প্রতিদিন আমার যাত্রাপথের সময়টুকু আমি খুব অনুভব করি।
কিছুদিন আগেও ঝাঁ ঝাঁ রোদ ছিল না, বেশ মোলায়েম একটা বাতাস থাকতো, অনেক সময় আকাশ ঘন ধূসর হয়ে থাকতো আর সাথে একটা শীতল বাতাসও বইতো, আমার খুব ভাল লাগতো। এখন সেরকম নাই, শুষ্ক বাতাস ডাইনির মতো উড়ে বেড়ায়, সাথে চড়চড়ে রোদ! চামড়া পুড়িয়ে রোদের ঝাঁজ মাংশে গেঁথে যায় বলে আমি শিহরিত হই, যদিও এমন শিহরণে ক্রমশ মজে থাকা যায় না! নেশা ছুটে যাবার মত জেগেও উঠি।
তারপরে একটা সময়ে আমি হাঁটতে শুরু করি। আমার চলার পথে দুটো স্কুল পড়ে। সেখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুল শেষ হয়, একদম দশটা এগারোটার দিকেই। হয়তো তাদের কাছে দিনের ক্লান্তি তখনও ধরা দেয়নি, তাই রেলিং দেয়া ফুটপাতে তাদের ছোটাছুটি থামে না! আমার ভাল লাগতে থাকে, ধীরে ধীরে আমি ক্ষতহীন, শোকহীন হয়ে উঠতে থাকি।
এখানে সেই রোদে আমার কেবলই তাদের মতো হয়ে যেতে মন আঁকুপাঁকু করে। এখন জীবনের হিসেবগুলো বদলে গেছে, জটিল হয়ে গেছে সরল অঙ্ক। এখন আমাকেও কথা বলার আগে দু’বার ভাবতে হয়, যাকে বলছি, যে শুনছে সে কীভাবে নিতে পারে। আমার কথার ভিত্তিতে আমাকে সে যাচাই করবে যেহেতু আমাকে সে পুরোটা চেনেনা। এই জীবন এতো গতিময় হয়েছে আর আমরা গতির ঘূর্ণনে ক্রমশই অপরিচিত হয়ে উঠছি একে অপরের কাছে। এখন ক্ষণিকেই আমরা মিলিত হই, সহবাসেও সম্ভবত ক্ষণিক-পুলকই সার! আমরা বিজ্ঞাপন পছন্দ করি, রোজ রোজ ২০ মিনিটের ডেলি-সোপ চুষে চুষে খাই। খবরের মাঝেও বিরতি দেখি। তিন ঘন্টা মুভি এখন বিরক্তিকর একঘেয়েঁমি।
তাই আমার ওদের মতো হতে ইচ্ছা করে। ওরা নিশ্চয়ই এখনও দীর্ঘ দিন কাটায়! একটু এগুতেই দেখি দু’জনে মিলে একটা ফাঁকা স্কুলভ্যান ঠেলছেন। সামনের জন বালক, পেছনের জন বালিকা। ক্লাশ ওয়ান, কি টু। কী একাগ্রতায়, নিবিষ্ট আগ্রহে ঠেলা ঠেলি চলছে, কোথায় নেবেন তারা স্কুল ভ্যানটিকে? চালক নাই, এই ফাঁকে ‘চল, ঐটা ঠেলি!’ বলে হয়তো দু’জনে জুটে গেছেন। যূথবদ্ধ খেলায় হয়তো তারা মজা পাচ্ছেন না আজ। বালিকাটিও বেণি সরলদোলকের মত দুলিয়ে পিছু নিয়েছেন। আমার মনের ভেতর কোমল হয়ে গেল…
কিন্তু আর সকল চলমানতার সূত্রানুযায়ী, আমি একটু পরেই স্কুলভ্যান ঠেলক-ঠেলিকাদ্বয়ের দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে এলাম। সামনের রেলক্রসিংয়ে আটকে আছি। ঘট ঘট করে দানবীয় ট্রেন যাচ্ছে। সাথে চারকোণা ফ্রেমে মুখেদের আটকে নিয়ে চলে যাচ্ছে দূরে। আমি দেখতেই ভাবি, অনেকদিন ট্রেনে চড়ি না! কতদিন? বুঝতে পারলাম যে আমিই হয়তো ট্রেনের কাছ থেকে দূরে সরে গেছি। ও তো আগের মতোই একই রেলের ওপর দিয়ে দিন রাত দৌড়ে চলছে। আমিই খালি তার চলপথের আড়াআড়ি যেতে চাই, সমান্তরালে নয়!
