[নিজের কথাঃ প্রথমেই যাঁরা উৎসাহ দিচ্ছেন, তাদের জন্যে আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা! ব্যস্ততার মাঝেও কাজটা নিয়ে থাকার প্রেরণা পাচ্ছি আপনাদের সকলের কারণে। এই পর্বটি একটু বড়ো, বেশ কিছু খাশটা উদাহরণ আছে, এবং শেষের অনুচ্ছেদে কাকতালীয়ভাবে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে আমার আজ রাতে হওয়া epiphany আছে। লিখতে লিখতে হুট করেই জামাত-শিবিরের চালচিত্রের একটা জেনেটিক, জেনেরিক ধারণা পেলাম। ডকিন্সকে ধন্যবাদ!]
আরো বিশদে যাওয়ার আগে আমাদের ধারণাগুলোকে সংজ্ঞায়িত করা দরকার। এমন একটি সত্ত্বা (যেমন বেবুন) যাকে আমরা পরার্থপর ধরতে পারি। এমনভাবে পরার্থপর যে নিজের অস্তিত্বের উপরে হুমকি আসা সত্ত্বেও সে অপর আরেকটি সত্ত্বার উপকার করবে। স্বার্থপর আচরণ এটার ঠিক উল্টা। এখানে ‘উপকার’ বলতে ‘টিকে থাকার সম্ভাবনা’ বুঝাচ্ছে, যদিও জীবন ও মৃত্যুর তুলনায় তা ক্ষুদ্র, অনেকটা উপেক্ষা করার মতোই। ডারউইনীয় তত্ত্বের আধুনিক ধারণার একটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো টিঁকে থাকার সম্ভাবনায় আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র প্রভাবও বিবর্তনে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। এর কারণ এরকম ছোট কিছুর হাতে হাজার হাজার বছর সময় থাকে নিজের প্রভাব বুঝানোর জন্যে।
এটা বলে রাখা জরুরি যে উপরে দেয়া ‘পরার্থপরতা’ এবং ‘স্বার্থপরতা’র সংজ্ঞা দুইটি আচরণগত সংজ্ঞা, ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়। মোটিভ বা উদ্দেশ্যের মনোবিশ্লেষণ নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমি এটা নিয়ে তর্ক করবো না যে মানুষের ‘উদারতা’র পেছনে কোন গোপন বা অবচেতন স্বার্থের উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে কী না। এটা হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে, এমনকি এটা আমরা কখনই জানতে পারবো না, কিন্তু সেগুলো নিয়ে এই বইটি আলোচনা করবে না। আমার দেয়া সংজ্ঞার ব্যাপ্তি কেবল উদারতা বা স্বার্থপরতা ক্রিয়াটির প্রভাব নিয়ে, উদারতা দেখানো সত্ত্বা এবং যার উপরে উদারতা দেখানো হলো তাদের টিঁকে থাকার সম্ভাবনা কতোটুকু বাড়লো বা কমলো সেটা নিয়ে।
কোন আচরণের দীর্ঘকালীন প্রভাব ফুটিয়ে তোলা খুব জটিল একটা প্রক্রিয়া। প্রকৃত আচরণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আমাদের অবশ্যই একটা শব্দ ব্যবহার করতে হবে, সেটা হলো ‘আপাতদৃষ্টিতে’। একটা আপাতদৃষ্টিতে উদারতার আচরণ এমন যা দেখে মনে হবে যে এটি উদারতা, যেন আচরণ করা সত্ত্বাটির (খুব ক্ষুদ্র হলে) মারা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং উদারতাপ্রাপ্ত সত্ত্বাটির বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অনেক সময় খুব গভীরভাবে দেখলে দেখা যায় যে আপাতদৃষ্টিতে উদারতার আচরণটি আসলে ছদ্মবেশী-স্বার্থপরতা। আবারও বলি, আমি এটা বলতে চাই না যে তলে তলে সব আচরণেরই মূল উদ্দেশ্য স্বার্থপরতা, কিন্তু টিঁকে থাকার উদ্দেশ্যে এই আচরণগুলোর প্রভাব আমরা যেমন ভাবছি তার বিপরীত হয়।
