আজকে রোদ উঠেছে। চড়চড়ে তামাটে করে দেয়া রোদ। সরাসরি চামড়ার ভাঁজে ঢুকে যাচ্ছে। আমি বাইরে বেরিয়েছি সকালেই, এক বন্ধুর সাথে। সে বাসায় এসেছিল, ওকে নিয়ে বেরিয়েই টের পেয়েছি তুমুল উৎসবে মেতেছে সূর্য। অনেকদূর থেকে তার উত্তাপ আসছে শলাকার মতো বিঁধে ফেলছে আর আমি জড়বৎ সম্মোহিত হচ্ছি। সেই রূপালি-রেলিং পেরিয়ে নিয়মানুগ রিকশায় উঠি/ কালো চামড়ায় ফুলে ওঠা রগ দেখি/ স্বল্পচুল মাথা থেকে গড়িয়ে পড়া জ্বলন্ত ঘাম দেখি। দেখে দেখে আমি নিজের ভেতরেও লাভার ফুঁসে ওঠা টের পাই। নাহ্, আজকে অনেক গরম!
একটু পরেই ভীড়-রাস্তার মোড়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে যাওয়া টাউন-বাস, সিএনজি, মাইক্রোবাস, গাড়ি এড়িয়ে আমি রাস্তা-পেরুনোর ধান্দা করতে থাকি। এসময় খুব সজাগ থাকতে হয়, সব ক’টি ইন্দ্রিয় বেগ-দূরত্ব-গতি-রেখ খুব ভালো করে পাঠ করে অবান্ধব যানবাহনগুলোর। সেখানে ভুলচুকের কোন অবকাশ নাই। জীবনকে কোন শালা ভণ্ড ভালোবাসে না? আমিও হাল্কা হাঁটা, হাল্কা দৌড় মিশিয়ে রাস্তা পেরোই। ওপাশেও সূর্য, পেছনে সূর্যের আঁচ আছড়ে পড়ে। বন্ধু বিদায় নিয়েছে রিকশাতক এসে, আমি তাই একা একা সূর্য-হলুদ মাখি বিনা-বিবাহের আয়োজনেই।
একটু ছায়া পেলেই হাঁটার গতি শ্লথ হয়ে পড়ে, চামড়ারও একটা অসহায় পরোয়া আছে এমন রোদকে, আমি সেটুকু প্রশ্রয় দেই। কখনো দ্রুত, কখনো ধীরে এগুতে থাকি। আশে পাশের মানুষগুলোও একাগ্রতায় হেঁটে যায়, কেমন মোহগ্রস্ত যাযাবর কাফেলা বলে মনে হয় ফুটপাতকে। একটা সময়ে বিরান বিস্তৃত মাঠের ভিতর, জঙ্গলের ভিতর, নদীর ওপর দিয়ে আমাদের পূর্ব-পুরুষেরাও এভাবে জনপদ পাড়ি দিত, গোত্র বানাতো। ফাঁকা জমিনকে চাষ করতো। এভাবেই একটা সময়ে দেশ-জাতি-ধর্ম বিলি-বন্টন হয়েছে! আবারও আমরা সেই রচিত জনপদেই হাঁটি পা ফেলে পর পর সারি বেঁধে!
এই যেমন আজ দুপুর পড়ে এলে আমি বইমেলার গেটের সামনে নিশ্চল লাইনে দাঁড়িয়েও এই কথাটি ভাবছিলাম! গেট খোলেনি তখনও। তাই সবাই পুলিশ পাহারার লোহা-চিহ্নক পেরিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছে! মেয়ে-শিশু-বুড়ো-জোয়ান-ছাত্র-প্রেমিকা সকলের লাইন দেখেও পূর্বজদের মনে পড়লো। উল্টোমুখেও একই দীর্ঘ ঘনোসারি মানুষ! সবাই বিনোদন-প্রত্যাশী। ঘর থেকে বের হয়ে বইমেলার পরিসরে হাঁটাহাঁটি গলাগলি করতেই অনেকের আসা। কেউ কেউ বাইরের স্টলগুলোতেই দাঁড়িয়ে কেনা শুরু করে দিয়েছে। আমি লাইন ভেঙে সরে গেটের কাছেই দাঁড়ালাম। গেট-টা খুলে দিলে প’রে মানুষ গুটি গুটি শান্ত ঢুকে যাচ্ছে দেখে মনে হলো আমরা দিনে দিনে সভ্য হচ্ছি, শিখছি। নাকি?
বেশি সময় ছিলাম না, আমার গন্তব্য আবারও কর্মস্থল। তাই ঘোরাঘুরি শেষে আবার টিএসসি থেকে সিএনজি নিলাম। একটা ল্যাব আছে, ওটা নিতে হবে। বেরসিকের মতোন মানুষের মেলা থেকে ফিরে শেখাতে হবে কীভাবে যন্ত্রগণক হিশেব করে, কেন সে ভুল করে না, কেন সে অমানবিক দক্ষতায় সব মেপে ফেলে! আমার বোধহীন ছাত্রেরা সেটুকু শিখে কী আলোপ্রাপ্ত হবে? জানিনা। তাদের কাছে টার্মশেষের গ্রেডটা জরুরি, যন্ত্রগণকের স্বভাবচরিত নয়।
রাতে ঘরে ফিরে এলে আমার আর গরম লাগবে না। এই যন্ত্রগণকের সামনেই আবার বসবো, তারসাথেই আবার সময় কাটানো। মাঝে মাঝে মনে হয় সে নিজেও বুঝি অপেক্ষা করে আমার জন্যে, যেভাবে আমি প্রতিটা দিনশেষে তার জন্যে অপেক্ষা করি। কী জানি ছাই, আমি আর এমন কি বুঝি?
***
শুভ ১৯শে ফেব্রুয়ারী...(যতটুকু আর বাকি আছে আর কি... 😉 ) :clap: :clap: :clap:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
শুভই কেটেছে দিন! আপনিও আমার শুভেচ্ছে নিন!
বাহ!I'm a poet
I didn't even know it! :clap: :clap:
শুভেচ্ছা*
মেছওয়াক কইরা আসি ... দাঁত শক্ত কইরা পড়ব ... 😀
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
তুই রিক্সা থিকা নাম্লি কখন ?? 😮
(সিরিয়াস কমেন্টের ভাত নাই তাই ইট্টু ... লেখাটা চমৎকার হইছে। নাম দেখে ভাবছিলাম একুশের লেখা ... দিনপঞ্জি সুন্দর হইছে আন্দা)
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
আমি আসলে নেমে ভাড়া দিয়ে রাস্তা পার হইছি। ঐটারে শর্ট কইরা লিখছি! 😕
গাড়িগুলা শা শা কইরা যাইতেছিল মনে পড়ায় লেখার মাঝে ইস্পিড চইলা আসছে, তাই কয়েকটা ফ্রেম বাদ পড়ছে! 🙁
ভালো লাগলো। পড়লাম, বুঝলাম এবং সর্বশেষ অভিব্যক্তি- জয় করলাম। 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
জিন্দাবাদ! জিতে গেছো তাহলে! দারুণ!! :clap: :clap:
আন্দালিব, অসাধারণ প্রকাশ। এই পূর্ব-পুরুষদের মধ্যে আমারও কেউ ছিল। :hatsoff:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
মাঝে মাঝে একা একা চলতে আমার মাথায় এমন কিছু উদ্ভট চিন্তা আসে। মনে হয় আমি মহাকালের একজন, একটা অতি-অগুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেই তুচ্ছতাই হয়তো এই চিন্তার প্রভাবক!
সেই পূর্ব-পূরুষদের জন্যে কৃতজ্ঞতা! তারা না লড়াই করলে আমরা কোথায় পেতাম এমন জগৎ? :hatsoff: :hatsoff:
আমিও জয় করছি। পুরা কবিতাটা পইড়া ফালাইছি :)) :))
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
বস্!! এইডা কবিতা নাআআআআ!!! এইডা আমার পাগলামি!! সারাদিনের আগল-পাগল চিন্তা!! :)) :)) :))
কবিতা না 😮 😮 😮
কও কি? আমি তো কবিতা মনে কইরা পইড়া মনে মনে খুব ভাব নিলাম যে, এখন থেকে আমি কবিতাও পড়তে+বুঝতে পারি।
দিল্ল ত মাথাটা আউলায় ~x( ~x(
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
:khekz:
আন্দাইজমের লেটেস্ট শিকার মাহ্মুদ ভাই... 😛
বস, ওয়েল্কাম টু দ্যা পার্টি... 😀 :awesome: :awesome: :awesome:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ওহ! মনে হইতেছে জিম করবেটের লাহান ভন্দুক ঘাড়ে লইয়া হাদুমপাদুম করি বাগ শিকার করথেচি! ছুন্দরভনে এখঠাও বাগ বাঁচতে ফারবে না। আমি সবগুল্লাকেই মারি ফেলবু! :gulli2: :gulli2:
[বসেরা ডোন্ট মাইন্ড। আমি মহা মজা পাইছি এই কমেন্টগুলায়! :awesome: :awesome: ]
=)) =)) =)) :khekz: :khekz: :khekz:
:dreamy:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
হে হে হে! আমি বুইজালাইসি যে আপনে বুজেন নাই। :khekz: ওক্কে বস!! :salute: ব্যাপার না, নেক্সট ওয়ান ;;; !
