দুপুর নিয়ে আমার প্রবল উন্মাদনা আছে। উন্মাদনা, অর্থাৎ সাধারণ্যের সমাজ ও প্রথানিয়ন্ত্রিত আচরণের বাইরে আচরণ। আমি এমন করি, জেনেশুনেই বুক-পকেটে উন্মাদনাসমূহ লালন করি বিবিধ বিষয়ে। জাগতিক তাড়না দিয়ে যেগুলো ইস্যু আমার হিস্যা নিয়ে নেয়- অর্থ, চাকরি, খাওন-দাওন এগুলো আমাকে উন্মাদ করে না। আমি হিসেবি ও খেয়াল করে দেখি এটিএম বুথের ভেতরে ছক ছক নম্বরের জোরে আমার প্রাপ্য খটাখট আমার করতলে চলে আসে। পাতলা হয়ে থাকা ওয়ালেটের ভেতরে শৌখিন রোলার স্কেটিং করে নোটগুলো জমা পড়ে।
অথচ আমি দুপুরের আলোতে উন্মাদ হই। জ্ঞান হবার পর থেকে আমি এই উন্মাদনাকে সহজাতভাবেই পেলেপুষে বড়ো করেছি। কখনো বেখাপ্পা লাগেনি নিজের কাছে, মনে হয়নি ভদ্রসমাজে এমন আচরণের কথা ভাবাও অভব্যতা। দুপুর অর্থাৎ দ্বিপ্রহর; সেই সময়টুকু পাহাড়ের চূড়ায় পত্পত্ করে উড়তে থাকা নিশানের মতোই কিছুক্ষণ স্থির হয়ে থাকে। তারপরে হঠাতই গড়িয়ে পড়ে হারিয়ে যায়। হারানোর আগে আগে, স্পষ্ট দেখি দুপুরের ঝিম ধরা আলোর ভেতর থেকে একটা মুচকি হাসি আমার দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকাচ্ছে। তাকে পুরোপুরি পড়ে নেয়ার আগেই বিকেল চলে আসে। বিকেলের প্রতি আমার কোন মমত্ব নেই। বিকেলে মরা বিড়াল আবিষ্কার হয়।
আরেক দ্বিপ্রহরও আমাকে উন্মত্ত করে, সে নিকষ, সে তিমির, সে শুনশান। আর আমি সেই অনুভবের স্বরূপ চিনতে পারি নীরবতার মাঝেও, নিঃসন্দেহে বুঝি যে এটা অস্বাভাবিক। এমন স্তব্ধসময়ের প্রতি আমার উন্মাদনা মানায় না। এখন দরকার ধ্যানজ স্থিরতার, পানির উপরিতলের নিস্তরঙ্গতার। মনকে শান্ত করো, ইন্দ্রিয়গুলোর মুখ বুঁজে দাও। মোমের প্রলেপ দিয়ে দাও চোখে, তুলো দিয়ে মুছে দাও ত্বকের প্রদাহ। তারপরে নিঝুম ঘুম! কিন্তু আমি বড়ো বেখেয়ালি হয়ে পড়ি এ’সময়ে। বুঝতে পারি আমার ভেতরের ভাঙন রাত দ্বিপ্রহরকে ছুরির ধারে কাটছে। দেয়ালের ছবি আর মুখগুলো ধীরে ধীরে ধুয়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তাদের বিবর্ণতায় আমারও কেমন মরাটে লাগে। বিভ্রম হয়, মনে হতে থাকে এখন বেলা দুপুর। তীব্র ঝমঝমে রোদে পুড়ে যাচ্ছে রঙ। মরা পাতা খটখটে পাঁপড়ের মতো হয়ে উঠছে।
দেয়ালও একটা সময়ে ঘুমিয়ে পড়ে। যেভাবে দুপুর আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলো, যেভাবে বিকেল এসে আমাকে তীব্র ঠাট্টাভরা অবহেলা করে চলে গিয়েছিলো, যেভাবে সন্ধ্যা খুব সন্দেহজনক হয়ে উঠেছিলো আর আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার সবকিছু ছিনতাই করে চলে গিয়েছিলো, পুলিশবেশী রাত অনেক দেরি করে এসেছিলো- ঠিক সেভাবেই রাত দ্বিপ্রহর আমাকে ফেলে চলে যায়। রাত বাড়তে থাকে তন্বী-কিশোরীর বেণীর মতোন। তার ভঙ্গিমা আমার কাছে অপরিচিত লাগে, দূর্বোধ্য লাগে। আমি আবারও চেষ্টা করি চোখ-কান বুঁজে সমাধির ভেতরে ডুবে যেতে। কিন্তু পারি না। সাঁড়াশির মতো দুটো কঙ্কাল হাত আমার হা-কোটরের ভেতরে আঙুলের হাড় ঢুকিয়ে সেটা খুলে রাখে। চোখবিহীন চোখে আমি চরাচরে রাতের লীলা দেখি। নিশিক্লান্ত অনেক অনেক মরদেহ মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে, খেলা করে। তাদের ক্লান্তি কমে না। তারা শ্রান্তিতে টুকরো টুকরো হয়ে একসময় আবার নিজেদের শয়ানে শিশির হয়ে যায়।
হে আমার দেয়ালের মুখ, হে বিবিধ উন্মাদনা, আমাকে ঘুমুতে দাও!
***
গোল্ড মারলুম নাকি দাদা 😀 😀 😀 ?
রঞ্জনা আমি আর আসবো না...
:boss: :boss: :boss: :boss: :boss:
সিলভার নাকি ???
নিজেকে নিজে ৩ তারা দিলে চলবে? 😀 (লেখার শেষে *** দেখলাম)
লেখা পছন্দ হলো। অঞ্জন দত্তের ঐ গান টা শুনেছো? "শুনতে কি চাও তুমি সেই অদ্ভুত বেসুরো সুর"
নিজের লেখায় তিন তারা! হা হা। ভালো জিনিস দেখছো দেখি। মানে, আমার মনে একটা সুপ্ত ইচ্ছা বোধহয় আছে, নিজের লেখারে অলটাইম "ভাল হয়েছে" ভাববার। 😉
অঞ্জনের গানটা শুনেছি অনেক আগে।
😀
😛
Diner cheye rat tai besi valo lage amar kase. 😀
ratrir ditio prohor.
আমার কাছেও! 🙂
কলেজে থাকতে অবশ্য দুপুরের দ্বিতীয় প্রহর বেশি প্রিয় ছিলো। না ঘুমালে ইভনিং প্রেপেই ঘুম আসবে, পড়ার বারোটা বাজবে, প্রেপগার্ডের পানিশমেন্ট জুটবে, এতোরকম চোখ রাঙানির পরেও দুপুরে উপুড় শুয়ে বই পড়ার মুহূর্তগুলোর জন্যে পুরা ঢাকা শহর বেচে দিতে পারি! 🙁
কলেজে ক্লাস নাইনের বছরটা উরাধুরা ইন্সম্নিয়াতে ভুগেছি
প্রথম দিকে সন্ধ্যা নামতে দেখলেই 'আরেকটা নির্ঘুম রাত'এর ভয়ে জরসর হয়ে যেতাম ... করিডোরে হাটতে হাটতে, নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলোকে দেখে ব্যাপক হিংসা হত।
প্রতিদিন ফজরের আযানে 'ঘুম অপেক্ষা সালাত উত্তম' শুনে তারপর ঘুম আসত ...
আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাবার পর দেখলাম ... মন্দ না রোগটা ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
এটা মাদকাসক্তদের মতো হৈছে। পুরাই! 😀
হুমমমম........নিশাচর আমি হই নাই 😐
আমারে বানানো হইছে :((
আহারে! দুস্ক পাইলাম। আমাদের বললেই হইতো, আমরা দলে দলে নিশাচরেরা গিয়ে তোমারে রেহাই দিতাম! 🙂
আন্দালিব- ঘুম হচ্ছে তো ঠিকঠাক মত?
সাধারণ ব্যাপারগুলো শব্দের গাঁথুনি দিয়ে কিভাবে যে অসাধারণ করে ফেলতে পার বুঝি না!
ঘুমানোর শিডিউল ঠিক আছে। খুব ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়লে ঘুমিয়ে যাই। স্বপ্নহীন ঘুম হয়, তাই ভালো লাগে। 😀
আর পরের কথাগুলোর ব্যাপারে আমি নীরব। :boss:
আমার কাছে দুপুর ছিল অপেক্ষার প্রহর। কখন আম্মা ঘুমাবে আর গল্পের বইটা রেখে বাইরে দৌড়াবো সেই ফাঁক খুঁজতাম কেবল। তারচে নিজ্ঝুম রাতটাই বেশি ভাল্লাগে,আপন লাগে।
রাত বাড়তে থাকে তন্বী-কিশোরীর বেণীর মতোন -দারুণ লাগলো উপমাটা..
অনেকদিন আরামের ঘুম হয়না,
কখন আসবে সেই দিন, যেদিন আরাম করে গুটি মেরে ঘুম দিতে পারব!! 🙁
অফটপিকঃ ভালো আছো ভাইয়া? অনেকদিন পর সিসিবি'তে আসা হলো।
:hug:
রাত ভালো লাগে। লাগতেই হবে। কিন্তু অদ্ভুত দ্বন্দ্বে জড়াই 🙁 কারণ অন্ধকারটা চাইনা একদম। যদিও এই জিনিসটাই একদম চেপে বসে আছে বুকের উপর। ঘুম ব্রাত্য 🙁
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!