এখানে কিছু আপাত-স্বার্থপর এবং আপাত-পরহিতকর আচরণের উদাহরণ দিবো। যখন আমরা নিজেদের প্রজাতি নিয়ে কাজ করি, তখন ব্যক্তিগত মতামত আটকে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, এজন্যে আমি অন্য প্রজাতি থেকে উদাহরণ নিবো। প্রথমেই একক প্রাণিদের কয়েকটি স্বার্থপর আচরণ।
ব্ল্যাকহেডেড গাল (Chroicocephalus ridibundus) বড় কলোনিতে বাস করে, তাদের বাসাগুলো কয়েক ফুট দূরে দূরে হয়। প্রথমে যখন বাচ্চাগুলো ডিম ফুটে বের হয় তখন সেগুলো ছোট এবং প্রতিরক্ষাহীন হয় আর গিলে ফেলতেও সুবিধা। এটা অন্য গালদের জন্যে বেশ সুবিধাজনক। প্রতিবেশী একটু দূরে গেলে, যেমন মাছ শিকার করতে গেলেই তার বাসায় ঢুকে বাচ্চা খেয়ে ফেলা যায়। এটা খুবই পুষ্টিকর খাবার তাদের জন্যে, বিশেষ করে মাছ ধরতে যাওয়ার কষ্ট করা লাগলো না, এমনকি নিজের ঘর বেশিসময় অরক্ষিত রাখারও দরকার পড়লো না।
এর চেয়েও আলোচিত উদাহরণ উদাহরণ হলো স্ত্রী-ম্যান্টিসের ম্যাকাব্র (macabre) স্বজাতিভক্ষণ। ম্যান্টিস এক ধরনের বড় আকারের মাংসভূক পতঙ্গ। তারা সাধারণত মাছি বা এই ধরনের ছোট পতঙ্গ খেয়ে থাকে, তবে চলনশীল যে কোন কিছুকেই তারা আক্রমণ করে। সঙ্গমকালে পুরুষ-ম্যান্টিস খুব সতর্কভাবে স্ত্রী-ম্যান্টিসের পেছনে চড়ে বসে, সঙ্গমের যে কোন পর্যায়ে সুযোগ পেলে স্ত্রী-ম্যান্টিস তাকে খেয়ে ফেলে। প্রথমেই সে পুরুষটির মাথা কামড়ে খেয়ে ফেলে, যখন পুরুষ ম্যান্টিস তার দিকে এগুতে থাকে, বা যে মুহূর্তে তার ওপরে উঠতে চেষ্টা করে তখন, অথবা সঙ্গমশেষে বিচ্ছিন্ন হবার পরপরই। এটা মনে হতে পারে যে স্ত্রী-ম্যান্টিস খাওয়ার কাজটা সঙ্গমের পরেই করবে। কিন্তু দেখা যায় মাথা খেয়ে ফেললেও পুংদেহটির যৌনকার্যে বাধা পড়ে না, বরঞ্চ, পতঙ্গের মাথায় বেশ কিছু স্নায়ুর কেন্দ্র থাকায়, স্ত্রী-ম্যান্টিস মাথা খেয়ে ফেলায় পুংদেহটির যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং এটা আসলেই একটা অতিরিক্ত লাভ। প্রাথমিক লাভ হলো স্ত্রী-ম্যান্টিস একটা ভালো খাবার পেলো।
‘স্বার্থপর’ শব্দটা সম্ভবত এমন ভয়ানক স্বজাতিভক্ষণের ক্ষেত্রে লঘু হয়ে যায়, যদিও এই উদাহরণ আমাদের সংজ্ঞার সাথে ভালোভাবেই খাপ খায়। মনে হয় এন্টার্কটিকার সম্রাট-পেঙ্গুইনের কাপুরুষোচিত আচরণ আমরা আরো সহজে বুঝতে পারবো। তাদেরকে অনেক সময় দলবেঁধে পানির কিনারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, তারা পানিতে ঝাঁপ দিতে দ্বিধায় ভুগতে থাকে কারণ সীল মাছের খাদ্য হওয়ার ভয় আছে। যদি খালি একটা পেঙ্গুইন লাফ দেয়, তাহলেই সীল মাছের উপস্থিতির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় এবং বাকিরা লাফ দিবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। স্বভাবতই কেউই এখানে গিনিপিগ হতে চায় না বলে অপেক্ষা করতে থাকে, এবং অনেক সময় একে অপরকে ঠেলা দিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে থাকে।