লাবলু ভাইয়ের কোট করা অংশটুকুই আমি কোট করতে চাচ্ছিলাম।
এক কথায় অসাধারন। :thumbup:
অনেক ধন্যবাদ কামরুল ভাই। এই অতি-সাধারন দিনলিপি আপনার মন্তব্যে অসাধারণ হয়ে গেল। ( দিনটা কিন্তু আসলেই ঘটনাবিহীন। খালি আমার মাথার চিন্তাগুলাই একটু "যারা হাট্কে" ছিল। ) :hatsoff:
১। নামে "ঘূর্নাবর্তের দিন" দেইখা শুরুতে ভাবছিলাম কোন বিশেষ দিবস...ঘূর্নিঝড় সংক্রান্ত :-B
২। প্রথম কয় লাইন পইড়া ভাবলাম, এইটা ঘূর্নিঝড় না, কবিতা
৩। পরে ট্যাগ দেইখা আর কমেন্ট পইড়া বুঝলাম যে এইটা কবিতাও না, দিনলিপি
৪। সবশেষে বুঝলাম এইটা পড়লে আসলে পাঠকের মাথার 'ঘূর্নন' এবং সেই সাথে 'আবর্তন' এর মাধ্যমে 'দিন' পার হয়, যার কারনে নামকরন "ঘূর্নাবর্তের দিন" :-B
(অন-টপিকঃ আন্দা, লেখা আসলেই ভাল হইছে :thumbup: 😀 )
:khekz: :khekz: :khekz:
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
১। ঘোরাঘুরি অনেক করছি বইলা লিখছিলাম ঘূর্ণাবর্তের দিন! তবে গরম বাড়তেছে, সামনে ঝড়ের মৌসুম 😕
২। এইটাকে অনেকেই কবিতা ভাবছে। এই ব্লগে, অন্য ব্লগে। এখন ভাবতেছি, এইটারে কবিতা বানাইতে হবে! :-B
৪। পরেরটা আমিও ভাবি নাই। ভাবলে আরেকটু সহজ কইরা লিখতাম! 🙁
অনটপিক: থ্যাঙ্কস বস্! :thumbup:
:goragori: :goragori:
ভাল লাগলো । সুন্দর অভিব্যক্তি ।
পড়ার জন্যে ধন্যবাদ আদনান ভাই! :hatsoff:
এত সুন্দর উপমা! :dreamy:
উপমা মেয়েটা আসলেই দেখতে খুব সুন্দর! শার্লী, বেস্ট অফ লাক! ;;;
ঐ.. :))
হায় কত সুন্দর উপমা :dreamy:
আন্দালিব, লেখার ধরন বদলাচ্ছো মনে হচ্ছে?
কেন বদলাচ্ছো?
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ফয়েজ ভাই, আমি একটু একটু চেষ্টা করছি বদলে ফেলার। এগুলো তো সাধারন দিনলিপি, ভাবছি একটা মূলসুর রাখবো, একইভাবে লেখা হবে যদি সামনে লিখি। আর অন্যকিছু, যেটা সৃজনশীল লেখা, সেগুলো লিখতে একটু সময় নিচ্ছি কারণ মনে হচ্ছে নিজেকে, নিজের লেখাকে অনেক বেশি নিক্তিতে মাপার সময় চলে এসেছে।
আপনি কতটা মনোযোগ দিয়ে পড়েন যে আপনার চোখে ব্যাপারটা ধরা পড়ছে! :boss: :boss: :boss: (কথা কম, ইমো দিয়া আবেগ বুঝাই!)
আগে বদলাতে হবে নিজেকেঃ আন্দালিব
আন্দা, দারুণ লাগল এই দিনলিপি। এইরকম আরো লিখতে থাক, আমরাও আরো সাহিত্যরস উপভোগ করি।ভ :boss: :boss: