৭১-এ না লেখা চিঠি

কইছিলা, বেলা ডুবনের সময় আমারে দেখা দিবা,

রাঙ্গা নদীর পাড়ে, কলসী নিয়া ছিলাম আমি সেদিন।

তোমার নায়ের আশায়;

তারপরের দিন, তারও পরের দিন।

তুমি আসো নাই।

সকলে কইলো,

সরকার পাড়ার শিবু আর কাশেমের লগে তুমি গয়নার নায়ে উঠছো।

তার কয়,

দূরগাঁয়ে নাকি কারা আসে।

খুব রাইতে;

সাদা ফর্সা চেহারা, কুত্তার মত চোখ, শিয়ালের মত নখ;

সকালে কই জানি মিলায়া যায়।

রক্তে ভরা, আধ-খাওয়া, ছেঁড়া-খোঁড়া মানুষ নাকি পইরা থাকে।

 

সেবছর গাঁয়ে অনেক শিয়াল আইছিলো, তোমার মনে আছে??

তুমি আর শিবু মিলা সেগুলারে গাঁ-ছাড়া করছিলা।

এবারও পারবা তুমি, আমি জানি।

কবে আইবা তুমি??

 

শিবু আর কাশেম ফির‍্যা আইছে সেদিন।

সকলে কয়,

শেয়াল আর কুত্তাগুলারে তোমরা তাড়ায়া দিছো।

কাশেমের একটা পা নাকি কুত্তায় ছিঁড়া নিয়া গেছে।

আমি দেখতে গেছিলাম।

তোমার কথা জিগাইছি।

সে কইছে, তুমি আইবা।

কবে আইবা তুমি??

 

আমিও জানি, তুমি আইবা একদিন।

নাওয়ে চইড়া, নদীর পাড়ে।

 

খালি মাঝে মইধ্যে স্বপনে কী জানি দেহি।

তুমি নাওয়ে দাঁড় বাও, রাঙ্গা নদীতে।

নাও আগায় না, নদীর পানিতে খালি লাশ আর লাশ;

পঁচা-গলা, পোড়া, মাছের খাওন।

তোমার নাও আইটকা থাকে;

লাশের উপর দিয়া দৌড়াইয়া আসে কুত্তা, শিয়াল।

আমি তোমারে ধরতে যাই,

হাত পিছলায়া যায় কার জানি রক্তে।

কাঁনতে কাঁনতে ঘুম ভাইঙ্গা যায় আমার।

 

আচ্ছা, কবে আইবা তুমি??

৬,১০৭ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “৭১-এ না লেখা চিঠি”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    স্পেস কমাইয়া দেও।
    বেশি ছাড়া ছাড়া লাগতেছে।

    পরাণের গহীন ভিতর এর টেষ্ট পাইলাম


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • সামিউল(২০০৪-১০)

      স্পেস কমাতে পারতেছি না ভাই। :dreamy: কমালে এক লাইনের সাথে আরেক লাইন মিলিয়ে যাচ্ছে। :brick:

      পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
      "পরানের গহীন ভিতর" এর সাথে সবাই মিল খুঁজে পাচ্ছেন। আমি কবিতাটি একবারই পড়েছিলাম। অনেক আগে। মারাত্মক সুন্দর কবিতা। আবার পড়তে হবে আজকে।


      ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

      জবাব দিন
  2. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    সৈয়দ শামসুল হক এর "পরাণের গহীন ভিতর" এর স্টাইলে লেখা এ কবিতা পড়ে ভালো লাগলো।
    সাউন্ড ক্লাউডে পারভেজ এর কন্ঠযোগে কবিতাটা শুনতেও বেশ ভালো লাগলো। (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    সামিউল,
    লেখাটা আজকেই পুরোটা পড়ার অবকাশ পেলাম জানো! পুরোটা না পড়ে মন্তব্য করতে চাইছিলাম না।
    অসাধারণ হয়েছে বললেও কম বলা হয়। পারভেজ ভাইকেও অশেষ ধন্যবাদ এমন আবেগ দিয়ে এমন সুন্দর করে পাঠ করার জন্যে।
    এই ইন্টারএকশনটাই ব্লগে প্রাণ সঞ্চার করে -- এমন নিবিড় যোগাযোগ। কারো সাথে কারো দেখা নেই, তবু সাক্ষাত হচ্ছে নিয়ত। ভাবা যায়!

    আমার কিন্তু একটুও মনে হয়নি এটি 'পরাণের গহীন ভিতর' এর স্টাইলে হয়ছে। তোমার লেখা ভীষণ স্বতন্ত্র হয়েছে। পাঠোপযোগী একটা কবিতা -- পারভেজ ভাইকে আবারো ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
    • সামিউল(২০০৪-১০)

      অনেক খুশি লাগছে আপনার ভাল লেগেছে জেনে। পারভেজ ভাই আসলেই চমৎকার একটা কাজ করেছেন।
      এই ব্লগের লোকগুলোকে নিজের ফ্যামিলির মত মনে হয়। বারবার আসতে ইচ্ছে করে তাই। চোখে না দেখেও খুব আপন লাগে সবাইকে।


      ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

      জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      "কারো সাথে কারো দেখা নেই, তবু সাক্ষাত হচ্ছে নিয়ত" - মজার ব্যাপার হচ্ছে, দেখা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাবে কথা খুজে পাচ্ছি না।
      অথচ এখানে আমরা কতই না সাবলিল।
      এর একটা কারন হলো, এখানের যোগাযোগটা খুবই ফোকাসড। মেধা-নির্ভর।
      এই কবিতা পাঠ সম্ভব হয়েছে শুধুই কবিতার কথা মাথায় থাকার কারনে। সেটা ভাল লাগার কারনে।
      বাস্তবে বা সামনা সামনি সেটা প্রায় অসম্ভব। নানান ইগো এসে পড়ে।

      ধন্যবাদটা গ্রহন করলাম।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
      • সামিউল(২০০৪-১০)

        ঠিকই বলেছেন, বাস্তবে সামনাসামনি দেখা হলে আসলেই আমরা কথা বলার কিছু খুঁজে পাবোনা মনে হয়।
        তবু মনে হয় দেখা করাটা উচিত। একটা আড্ডা দিতে পারলে সবাই মিলে, খুব ভাল হত।


        ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

        জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।