অনেকদিন পর ভাইকিংসঃ রানআউট মুভি সাউন্ডট্র্যাক রিভিউ

প্রায় দুই দশক পর ভাইকিংস যখন ফেরত এলো রক সঙ্গীতের জগতে তখনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম অন্তত ওদের এ্যালবামটি দিয়ে মিউজিক রিভিউ লেখার একটি চেষ্টা করা যেতে পারে। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা (সম্ভবত) এ্যাকশানধর্মী চলচিত্র রানআউট-এর সাউন্ডট্র্যাক করার মধ্য দিয়ে ভাইকিংস সঙ্গীত জগতে ফেরত এলে মিশ্র অনুভূতি হয়েছিলঃ রক ব্যান্ড হিসেবে মুভি সাউন্ডট্র্যাক? পার পাবে তো? এ্যালবামের গানগুলো প্রথমবার শোনার পরেই রিভিউটি লিখতে চেয়েছিলাম কিন্তু মাথায় সময়মত গার্ডিয়ান পত্রিকার বিখ্যাত সঙ্গীত সমালোচক এ্যালেক্সিস পেট্রিডিসের একটি উপদেশ ফিলিপস বাতির মত জ্বলে উঠলোঃ মিউজিক রিভিউ লেখার আগে যত বেশী এ্যালবামটি শোনা হবে ততই উত্তম। সেই উপদেশ মাথায় রেখে গত একমাস প্রায় প্রতিদিন কাজে যাবার সময় ও ফেরত আসার সময় ভাইকিংসের নতুন গানগুলো শুনে নিলাম। একমাস পরে যখন রিভিউ লিখছি তখন বুঝতে পারছি কেন এ্যালেক্সিস এই কথা বলেছিলেন।

যেসব দেশের গান শোনা হয় তাদের মাঝে সবচাইতে ভীতু প্রজাতির সঙ্গীত শিল্পী হলো বাঙলাদেশের। ভ্রু কুঁচকে তাকানোর জন্য দুই সেকেন্ড সময় দিলাম। কারণ আমরা সঙ্গীত নিয়ে কেরামতি করতে ভয় পাই। ঐতিহ্যগত ভাবে যেকোন ঘরানার প্রতি আমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভক্তি রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের কোক স্টুডিও নামক পরীক্ষামূলক সঙ্গীত প্রকল্প কেন বাঙলাদেশে নেই এই নিয়ে একটি লিখা লিখেছিলাম। মনে পড়ে অন্তত একজন খুব বেঁকে বসেছিলেন। শেষ পর্যন্ত বোঝাতে পারিনি, “ফিউশন” খারাপ কিছু নয়। দর্শক হিসেবেই আমরা যেখানে পরিবর্তন চাই না সেখানে সঙ্গীত শিল্পীদের কাছ থেকে সেটা আশা করি কিভাবে? রিভিউটি কেন প্রথম দুই-তিনবার শুনেই লিখা থেকে নিজেকে থামিয়েছি সেটায় আসি। গানগুলো শুনেই আমার (ও আমার রুমমেট জোসেফ ফকক ০০-০৬) প্রতিক্রিয়া ছিল, “ধ্যাত! শালারা রক বাদ দিয়া অল্টারনেটিভ শুরু করসে।” অর্থাৎ ঘরানা থেকে সরে এসেছে।

এ্যালবামটিতে মোট গান আটটিঃ (১) অপেক্ষা, (২) যতটা দূরে, (৩) জানালা খুলে দাও, (৪) এলোমেলো (ক্রমশ), (৫) একবার বলো। এরমাঝে (৩) জানালা খুলে দাও ও (৫) একবার বলো যথাক্রমে সঙ্গীত শিল্পী কণা ও রিন্থির সাথে দ্বৈত-কন্ঠের সঙ্গীত। বাকি তিনটির মাঝে দুটি (৩) ও (৫) নম্বর ট্র্যাকের একক কন্ঠের সংস্করণ এবং “অপেক্ষা” গানটির একটি ঠান্ডা প্রজাতির সংস্করণ নিয়ে মোট আটটি গান। পুরোটাই মুভি সাউন্ডট্র্যাক হলেও এ্যালবামের প্রথম গান “অপেক্ষা” আমার কাছে এ্যালবামের মূল আকর্ষণ মনে হয়েছে। অর্থাৎ “অপেক্ষা” শুনে ভাইকিংসের পুরোনো ভক্তরা হয়তো মাথা নাড়তে নাড়তে বলবেন, “নাহ হার্ডরক থেইকা এক লাফে অল্টারনেটিভ রক/মেটালে চইলা আইলো। বাট গীটার সলোটা ভাল লাগসে মামা!” আমি অস্বীকার করছি না। তারা আসলেই হার্ডরক ছেড়ে অল্টারনেটিভ রক বা অল্টারনেটিভ মেটালের পথে হেঁটেছে এই গানটি দিয়ে। কিন্তু আপনি হতাশ হওয়া বন্ধ করতে চাইলে গানটিকে আরো সপ্তাহ দুই-তিনেক সময় দিন, ভাল লাগবে। তন্ময়ের সেই ঘোর লাগানো উদ্ভট খসখসে স্বরের এক চুল পরিবর্তন হয়নি, গীটারে সেতুকে আমি বলবো যা ছিল তাই আছেঃ মেলোডিয়াস উইথ হিন্ট অফ ফীল হিয়ার এ্যান্ড দেয়ার। হয়তো ব্যান্ডের হিসেবে এটি সেতুর সমালোচনা হয়ে যায় কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে এরা প্রায় দুই দশক পর তৃতীয় এ্যালবাম প্রকাশ করলো।

সিলেটের ছোট ভাই এবং চোখে আন্ধার দেখানোর মত ভাল ড্রামার সা’দ (২০০১-২০০৭) ক’দিন আগে মির্জাপুরের আমাদের ব্যাচের ড্রামার সানিয়াতের একটি ফেইসবুক পোস্টে বলছিল ভাইকিংসের ড্রামার সবসময় আন্ডারপ্লে করে এসেছে অর্থাৎ যতটুকু দরকার ততটুকুও দিতে চায়নি। কথাটি উঠে এসেছিল কারণ সানিয়াত বলছিল তার ড্রামস শেখার প্রক্রিয়ার বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছিল ভাইকিংসের ড্রামার সায়মন। সানিয়াতের পরবর্তী জীবনের বাজানো দেখলে সায়মন কিভাবে প্রভাব ফেলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাই স্বাভাবিক। বলছিলাম আন্ডারপ্লে-এর কথা। সা’দের কথায় খেয়াল করলাম “অপেক্ষা” গানটিতেও বেশ খানিকটা অপূর্ণতা রয়েছে। বিশেষ করে কোরাস ও মূল গানের মাঝে ব্রেকগুলোর ব্যাপারে আরেকটু মনোযোগী হতে পারতো। একই কথা সেতুর ব্যাপারেও বলতে চাই। গীটার রিফের বেশ কিছু যায়গায় একঘেঁয়ে প্যাটার্ন মনে হয়েছে। কিন্তু শক্তিশালী গানের কথা, শক্তিশালী গীটার সলো, এবং গানের সামগ্রিক কাঠামো চিন্তা করলে এই গান ভাল লাগতে বাধ্য। গাড়িতে শোনার জন্য চমৎকার একটি ট্র্যাক।

(২) যতোটা দূরে একটি সুন্দর গান তবে ভাইকিংসের গত দুই এ্যালবামে এরকম বেশ কয়েকটি গান রয়েছে তাই নতুন করে কিছু না বলে দ্বৈত সঙ্গীত দুটো নিয়ে কথা বলি। রক ঘরানার মহিলা সঙ্গীত শিল্পীর অভাব আমি বহু আগে থেকেই বোধ করে আসছি। শক্তিশালী কন্ঠ রয়েছে এবং রক গাইবার চেষ্টা করেছে এরকম শিল্পী প্রথম দেখেছিলাম কানিজ সুবর্না। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে গীটার শিখতাম রামপুরার কাউসার ভাইয়ের কাছে। উনার কাছে শুনেছিলাম কানিজ সুবর্ণার কন্ঠে “Smoke on the water” শুনলে আক্ষরিক অর্থেই নাকি কান দিয়ে ধোঁয়া বের হবে। রক ঘরানা দূরে থাক, তিনি সঙ্গীতের পথেই বেশীদিন হাঁটেন নি। এরপরে এরকম কাছে পিঠে শক্তিশালী কন্ঠ পেয়েছি মিলা। “তুমি কি সাড়া দিবে” এর মত চমৎকার গানও আছে তার কন্ঠে। তিনি চাইলে আরো দিতে পারেন বা পারতেন কিন্তু তাকেও দেখছি না। এই কথাগুলো বলছি কারণ, এই এ্যালবামের দ্বৈত-কন্ঠের গান দুটো শুনে মনে হয়েছে বাঙলাদেশে এরকম চমৎকার দ্বৈত-কন্ঠে পাওয়ার ব্যালাড শেষ কবে হয়েছে আমার জানা নেই। সম্ভবত হয়ই নাই। এরমানে হলো শিল্পীদের সাধ্য আছে কিন্তু সাধ নাই। শিল্পী হিসেবে কণার গান বেশ কয়েকটি শোনা হয়েছে। ভাল গায়। তাকে দিয়ে চমৎকার রক ব্যালাড গাওয়ানো কি খুব কষ্টের? এই গানে ত‌ো তা মনে হয় না। ব্যক্তিগত ভাবে রিন্থীর সাথে গাওয়া (৫) একবার বলো এর চাইতে আমার (৩) জানালা খুলে দাও বেশী পছন্দ হয়েছে। অনেক বেশী প্রাণবন্ত। এদিকে “একবার বলো” গানে সেতুর গীটারের কাজটা অসাধারণ। এরকম চমৎকার দ্বৈত-কন্ঠে পাওয়ার ব্যালাড গাইলে আমার মনে হয় না মূলধারার রক কিংবা মেটাল শিল্পীদের জাত চলে যেত। তারপরেও হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে কিনা সন্দেহ আছে।

ভাইকিংস মূলত কি ধরনের ব্যান্ড তা কিছুটা মনে করিয়ে দিতেই নাকি আসলেই গানটি সুর করবার সময় মাথা ঠিক ছিলো না (নাম দ্রষ্টব্য) সেটা ঠিক বোধগম্য নয়। আশির দশকে জন্ম হবার সুবাদে প্রগ্রেসিভ মেটাল ঘরানার সঙ্গীত একেবারে কম শোনা হয়নি এবং আমার অভিমত প্রায় দুই দশক প্রায় বিচ্ছিন্ন থাকার পরে প্রথম এ্যালবামে প্রগ্রেসিভ মেটাল ঘরানার গান না রাখাই শ্রেয়। (৪) এলোমেলো (ক্রমশ) এই গানটিকে জোর করে টেনে এদিক সেদিক নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং এই কাজটি করতে গানটি প্রগ্রেসিভ মেটালের আবেদন তৈরী করতে গিয়ে উল্টো খাপছাড়া হয়ে গিয়েছে। ইচ্ছাকৃত পাগলামি করতে গেলে হাতের কাছে উদাহরণ এসে যায় ড্রিম থিয়েটারের মেট্রোপলিস ১ কিংবা ওপেথের থ্রোট অফ উইন্টার। যেই কারণে বিরক্ত হচ্ছি ঠিক সেই কারণেই ছেড়ে দেই, এতদিন পর গান গাইছে যেহেতু কিছুটা ছাড় পেতেই পারে।

বাকি তিনটি গানের দুটি দ্বৈত-কন্ঠ গানের একক ভার্সন। যারা এখনো পিউরিস্ট এলার্জিতে ভুগে আসছেন মূলত তাদের জন্য এই দুটো। তৃতীয় গানটি এ্যালবামের প্রথম গান (১) অপেক্ষা-এর সম্পূর্ণ ননীবিহীন সংস্করণ। কটাক্ষ করছি না তবে আমার ভালো লাগে নাই।

