০
চিলতে রোদে পাখনা ডুবাই, মুচকি হাসে শহরতলি
রোজ সকালে পড়ছে মনে, এই কথাটা কেমনে বলি?
~~~
– “বল, জোরে জোরে বল, ক’য়ে আ-কারে কা, ম’য়ে আ-কারে মা, ন — কামান”
ওপাশে খানিক নিশ্চুপ বিরতি, তার চোখের দৃষ্টি ফ্যালফ্যালে। বোবা।
– “কি হলো? চুপ করে আছিস কেন? কি বললাম, পড়্!”
ফ্যালফ্যালে চোখের সামনে শক্ত ঝুঁটি ঝলসে ওঠে। সেই সাথে ঝলসে ওঠে বছর দশ বয়েসী কোমল ধবল হাত। হাতের মুঠোয় ধরা বরইয়ের ডাল নেমে আসে ফ্রকের প্রান্তে। ফ্রকটার বয়েসও মাত্র সাত কিংবা আট। আসলে ফ্রকের নয়, ফ্রক-পরিহিতার। আমাদের সামনে চিরন্তন ফ্রেমে আটকে প্রাগৈতিহাসিক হয়ে উঠতে থাকে দৃশ্যটা। ঝুঁটিবাঁধা মেয়েটার হাতে একটু একটু মার খায় সামনে বসা আরেকটা মেয়ে। ওই মার খাওয়া মেয়েটার কোন দোষ নেই। ওর সামনে খোলা প্লাস্টিকের রঙজ্বলা বই, সেই বইয়ের একটা অক্ষরও সে বুঝতে পারে না। ‘কামান’ শব্দটা সে আগেও শুনেছে। এই তো সেদিন রাতে সবাই গোল হয়ে বসে টিভিটার সামনে। সেখানে শিঙার ফুঁকের সুরে নাটক শুরু হয়েছিলো। সেই নাটকে শুনেছে, “কামান দাগো!” তারপরে টিভির পর্দায় খালি ধোঁয়া ধোঁয়া, আর জোরে একটা শব্দ হয়েছে, দুড়ুম! ঐ কালো কালো নল দিয়ে ধোঁয়া বের হয়ে টিভির পর্দা সাদা করে দিয়েছিলো। মেয়েটার মনে হয় এই ধোঁয়া হয়তো বসার ঘরটাকেও ঢেকে ফেলবে।
তাই আজকে দুপুরে শুনশান ব্যালকনিতে ওর আপুর হাতে ধরা বরইয়ের ডাল যখন সপ সপ করে নেমে আসে, মেয়েটা খুবই অবাক হয়ে যায়! আপু তাকে মারছে কেন! সে কি কোন দোষ করেছে? বা কোন ভুল করেছে? নাহ। ও তো ভাবছিলো কামানের নল, ধোঁয়া আর টিভিটার কথা। আপুর মারগুলো ওর হাঁটুর নিচে এসে পড়ছে আর ওর বুকের ভেতরে গুম গুম করে উঠছে। এক হাত দিয়ে অন্য পায়ের আঙুল চেপে ধরে মেয়েটা চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করে। আমার তৈরি করা ফ্রেমটা গলে অতলান্তিক হয়ে যায়!
সেদিন বিকেলে ওদের শহরতলিতে বড়ো বড়ো কামান আসে। বরইয়ের ডালটা এলোমেলো করে দিয়ে খটাখট বুটের শব্দ উঠে আসে। ওদের বাসা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়! মেয়েটা দৌড়ে বাসার পেছনে কুয়োর ভেতরে লুকায়। ওকে দুদ্দাড় করে টেনে নিয়ে গিয়েছিলো ওর আপুটাই। তারপরে একটা কচুরির ঢিপি মাথায় চাপিয়ে কুয়োর ভেতরে নামিয়ে দিয়েছিলো।
কুয়োর ভেতরে মেয়েটা বসে ছিলো সন্ধ্যা অব্দি। তারপরে কুয়োর বাইরে লাল লাল আগুন জ্বলে উঠলে ও বেরিয়ে দেখে ওদের বাসার জানালার পর্দাগুলো পুড়ছে। সেদিন থেকে মেয়েটা পুড়ে গেছে ভেতরে ভেতরে। আজ সকালে, এতোগুলো বছর পরে সেই মেয়েটি মারা গেছে। গত তিন বছর সে অ্যালঝেইমারে ভুগছিলো। স্মৃতি কুরে কুরে খেয়ে ফেলেছিলো স-ও-ব। মাথার ভেতরে কী এক কীট ছিলো তার, কেউ কি পুরে দিয়েছিলো? তারপরে হঠাৎই আজ সকালে, যখন একটু একটু করে আলো ফুটছে, তখন সে মশারির ভেতরে যেন সব ফিরে পেলো। আমি পাশে বসে ছিলাম। মশারির ভেতর থেকে কাঁপা কাঁপা একটা হাত বেরিয়ে এলো – রুগ্ন, থরথরে। নিঃশ্বাস নিতেও যার কষ্ট হয়, সে হঠাৎ যেন কী অসুরিক জোর পেয়ে গেলো! আমার হাতের আঙুল জোরে আঁকড়ে ধরে এক দমে বলে উঠলো,
– “বাবু, বাবু! বল তো, জোরে জোরে বল, ক’য়ে আ-কারে কা, ম’য়ে আ-কারে মা, ন — কামান”
*****
– ২২.৮.১০
এতো ভালো এতো ঝরঝরে লেখো কি ক'রে?
তোমার মতো লিখতে পারলে
আমি আর সব ছেড়ে দিতাম হে!
নূপুর ভাই, এই বিনয়টা তো আগে আমি করতাম। তখন কবীর ভাই, কামরুল ভাই মিলে পঁচায়ে বারোটা বাজায়ে দিতো। নতুন ছিলাম, বুঝি নাই কী খাইলাম! হা হা হা!
আপনার বিনয়ও সেরকম হৈছে। আমার ব্লগে পড়া সবচে উচ্ছল কবিতাগুলো আপনি লেখেন। আপনার মন খারাপ কবিতাও অনেক অনেক উৎসাহী-প্রেরণাদায়ী। এইটা যদি এখনও না জানেন, তাইলে আফসোসে মারা যাবো! 😛
বিনয় হবে ক্যান, হাচাই কইলাম।
এতো ভালো এতো ঝরঝরে লেখো কি ক’রে?
তোমার মতো লিখতে পারলে
আমি আর সব ছেড়ে দিতাম হে!
এতো ভালো এতো ঝরঝরে লেখো কি ক’রে?
তোমার মতো লিখতে পারলে
আমি আর সব ছেড়ে দিতাম হে!
ঐ
সবাই দিন দুনিয়া ছেড়ে দিতেছেন দেখি! হায় হায়! 😕
খুশি হইলাম আপু। অনেক অনেক ভালো থাইকেন। 🙂
দুর্দান্ত।
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
:hatsoff:
থেঙ্কু বস।
মারাত্মক, দুর্দান্ত!
তোমার একটু ভূমিকা আছে এর পিছনে, তা তো আগেই বললাম। তোমাকেও থেঙ্কু।
অসাধারন :boss: :boss: :boss:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
থেংকু দোস্ত। অনেক দিন বাদে মন দিয়া কিছু লিখলাম। ভাল্লাগছে জাইনা খুশিতে বাগ বাগ! :dreamy:
অন্যরকম একটা লেখা। পড়ে আসাধারণ লাগলো। :clap:
আরে! কারে দেখা যায়! 😉
অটঃ দৌড়ের উপ্রে থাকায় মেইলের রিপ্লাই দেই নাই, তবে পাইছি আর জানছি এইটা জানায়ে রাখলাম আর কি। 🙂
আপনার লেখা আর আমি না আইসা পারি??? (কঠিন তেল দিলাম :grr: )
থ্যাংকু ভাইয়া। পরে টাইম কইরা রিপ্লাই দিলেই হবে।
পুরাই মোবিল দেখা যায়! আন্দা ভাইয়া আপনি কিন্তু মুবিলে চলবেন না।
একি কথা আবারো বলতে চাই,ভালো লাগলো 🙂
তোমারেও ধইন্যাপাতা! 🙂
খুব ফেভারিট গানটা......
আমারও। খুব প্রিয়!
পড়লাম। খুব ভাল হয়েছে লেখাটা।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
ধন্যবাদ রাব্বী ভাই। আমি নিজে আপনার লেখার দিন দিন পাংখা হয়ে যাচ্ছি!
অসাধারন লেখা হয়েছে এটা।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
😀
এক লাইনে যে বুস্ট পাইলাম! আহ! বুস্ট ইজ দ্যা সিক্রেট অফ মাই এনার্জি! B-)
আন্দালিব, তোমার লেখায় আবারো মুগ্ধ। পেশার স্বীকৃতি নিয়ে লেখাটাও অসাধারণ হয়েছে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
:hatsoff: থেংকু লাবলু ভাই। আপনার কমেন্ট পেলে আনন্দে 'চিক্কুর' পাড়তে ইচ্ছা করে। 😀
ভাইয়া অ...সা...ধা...র...ন... 🙂