার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছি…আর মাসখানেকের মধ্যে আপনি পুরা মাসুম বাচ্চার মত নিষ্পাপ হয়ে যাবেন…!’
– ‘হা হা হা…ভাল বলছ!! তবে একটা ব্যাপার, খুব ধীরে সুস্থে এগুবে…কোথাও কোন খুঁত যেন না থাকে…’
-‘আপনি কোন চিন্তা করবেন না স্যার, কোন ভুল হবে না।’
-‘স্যার, আরেকটা কথা, আপনার নামের আগে আলহাজ্ব শব্দটা দিতে চাচ্ছি…’
-‘সে কি? কিন্তু আমি তো হজ্জ্ব করি নি…’
-‘আপনি এই দুই বছরে থাইল্যান্ড ছিলেন না সৌদি আরব ছিলেন তা তো জনগণ বেশীরভাগই জানে না…তাই আমার মনে হয় কোন সমস্যা হবে না। নির্বাচনের জন্য পোস্টার ছাপাতে হবে, সেখানে আলহাজ্জ্ব থাকলে জনগণ খুব খুশি হবে! আর এখনও করেন নি তাতে কি? আবার মন্ত্রী হয়ে হজ্জ্বটা নাহয় করে আসবেন…’
আলহাজ্জ্ব মোঃ আমানুল্লাহ্ চৌধুরী। নাহ্, শুনতে তো খারাপ লাগছে না! মনে মনে সেক্রেটারীর উপর আবার খুশি হয়ে গেলেন। ‘ছেলেটা আসলেই জিনিয়াস, আর খুব করিৎকর্মা।’
-‘আচ্ছা, ঠিক আছে, আলহাজ্জ্ব দিয়ে দাও। আর সবাইকে বল প্রচারণার জন্য তৈরি হতে। কাল থেকে আমরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করব। আর এখনি যেন কেউ কোন হার্ড লাইনে না যায়। এই মুহূর্তে আমি এই সরকারকে কোন সুযোগ দিতে চাই না, একবার নির্বাচিত হয়ে নেই তারপর দেখে নেব কত ধানে কত চাল…আমার নামে যারা মামলা করেছে তাদের সবকটাকে আমি নিজে দেখে নেব…’
– ‘স্যার, আমি তাহলে এখন আসি, আপনি বিশ্রাম করুন’
– ‘ঠিক আছে, যাও।’
-‘স্লামাইকুম স্যার!’
-‘ওয়াআলাইকুম স্লাম।’
-‘বাবা, আসব?’
চমকে ঘুরে তাকিয়ে আমানুল্লাহ্ সাহেব দেখলেন দরজায় তার একমাত্র ছেলে জামান দাঁড়িয়ে…ছেলেটা কি দুই বছরে অনেক বড় হয়ে গেছে নাকি? হবে হয়ত…চেহারায় তো পুরো বড় বড় ভাব চলে এসেছে। কত হয়েছে ওর বয়স ১৪ নাকি ১৫? ডায়েরীটা দেখতে হবে! আর চোখটা…তাই তো! চোখটা হয়েছে ঠিক ওর মায়ের মতন। ওর মা পাঁচ বছর আগে যখন ক্যান্সারে মারা যায় তখনও ওই রকম উজ্জ্বল ছিল। মৃত্যু যন্ত্রনা, দীর্ঘদিন রোগভোগ চোখের দ্যুতিকে এতটুকু কমাতে পেরেছিল না…
-‘আয় বাবা, কেমন আছিস?’
-‘তোমাকে একটা প্রশ্ন করতে এসেছি…’
-‘কি বল্?’
-‘তুমি কি সত্যিই ত্রাণের টিন, চাল-গম, কাপড় আত্মসাৎ করেছিলে? কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছিলে? মানুষ খুন করিয়েছিলে??’
-‘কে বলেছে তোকে এসব আজে-বাজে কথা?’
-‘আগে তুমি বল, কথাটা সত্যি নাকি মিথ্যা।’
এই পর্যায়ে আমানুল্লাহ্ সাহেব নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে এগিয়ে গিয়ে ঠাস্ করে চড় বসিয়ে দিলেন জামানের গালে।
-‘বেয়াদপ কোথাকার! বাবার মুখে মুখে তর্ক করিস…’
-‘তোমার কথা বলে আমার ক্লাসমেটরা আমাকে খেপায়…বলে কিনা চোরের ছেলে! টীচাররাও হাসাহাসি করে…প্লিজ বাবা! বল, তুমি ওসব করেছ কি না…মায়ের কসম, প্লিজ, সত্যি কথাটা বল…’
-‘শুনতে চাস? হ্যাঁ, আমি করেছি…এখন যা এখান থেকে!’
এই পর্যায়ে পকেট থেকে জামান রিভলবার বের করল। দেখেই আমানুল্লাহ সাহেব চিনতে পারলেন- ওটা তারই রিভলবার। ওটা দিয়েই তো তিন বছর আগে এক শিক্ষককে তিনি…
-‘কি করছিস তুই? রেখে দে ওটা, গুলি বের হয়ে যেতে পারে…’
-‘তোমার মত রাক্ষসের আজ কোন রেহাই নাই…’
-‘আক্কাস! কামরান!’ ঘেমে নেয়ে চিৎকার করে ডেকে উঠলেন তিনি।
-‘জ্বি স্যার’
বলে কামরান হুরমুর করে ঘরে ঢুকল এবং থমকে দাঁড়াল। সেকেন্ড পাঁচেক একবার তার দিকে একবার জামানের দিকে তাকিয়ে পরিমরি করে ছুটে ঘরের বাইরে চলে গেল। ‘ছেলেটা আসলেই বুদ্ধিমান’- দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলেন আমানুল্লাহ্ সাহেব।
ঠাস্! ঠাস্
দুটো গুলি খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেন তিনি। মারা যাবার আগে মেঝেতে গড়াগড়ি খেতে খেতে আমানুল্লাহ্ সাহেব আবার টের পেলেন নিজ বাড়ির আসলেই একটা ঘ্রাণ আছে…!!!
হুমমম... রাং দে বাসন্তী... শুরুটা দারুন লাগসে ভাই। গল্পটা অনেক তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। আরেকটু বড় করআ যায় না।
এহসান ভাই, ঠিকই বলছেন, আমি তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্যই এণ্ডিং ওরকম করেছি...নতুন নতুন
লিখছি তো...বেশী বড় হলে আবার গুলিয়ে ফেলতে পারি-এই ভয়ে আর এগোলাম না... :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
চমৎকার শুরু এবং সেরকম সমাপ্তি :boss: :boss:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
দোস্ত, জটিল হইছে......... :clap: :clap: :clap: :clap:
খুব সময়োপযোগী গল্প। খুব ভালো লাগলো।
পলিটিশিয়ানের নামটা কি কারও কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রাখা। আমানুল্লাহ চৌধুরী নামে কিন্তু আসলেই একজন পলিটিশিয়ান আছেন। আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে গত দুই বছরই এমপি ইলেকশন করে জিতেছেন।
দুই টার্ম হবে মনে হয়,
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
কারও কথা ভেবে করিনি...নামে কি বা এসে যায়? সব স্লা রা একই রকম...উনিশ আর বিশ- এই যা... x-(
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
:clap: :gulti:
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
কবীর ভাই!মিয়া আপনেরে তো ডজ দেওয়া পাবলিক বইলা ঝান্তাম আপনের কলম দিয়া এইডা কেম্নে বাইরাইলো?জিহাদ আমারে যা জিগাইছিল সেইটাই আপ্নেরে জিগাই-সত্যি কইরা কন কে লিখা দিছে? 😀
:shy: :shy:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
হাহ হাহ হাহ... :)) :))
Life is Mad.
এই কাল্পনিক গল্পগুলি সত্যি হউয়া দরকার। কবে যে হবে!
জুনায়েদ ভালো ছিলো। :boss:
তুই তো বেশ সিরিয়াস লেখা লিখতে পারস দেখি। 🙂 🙂
চালিয়ে যা তোরা সব
হোস না হতোদ্যোম,
উৎসাহ দিয়ে যাবে
তোদেরকে এ অধম।
আপনারা আছেন বলেই এগিয়ে যাবার দিশা পাই,
পাশে আছেন,থাকবেন জানি-তাই তো কোন চিন্তা নাই...
তবে, সবার আগে ধন্যবাদ সিসিবি ও তার টেকি'দের
'লিখতে পারি'- এটাই জানা ছিলনা আমাদের অনেকের।
সাহস পেয়ে, প্রশ্রয় পেয়ে কিছু কিছু লিখছি...
মান হয়ত তেমন হবে না, সবে তো এসব শিখছি...
ধীরে ধীরে বুঝতে শিখব, বাড়বে লেখারও মান...(আশা করি!)
ব্লগে পাব সব কিছু- ছড়া, কবিতা, গল্প, গান...
সবশেষে সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।
সিসিবি অমর হোক, সিসিবি জিন্দাবাদ!!! :clap: :clap:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
কবীরের মনের কথা বুঝতে পেরে,
কবীর ভালো ছিলো। :boss:
তুই তো বেশ ছড়াও লিখতে পারস দেখি। 🙂 🙂
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
ফৌজিয়ান ভাই, আপনে একটু বেশীই কন... :shy: :shy:
আমি তো লজ্জায় সবুজাভ-কালচে-নীল হয়ে গেলাম... 🙂
(কালা মানুষ! চাইলেও লাল হবার পারি না!!! :-B )
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
কবির তুসি গ্রেট হো 😀 😀
দাদা আরেকটা লিখা দিয়ে দে, 🙂
ভালোইতো লিখিস 😛