অনেক লিখেছি। এবার শেষ করি। এ্যালেক্সিস বলেছিল সাতকান্ড রামায়ণ না লিখতে। যদি একবাক্যে সম্ভব হয় তবে তাই সই। কিন্তু বাচাল বাঙালী হয়ে খাজুইরা আলাপ না করলে পেটের পিৎজা হজম হচ্ছে না। চলচিত্রটি এখনো মুক্তি পায়নি। চলচিত্রটি দেখার পাশাপাশি গানগুলো শুনতে পারলে আরো ভাল হতো। পোস্টার দেখে রোমান্সপূর্ণ এ্যাকশানধর্মী চলচিত্র মনে হয়েছে। যদিও এ্যাকশান চলচিত্রের নায়ক হিসেবে সজল কিরকম করে এই নিয়ে আমার সন্দেহের অবকাশ যাপন শেষ হচ্ছে না কিন্তু একটি এ্যাকশানধর্মী চলচিত্রের গান হিসেবে যা প্রয়োজনঃ এক-দুইটি দ্রুতলয়ের আক্রমনাত্মক গান (অপেক্ষা ও এলোমেলো), এক-দুইটি রোমান্টিক (জানালা খুলে দাও ও যতোটা দূরে), এক-দুইটি বিরহের (যতটা দূরে ও অপেক্ষা-এর ভিন্ন সংস্করণ) = ১০০% সুষম খাদ্য প্রস্তুত করতে প্রায় দুই দশক পরে হলেও ভাইকিংস প্রায় সম্পূর্ণ সফল। আশা থাকবে এভাবে হারিয়ে না গিয়ে অন্তত কয়েক বছর ব্যবধানে হলেও রক পিপাসুদের চাহিদা পূরণ করতে তারা ফেরত আসবেন।

পুনশ্চঃ
(ক) ইউটিউব লিংকের গানগুলো পছন্দ হলে এ্যালবামটি কিনুন। দয়া করে ডাউনলোড করবেন না। শুনতে চাইলে ইউটিউবেই ফেরত যান তবুও চেষ্টা করুন ডাউনলোড না করতে। ধন্যবাদ।
(খ) মিউজিক রিভিউতে ভুল-শুদ্ধ বলে কিছু নেই। যদি এই লিখা পড়ে এবং গানগুলো শুনে আপনার আমার মতের সাথে না মিলে তাহলে চমৎকার। মন্তব্যের ঘরে আপনার মতামত লিখে প্রাণবন্ত করে তুলুন এই লিখাটিকে।

চলচিত্রঃ রান আউট, অভিনয়েঃ সজল নূর, মৌসুমি নাগ প্রমুখ
সঙ্গীতঃ ভাইকিংস ব্যান্ড, বাঙলাদেশ
মূল ভোকালঃ তন্ময়
গীটার/ভোকালঃ সেতু
কীবোর্ডঃ বাবু
বেইজঃ জনি
ড্রামসঃ সায়মন

২,৪৯০ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “অনেকদিন পর ভাইকিংসঃ রানআউট মুভি সাউন্ডট্র্যাক রিভিউ”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    অবশেষে 🙂

    গানের টেকনিক্যালিটি একেবারেই বুঝি না। আমার কাছে গান মোটা দাগে দুই রকম, ভাল লাগা গান এবং ভাল না লাগা গান। গানগুলো এখনো পর্যাপ্ত পরিমানে শোনা হয়নি, গত সপ্তাহ থেকে শোনা হচ্ছে তবে এক কথায় বলতে গেলে সার্বিক ভাবে পুরো এলবাম ভাল লেগেছে। আলাদা ভাবে গান ধরে ধরে মন্তব্য করতে আরো শুনতে হবে।

    ফিউশন বা প্যাটার্ন এর বাইরে না যাওয়ার জন্য আমি আসলে শিল্পীদের থেকে দর্শকদের চাহিদা আর তার ফলাফল হিসেবে মিউজিক কম্পানিগুলোর অনাগ্রহকেই দায়ী করবো।

    সিসিবির প্রথম এলবাম রিভিউ, ভাল উদ্যোগ, সামনে আরো চাই 🙂


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      টেকনিকাল জার্গন যাতে ব্যবহার খুবই কম করা হয় এই বিষয়েও এলেক্সিস সতর্ক করেছিল। প্রথম রিভিউ হিসাবে কিছুটা ভুলে গিয়েছিলাম। আপনি বলার পরে শিল্পীদের সদিচ্ছার চেয়ে দর্শকদের চাহিদা ও প্রডিউসারদের ইচ্ছাই বেশী দায়ী মনে হচ্ছে। তবে দর্শক চাইলে সবই সম্ভব। আমরাই চাইনা।

