মাঝে মাঝে কোলাহল মুখ ফিরিয়ে নেয় জলের প্রবাহের মতো শব্দের ঢেউ এলোমেলো যত্রতত্র হঠাৎ খুলে যায় স্রোতমুখ তার অন্যদিকে কোন অন্য মানুষের দিকে
কোলাহলে পিঠ রেখে অন্ধকার দেখি
গাঢ় বিশুদ্ধ অন্ধকার জ্বলছে মেরুদণ্ডহীন
লতানো গাছের মতো নমনীয়, নতজানু
জড়িয়ে আছে বিদ্যুল্লতা
একা একা তীব্র মৌন
নেই আপত্তি নেই অভিযোগ
নেই পুরানো হিসাব মেটানোর দায়
একটা ফ্ল্যাট স্যান্ডের পরে ফটফট করতে করতে পাঁচ তলার ফ্ল্যাটে উঠে দেখি হাতুড়ি এবং লোহা দিয়ে দুইজনে দেয়াল ভাঙছে। দুম দুম করে কেঁপে উঠছে দরজা জানালা দেয়াল – এমনকি এলিভেটরের কাঠামোও! কাঁপতে কাঁপতে হাতড়ে একটা অবলম্বন খুঁজি। চেয়ার কিংবা শক্ত কোন বাক্স, ভর দিয়ে একটু কাঁপুনি সামলে নিবো। ফর্সা তন্বী দেয়ালে কালো লোহার ছেনির আঘাতে চাপড়া চাপড়া প্লাস্টার খসে পড়ছে। সিমেন্টের গুঁড়ো, ফ্যাকাশে ফ্যাকাশে বাঁকাত্যাড়া ইটগুলো বেরিয়ে আসছে। দাঁতাল শুয়োরের মত হাসছে। দুইজনে পিটিয়ে দরজার পাল্লাগুলো খুলে ফেলছে। দরজা কপাট হাট হয়ে গেল – নির্লজ্জের মত। দেয়ালে গাঁথা দুয়েকটা পেরেক, ছবি ঝুলেছিল হয়তো সেখানে। সেগুলো নেই। ছবির ফ্রেমের কালো দাগ। হাতুড়ির বাড়িতে তুবড়ে গেল…
সুইচবোর্ড খুলে গেল, পিভিসি পাইপের ভেতর জড়ানো লাল-নীল তার। অমন তারগুলো গলায় জড়িয়ে কোন কোন মেয়ে যেন ঝুলে পড়েছিলো। মনে পড়ে না আর। মৃত্যুর খাতার চাপা পড়া পৃষ্ঠা হারিয়ে ফেলেছি।
রাজমিস্ত্রিদের গায়ে কালো জামা। এই বাসায় ফ্যান নেই, জানালাগুলো চোরের ভয়ে বন্ধ আর গুমোটে ভরে আছে ঘামের নোনা গন্ধ। পিছলে পিছলে চকচকে ঘাম মুছে তারা হাতুড়ি চালায়। দেয়াল ভাঙছে, চাঙড় চাঙড় ইট খুলে আসছে দেয়াল থেকে। দুম দুম শব্দের ঢেউ আমার বুকের মধ্যে ভরে যায়। সারাদিনমান একলা হয়ে যাই আর ভাঙা দেয়ালের মত চোয়াল – বয়ে বেড়াই মৃত্যুর আদুরে আবছায়া, হাতুড়ির মত সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য যার।
*****
অক্টোবর, ‘১১
অনেকদিন পর আন্দালিব!
ভালো আছো?
এদিক সেদিক ঘেঁটে তোমার লেখা পড়ি, এখানে পাইনা।
বিষণ্ন সময় কাটছে নাকি? লেখা পড়ে মনে হলো।
না নূপুর ভাই, সময় বিষণ্ণের উলটা। তবে লেখা মনে হয় লেখার কারণেই কিছুমাত্রায় বিষণ্ণ।
লেখা গুছিয়ে একাগ্রতা নিয়ে আর লেখা হলো না! 🙁
কঠিন লেখা... :boss: এমনিতেই বুঝি কম
তবু যে কষ্ট করে পড়েছিস, এজন্য অনেক ধন্যবাদ, দোস্ত। 🙂
😀
আরে! আন্দালিব যে! কি খবর? কেমন চলছে?
