আমার জ্ঞান থাকতে থাকতেই ধারালো চাপাতির কোপে ডান হাঁটু থেকে আলাদা করে ফেলল আমার পা-টাকে। রমিজ। রমিজ আর সোবহান। সোবহানের পাশে আরো কেউ ছিল (মনে পড়ছে না)। রমিজের হাতে চাপাতিটা ধরা ছিল। কোপানোর ঠিক আগে ঝিকিয়ে ওঠা আলোয় দেখেছি রমিজের হাতের শিরাগুলো ফুলে উঠছে। সাঁ–ঝুপ! একটা শব্দের পরে আমি টের পাই পা আলাদা হয়ে গেছে। কাটাপ্রান্তে লাল লাল মাংস আর রক্ত। মোড়ের দোকানে পিজা বলে যা বিক্রি হয় পনেরো টাকায়, সেটার মতো লাগছে দেখতে। ওটার চারপাশে পোড়াটে-হলুদ রঙের রুটি থাকে। মাঝে কিলবিলে মাংশ-পিঁয়াজ, উপরে একটু সস, আর চিজের গুঁড়া মিশানো থাকে। আর মাঝখানে, ঠিক মাঝখানে একটা লাল টুকটুকে টমেটো। কোনটার মাঝখানে এক স্লাইস ডিম থাকে।
আমি ঠিক জানি না কেন আমার পিজাগুলোর কথা মনে পড়লো। রোজ অফিসে যাবার সময়, বা বাসায় ফেরার সময়ে, বা ছুটির দিনে বাইরে বেরুলে, যে কোন দিনই, দোকান খোলা থাকলেই, আমি পিজাগুলো দেখি। অভ্যাসবশত ঘাড় ঘুরিয়ে হেলানো ট্রেতে রাখা কতিপয় নিরীহ পিজা মুখ ব্যাদান করে চেয়ে থাকে। দোকানী মোলায়েম পান-খাওয়া দাঁতের হাসি দেয়। রমিজের কোপে আমার ডান পা আলাদা হয়ে গেলে আমি থকথকে একটা পিজা দেখতে পেলাম।
খুব জোরে চিৎকার করলে একসময়ে স্বর বুজে আসে। তারপরে আর ডেসিবেল রেঞ্জে থাকে না শব্দ। আমি এত জোরে চিৎকার দিলাম, জীবনেও দেই নাই এমন! তারপরের দুইদিন, যখনই জ্ঞান ফিরেছে, আমি এমন জোরে চেঁচিয়েছি, তারপরে একসময়ে জ্ঞান হারাইছি। পরে অবশ্য আর লাল পিজা দেখতে পাইনি। ওখানে ত্যানা দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিয়েছে কেউ। কে দিয়েছে জানি না।
দিনে দিনে ও জায়গাটা শুকিয়ে গেছে। কাল কুঁচকে যাওয়া চামড়া ছাড়া কোন অনুভূতি নাই। আমার খুব খারাপ লাগে মাঝে মাঝে, পিজাটা দেখতে সুন্দর ছিল! খালি পা নাড়ালে থাইয়ের মাংশ কেঁপে কেঁপে ওঠে, ডান পায়ের বাকি অংশের অভাবে তিরতির করে কিশোরী বালিকার মতো কাঁপতে থাকে। হায়! তার খেলার পুতুল কেড়ে নিয়ে গেছে কেউ!…
২
তারপরে আমি ডান পা ছাড়াই চলতে শিখে গেছি। একপায়ে বিভিন্ন কাজগুলো করতে শিখে গেছি, যেগুলো দুই পা না হলে করাটা খুবই কঠিন। মানুষ খুব অভিযোজন-ফিলিক, খাপ খাওয়াতে জুড়ি নাই। তবে মাঝে মাঝে রাতে খুব পিপাসায় কাঠ গলা নিয়ে ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলে বুঝে উঠতে সময় লাগে আমি গুদামঘরে আছি না নিজের বিছানায়। আমাকে চারদিন একটা গুদামঘরে আটকে রেখেছিল। সেই ঘোর প্রচ্ছন্ন দুঃস্বপ্নের মত দিন-রাত ফিরে আসতে চায়। জ্বলন্ত উনুনের পাশে খোলা হাঁপরের মত শ্বাস নিই। আমি অনেকটা জোর করেই নিজেকে প্রবোধ দেই, না, তুমি নিজের ঘরেই আছ। কাঁথা সরিয়ে হাত বুলাই কাটা জায়গাটায়। শুকিয়ে গেছে একদম।