      পড়ার জন্য ধন্যবাদ। রিভিউ লিখতে এ্যালবাম লাগবে! এটাই সমস্যা! 😕


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  2. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    দারুণ রিভিউ মোকাব্বির :thumbup:
    স্টার সার্চে জীবনের কোলাহল দিয়ে যখন জিতলো তখন থেকেই ফলো করি। জীবনের কোলাহল আর দিন যত দুঃখ তত দুইটা এলবামই ভালোই লাগসিলো সে আমলে। এরপর মনে হয় শুধু মাঝে তন্ময় ভালোবাসি যারে গাইসিলো নির্ঝর বা কানিজ সুবর্ণার সাথে, টোটাল ভাইকিংসের আর কোন খবর নাই। সারপ্রাইজিংলি তন্ময়ের সাথে দেখা সাক্ষাত পরিচয়ের সুযোগ আসে আমার এফিসিসির বন্ধু রাজিব যখন 'পদ্ম পাতার জল' নামে একটা সিনেমা বানানোর কাজ শুরু করে ২০১২ তে। তন্ময় এই ফিল্মের ডিরেক্টর। সেসময় তাদের সাথে কয়েকদিন কাটানোর সুবাদে গান সিনেমা ভাইকিংস এসব কিছু নিয়ে আড্ডাবাজির সুযোগে জানতে পারি তন্ময়দের অনেক কিছুই। উনার ল্যাপটপে সেতুর অনেক আনফিনিশড কাজ শুনি। সেতুকে প্রথম থেকেই ট্যালেন্টেড গিটারিস্ট মনে হতো। এখন আরো অনেক পরিণত হয়েছে সন্দেহ নাই। তবে ব্যান্ড হিসাবে ভাইকিংসের আসলে কোন ফিউচার নাই। এরা সবাই অন্য সাইডে বিজি, কন্টিনিউয়াস কনসার্ট বা স্টুডিও সেশন করার মতো সময় নাই কারো। রানআউটও তন্ময়ের ডিরেকশনেরই সিনেমা। এটা করতে গিয়েই তারা একসাথে অনেক দিন পর মিউজিক করলো। আউটপুটটা আমার খারাপ লাগেনি। মোকাব্বিরের সাথে পুরোই একমত আলাদা আলাদা গান বিচারে।

    দেখি ফিল্মের সাথে কেমন মার্চ করে।

    মোকাব্বির, আবারো :thumbup: :salute: ফর দ্যা রিভিউ।


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      ধন্যবাদ কাইয়ূম ভাই পড়ার জন্য! 😀 প্রথম চেষ্টা করলাম লিখার। আপনার/আপনাদের কমেন্ট পেয়ে ভাল লাগছে। 😀

      "ভালোবাসি যারে" সম্ভবত কানিজ সুবর্ণার সাথেই। ক্যাডেট কলেজে যাবার পর ব্যান্ডের গান বাজনা করতে আগ্রহী সবারই একটি সুপারহিরো ব্যান্ড তৈরী হয়ে যায়। ১৯৯৮ এ স্টারসার্চ খেয়াল করেছিলাম কিনা মনে নাই (ব্লাডি ক্লাস সেভেন 😛 ) কিন্তু জীবনের কোলাহল রিলিজ পাবার পরে আমার, সানিয়াতের এরকম আমাদের ব্যাচের অনেকের সুপারহিরো ব্যান্ডে পরিণত হয়েছিল এরা। সেতু ট্যালেন্টেড বলেই এতদিন পরে গোটা গানে হাত দিয়েও অস্বস্তিতে পরে নাই। গত ১৫-১৬ বছর নিয়মতি ছয়তারে হাত পড়লে কোন পর্যায়ে যেত চিন্তা করেন। সব কথার বড় কথা মূলধারার ব্যান্ড হিসেবে চালিয়ে যেতে পারলে কত চমৎকার হতো ব্যাপারটা। হলো না। মন্দের ভাল হবে যদি তন্ময়ের মুভি পরিচালনা করার সুবাদে এক দুইটা গান ভবিষ্যতেও পাওয়া যায়। সমস্যা হলো এরা সম্ভবত দেশ বিদেশ মিলিয়ে থাকে। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে এদের একসাথে করা হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই!


