বসুন্ধরা সিটির আট তলার ফুড কোর্টে বসে টুকটাক খাচ্ছিলাম আমি ও আমার বান্ধবী। বিভিন্ন কথার মাঝে হাসতে হাসতে জানালো গত বৃহস্পতিবার সপ্তাহান্তের বাড়ি যাবার সময় এবং আজকে ঢাকা আসবার সময় দুই বারই ট্রেনে ইভ টিজিং এর স্বীকার হয়েছে সে। মোটামুটি দুই বারই উত্তম জবাব দিয়ে থামিয়ে দিয়েছে দুই পশুকে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ভাল মতন ধরলে না কেন? উত্তরটা আসলে বাস্তব সম্মত। ভিক্টিম ব্লেমিং ও শেমিং করা সমাজে বেশী ধরার চেষ্টা করলে উল্টো বলবে হয়রানি করা হচ্ছে। সেখান থেকে কথায় কথায় চলে যাবে ক্যাডেটের ড্রেস টার্ন আউট ঠিক নাই সেই গল্পে। সচরাচর যা হয় আর কি। দোষ সেই ঢাকনা খোলা খাবারের। বান্ধবী আরো বললো সবসময় সময়োচিত উত্তর দিতে পারে না তাই খুব বিরক্ত লাগে। নানান কথার মাঝে খাবার শেষ করে একটু দোকানে ঘুরবো বলে হাঁটা দিলাম দুজনে। আট তলা থেকে বাটা জুতার দোকান, দেশী দশ, ইয়োলো, স্মার্টেক্স এই চার দোকানে ঘুরে বেড়াবার মাঝে চার পশু পেলাম কুৎসিক অঙ্গভঙ্গী করে ওর দিকে তাকাতে। এর মাঝে বাটা জুতার দোকানের পশুটা পিছু নিয়েছিল। কেন জানি মনে হলো পিছনে তাকাই। তাকাতেই দেখি জুতা দেখা বাদ দিয়ে সিলিং এর লাইট দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো মধ্য বয়স্ক ভদ্রপশু। নিশ্চিত বড় কোম্পানীর বড় চাকুরে। চোখের চাহনী দিয়ে সব শেষ করে দেয়া পশুর সংখ্যা গুণে শেষ করা যাবে না তাই বাদ দিয়ে দিলাম। বাসায় ফেরত এসে ওর সাথে ফেইসবুকে আলাপ করছিলাম। সেখানে জানালো কারওয়ান বাজারের মোড়ে রাস্তা পার হবার সময় আরো একটি পশু ছিল। আমি খেয়ালই করি নাই। অর্থাৎ মোট চোখে ধরা পড়েছে পাঁচ জন। তাকে আরো জিজ্ঞাসা করলাম প্রতি সপ্তাহে যখন সে বাড়ি যায় এবং ফেরত আসে কতবার এরকম ইভ টিজিং এর শিকার হয়? উত্তর এলো “প্রায় প্রতিবারই। But I’ve learned to ignore.”
হতাশ হবো কিনা বুঝতে পারছি না। বরং মনে প্রশ্ন আসছেঃ আমরা কবে থেকে এরকম হলাম? নাকি আমরা সবসময়ই এরকম ছিলাম?–যৌনতা ও মানসিকতার দিক দিয়ে বিকৃত ও কুৎসিত। প্রতি বছর মনের পশুকে তাড়ানোর নামে কত কিছু করে বেড়াই অথচ মনের পশু মনের সিংহাসনে বসে সাম্রাজ্যের নারীকূলের দেখভাল করে। সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সুযোগ পেলে পালাক্রমে। সুযোগের অভাবে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গীতে, মুখের ভাষায়, চাহনীতে। আর কি লিখবো? কেন লিখবো? জানি না। নতুন করে হতাশ হতে চাইছি না।
পুনশ্চঃ আজকে বান্ধবীকে নিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম গতকাল মুক্তি পাওয়া চলচিত্র “Fantastic Beasts and Where to Find Them.” একেই মনে হয় বলে ভাগ্যের পরিহাস।
অনেকদিন পর ফিরে এলে, তাই না?
হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেল, এই যা......
আমার ধারনা, এই পুরো ব্যাপারটা অবদমনকে গ্লোরিফাই করার সহজ-স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
এটা থেকে উত্তরনের জন্য অবদমন গ্লোরিফাই করা বন্ধ করতে হবে।
সেটা করার জন্য কি আমরা প্রস্তুত?
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
ধন্যবাদ ভাই। অনেকদিন পরেই এলাম। অন্যান্য বিভিন্ন লেখা বসে আছে খসড়া সেকশানে। শেষ হয় না পাবলিশ হয় না। এই লেখাটা হঠাৎ করেই শেষ হবার কথা। কারণ প্রস্তুতি নিয়ে লিখি নাই। হতাশা থেকে লিখেছি। কিছুটা ক্রোধও ছিল। আমাদের দেশে দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যেকটা মেয়ে কম বেশী এর শিকার হয় এই কথাটা জানতাম। কিন্তু চোখে আঙ্গুল দিয়ে কেউ দেখিয়ে দেয়নি। নিজের গায়ে এসে পড়লে শুনেছি নাকি জ্বলে বেশী।
অবদমন গ্লোরিফাই করা বন্ধ করতে আমরা মোটেও প্রস্তুত নই। বরং আমার মতে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন যেরকম উর্ধ্বমূখী, দেশের মানুষের নৈতিক ও চারিত্রিক অবকাঠামো ঠিক সমানুপাতিক হারে নিম্নগামী।
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
মেয়েদের সাথে বের হলে আশেপাশের আসল চেহারা টের পাওয়া যায়।
বউ এর পাশ দিয়ে হেটে যাবার কনুই দিয়ে গুতা দেয়ার একটারে চড় দিছিলাম, আর এখন কাউকে ওভাবে তাকাত্র দেখলে তার আই সাইটে এসে আরো কুৎসিত ভাবে তাকায় থাকি কিছুক্ষণ।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
প্রতিবাদ করতে চাই কিন্তু বান্ধবী নিজেই বলে থাক প্রতিবাদ করার দরকার নাই পরে লোকজন আমাদের উপর চড়াও হবে। তখন যেই অপমানটা হবো এর চেয়ে এইটা না দেখার ভান করাই বেটার! This is what we call social defeat. 🙁
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
“Fantastic Beasts and Where to Find Them.” -- They are all around!
অল্প কথায় একটা নিত্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করে গেলে- চমৎকার ভাবে।
খুবই দুঃখজনক ব্যাপারগুলা।
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল