-
ঙ.
…শশাঙ্ক নামে একটা ছেলে জন্মেছে একটু আগে। ম্যাটার্নিটি ওয়ার্ডের ঘোলাটে পর্দাঢাকা কেবিন থেকে তার চিল-চিৎকার ভেসে আসছে। ফিনাইলধোয়া ঘরে জীবাণুমুক্ত তোয়ালেতে সে জড়ানো। রোগ-জরা তাকে এখন ছুঁতে পারবে না। আরো অনেক অনেক দিন পরে সে পঙ্কিল হবে, তার আগে এখন অন্তত সে নিষ্পাপ, সরল, নির্মল আগমনের পরে কাঁদছে। শশাঙ্কের মা, একটু আগে প্রসবজনিত রক্তক্ষরণে মারা গেছেন চুপচাপ। মৃত্যুর একটু আগে তিনি একবার শশাঙ্ককে কোলে নিয়ে তার নরোম মাথায় চুমু খেয়ে বিড়বিড় করে কী যেন বলেছেন।…
-
ঘ.
…গত কিছুদিন ধরে শরীরটা কেমন খুলে খুলে যাচ্ছে। এমন ক্লান্ত লাগে! বসতে কষ্ট কষ্ট উঠে হাঁটতে কষ্ট। বেশি সময় একজায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। পা দুটোও ফুলে গেছে। আমি একটা সময়ে কী সুন্দর তন্বী ছিলাম। পাতলা ছিপছিপে ছিলো শরীরটা। এখন কেমন ভারি হয়ে গেছি। আমার ভেতরে বাবুটা নড়াচড়া করে। ও আসছে। আর ক’টাদিন পরেই। ও এলে আমি ওকে বুকে চেপে বড়ো করবো। ছেলে আসছে আমার। ওর সাথে এতদিনে কতো কতো কথা বলেছি! কীভাবে কীভাবে সময়টা চলে গেল! শশাঙ্ক! শশাঙ্ক নাম রাখবো ওর। কী সুন্দর তেজস্বী নামটা! শুনলেই রক্তের মধ্যে চিন্ চিন্ করে ওঠে। মনে হয় মৌর্যসম্রাট সাঁই সাঁই করে তরবারি ঘুরাচ্ছে আর বীরের মতো এগিয়ে আসছে!…
-
গ.
…আমার ভেতরে একটা বাবু জন্মাচ্ছে একটু একটু করে। আমি ওর জন্যে দিনরাত জেগে থাকি বা ঘুমিয়ে থাকি। ওর সাথে কথা বলি বা অভিমান করি। বাবুটার জন্যে আমার কেমন কেমন করে! গত পাঁচ-ছয়মাস ধরে এই বাবুটা আমার মধ্যে জন্মেছে, বড়ো হচ্ছে. আজকাল খুব দাপাদাপি করে। ফুলে ওঠা পেটের টানটান চামড়ার নিচেই শুয়ে আছে। ওর কি এখনও চোখ ফুটেছে? ও কি স্বপ্ন দেখা শিখেছে? কিসের স্বপ্ন দেখে ও? নিশ্চয়ই স্বর্গের স্বপ্ন দেখে ও। সেই স্বপ্ন দেখে মুখে হাসিও ফুটে ওঠে আমার বাবুটার।…
-
খ.
…এটা খুব বিরক্তিকর একটা রুটিন হয়েছে! রোজ সকালে উঠেই গা গুলানো বমি আসে। চেষ্টা করেও আটকানো যায় না। তারপরে নাশতা করার আগ পর্যন্ত মুখটা টকে থাকে। সেই স্বাদে আরো বমি হবে বলে মনে হতে থাকে। বিচ্ছিরি! সকাল সকাল মেজাজটা খারাপ হয়ে থাকে। এ কেমন যন্ত্রণায় ফেঁসে গেলাম! সামনের দিনগুলোয় আরো কী কী ভোগান্তি হবে ভাবতেই শিউরে উঠছে গায়ের লোম। বাচ্চা জন্ম দেয়া কতো কষ্টের! যাদের কাছে শুনেছি সবাই বলেছে, সবাই সুযোগ পেয়ে খালি ভয় দেখায়।…
-
ক.
