আমাদের গল্পটার শুরু গ্রীষ্মের কোন এক মধ্য দুপুর থেকে। অন্য দুপুরগুলোর মত সেই দুপুরটাও অলস হতে পারত, কিন্তু সেদিন দুপুরের অলসতার সুযোগ ছিল না। কারন সেই দুপুরে দেশের বিভিন্ন জায়গার,বিভিন্ন চেহারার কিছু ছেলের ‘আমি থেকে আমরা’ হবার দিনের সূচণা হতে চলেছিল।০৭ মে,২০০২ সালের সেই রৌদ্রজ্জল দুপুরকে সাক্ষী রেখে আমরা একে একে খাকী পোশাকে নিজেকে জড়াই, আর নিজের অজান্তে ৫৪টি মন কখন যেন নিজেদের মত করেই জড়িয়ে গেছে, নির্দিষ্ট দিন ক্ষণের তোয়াক্কা না করেই। তারপর থেকেই আমাদের গল্পের এগিয়ে চলা।
চৈত্রের আগুনঝড়া দুপুরে সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি,কালো অক্সফোর্ড আর তপ্ত লবন-পানি’র বিরতি। নির্দয় প্যারেড গ্রাউন্ড আর নভিসেস ড্রিলের প্র্যাক্টিস।এই ড্রিল না হলে নাকি ‘ক্যাডেট’ হওয়া যায় না। নভিসেস ড্রিলের পালা চুকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাই, কাঁধে একটি দুটি করে দাগ বাড়তে থাকে। এক পা দু পা করে আমাদের গল্পে যোগ হয় কতশত কথা,গান,হাসি,কান্না আর দিনযাপনের স্মৃতি। এভাবেই মহাকাব্যিক ছয় বছর শেষ করে কলেজ থেকে বের হই চোখে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে।
প্রথমেই এক পার্টি আর্মিতে চলে যায়। দেশের সেবা করবে একদম প্রথম সারি থেকে। শত্রু দেশের মাটি ছোঁয়ার আগে তাদের টেক্কা দিয়ে যেতে হবে। এই বাসনা আর মনোবল নিয়ে মাহমুদও আর্মিতে জয়েন করে। দুই বছরের বিএমএ ট্রেণিং শেষ করে গায়ে জলপাই রঙের ইউনিফর্ম জড়ায়। সেদিনের সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি পড়ে প্যারেড করা ছেলেটা বাংলাদেশ আর্মির একজন গর্বিত ব্রিলিয়ান্ট অফিসার হয়ে যায়। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় আর্মির স্কোয়াডকে। আমাদের চোখের মাহমুদ সেই ২০০২ এর মাহমুদই রয়ে যায়। দেখা হলে যেই টিজ নামটা ছিল সেটাতেই ডাকি।আমাদের গল্পের ক্যারেক্টার তো আমরাই সিলেক্ট করি।
আমাদের সহজ সরল, আনন্দ মাখা জীবনে সেদিন একটা বাঁধা পড়ে যায়। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় মাহমুদ। চালক না হওয়ার পরও আঘাতটা গুরুতর ছিল। হেলিকপ্টারে ঢাকায় এনে অপারেশন করা হয় পায়ে। সেখানেই থেমে যেতে পারত এই অলুক্ষণে সময়ের কথাগুলো। কিন্তু কিছুদিন পরে সেখানে ইনফেকশন দেখা দেয়। যেটার চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ব্যাংককে।সেখানে একটি অপারেশন ইতিমধ্যে করা হয়েছে, আরেকটি তিন মাস পর। এই তিন মাস থাকতে হবে বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে। আর এসব মিলিয়ে খরচ পড়বে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষের অধিক টাকা। যেটা মাহমুদের পরিবারের একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
অনেক কথাই লিখলাম,আরও অনেক স্মৃতিই লিখা যাবে। আসলে এই কথাগুলা বলার উদ্দেশ্য মাহমুদের জন্য সাহায্য চাওয়া। আমাদের বন্ধু মাহমুদের জন্য,উপরন্তু লেঃ মাহমুদ এর জন্য সাহায্য। একজন তরুণ আর্মি অফিসারের জন্য সাহায্য। যে নিজের জীবনকে বাজি রাখার শপথ নিয়েছে আমাদের দেশটা রক্ষা করার জন্য। তার জন্য একটু চেষ্টা আমরা করতেই পারি। আমরা সবাই চাইলে আমাদের গল্পটা এখনো সুন্দরভাবে চলতে পারে। মাহমুদ সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারে। সবার নিজস্ব অবস্থান থেকে শুধুমাত্র সর্বোচ্চটা করতে পারলেই আমাদের হারতে হবে না। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে ৫০ লাখ টাকা হয়তো কিছুই না। কিন্তু আমাদের কাছে একজন মাহমুদ এবং দেশের কাছে একজন লেফটেন্যান্ট মাহমুদ অমূল্য সম্পদ। একটু চেষ্টা করে তো দেখাই যায় সবাই মিলে।
সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা
Name: Md. Sabbir Ahmed Shourov
A/C No.- 123.101.75793
DBBL
বিকাশ নম্বর-
01733000304 (তন্ময়)
01914272916 (মঞ্জুর)
মাহমুদ ইনশাআল্লাহ ভাল হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।
এই প্রার্থণা করি।
সৈয়দ সাফী
একটু চেষ্টা করে তো দেখাই যায় সবাই মিলে।
:duel:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
অবশ্যই ফিরে আসবে মাহমুদ। অবশ্যই। আগের মতোই প্রানচঞ্চল হয়ে।
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
🙂 ইনশাআল্লাহ তিনি ফিরে আসবেন।
অবশ্যই আসবে মাহমুদ, আগের মত হয়েই 🙂
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
এখন কি অবস্থা ভাইয়ার? আর ফাইনান্সিয়াল এইড কত দূর কি হোল ভাই?
আমার ডিপার্টমেন্টে একটা ফ্রেন্ড এর ২ টা কিডনি নস্ট হয়ে গেছিল। ২০ লাখ এর মত টাকা লেগেছিল। আমরা বিভিন্ন ব্যাংক, এজেন্সি তে যোগাযোগ ছাড়া ও ঢাবি ক্যাম্পাস ও ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বক্স নিয়ে ঘুরেছি টাকা তুলতে। অনেক অনেক বাজে বাজে কথা ও শুনতে হয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা ওই ফ্রেন্ড কে সুস্থ করতে পেরেছি। আমার কথা হচ্ছে, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে লজ্জা ভুলে আমাদের আবার পথে নামার প্রয়োজন হলে ও মানা উচিত।
অবস্থা এখন মোটামুটি। পরশুদিন ব্যাংকক থেকে দেশে ব্যাক করবে, আবার ২ মাস পর যেতে হবে। তখনও আবার প্রায় ৪০ লাখ এর মত টাকা দরকার। আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করছি। মানুষের সাড়াও পাচ্ছি। প্রথম ধাপে যে ৪০ লাখ টাকার মত উঠছে সেটা ম্যানেজ হইছে আর্মি, এক্স ক্যাডেট,মাহমুদের পরিবার এবং দেশের অনেকেই মিলে। এখন পরের ধাপের জন্যও রেডী হতে হবে।
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
কান্তি আসলাম। লেখাটা আগেই পড়েছি। বলার তো কিছু নাই। করার আছে। করার চেষ্টা থাকবে অবিরত।
Prisoner of Own Mind
:thumbup: অবশ্যই
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
ইনশাআল্লাহ তিনি আবার ফিরে আসবেন আমাদের মাঝে।
ইনশাল্লাহ আমরা এই যুদ্ধ জয় করব....
ধন্যবাদান্তে,
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১
["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]