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      সিগনেচার লাইনটা মনে হয় বদলানোর সময় হয়েছে, কি বলেন কাইয়ূম ভাই 😉


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
  3. সামিউল(২০০৪-১০)

    রিভিউ অনেক ভাল লাগছে ভাই।
    একটা গান শুনে এতকিছু বোঝেন ক্যামনে?? আহসান আকাশ ভাইয়ের মত আমার কাছেও গান দুই ধরনের- ভাল লাগা, ভাল না লাগা।
    যাই হোক, আমি একটু পরের জেনারেশন এ পরে গেছি মনে হয়। ভাইকিংস এর নাম শুনেছি, গান শোনা হয়নাই।
    আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে এ্যালবামটা শুনতে হবে।


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 😀 নিজে গান বাজনা করি, গীটার বাজাই, প্রচুর গান শোনা হয় বিভিন্ন ঘরানার। হাতি-ঘোড়া কিছুই বাজাই না কিন্তু গান শুনে ও কিছু বাজিয়ে নিজের কিছু চাওয়া পাওয়া, ভাবনা তৈরী করে নিয়েছি। সেগুলোর সাথে মিলাতে চেষ্টা করি এবং সেখান থেকেই এই ব্যাপারগুলো মাথায় আসে। পছন্দের গানে সাধারণত শ্রোতারা টেকনিকাল মনোযোগ দেয় না। চাইলেই দেয়া যায় কিন্তু সেটা অনেকাংশে গানের মজা নষ্ট করে দেয় বা দিতে পারে। কে কোথায় কি বাজাচ্ছে, অন্য আরেকটি গানে কিরকম লাগছে গানটা পরবর্তী চরণে যাবার আগে কি কি করছে এগুলো খেয়াল করো দেখবে গানের একটু অন্য মানে দাঁড়ানো শুরু করতে পারে! 🙂


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    শ্রোতা হিসেবে আমি খুবই সেকেলে। ঘুরে-ফিরে ৮০-৯০ (প্রথম ভাগ) এর গান (বাংলা, ইংলিশ, হিন্দী) শুনি। ফলে নতুন কিছু শোনা হয় না বললেই চলে। এজন্য বেশিরভাগকে চিনিও না... 🙁
    বাংলাদেশে বাইরের কিছু আসলে তা কখনোই ভাল কিছু হয় না। রিমিক্স এর জগাখিচুরি, 'র‍্যাপিং' এর নামে আজাইরা চিল্লাপাল্লা... এজন্য 'ফিউশন' নিয়ে বেশি আশাবাদী না হওয়াই ভাল। কয়েকজন ভাল কাজ করলেও বেশিরভাগ জিনিসটাকে পঁচায়ে ফেলবে...(ভুল প্রমানিত হলে খুশি হব) :-B

    লেখা ভাল হয়েছে। এরকম আরও চাই। :thumbup:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই। ফিউশনের নামে বারোটা যে বাজানো হয় নাই তা কিন্তু না। হাবিব এসে সব ফোক-গান গুলোর বেশ ভালই বারোটা বাজিয়েছে। আবার যেমন লালনের এই গানটির ফিউশনটি ভাল না লেগে উপায় নেই। ঠিক যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকু খাদ মিশানো হয়েছে! 😛

      আমার ব্র্যাকের ব্যাচমেট নাজিয়া শুরুতে অর্ণবের সাথে এবং পরবর্তীতে নিজের ব্যান্ড Don't Ask এর সাথে বেশ কিছু ফিউশন করেছে যেগুলো ভাল লাগবে। তবে যেই ভয়টার কথা বললেন ওতে আমার নিজেরও ভয়, "আমরা যখন কোন কিছু শুরু করি সেটা পঁচায় ফেলি!" 🙁


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  5. সাকীব (১৯৯৪-২০০০)

    মোকাব্বির,
    তোমার লিখা পড়লাম। খুব ভাল লিখেছ। বাংলা গানের ক্ষেত্রে আমি প্রায় সর্বভুক প্রকৃতির শ্রোতা। গানগুলো শুনলাম। ভাল লেগেছে। সবচেয়ে ভাল লেগেছে যে ব্যাপারটা, সেটা হল- অনেকদিন পর ভাল মানের ব্যান্ড এর গান শুনলাম। তন্ময়ের গলা একদম আগের মত আছে। দুরদান্ত। প্রথম শুনে যে গানটা মাথায় ঢুকেছে সেটা হল 'যতটা দূরে'। আমার কিন্তু "অপেক্ষা" গান টা ভালই লেগেছে। "একবার বল" তন্ময় এর গাওয়া- খুব ভাল লেগেছে।