…আমি হাতে টেস্টের কাঠিটা ধরে বসে আছি। এটা কীভাবে সম্ভব! অবিশ্বাস্য লাগছে নিজের কাছেই। এভাবে তো আমি চাইনি। এভাবে করে কি হয় কোন কিছু? ভয় হচ্ছে খুব। আমি এখন কী করি! এখন কোনভাবেই বাচ্চা নেয়া যাবে না। আরো অন্তত দুইবছর। আমার ক্যারিয়ারের পুরা বারোটা বেজে যাবে। তারওপর বাচ্চা মানুষ করবে কে? কাজ দেখবে কে? আমার কেমন দিশেহারা উদভ্রান্ত লাগছে! ইস্! আরেকটু কেয়ারফুল হলেই হতো। কেন যে… …
-
০.
কোন গল্প নয়। কোন সত্যকাহিনী নয়। একটা মানুষ আর তার অপত্য-মানবের কথা। টুকরো টুকরো কথা, যে কথাগুলোর কোন মূল্য নেই পৃথিবীর কাছে। সর্বসম ঘূর্ণনে পৃথিবী নশ্বর সত্য বুকে নিয়ে ঘুরছে। সবই বিনাশ হবে একদিন। পৃথিবীচারী মানুষও সেকথা জানে, জানে বলেই আরো আরো নতুন প্রাণ নিয়ে আসে এখানে। নারীদের গর্ভে বীরপ্রসব ঘটে। তারপরে সেই বীর, পুরুষ হয়ে বেড়ে ওঠে। পেছনে নারীটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যান, বেঁচে থাকলে, কিংবা মরে গিয়েও তাঁরা হারিয়ে যান। পৃথিবীর কিছু যায় আসে না তাতে। তবে তাঁরাও বড়ো অকৃত্রিম ভালোবাসায় আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যান, যেন আর কারো স্বীকৃত সনদের কোনও দরকার নাই।
—-
সত্যিই তো, তাদের ভালোবাসার স্বীকৃত সনদের প্রতীক্ষা তারা করেন না।
আন্দালিব, ফ্ল্যাসব্যাকের মত করে লেখার এই ধরণটা বেশ ভালো লাগল।
অনেক অনেক ধন্যবাদ তানভীর ভাই। লেখাটা সোজা করেই লিখছিলাম। তারপরে উল্টায় দিলাম, একটা পরীক্ষা বলতে পারেন! সেটা ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো আমারো! 😀
:boss: :boss: :boss:
u made my day with your wiritng....
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
একটুও বাড়িয়ে বলি্নি
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
তোমার উচ্ছ্বাসের মাত্রা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না। পড়ার জন্যে ধন্যবাদ রকিব। গল্পটা তোমাকে ছুঁয়েছে জেনে সত্যিই ভালো লাগছে।
:clap: :clap: :clap: :clap: :clap: :clap:
:hatsoff: :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
থ্যাংকস রেজওয়ান! 🙂
পর জনমে আমাকে যদি সৃষ্টিকর্তা "ছেলে না মেয়ে হব" এর যে কোন একটি বেছে নেবার সুযোগ দেন, তাহলে শুধুমাত্র মাতৃত্বের স্বাদ পাবার জন্যই আমি মেয়ে হতে চাইব।
উল্টো দিক থেকে পড়ে পড়ে তবেই উপরে আসলাম।
অসাধারণ আন্দালিব।
Life is Mad.