সাধারণভাবে বললে, কোন সম্পদ, যেমন খাদ্য, এলাকা বা যৌনসাথী ভাগ করে নিতে অস্বীকৃতিও স্বার্থপর আচরণের কাতারে পড়ে। এখন আসুন কিছু আপাত-উদার আচরণের উদাহরণ দেখি।
কর্মী-মৌমাছির হুল ফোটানোর কাজটি মধুচোরদের বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর প্রতিরক্ষা। কিন্তু যে মৌমাছি এই হুল ফোটায় সে একজন কামিকাজি যোদ্ধা, হুল ফোটানোর সাথে সাথেই তার শরীরের বেশ কিছু জরুরি অঙ্গ শরীর ছিঁড়ে বের হয়ে যায়, একটু পরেই মৌমাছিটি মারা যায়। তার এই আত্মহত্যা-মিশনের কারণে হয়তো কলোনির মহামূল্যবান মজুদ রক্ষা পেলো, কিন্তু তাতে তার কোন উপকার হয় না। সংজ্ঞামতে এটা এক ধরনের পরার্থপরতা- উৎসর্গের আচরণ। মনে রাখবেন আমরা সচেতন উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করছি না। এই উদারতা এবং স্বার্থপরতার উদাহরণগুলোতে হয়তো সেই উদ্দেশ্য আছে বা নেই, তা আমাদের সংজ্ঞার কাছে অপ্রাসঙ্গিক।
একজন বন্ধুর জন্যে কারো নিজের জীবন দিয়ে দেয়া অবশ্যই এক ধরনের উদার-আচরণ, যেমনিভাবে বন্ধুর জন্যে কোন ঝুঁকি নেয়া। ছোট আকারের অনেক পাখির মাঝে দেখা যায় কোন শিকারি পাখি দেখতে পেলে একধরনের বিশেষ ‘সতর্কীডাক’ দেয়, যাতে ঝাঁকের বাকিরা দ্রুত সতর্ক হতে পারে। পরোক্ষ প্রমাণ পাওয়া গেছে যে এর ফলে পাখিটা নিজেকে বিরাট বিপদে ফেলে দিলো, কারণ ডাক দেয়ার সাথে সাথে শিকারি পাখির মনোযোগ কেবল তার দিকেই চলে আসতে পারে। এটা হয়তো একটু অতিরিক্ত ঝুঁকি, কিন্তু তারপরেও প্রাথমিক বিচারে এটাকে আমরা উদার-আচরণ হিসেবে গণ্য করতে পারি।
প্রাণিজগতে সবচেয়ে বিচিত্র এবং বহুল প্রচলিত নিঃস্বার্থ-আচরণ দেখা যায় সন্তানের জন্যে অভিভাবক, বিশেষ করে মায়ের মধ্যে। তারা বাচ্চাকে শরীরে বা বাসায় ধারণ করতে পারে, যে কোন মূল্যে তাদেরকে খাদ্য দিবে, এবং শিকারির হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে মহাঝুঁকি নিবে। এখানে খালি একটা উদাহরণই আমি নিবো, মাটিতে বাসা বাঁধা অনেক পাখির ক্ষেত্রে- কোন শিকারি প্রাণি আশেপাশে আসলে, যেমন কোন শিয়াল যদি আশেপাশে দেখা যায়, তখন মা-বাবা পাখিটি এক ধরনের ‘মনোযোগ-বিঘ্নকর-নৃত্য’ করে। অভিভাবক পাখিটা খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাসা থেকে দূরে চলে যায়, একটা ডানা একটু বাঁকা করে রাখে, যেন মনে হয় সেটা ভেঙে গেছে। শিকারি সহজ শিকার পাওয়া গেছে মনে করে বাসা থেকে সরে অভিভাবক পাখিটার পিছন পিছন চলে যায়। এবং শেষপর্যন্ত বাসা থেকে নিরাপদ দূরত্বে চলে এলে শিকারি ধরে ফেলার আগেই পাখিটা এই ভান ছেড়ে উড়ে চলে যায়। নিজের জীবনের ঊপর ঝুঁকি নিয়ে এই ভানটুকু সম্ভবত তার বাচ্চাদের জীবন বাঁচায়।
আমি গল্পগুলো বলে কোন যুক্তি প্রমাণ করতে চাচ্ছি না। কোন বোধগম্য সরলীকরণে যাওয়ার জন্যে বাছাইকৃত উদাহরণ এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ নয়। আমি পরার্থপরতা আর স্বার্থপরতা বলতে কী বুঝাচ্ছি, সেটা ছবির মতো পরিষ্কার করে বুঝানোর জন্যেই এই উদাহরণের গল্পগুলো বলা। এই বইটি আপনাদেরকে প্রমাণ করে দেখাবে যে কীভাবে ব্যক্তিক পরার্থপরতা বা ব্যক্তিক স্বার্থপরতাকে একটা মৌলিক সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়- যাকে আমি বলি জীনগত স্বার্থপরতা। কিন্তু প্রথমেই আমি একটা সর্বাংশে ভুল উদাহরণকে ব্যাখ্যা করতে চাই, যা পরার্থপরতার উদাহরণ হিসেবে বহুল প্রচলিত, এমনকি অনেক স্কুলেও পাঠ্য।
এই ব্যাখ্যাটি একটি ভ্রান্ত ধারণাকে ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে যা আমি এরই মধ্যে উল্লেখ করেছি, ধারণাটি হলো, সকল জীবিত প্রাণি পরার্থবাদী আচরণ করে মূলত ‘প্রজাতির ভালো’ বা ‘গোষ্ঠির ভালো’র নিমিত্তে। জীববিজ্ঞানে এই ধারণা কীভাবে শুরু হলো সেটাও খুব সহজে আন্দাজ যায়। একটি প্রাণির জীবনের বেশিরভাগ সময় চলে যায় সন্তান বা বংশধর উৎপাদনে, আর প্রকৃতিতে বেশিরভাগ পরার্থপর আচরণের উদাহরণ পাওয়া যায় সন্তানের প্রতি অভিভাবকদের আচরণে। সভ্যসমাজে বংশবৃদ্ধি প্রক্রিয়ার একটা ভালো প্রতিশব্দ হলো “প্রজাতি টিঁকিয়ে রাখা”, আর এটা বংশবৃদ্ধির একটা অনস্বীকার্য ফলাফলও বটে। এখন খালি একটু যুক্তিপন্থার হাতটা লম্বা করলেই দেখবেন, বংশবিদ্যার ‘ফাংশন’ হচ্ছে প্রজাতির অস্তিত্বকে ‘দীর্ঘ করা’। এর থেকে আর কিছু ভুলভাল ছোট পদক্ষেপ নিলেই দেখবেন মনে হবে, প্রাণিরা সাধারণত যেভাবে আচরণ করে তার মূল উদ্দেশ্যই প্রজাতির দীর্ঘায়ন। নিজ প্রজাতির অন্যান্যদের প্রতি উদারতার কারণও ঐ একই।
এই চিন্তার সিঁড়িগুলো অস্পষ্টভাবে ডারউইনীয় টার্মে ফেলা যায়। বিবর্তন কাজ করে প্রাকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে, এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন বলতে বুঝায় ‘যোগ্যতমের’ টিঁকে থাকার (অন্যদের চেয়ে) সম্ভাবনা। কিন্তু আমরা কি একজন যোগ্যতম ব্যক্তি, একটা যোগ্যতম জাতি, একটা যোগ্যতম প্রজাতি নিয়ে কথা বলছি, নাকি অন্যকিছু? বেশ কিছু ব্যাপারে এটাতে তেমন কিছু এসে যায় না, তবে যখন আমরা পরার্থবাদ নিয়ে কথা বলতে যাবো, তখন এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা প্রজাতির অস্তিত্বের ক্ষেত্রে চিন্তা করি, যেটাকে ডারউইন ‘অস্তিত্বের সংগ্রাম’ বলে অভিহিত করেছেন, তাহলে