    একটা বড় ভুল করে ফেললাম। এতক্ষন ব্যান্ড এর এ্যালবাম ভেবে লিখছিলাম। কিন্তু এটা তো সিনেমার গান। আমি খুব একটা নিশ্চিত না, ভিডিওর সাথে গানগুলা কেমন লাগবে।

    ব্যান্ড, ভাইকিংস, তন্ময় ----- এই তিনের হিসাব করলে আমি ৭/১০ দিব।
    মোকাব্বির---- লিখা চালিয়ে যাও।


    What we do in life echos in eternity.

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      পড়ার জন্য ধন্যবাদ সাকীব ভাই। গান গুলো যদি ভিডিওতে নায়ক নায়িকা গাইবার চেষ্টা করে তাহলে একেবারেই উপযুক্ত না। কিন্তু যদি সীনের মাঝে, বা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে ব্যবহার করে (নাটক গুলোতে যেভাবে করে) তাহলে কিন্তু ভালই মানাবে। আমার কাছে এটাই ভাল লাগছে ভেবে যে চলচিত্রের জন্য গান বানাতে গিয়ে নিজেদের স্বকীয়তা ভুলে যায়নি ভাইকিংস।


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  6. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)

    মোকা ভাই গানের টেকনিক্যাল ব্যপারগুলো বুঝি না, গান শুনছি, শুনতে ভালো লাগছে। অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম। :clap:


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন
  7. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    এমন অনুপুঙ্খ রিভিউ পড়তে খুব ভাল লাগে। লেখকের আন্তরিকতাটুকু বোঝা যায় --- অনাস্বাদিত বস্তুর জন্যে আগ্রহ তৈরী হয়।
    ব্যান্ড মিউজিকের একনিষ্ঠ শ্রোতা নই --- আশপাশের ট্রেণ্ড থেকে যা কানে আসে, হাতে আসে তাই শুনি। ছাত্রজীবনে যদিও স্বভাবসুলভ তারুণ্যে প্রচুর লাফিয়েছি ব্যান্ডের গানের সাথে, কেন জানি তেমন টান অনুভব করিনি কখনোই আর ধীরে ধীরে আগ্রহটা গড়ে উঠেছে পুরোপুরি ১৮০ ডিগ্রী উল্টোদিকের রাগপ্রধান সঙ্গীতের প্রতি।
    তবু ভাবাবার মতো কথা, সুর পেলে একেবারে প্রত্যাখ্যান করার মতো উন্নাসিক হতে পারিনি। ভালো সঙ্গীত হচ্ছে ভালো সঙ্গীত -- তার কোন জাতপাত নেই।
    এ লেখাটা পড়ে এই গানগুলো নেড়েচেড়ে দেখার আগ্রহ হচ্ছে -- সেটা খুব ভালো একটা ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে। সাথে ছবিটাও দেখবো। নামই তো শুনিনি আগে।
    মোকা, সাধুবাদ তোমাকে।

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      ধন্যবাদ নূপুরদা। বয়সে ত্রিশের সীমানা প্রায় স্পষ্ট হয়ে আসার সাথে সাথে আমার গান শোনার ঘরানাও মোড় নিচ্ছে। ব্লুজ ও জ্যাজ শোনা শুরু করি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বছর থেকে। যদিও গানবাজনায় তখনো তারুণ্যোর জয়জয়কার। এরপর ভিভালদি, মোজার্টের সঙ্গ খুব ভাল লাগতো। এখানে আসার পরে কালে ভদ্রে মেটালের পাগলামিতে ফেরত যাই। কিন্তু মূল সময় দখল করে রেখেছে ৫০-৭০র দশকের সুকন্ঠী শিল্পীরা। সাথে ভিভালদি মোজার্টরা তো আছেই। আর যেকোন মেঘলা সন্ধ্যায় কফির কাপ নিয়ে ডিউক এলিংটনের পিয়ানো কিংবা নিনা সায়মনের ঘুম ধরানো কন্ঠের জ্যাজ থাকছেই। শুধুই কি বয়স নাকি ব্যাপারটায় আরো অনেক কিছু আছে?


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।