নিশীথ বানানটা কি ঠিক লিখলাম? দীর্ঘ ঈ-কার হবে? নাকি হ্রস্ব ই-কার? ভাবছি। ইদানিং বানান-ফোবিয়া হয়েছে। বাটে পড়ে কিছু লেখায় বানানশুদ্ধি করতে হয়েছে। ফলে লাভের চাইতে ক্ষতি হলো বেশি। যা বানান ঠিকঠাক জানতাম, শুদ্ধ করতে গিয়ে সেগুলো এখন ভুল জানি। ভুলভাল করে তারপর নিজেই নিজেকে অবোধ দেই, দার্শনিক হয়ে যাই। সক্রেটিস বলেছেন পৃথিবীতে ভুল শুদ্ধ কিছু নাই*। চালাইতে পারলে সবই ঠিক, চালাইতে না পারলে সবই ভুল। কিশোর কুমারের গানের মত ‘ভুল, সবই ভুল’।
ইদানিংকালের কথা বলছিলাম। ছোটবেলায় ইশকুলের মাঠে যেসব খেলা খেলতাম, সেগুলোর একটা কমন ফ্রেম ছিল। খেলার কোন না কোন পর্যায়ে একটা ছক বা গণ্ডির মধ্যে ঢুকতে হত। যে গণ্ডির মধ্যে নিরাপত্তা কিংবা গণ্ডির বাইরে নিরাপত্তা। যেমন ছোঁয়াছুঁয়িতে সেফ-প্লেস থাকত, কিংবা মেয়েদের বউচি টাইপের খেলা। আমার মনে হয় ছেলেবেলায় ওভাবে খেলতে খেলতে সবার আচরণে এটা ঢুকে যায়। গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা। তুচ্ছ একটা দাগ মাটিতে। হয়ত নিজেই দিয়েছি। কিন্তু কী এক অজানা কারণে সেটা পেরুতে পারছি না। নিজেই নিজেকে আটকে বসে আছি! আবার মনের এক কোণে চিন্তাও হচ্ছে – যদি পেরুতে পারতাম, কতোদিন গণ্ডির বাইরে পা রাখি না। আজব ডিলেমা।
ইদানিং বেশি বেশি এই ডিলেমা ফিরে আসছে। বেশিরভাগ সময় মূল কাজটুকু করার আগে পরের এই ডিলেমা নিয়ে ডিল করতেই বেশি সময় আর চিন্তাভাবনা নষ্ট হচ্ছে। ইংরেজিতে মনে হয় এটাকেই প্রোক্র্যাস্টিনেশন বলে। বড়োলোকের রোগ গরীবের হলে সেটাকে বলে ঘোড়া রোগ। আমি শালার হাম-যক্ষা-ম্যালেরিয়া-হুপিং কাশি কিছুর হাতে ধরা খেলাম না, খেলাম তো খেলাম, শেষমেশ ঘোড়া রোগের হাতে!
২
গণ্ডির মধ্যে ঢুকে থাকলে একটা ইল্যুশন তৈরি হয়। মনে হয় কোন সাবানের বুদবুদের মত বাইরের কিছু আর আমাকে স্পর্শ করতে পারছে না। ‘এই বেশ ভালই আছি’ টাইপের ধারণা হয়। গণ্ডির বাইরের যে দৃশ্যগুলো দেখি, দেখি চারপাশের মানুষ, সাধারণ, মামুলি মানুষ, তারা তাদের সাধারণ চাকুরি, টাকা, জমি, দেনা ও খাবার দাবার নিয়ে দিনাতিপাত করছে। দেখে ভাল লাগে। আমার একটা মস্তিষ্ক আছে এবং সে মস্তিষ্ককে আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি – এটা ভেবে ভাল লাগে। চিন্তা করি নানা কিছু নিয়ে, সেগুলোর সব প্রকাশ করার উপায় নেই। প্রকাশ করতে যে সময় লাগবে, সেই সময়ে আরও কয়েক কোটি চিন্তা করে ফেলবো – সেগুলোর কী হবে? তাই আমি চারপাশ দেখি আর ভালোলাগা জমাই।
গত সেপ্টেম্বর থেকে জীবন একটু বদলে গেছে। পাঁচ মাস ধরে পার্টনার ঘরের মধ্যে ঘোরাঘুরি করে – খবরদারি করে। অন্যরকম অভিজ্ঞতা। এখন মস্তিষ্ক আমার সাথে একটু বিট্রে করেছে। নিজে নিজে গণ্ডি সম্প্রসারণ করে পার্টনারকে ভিতরে এনেছে – এখন চিন্তাভাবনাগুলো শেয়ার করা লাগে। কিছু কিছু মিলে যায় – সহমত। বেশিরভাগই মিলে না – উপভোগ্য তর্ক। তর্কের এক পর্যায়ে ক্ষান্ত দেই, ঘোড়া রোগের রোগীদের বেশি তর্ক করতে নাই। এ কারণেই বোধহয় ব্লগিং কমিয়ে দিয়েছি। একটা সময়ের পরে সবই রিকারেন্স – সেই একই আলাপ, একই হাসি-তামাশা-ঝগড়া। মতামতের মিল কিংবা মতের অমিল। নিজের কথাও বারবার বলতে ভাল লাগে না, তাই অনেক ক্ষেত্রে নীরবতা শ্রেয় অপশন মনে হয়।
খুব সম্প্রতি আরেকটা বেশ বড়ো ব্যাপার হলো – আমার এই বন্ধুটার সন্তান জন্মালো। ব্যাপারটা কী ভয়াবহ, সেদিনের পুঁচকা, আমার লগে ঝগড়াঝাটি করত, এখন কি না এক পোলার বাপ। এমন না যে সে আমাদের ইনটেকের প্রথম বাপ, এর আগে অনেকেই বাপ হয়েছে, একজন তো দুইবার এই কৃতিত্ব অর্জন করে ফেলেছে এরই মধ্যে। কিন্তু ওর বেলায় আসলে আমার অন্যরকম অনুভূতি হলো। এতো দিনের বন্ধু, বাবা হতে যাচ্ছে, খবরটা পেয়েই খুশি হয়েছিলাম! ওর সবচেয়ে বড়ো গুণের একটা হলো পিতৃসুলভ বৈশিষ্ট্য। বটগাছের মত দাঁড়ায় যায়, ক্রাইসিসে একদম ইস্পাত-স্নায়ু। এরকম সবার হয় না, সবাই পারে না। নতুন অতিথির আগমনী বার্তায় তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। আমিও একদিন পার্টনারকে নিয়ে গেলাম, ছোট ছোট জামাকাপড় কিনে নিয়ে এলাম বন্ধুপুত্রের জন্য। ঘরোয়াভাবে একটা অনুষ্ঠানও হয়ে গেল ওর বাসায়!
ভবিতব্য খুব নিষ্ঠুর ধরণের অদ্ভুত আচরণ করে! তাই ওর ছেলে জন্মানোর এক মাস আগে, ওর আব্বা মারা গেলেন। যেন কিছুই হয় নি, হুট করেই। সকালে বেরিয়েছিলেন বাজার করতে। বাজার পর্যন্ত পৌঁছুতে না পৌঁছুতেই স্ট্রোক। বড়ো ছেলের ঘরে নাতি আসছে – নাম ঠিক করে রেখেছিলেন… সব শেষ।
আমার বন্ধুটিকে আমি এরপরও ভেঙে পড়তে দেখি নি। এক মাস পরে সন্তানের জন্ম। বন্ধুপত্নী বললো, ছেলের নাম রাখবে দাদার নামে।
মাঝে মাঝে মনে হয়, পৃথিবীটা একেবারে খারাপ জায়গা না। ভুল শুদ্ধ বলেও তাই, তেমন কিছু নাই!
প্রথম হইলাম।
গুডজব! :clap:
Adalib...tomar lekhar style ta valo............aro lekha ccb te chai. :boss:
ধন্যবাদ সানাউল হক ভাই!
দুলাভাই, ভাবি কেমুন আছে ? 😀
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
আমার ভাবি ফাইনাল হইছে শুনলাম, তরফদার খবরদারি করছে! 😀 😀
ইয়ে মানে, আর বেশি ভাবাভাবি করলাম না। 😀
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
আঃ??? মানে???
লেখা চমৎকার হইছে ভাইয়া।
কথাটা ভাল লেগেছে।
আসলেই নাই। প্রমাণিত।
খাইসে সিরিয়াস লেখা দেখি।
দুনিয়াটাই ডিলেমায় ভরা। বাচ্চার বাপ হইলে কী নাম রাখবো ভাবতেসি 😉
নিজেরে তো ওস্তাদ মনে হইতেসে। এক ধাক্কায় সব রথী মহারথীদের থেকে পোস্ট বাইর করে ফেলতেসি 🙂 🙂
আসলেই আমিন ভাই। জায়গাটা ভরা ভরা লাগতেছে।
বাচ্চার জন্য সবচেয়ে সহজ নাম 'আমিন জুনিয়র' 😀
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
তার পোলার নাম আমিন দ্যা থার্ড! 😀
খাইছে।
আমি যখন ক্লাশ টুয়েলভে আমার হাউসেই আমি সহ তিনটা আমিন আছিলো। সিনিয়র আমিন জুনিয়র আমিন দিয়া তখন কাজ হইতো না।
কাম্রুল ভাই আপনারে কন গ্রাটস জানাইতে চাই। কিন্তু কিলিয়ারলি ডিকলিয়ার না করায় পারতেসি না। 🙂
@আমিন
প্রথম ইনিংসে লিড না নিয়া ডিকলিয়ার করি ক্যাম্নে? :grr:
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
=)) =)) =))
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
জুনিয়র এর আগে একটা 'বিলাডি' দিলে শুনতে আরও ভাল লাগে... 😀
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
@আমিন, সিরিয়াস লেখাই বাইর হইলো। ভাবলাম রঙ্গ রসিকতা করুম, দেখি নিজে নিজে লেখাটা সিরিয়াস হয়েই গেল! 😕
এই লেখার পুরা দায় রকিব্যার। লিখতে সময় লাগছে ঘন্টাখানেক। পুরা সময় ওরে কান ধরে দাঁড় করায় রাখছি! 😀
লেখা ভালো হলে কী লাভ, আসছিলাম মন ভালো করতে তুই দিলি খারাপ করাইয়া। ফাজিল ।
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
আমি তো তবু অনেকখানি লিখছি। আপনি যে চার পাঁচ লাইন লিখে মন খ্রাপ করাইলেন, সেটার কী? 🙁
কে জানে হয়তো নাতির মাঝেই বেঁচে থাকবেন সিপি ভাইয়ের বাবা। আফসোস, নাতিকে দেখে যেতে পারলেন না। আমিও আমার দাদাকে দেখিনি কখনো, দাদীও আমার বয়স ১ বছর পেরুবার আগেই মারা যান। নানা-নানীর মধ্যেই আমি উনাদের খুঁজে নিতাম।
বহুদিন পর পোষ্টালেন আন্দাদা। 🙂
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ওই যে বললাম, সবকিছু রিকারেন্স!
আমিও আমার দাদাকে দেখি নাই। আমার মা'ও তার শ্বশুরকে দেখে নাই। আমার বাবা যখন ক্লাস নাইনে পড়ে, তখন উনি মারা গেছেন।
তুমি না বললে পোস্টানো হত না। আমিনের পোস্ট পড়ে চুপচাপ নস্টালজিক হতাম! থ্যাংক্স!
:clap:
আন্দা ভাই, কান্ডটা দেখলেন??? জাস্ট গতকাল আমরা এই নিয়ে আলাপ করতেসিলাম (নাকি পরশু)...আর আজকে এই অবস্থা...
মন খারাপ করা দিয়ে কিছুই আসবে যাবে না, কারুর প্রস্থানে কেউ থেমে থাকে না, ন্তুনকে জায়গা করেই দিতে হয়, নাহলে জগতকে আরও বেশি নিষ্টুর হতে হত।
(আহ কি জ্ঞানী জ্ঞানী লাগল শুনতে 😀 )
আহা! কি ফিলসফি......... :boss:
রাশান অনেক দিন প্রাকটিস নাই...এই টার মানে মনে আসি আসি করেও আসতেছে না... :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
হা হা হা জুনা ভাই পুরা ফর্মে আছেন দেখা যায় =)) =)) =))
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
:thumbdown:
জুনা ভাই :no:
খুব ভালো লাগলো, আন্দা ভাই 🙂
আন্দালিব, তোমার লেখা বরাবরের মতই জব্বর।
আন্দালিব মিয়া এতো তাড়াতাড়ি ঘোড়া রোগ বাধায়ে বুড়া হয়ে যাচ্ছো ক্যান? ভাল লাগছে লেখা অনেক।
জীবন বদলের অভিনন্দন!
তোমার লেখা হলে একবার ঠিকই পড়ে যেতে হয়। প্রোক্রাস্টিনেশেনের বাংলা ঘোড়া রোগ? দারুন তো!
আমার বন্ধুয়া বিহনে
আন্দাদা, বুড়া হয়ে গেলেন............ 😕
এত্ত তাড়াতাড়ি জীবনের মানে বুঝে গেলে তো চলবেনা আন্দা, আরও অনেক পথ বাকি। 😛
গন্ডির ব্যাপারটায় আমার চিন্তা ভাবনাও তোমার মতই। সবকিছু শেষে আমরা আসলে গন্ডীবদ্ধই থাকি।
দুইদিন আগেই তো বইমেলায় সিসিবি নিয়া হা হুতাশ করলাম কত আপনার সাথে। 😛
মাঝে মাঝে লেইখেন।
আপনার বন্ধুর পিচ্চির ছবি আপলোডাইলেও ভালো হইতো। পিচ্চির জন্য আদর।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
:boss: :boss: :boss:
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
ভাই এত সুন্দর করে গুছিয়ে লিখ কিভাবে?
আন্দা, তোর লেখা পইড়া উচাটন হইল মন্ডা... 🙁
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
আন্দা ভাই যে পাঙ্খা দিন পার করতেছেন তা খোমাখাতায় নজর রাখলেই টের পাওয়া যায়....পুরা সিনেমাটিক একশন 😛
বহুদিন পর জব্বর জব্বর লেখা....এইখানেও একটু পাঙ্খা টাইম কাটান না বস 😀
:((
:clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আমার বড়ভাইয়ের সন্তানের বেলায় এমন হয়েছে, ছেলে জন্মের মাসখানেক আগে বাবা মারা যান, এর পরে মেয়ের জন্মের কিছুদিন আগে আমার মা।
অদ্ভুত, তাই না। কিংবা এটাই স্বাভাবিক, না হওয়াটাই বরং অদ্ভুত হত। কারন ভাইদের মধ্যেই সেই শেষপর্যন্ত বাবা-মার সংগে ছিল। ক্যারিয়ার গড়বে এই অজুহাতে রংপুর ছাড়েনি।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না