একটি প্রাণি পুরো যুদ্ধে কেবলই একটি ঘুঁটি, যা কিনা প্রয়োজন পড়লে যে কোন সময়েই উৎসর্গ করে দেয়া যায়। যদি আরেকটু সম্মানজনকভাবে বলি, যখন একটা গোষ্ঠি, অর্থাৎ কোন প্রজাতি বা প্রজাতির একটা অংশ যখন নিজেদের জীবন পুরো প্রজাতির রক্ষার্থে উৎসর্গ করে দেয়, তখন তাদের টিঁকে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। প্রতিদ্বন্দ্বী আরেকটা গোষ্ঠি বা প্রজাতি, যার সদস্যরা নিজেদের স্বার্থপরতাকে প্রাধান্য দেয়, তাদের চাইতে প্রথম গোষ্ঠির বিলুপ্ত হবার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এভাবে পৃথিবীতে মূলত তেমন গোষ্ঠির প্রাণিরাই টিঁকে থাকে যাদের মাঝে সদস্যরা আত্ম-উৎসর্গী। এই তত্ত্বের নাম ‘গ্রুপ নির্বাচন’। বহুদিন পর্যন্ত এই তত্ত্বকে জীববিজ্ঞানীরা সত্য ভেবেছেন যতোদিন পর্যন্ত বিবর্তন তত্ত্বের খুঁটিনাটি আমাদের অজানা ছিলো। এই তত্ত্বটি প্রকাশিত হয়েছে V.C. Wynne-Edwards এর একটি বইতে, এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছে Robert Ardrey এর The Social Contract বইয়ে। এর প্রথাগত বিকল্পটিকে ‘ব্যক্তিক নির্বাচন’ বলে, যদিও আমি জীন নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করবো।
এইমাত্র দেয়া যুক্তিটার বিপক্ষে ‘ব্যক্তিক নির্বাচনবাদী’দের ত্বরিত জবাবটা অনেকটা এরকম। একেবারে পুরোপুরি পরার্থপর গ্রুপের মধ্যেও নিশ্চিতভাবেই একটা বিরুদ্ধবাদী সংখ্যালঘু অংশ থাকবে যারা কোনরকম স্বার্থত্যাগে অস্বীকৃতি জানাবে। যদি একজনও স্বার্থপর বিদ্রোহী থাকে যে বাকিদের পরার্থতার সুযোগ নিতে পারে, তাহলে সংজ্ঞামতেই বাকিদের চাইতে তার টিঁকে থাকার এবং সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা বেশি। এই সন্তানদের প্রত্যেকেই তার এই স্বার্থপরতার বৈশিষ্ট্য উত্তরাধিকারসূত্রে পাবে। বেশ কয়েক প্রজন্মের প্রাকৃতিক নির্বাচনের পরে, ঐ “আত্ম-উৎসর্গী” গ্রুপটি একক স্বার্থপর মানুষদের ভীড়ে হারিয়ে যাবে, মিলিয়ে যাবে। তাদের আর আলাদা করে চেনা যাবে না। গ্রুপে স্বার্থপর কোন অংশ থাকার সম্ভাবনাকে যদি আমরা জোর করে উড়িয়েও দেই, তার পরেও এটা মেনে নেয়া কঠিন যে আশেপাশের ‘স্বার্থপর’ গ্রুপ থেকে কেউ এসে এই গ্রুপে মিশে যাবে না। এবং আন্তঃবিবাহের মাধ্যমে এই পরার্থপর গোষ্ঠির বিশুদ্ধতা তারা নষ্ট করবে।
(চলতেই থাকপে)
******
প্রথম
মাথার উপরে দিয়া যায় 😕
রেজ1,
আন্দা পোলাটা ব্যাপক সময় অপচয় কইরা, ডাউন টু আর্থ নাইম্মা আইসা অনূবাদ করতেছে, আর তুই কি না ...
ভাল কইরা পড়, অনূবাদটা অনেক সহজবোধ্য হচ্ছে বলেই আমার মনে হয়।
মাথার উপর দিয়া যাওয়ার মত কিছু না (সম্পাদিত)
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
অনুবাদটা খুবই সাবলীল হইছে।আমার মত মুটা মাথার মানুষও মুটামুটি বুঝতে পারছি।আন্দা ভাই সাবাস!