একটা পর্যায়ে গুলশান চলে আসে। আমার কাছে গুলশানের ফুটপাত খুবই উদ্ভিন্ন যৌবনা মনে হয়। আমি তখন ধীরে ধীরে রেলিং দেয়া সেই শিশুসমারোহী ফুটপাত ভুলে যেতে থাকি। কিংবা হয়তো তারা আমার সাথেই চলে এসেছে, শার্টে, জামায়, হাতায় অণু-পরমাণু হয়ে মিশে মিশে? কেননা অফিসে বসেও আমি ভুলি না। ক্লাশ নিতে নিতেও আমি ভুলি না। সহকর্মীর সাথে লাঞ্চ করতে করতেও ভুলি না। আমার করোটির মাঝে স্কুলভ্যানের চাকার মন্থর ঘূর্ণন জমে পাথর হয়ে থাকে!
***
২/৩/৯
=====
– অনীক আন্দালিব
[সামু-তে লেখা দেই না, ভাবলাম সচলে দেই। ওখানেও সদস্য হইলাম। একটা লেখা অতিথি হিসেবে দিছিলাম, দেখি প্রথম পাতায় চলে আসছে। না আসলে ভালো হতো, সিসিবি তে দুই তারিখেই দিতে পারতাম। প্রথম পাতায় চলে আসায় সেটা করা গেল না! অনেক নিয়ম কানুন আছে।
আমার মন এখনও স্থির হয় নাই। চাকরি করি বলে কোথাও কোন অনুষ্ঠানে থাকতে পারি নাই (আমার অফিস আবার রাতে)। এজন্যে কুণ্ঠাভরে এই ক’দিন অফলাইনে ছিলাম। কথা বলার ছিল না বলে, চুপ ছিলাম। আজকে মনে হলো একটু হালকা করি! সবার কী খবর?]
প্রথম
২য় 😀 😀 😀
বেশি জোসসস্ :boss: :boss: :boss: :boss: :boss:
থ্যাঙ্কু সাজিদ!
৩য় 😀 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আন্দালিব ভাই
হাফ সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে আছেন....তার জন্যে আগাম শুভেচ্ছা...
ওহ! আরো পাঁচটা! অনেক বাকি! 😛
ভালো আছেন?
লেখাটা ভালো।
ভালো লেখার লেখক ভালো নাই।
ভাই, চিন্তা কৈরেন্না একটু টাইম্লাগ্বে। সিসিবিই আপনাকে ভালো করে দিবে দেখবেন।
মন স্থির করার চেষ্টা কর...যেভাবে সম্ভব...বাই হুক অর বাই ক্যাপ্টেন কুক... :-B ;;;
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
হুক ? কিসের হুক ? ;;;
হুক, ক্রুক, ঝাড়-ফুঁক কিছুতেই হইতেছে না! 🙁
কামরুল ভাই... 😮 😮 😮
অনেকদিনের ভেন্না পাতার আবাস ব্যাপক শোকের ভ্রান্ত সব প্রতিক্রিয়া দেইখা ছাড়ছোস, কষ্ট তো একটু লাগবোই
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
:(( :(( :((
:bash: :bash:
:(( :((
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
এইডা কি হইল??মিজাসটা আইকুম বাইকুম করতাসে। ~x( ~x( ~x(
সরি ভাইয়ারা।মাথা আমার খারাপ হইয়া গেসে। মহিবের অ্ন্তর্বাস দ্বন্দ লিখাটার কমেন্ট দিতে গিয়ে এই লিখায় দিয়ে দিয়েছি।আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
দুঃখ দেখাইয়া লাভ নাই। এখন তাড়াতাড়ি লেখাটা পড়ো, আর বলো কেমন লাগলো! 😀
অন্তর্বাস দেইখা নাসির ভাইয়ের মাথা ঠিক ছিলনা মনে হয় :khekz: :khekz:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
:)) :))
সহমত
লেখাটা ভালো লাগলো। 🙂
পাইছি আজকে 😀 আগেই সন্দেহ করছিলাম :-B এইবার নিশ্চিত হইলাম আন্দালিব ভাই :guitar: এই লেখা সচলে পড়ে আর লেখকের নাম আন্দালিব পড়ে বুঝছিলাম এইটা আপ্নে হওয়ার গ্রেট চান্স আছে। কিন্তু গাইড বুক না থাকায় তখন নিশ্চিত হইতে পারি নাই 🙂
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আন্দালিব তো বেশি নাই, যারা আছেন, তারা এক একজনের লেখার স্টাইল অনেক ডিফারেন্ট!
আমার লেখা দুইবার পড়লা এই জন্যে তোমাকে দুটা ধন্যবাদ! :clap: :clap:
বাথরুমে গিয়া হাউমাউ কইরা কান্দো, এরপর মুখে পানি মাইরা বাইর হইয়া আস।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
কানতে পারি না ফয়েজ ভাই, খালি গলার মইদ্যে তাল তাল দলা-পাকাইন্যা কষ্ট বান্ধা থাকে! ভাল্লাগেনা বালছাল!(স্যরি, এইটাই মনে আইলো খালি... মাইন্ডাইয়েন না! 🙁 )
ঠিকই বলসেন ভাই। এই বিশাল দুনিয়া চোখের সামনে ক্রমশ: যত বড় হয়ে ধরা দেয় আমারও ততো বেশি ছোট মানুষ হতে ইচ্ছে করে।
মন ভাল হয়ে যাবে। সমস্যা নাই। 🙂
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
হুম সব ঠিক হয়ে যাবে...
সময় নে আন্দা । আর ভেবে দেখ কি করা যায়, আর যারা কাজ করছে ওদের সংগ ছারিস না । লেখাটা পড়ে চোখের কোনা দুটা কেন যেন ভিজে উঠলো ।
দেখি, ঐখানের মন্তব্যটাই কপি করে দেইঃ
www.tareqnurulhasan.com
হাঁ, আপনারে চিনছি। অনেকেই আইসা আমাকে বলে চিনতে পারছি, কিন্তু নিজের পরিচয় টা দেয় না! :bash: :bash:
আমি কী অন্তর্যামী যে নিজেই বুইঝা নিবো! :guitar:
ভালো থাইকেন বস্!
আন্দালিব ভাইডি,
আমারে ঠিক কইরা কও ত এটা কি? কবিতা, না ছোটগল্প?
কষ্ট বা আনন্দ পাওয়ার আগে ত আমাকে বুঝতে হবে যে এটা কবিতা না ছোটগল্প। নাকি?
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
এইডা দিনলিপি.... :-B
😮 😮
বুঝছি। এইখানে আমার বেইল নাই...... ~x(
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ ভাই, আপনারই বেল বেশি! এইটা দিনলিপি, গল্প, কবিতা সবই ট্যাগানোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু পরে ভাবলাম কেউ কনফিউজ হবে এজন্যে দেই নাই!! 🙂
এখন বলেন, কষ্ট পাইছেন, না আনন্দ?
হাহাকার....
বুকের গভীরে জন্ম নিয়েও ওখানে তার বসত নাই।