সায়েদ ভাই, এখানে আমি একটু ডিফার করবো। আমি মেয়ে হয়ে জন্মাতে চাই না। একজন মেয়ে মা হওয়ার সময়ে যে প্রচণ্ড মানসিক জোর দিয়ে সেই সময়টা পার করে সেটা ভাবলেই আমি শিহরিত হই। এর তুলনীয় কোন উদাহরণ দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না! অনেক অনেক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ আশংকার একটা উদাহরণ দিতে পারি, এ যেন রোলার কোস্টারে বেল্ট না বেঁধে চড়ে বসা! (এটা মা হওয়ার অভিজ্ঞতার অনিশ্চয়তার কাছে পিঁপড়ার সমানও না ধরে বলছি)
আমার মনে হয় না এতটা সাহস বা মনের জোর আমার মধ্যে আছে। ভীতু মানুষ খুব!
[উল্টো পড়লেন কেন? ঙ-ঘ-গ-খ-ক-০ এভাবে পড়লেও কিন্তু অন্যরকম একটা পড়ার মজা পাবেন। ট্রাই করে দেখেন!]
আমার এক সিনিয়র কলিগ (কলেজের বড় ভাইও 🙂 ) দ্বিতীয় বাচ্চা নেবার কথা উঠলেই দারুণভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তার মতে একটা মেয়ে বাচ্চা জন্ম দেবার সময় মৃত্যুর কাছাকাছি কোথাও চলে যায়। তিনি দ্বিতীয়বার ভাবীকে সেইরকম জায়গায় পাঠানোর কথা চিন্তা করতেই কষ্ট পান।
Life is Mad.
দুইবার পড়লাম, উপর থেকে নীচ তারপর নীচ থেকে উপর
আরেকটা অসাধারণ পরিবেশন। আন্দালিব, খুব ভাল লাগ্লো।
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
দুইবার পড়ার জন্যে আপনাকে ডাবল ধন্যবাদ! 😀 😀
ভাই, উল্টা করার পরীক্ষাটা জটিল হইসে।
আসলেই মনে হচ্ছে জটিল হইসে! 😉
থ্যাংকস রবিন ভাই!
বেশ সময় নিয়ে, লেখকের ইচ্ছে-ক্রমানুসারেই পড়লাম এবং আরো একবার আন্দালিবের লেখনীতে চমৎকৃত হলাম। :boss: :boss:
উল্টো পড়তে অবশ্য বেশ লাগছিলো! মনিকা বেলুচ্চির ইরিভার্সিবল টাইপ ফিলিংস।
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
আহা! মনিকা-কে মনে পড়ে গেলো! :dreamy: :dreamy: :dreamy:
ইরিভার্সিবল এর মতোন (কাছাকাছি) আরেকটা ছবি আছে: মেমেন্টো। এটার কাহিনী মেরে আমির খানের নতুন ছবি আসতেছে। ডাইরেক্টর ক্রিস্টোফার নোলান (ব্যাটম্যানের দুইটা এই ব্যাডার বানানো! 😉 )। ছবির কাহিনীও উল্টা যায়, পনের পনের মিনিট করে! জটিল অভিজ্ঞতা!
আমির খানের গাজিনির অনেক আগে আমাগো মান্নার "মাথা নষ্ট" মুভিটা এই সিনেমার ভাবাদর্শ অনুসারে তৈরি হইছে।দেশি বৈলা পাত্তা দ্যাননা,তাইনা? x-(
বলসিলাম না তোমার লিখা পড়ে আমি কিছুক্ষণ থমকায় থাকি, অসাধারণ লেখনী মন্ত্রের জাদুতে আটকিয়ে রাখে। শুভ কামনা সবসময়।
অনেক ধন্যবাদ সামি ভাই। আপনার কথাগুলো অনেক প্রেরণা দিবে আমাকে!
দোস্ত খুব সুন্দর হইছে। প্রথমে ঙ দেখে বুঝিনাই ভাবছি এইটা বুঝি সিরিয়াল। পরে দেখলাম সুন্দর একটা পরীক্ষা । ভাল লাগছে আমি উলটা দিক থেকে পড়িনাই এইভাবেই ভাল লাগছে।
কিন্তু মা টাকে মেরে ফেললি কেন। প্রতিটা মায়ের সেই অধিকারটুকু থাকা উচিৎ এতটা কষ্ট যার জন্য করল তার থেকে কিছু পাবার। ছোট কচি মুখের হাসি, আধো বোলে কথা, বড় হয়ে উঠার আগ পর্যন্ত শিশুতোষ সব কিছুই । অপরাজিত এর মধ্যে একটা খুব সুন্দর কথা ছিল আমি ঠিক ভাবে কোট করতে পারব না তাও কথাটা এইরকম শিশুরা কিছুই এমনি এমনি নেয় না তার বিনিময়ে সে যা দেয় সামান্য হাসি, আধো বোলে কথা তার দাম ও নিহাত মন্দ নয়।
ঠিক বলেছিস। কিন্তুচিন্তা করে দ্যাখ এই পৃথিবীতে কয়জন মা এভাবে নিজের সন্তানের কাছ থেকে প্রাপ্যটা পায়? দুনিয়াটাই আনফেয়ার জায়গা। সেই চিন্তা থেকে মায়ের এই পরিণতি। বিশ্বাস কর, আমারও ভাল লাগে নাই মেরে ফেলতে!
:dreamy: :dreamy: :dreamy:
:clap: :clap: :clap:
:thumbup: :thumbup: :thumbup:
নাহ্, আরো কিছু ইমো দরকার ছিল আমার অনুভুতি প্রকাশ করার জন্য। জিহাদ, কামরুল ও অন্যান্য এক্সপার্ট রা, একটু হেল্প কর।
আপাতত আন্দালিবকে :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff: অভিনন্দন। লেখা চলতে থাকুক
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ রহমান ভাই! 😀
অসাধারন অসাধারন :clap: :clap: :clap: :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
পাংখা ... :boss: :boss:
আমার মধ্যে লেখক হবার বাসনাটা তেলাপোকার মত পাখা ঝাঁপ্টায় মাঝে মাঝে-কিন্তু আন্দালিব ভাইয়ের ভয়ংকর সুন্দর লেখাগুলো পড়লে তা সাথে সাথে তার গর্তে ঢুকে পড়ে। x-( আন্দালিব ভাইরে মাইনাচ x-(
তেলাপোকা দীর্ঘজীবী হয় জানো তো?? 😛
গর্তে না ঢুকে ওড়াওড়ি শুরু করো!
অফ টপিক- ঈষৎ এদিক-ওদিকত, তবে মূল ভাব একিত... B-)
ভাই, মনটা ছুয়েঁ গেল।
ধন্যবাদ শঙ্খ!
আন্দালিব,
অসাধারণ!
আসলেই থমকে দেওয়ার মত লেখা।
তুমি কি আর কোন ব্লগে লেখ?অসুবিধা না থাকলে লিংকটা দিও...
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
ধন্যবাদ সাকেব ভাই। আমি সামহোয়ারইনব্লগে ব্লগে লিখি ছন্নছাড়ার পেন্সিল- এই নিকে।
আহা!!!
আহা!!!
.........
অসাধারন
অনেক ধন্যবাদ সামিয়া!
ওয়াও, কি দিলা ভাইডি :salute:
ওই তোমারে মাইনাস
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আমাকে মাইনাস কেন?? আমি কি করলাম?? :(( :((
তোমার লিখা পইড়া তোমার মত লিখতে পারি না কেন এই টেনশনে পড়ি। তাই মেজাজ খারাপ কইরা মাইনাস দিছিলাম।
আসলে পু্রাটাই পিলাস
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
হে হে হে! তাহলে ঠিক আছে! 😀 😀 😀
ভালো লাগার লেখাগুলো আবার পড়ছি।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি!
দুরো মিয়া-আপনের লেখা পড়লে নিজের ভাষাজ্ঞানের উপ্রে ভক্তি উইঠা যায় :((
এই লেখাটা পড়ে ভক্তি ফিরায়ে আনতে পারো!
খুব ভাল লাগলো ছন্ন