আগে সেকেন্ড হয়ে নি
এই পোষ্টে কমেন্ট দেবার জন্যই লগইন করলাম। রিচার্ড ডকিন্সের কাজ নিয়ে পরিচিত হবার চমৎকার সুযোগ পাওয়া গেলো। ধন্যবাদ আন্দালিব ভাই।
তোমাকেও ধন্যবাদ, রেজওয়ান। রিচার্ড ডকিন্সের কাজ খালি এই একটা বইয়ে না, আরও অনেকদূর ছড়িয়ে। তাঁর নাম লিখে সার্চ করলেই দেখতে পাবে। 🙂
পড়ছি .... চলুক।
থেংকু সাল্লু ভাই। চলুক তাইলে।
পড়ছি আন্দালিব। অনুবাদটা একটু খটমট লাগছে, হয়তবা মূল বইটাই এরকম। যাই হোক, বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। 🙂
থ্যাঙ্কু বস।
মূল বইটায় এখনও যাইতে পারি নাই, এটা কেবল ১ম অধ্যায় তবলার ঠুকঠাক। মূল বইয়ে গিয়ে আমার কী দশা হবে সেটা ভাবতেই... 😕
এই পর্বে যুক্তির পরিমাণ বেশি বলে, ভাষা অনেক চেষ্টা করেও এর চেয়ে সহজ করতে পারলাম না। আর যুক্তির ব্যাপারে তো পাঠক-আলোচক দু'জনেই মনোযোগী থাকে।
আন্দা, খুব কষ্ট কর্তেছিস ভাই, বুঝতে পারতেছি।
কিন্তু একটা জিনিস পরিস্কার যে, অনূবাদ করবি বলে ডকিন্সের বইটা তুই ডাবল মনোযোগ দিয়ে পড়তেছিস, তার ফলে তোর epiphany (সঠিক বাংলা কি বোধদয় ??) হচ্ছে, যাতে পাঠক উপকৃত হবে।
নিজের কথাতে তুই বলে না দিলে হয়ত 'গ্রুপ নির্বাচন' তত্বের জবাবে ‘ব্যক্তিক নির্বাচনবাদী’দের মতবাদের মধ্যে আমি জামাত-শিবির আর যুদ্ধাপরাধীদের দেখতে পেতাম না। (সম্পাদিত)
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
এরকম কমেন্ট পাইলে মনে হয়, কৈ? কষ্ট করলাম কৈ? 😀
এপিফ্যানির ভালো বাংলা পাই নাই। আর আমার অভিব্যক্তিটাও হেব্বি ছিলো, বই পড়তে পড়তে হঠাৎ যখনই এইটা মাথায় আসলো, আমি বই বন্ধ করে হা করে বসে রইলাম! এতোদিনে বুঝলাম কেন জামাত এখনও টিঁকে আছে, কেন শিবির "ভালো", কেন দেশে "যুদ্ধাপরাধী নাই"। গতকাল তো একজনের গোআ-এর ছবিতে কমেন্ট দেখলাম যে একাত্তরে যুদ্ধে হারলে এরাই বীর বলে গণ্য হতো, এটা জাস্ট লাক যে তারা হারুপার্টিতে চলে গেছে। (!!)
আসলে, সবই নিষ্ঠুর জেনেটিক্স, টিকে থাকার লড়াই। এখানে সহানুভূতি, এমনকি বিচারের নামে বেনিফিট অফ ডাউট দেওনের কোন জায়গা নাই।
দোস্ত, জটিল হইছে। চলুক। যুক্তির সংগঠন বেশ লাগছে। :thumbup:
থেংকু দোস্ত। এর পর থিকা তর্ক করলে এইভাবে করমু ঠিক করছি। তুইও মনে রাখ! :grr:
আন্দালিব ভাই, এই পর্বও দারুন হয়েছে।
একটা কাজ করা যায়? ধরেন এক পাতা পুরোটা পড়ে তারপর কয়েকটা নোট লিখে নিজে নিজে লিখতে বসলেন। তাতে করে পাঠকের সাথে ইণ্টারেকশন আরও বাড়বে। পাঠক লেখার ভেতরে ঢুকতে পারবে। আমি এই স্টাইল ফলো করি, আপনার করতে হবে এমন না 🙂
জামাতিদের এবং ভুল করে কথাবার্তায় তাদের সাপোর্ট করাদের ব্যাপারটা মেনে নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে। আমার ধারণা এমন হবেনা। খুব ম্রিয়মান ভাবে বললাম, কারণ গতকয়েকদিন ফেসবুকে কয়েকজনের মন্তব্যে আমি টাশকির চেয়েও বেশি খেয়েছি। যৌক্তিক বিবেচনায় আপনার মনে হওয়াটা সঠিক, এমনটা হতেই পারে। চাইনা, এই আরকি!
লেখাটায় আরও বড় মন্তব্য করতাম। আসলে দুইবার পড়ে চিন্তা করছি কী বলা যায়, চিন্তা চিন্তাতেই ল্যাপির চার্জ শেষ হয়ে আসলো 🙂
লেখা চলুক, সাথে আছি।
তোমার স্টাইলটা পছন্দ হইছে। কিন্তু এটাতে আমার সময় বেশি লাগবে। অবস্থা যা বুঝতেছি, তাতে মনে হচ্ছে আরো বেশি বেশি মনোযোগ দেয়া লাগবে। পরের চ্যাপ্টারে তোমার স্টাইল কাজে লাগবে কারণ নোট নেয়া ছাড়া লিখতেই পারবো না।
সেটাই। 🙁
আগের পর্ব এবং এটা দুটোই পড়েছি। কাজ-কামে ব্যস্ত থাকায় মন্তব্য করা হচ্ছে না।
অনুবাদ ভালো হচ্ছে। কিছু টার্ম এবং নাম ইংরেজিতে দিয়ে দেয়ায় সুবিধা হচ্ছে। বিস্তারিত জানার জন্যে গুগোল সার্চ দিয়ে দিচ্ছি। এই কাজটা সামনের পর্ব গুলোতেও করিস। ভালো হয় যদি নাম বা টার্মটা লিখে বন্ধনীর ভেতর ইংরেজিতে দিয়ে দিস।
গো-আ নিয়া মন্তব্যটা আমিও দেখেছি। কিন্তু এই পোস্টে সেটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে বলে সামলে নিলাম।
চলতেই থাকুক।
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
কামরুল ভাই, থেংকু। 🙂
প্রথমে ভাবছিলাম প্রাসঙ্গিক লিঙ্কগুলো শব্দের ওপরেই বসিয়ে দিবো। তাতে আবার ঠিক বই বই লাগে না, অধ্যায়টা শেষ হলে একবারে ফুটনোটে দিয়ে দিবো। কিছু নাম বাংলা করে ফেললে আসলেও খুঁজতে অসুবিধা, বুঝতেও।
অপ্রাসঙ্গিক কথাটা "আভেগে" বলে ফেলসি। O:-)
খাইষ্ট্যা শব্দটারেও ভদ্র ভদ্র লাগ্লো 😛
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
ভাবছিলাম খাশটে লিখবো। পরে খাশটা লিখলাম। হে হে হে! B-)
অনেক ইন্টারেস্ট পাচ্ছি ভাইয়া
আমি অনেক উৎসাহ পাচ্ছি। ধন্যবাদ জিনাত।
😮 😮 😮 😮 😮 আল্লাগো!
আপনার তো খুশি হওনের কথা :))
হেলমেট ছাড়াই ব্যাটিং?কেম্নে কি?
হেলমেট doesn't matter, ব্যাটিং wood. 😀
সিরিজটা ভালো লাগছে,চলতে থাকুক। 🙂
ধন্যবাদ শাহাদাত ভাই। :hatsoff:
পড়ছি, এই পর্বে আর বড় মন্তব্য করলাম না, শুধু বলি- অনুবাদ ভাল লাগছে। চলুক...
এর পরের অংশগুলো হয়তো ব্লগে দেয়া হবে না। আপাতত নিজে নিজে লিখি। খুব আকর্ষণীয়গুলো ব্লগে দিবো। 🙂
প্রিয় আন্দালিব, আপনি সামুতে আর লেখেন না প্রায় অনেকদিন হলো আপনার ব্লগ প্রোফাইল এ গিয়ে দেখতে পেলাম আপনি সেখানে নেই যদি সম্ভব হয় সামু তে আবার আগের মত লেখালেখি শুরু করুন সেখানে সবাই আপনাকে খুব মিস করে
আর আপনাকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা অনেক ভালো থাকুন আর আনন্দে থাকুন সবসময় এই শুভকামনা রইলো
http://www.somewhereinblog.net/blog/noishochari/29132246#comments