কয়েকদিন ধরে আমি চকবাজারে ঘুরছিলাম। এক হাতে ক্র্যাচ ধরে হেঁটে হেঁটে পরখ করে একটা দা কিনেছি। তারপরে দোকানের পাশেই বসে থাকা ধার দেয়ার কারিগর দিয়ে খুব ধারালো করেছি। লোকটা একবার বলেছে, “ভাই, ধার হইছে খুব!” আমি তাকে থামিয়ে আবারও ধার করতে বলেছি। তীক্ষ্ণ ধারালো দা-টা কাগজে মুড়ে ছালা পেঁচিয়ে বাসায় আনলাম। তারপরে খাটের নিচে রেখে দিয়েছি সন্তর্পণে। সাহস হয় নাই। আমার সাহস অনেক কম। মায়াও সেই তুলনায় বেশি। অদ্ভুত মানুষ আমি! দাঁড়িপাল্লার মত দু’পাশে সমান সাহস, সমান মায়া হলে এতদিনে সেরে ফেলতাম কাজটা।
কয়েকদিন খুব ভালো ঘুম হলো। দা-টা স্বপ্নেও আমাকে ভরসা দিত। ঘুম ভেঙে নিজের ঘরকে গুদাম মনে হবার আগে মনে পড়ে যেত খাটের তলে একটা দা আছে। কাঁধের ওপর বড় ভাইয়ের হাতের মত দায়ের শীতল বাঁকানো ফলা আমাকে সাহস দিত।
কিন্তু অল্প কিছুদিন পরে সেই হাতটাও কাঁধের ওপর থেকে নেমে গেল। এখন দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙলে আমি আর ভরসা পাইনা। আমি আসলেই একটা ভীতুর ডিম! ভয় কাটাতে দা-টাকে তুলে বালিশের পাশে নিয়ে শুইতাম। এতে করে যদি ভয় কমে! কিন্তু আমার পক্ষে এই অসমতা আর টেনে নেয়া সম্ভব হচ্ছিল না হয়ত…
গুদামঘরকে যেদিন আবার কল্পনা করলাম, যেদিন আবার স্বপ্ন দেখে হাঁসফাঁস করতে করতে, ডাঙায় তোলা মাছের মত খাবি খেতে খেতে উঠে বসলাম, যেদিন রমিজের হাতের শিরা কিলবিলিয়ে আমার ডান পায়ের দিকে আবার ছুটে এল, আমি শ্রবণোত্তর চিৎকারে ঘুম ভেঙে উঠে বসে বালিশের পাশে রাখা দা টেনে নিয়ে এক কোপে আমার বাম পা কেটে আলাদা করে ফেললাম।
সাঁ–ঝুপ!
— — —
(সমাপ্ত)
1st 😀
মির্জাপুর জিন্দাবাদ। 😀
মাইন্ড খায়ো না আমিন। :grr:
আইচ্ছা। বেশি উচ্চবাচ্য না করাই ভালো ঐটা নিয়া।
এনিওয়ে এই গল্পটার মজার দিক হলো দশ মিনিটের ব্যবধানে দুই বার পড়লাম ,দুইবারই মজা পাইছই।
খেক খেক। আমিও তোর লেখা অল্পসময়ের গ্যাপে দুইবার পড়লাম! হা হা হা! 😀 😀
বুঝলাম না, বুঝাই দাও।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
কি লিখলি এইটা!!!
ভয়ংকর। 😕 😕 😕
কোপানি হবে খালি! সাঁ--ঝুপ! :grr: :grr:
🙁 😕 😮 ~x( :bash:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
আপনারে নির্বাক দেখলে ডর লাগে। আওয়াজ দেন, নাইলে সাঁ--ঝুপ! :grr: :grr:
খাইছে :chup: :chup:
কামরুল ভাই, ধারাল একটা দা দিয়া ওর বাকি পা'টাও কাইট্যা দেন... :gulli:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
জুনা, পা গোনাগুনির ক্লাশের পড়া মুখস্ত আছে এখনো 😀
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
পা গুনাগুনির ক্লাশ কোনটা? আমি তো সেখানে ক্লাশ করলাম না। ঘটনা কী?
ফৌজিয়ান ভাই, পড়াশুনা ভাল না লাগলেও- ঐদিনের ক্লাসে ব্যাপক মজা পাইছিলাম... 😀
আহারে!!! আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সকল স্তরে এমন 'আনন্দের সাথে শিক্ষা' কবে শুরু হইব... :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
হায় হায়! আমার পা কাটবেন কেন? মুখ খুইলা এইসব কী বলেন বালাই ষাট্!! x-( x-(
কোপা সামসু :duel:
কামরুল ভাই, খায় নাই। কাটছে। এক কোপে। সাঁ--ঝুপ! :grr:
আমি আর এই পোস্টে ধুকুম না!! পড়লে ডর লাগে। 😮 😮
রাইতও হইছে অনেক! আমারও ডর কর্তাছে একটু একটু! 😕 😕
সব্বোনাশ 😕
পোলাপাইন আন্দালিবরে খালি গুতাইছে সবার মনের মতোন কিছু লেখার লাইগা। হালায় তার নষ্ট মেমরি কার্ড ঘাইটা ডেইন্জারাস জিনিস নামায়া দিলো :grr: :grr: এইবার যাবা কই মিয়ারা :gulli: :gulli:
কিন্তু আমি ভাবতাছি এর পরেও যদি ঐ স্বপ্নটা ফিরে আসে তখন কি হইব? কি কাটব? কোনটা কাটব? :duel:
বাপরে :thumbup: :thumbup:
আন্দালিব সাব্বাশ, গল্পেও সেইরকম দক্ষতা :hatsoff: :hatsoff:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
আন্দালিব
কাইয়ুম ভাই কিন্তু কিছুই বুঝে নাই, আমারে চুপে চুপে কইছে 😀 😀 😀
আন্দালিবরে কইসনা কিন্তুক ;)) ;))
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
চুপি চুপি বলেন আন্দালিব জেনে যাবে
জেনে যাবে আন্দালিব জেনে যাবে। 😛 😛
:khekz: :khekz: :khekz:
ব্যাপক ব্যাপক!
:khekz: =))
ওরে ওরে! আমার আমি নাইরে আমার আমি নাই! :tuski: :tuski: :tuski:
কাইয়ুম ভাই, আমি পুরাই পিরা যাইতেছি আনন্দে। লেখাটা আজকে নামাইছি গত ২/৩ ঘন্টায়। সবাই বলছিল সহজ লেখা দিতে। আমি ভাবলাম সহজ কইরা একটা কঠিন ডরানি লেখা দিই! সবাই এখন ডরাইতেছে, কোনদিক থেকে সাঁ--ঝুপ করে কোপ আসে এই ভয়ে! 😕 😕 (আমিও একটু একটু!)
আর কী কাটবে জানি না। কাটাকাটি আপাতত থামাই। পায়ে পায়ে মিল-মোহব্বাত। দুইখান গেছে, ঝামেলা শেষ (বলা যায়!)।
আপনার প্রশংসা আসলেই অনেক মন ভাল করে দিতাছে। থ্যাঙ্কু বস!
মানুষের ৩ পা।
১)ডান পা ২)বাম পা ৩) সেন্সর 😀
অফ টপিক-ভয়াবহ গল্প মামা।বীভৎস রসের দুর্দান্ত ব্যবহার।জয়নুলের দূর্ভিক্ষের ছবির মত।পইড়া গা টা গুলায় উঠছে।কালকে এক আয়তনয়নার সাথে পিজ্জা হাটে যাওয়ার প্ল্যান ছিল ক্যানসেল কইরা মোস্তাকিমের চাপ খাইতে যামু 😕
চাপ খাইতে যাইবা। চাপের মাংশ নিয়া আরেকখান গল্প ছাড়মু নাকি বল? 😉 বেশি টাইম লাগবে না, অর্ডার দাও খালি! :grr: :grr:
আনতনয়না-কে লইয়া পিজ্জা হাটের পিজ্জা খাইতে পারো। গল্পের পিজ্জা মাত্র ৬ ইঞ্চি ব্যাসের, অতি-অখাদ্য পিজ্জা। তুমি যে ১২ ইঞ্চি ভক্ষণ করিবে তাহা অতি উপাদেয়। আনতনয়নার হৃদয় সসের ন্যায় দ্রবীভূত হউক এই কামনা করি! :clap:
সতর্কীকরণঃ চাপ নিয়া গল্প লিখলে কিন্তু সেন্সর পায়ের খবর আছে! :gulli2:
মামা ওই কাম কইরেন না-গরীবের ডেট(আয়তনয়নাই খাওয়াবে বলছে-কালকে উনার জন্ম না কি জানি একটা দিন)।সেন্সর্ড ঠ্যাং এর কিছু হইলে গরীব মানুষ চাইর ঠ্যাং এক করুম ক্যামতে?? 🙁
কত জাস্ট ফেরেন্ড আছে রে!!!!!!!!!
আমি একটা ধার দিতে পারি। 😉 😉 😉 😉
পুরা কোপানী হইছে ................. সাঁ–ঝুপ!
:hatsoff: :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
ওই ব্যাটা আন্দালিব, এমনে লিখলে কি হয়! :guitar: :guitar: :guitar: :guitar: :guitar:
ইস! ক্যান যে একবারই রেটিং করা যায়!
চপ, কাটলেট, বার্গার, স্যান্ডুইচ, শর্মা, গ্রীলের আশায় থাকলাম
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
এ তো দেখি পুরা 'স' 😕 😕 😕
কোন পার্ট? 😀 😀 😀
১। গল্পটা পড়লাম, বুঝলাম, কিন্তু এই পাব্লিক নিজের পা নিজেই কাটল কেন বুঝলাম না। একটা হাতও কি কাটছে নাকি?
২। পিৎজার যে বর্ননা দিলা, এর পরে আর খাইতে পামু কিনা কে জানে?
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ফয়েজ ভাই, আন্দালিব ফ্রিকি সাইকো মুভির ব্যাপক ফ্যান... 😕
এখন এই নিয়ে লেখাও শুরু করছে...ও যে সফল তা তো ভালোই বোঝা যাচ্ছে... :-B
ব্যাটা সাইকো... 😡
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
জিসানের পাটটা ওরে কইলে লিখব? একটু দেখবা কইয়া? আমার কইতে শরম করে।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
এই টপিকে আপনার সাথে কোন কথা নাই... x-(
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
আন্দালিব ভাই রমজানে এই গল্প ছাড়লে পিৎজা হাটের ব্যবসা বন্ধ হইয়া যাইত। 😀
ভাল লাগছে...। কোপানি পুরা। :awesome: :awesome:
সা ঝুপ..............বাপস 😕 😕 ।
Life is Mad.
উরিবাবা মুই ভয় পাইছি 🙁 🙁 🙁
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
পুরাই সাঁ–ঝুপ আন্দালিব।
:((
টুই এইবার কানতে থাক
গল্প লেখ ভাল কইরা লেখ
সা-ঝুপ।
দারুণ বর্ণনা। (এট্টু ভয়ও পাইছি 😕 )
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..