লেখাটায় জীবনের প্রতি কেমন যেন অবসাদ উঠে এসেছে। ঘটনা কি?
আমার বন্ধুয়া বিহনে
চলছে ভালই রাব্বী ভাই। আপনি কেমন আছেন?
লেখাটা আসলে বিনির্মাণ নিয়ে তো, তাই অবসাদ। অবসন্নতা এমন ভাঙচুরের একটা জরুরি কারণ। এজন্য।
*হয়ত আরো কোন কারণ আছে - ঠিক ঠাহর হচ্ছে না।
অনেক দিন পরে একটা আন্দালিবিও লেখা... 😛 :boss: :boss: 😛
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:thumbup:
হাহা, তার মানে এর মাঝে সব নঞ-আন্দালিবীয় লেখা লিখসি! 🙁
আপনার আর রাব্বী ভাইয়ের লেখায় বরাবর বরাবর বলতে বলতে আমি বিরক্ত।
কিংবা,
আপনার এ ধরণের লাইনগুলা আমার সবচেয়ে অসাধারণ লাগে, কি আশ্চর্য ভাবে একটা কাঠখোট্টা জিনিসকে বিষাদের দিকে নিয়ে যেতে পারেন আপনি, অথবা রোমান্টিকতার দিকে। এই লেখার আরেকটা দিক হলো, এই ধরণের নানান ভাবালু উপমার সাথে সাথে হঠাৎ সুইচবোর্ড, কিংবা মিস্তিরিদের ভাঙ্গাভাঙ্গির দৃশ্যটা বাস্তব দৃশ্য গড়ে তুলছে চোখের সামনে। এটা অবশ্য আমাকে কিছুটা ডিস্টাব দিচ্ছিলো, তবে ডিস্টাবটাও উপভোগ্য ছিল।
বাই দ্য ওয়ে, বাসা চেইঞ্জ হচ্ছে নাকি?
আর একটা প্রশ্ন, ছবিটা কার?
হেহেহে, বিরক্ত করতে পেরে খুশিত আহ্লাদিত হইলাম। 😀
বাসা চেঞ্জ হবে সামনে, নতুন বাসায় ওঠার আগে ভাঙচুর চলছে। সেই ইমেজটা মাথার মধ্যে ছিল। পরে লিখতে বসে অন্য একটা ঘটনা নিয়ে ভাবছিলাম, তখন সেটার মধ্যে চলে এলো।
ছবিটা নেট থেকে পেয়েছি। http://www.wfmu.org/Playlists/Rich/debate.jpg
ভাল হইছে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ধন্যবাদ, রাজীব ভাই। 🙂
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ইহা একটি স্বপ্নদৃশ্য। বাস্তবের সঙ্গে কোনো মিল খুঁজিবেন না।
আমি যে আন্দালিবে মুগ্ধ, এটা কি নতুন করে বলতে হবে??
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
হা হা হা! আসলেই এই ডিসক্লেইমারটা পোস্টের শুরুতে দেয়া দরকার ছিল। আপনি না থাকলে এমন গাইডেন্স কোথায় পেতাম, লাবলু ভাই! 🙂
যুগলবন্দী হবার পর প্রথম লেখা 😉
সময়োপযোগী লেখা হয়নি, এখন তো স্বর্ণযুগ হবার কথা 😛 (উপরের বাক্যের সাথে মিলিয়ে বললাম)
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
না, এটা দ্বিতীয় লেখা, আগে একটা কবিতা লিখেছি যেটা সিসিবিতে দেয়া হয় নি। আর যুগলবন্দী হওয়ার সাথে লেখালেখির সম্পর্ক অল্পই। যুগলের প্রভাব লেখার পিছনে আগেও যেমন, এখনও তেমন। বুঝলা? 😛
যা বলতে চেয়েছিলাম, রকিব বলে দিয়েছে। তবে রকিবের মতো স্বর্ণযুগের লেখা আশা করতে পারছি না। কেন, সেটা কি বুঝিয়ে বলতে হবে না আশা করি 😉
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx